#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_12
🍁🍁
রাসেলঃমুহিত তোর উপর আজ আমার কেন জানি বড্ড হিংসা হচ্ছে!মিষ্টু তোর কাঁধে মাথা রাখছে এটা দেখে। ইসসস আমি যদি তোর জায়গা থাকতাম!ধুরর
আমার এসব কি হচ্ছে? আমি কিছু বুঝতেছি না?না মিষ্টুর থেকে আমাকে দুরে থাকতে পারবো আর না আমি মুহিতের মত বন্ধুকে হারাতে পারবো না।
দরকার হলে আমি মুহিতের সাথে সরাসরি কথা বলবো!আমি পায়ে ধরে তোমাকে ভিক্ষা চাইবো মিষ্টু।তাও আমি তোমাকে হারাতে পারবো না।(মনে মনে)
–
মিষ্টুর কথাতে রাসেল ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে!মুহিত আর মিষ্টু পেছনের সিটে বসেছে। মিষ্টু মুহিতের কাধে মাথা রাখে বসে আছে।মিষ্টু মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলে..
–
মিষ্টুঃ ভাইয়া আমি পেয়ারা মাখা খাবো!তুমি আমার জন্য আনো নি কেন?
মুহিতঃএনেছি তো ওই প্যাকেটের মধ্যে আছে তো!দাড়া দিচ্ছি
–
মুহিত মিষ্টু কে পেয়ারা মাখা দিলো! মিষ্টু খাচ্ছে আর মুহিতকে খাইয়ে দিচ্ছে।মিষ্টু রাসেলের দিকে পেয়ারা এগিয়ে দেয় খাওয়ার জন্য! রাসেল খাবে না বলে। মিষ্টু যখন শুনলো সরিষা খেলে রাসেলের পেটে সমস্যা করে তখন মিষ্টুর হাসি আর থামে না।মিষ্টুর হাসি দেখে মুহিতও হেসে দেয়।রাসেল একটু পর পর লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাচ্ছে আর ড্রাইভ করছে কারন মিষ্টু যে পেয়ারা খাচ্ছে সেটা ঝাল করে মাখানো।আর ঝাল খাওয়াতে মিষ্টুর ঠোঁট লাল হয়ে গেছে! মুহিত খেতে না করছে তাও মিষ্টু খাচ্ছে। রাসেলের কেন জানি খুব ভালো লাগছে ঝালে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে।
–
মুহিত একবারে ডাক্তারের থেকে মেডিসিন নিয়ে তারপর ওরা বাসায় ফিরে!মিষ্টু ড্রেস না বদলে হিজাব টা খুলে চুল ছেড়ে ওভাবেই শুয়ে পড়ে!কেন জানি মনে হচ্ছে শরীর আর চলছে না।মিষ্টু চুপচাপ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে!রাসেল রুমে বসে ছটফট করছে না পারছে রুমে থাকতে আর না পারছে মিষ্টুর কাছে যেতে।মিষ্টু জর শোনার পর থেকে রাসেলের কেমন জানি ছটফটানিটা বেড়ে গেছে।
–
মুহিত মিষ্টুর রুমে এসে দেখে মিষ্টু শুয়ে আছে!মুহিত মিষ্টুকে জোর করে তুলে ড্রেস বদলানোর জন্য ওয়াশরুমে পাঠায়! মিষ্টু ড্রেস বদলে রুমে আসে। মুহিত ড্রয়িংরুমে ধরে আনে আর মিষ্টুকে সোফাতে বসায়!রাসেল রুম থেকে বের হয় আর ওদের কথা শুনে! আর দেখে মিষ্টু সোফাতে হেলান দিয়ে বসে আছে! রাসেল গিয়ে মিষ্টুর কপালে হাত দেয় আর মিষ্টু চমকে উঠে চোখ খুলে দেখে রাসেল দাড়িয়ে।মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি হাসে…
–
মুহিত খাবার এনে মিষ্টুকে জোর করে খাওয়াতে শুরু করে!রাসেল একটা সোফাতে বসে বসে দেখছে! মিষ্টু ছোট বাচ্চাদের মত খাচ্ছে! মিষ্টুর মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলে…
মিষ্টুঃআর খাবো না ভাইয়া! আমার বমি পাচ্ছে
মুহিতঃএকদম বাহানা করবে না!মেডিসিন আছে তারাতারি খাবার শেষ করো?
মিষ্টুঃইয়াকক্ (মুখ ধরে বেসিনের সামনে গিয়ে)
মুহিতঃএই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারি না!জর আসলেই বমি করে একাকার করবে!
–
রাসেল উঠে মিষ্টুর কাছে গিয়ে দুইহাত দিয়ে মিষ্টুর মাথা চেপে ধরে!মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকায় আর মুহিত এসে মিষ্টু মুখ ধুয়ে দেয় আর ওকে সোফাতে বসায়।মিষ্টুর আম্মু এসে মিষ্টুকে বকা দেওয়া শুরু করে কারন মিষ্টু জর এসেছে ও সাওয়ার নিয়ে চুল ভালো করে মুছে না!আর শুকায়ও না আর এজন্য ঠান্ডা লাগছে আর জর এসেছে।মিষ্টু ওর আম্মুর বকা শুনে ভ্য ভ্য করে কেঁদে দেয়। রাসেল হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।মুহিত এসে মিষ্টুকে দুইটা মিষ্টি খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেয়!ওদিকে মুহিতের আজকে সিলেট যাওয়ার কথা মিষ্টুর জর এভাবে রেখে কি করে যাবে।
–
রাসেল মুহিতকে যেতে বললো কারণ সিলেটে মুহিতের অফিসের অন্য যে একটা শাখা আছে ওটাতেই হঠাৎ করে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে।মুহিত মিষ্টুর জরের কথা শুনে যেতে চাইছিলো না বাট রাসেল মুহিতকে বোঝালে তারপর মুহিত রাজি হলো!মিষ্টু টেডিকে জড়িয়ে ধরো ঘুমাচ্ছে মুহিত মিষ্টুর রুমে এসে কপালে আদর দিয়ে তারপর ওর আম্মুর থেকে বিদায় নেয়।রাসেল নিচে নামে মুহিতকে এগিয়ে দেওয়া জন্য তখন মুহিত রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে…
–
মুহিতঃরাসেল সাবধানে থাকিস! আর আম্মুর আর মিষ্টুর দিকে খেয়াল রাখিস ভাই।
রাসেলঃতুই চিন্তা করিস না আমি আছি!আমার জান থাকলে ওদের কিছু হতে দিবো না।
মুহিতঃজানি ভাই! আর শোন মিষ্টুর কথাতে কিছু মনে করিস না!ও কখন কি বলে নিজেও জানেনা।
রাসেলঃআরে না ওসব নিয়ে তুই ভাবিস না।সাবধানে যাবি (মুহিতকে জড়িয়ে ধরে)
মুহিতঃহুমমম (রাসেলকে জড়িয়ে)
–
মুহিত চলে গেল আর রাসেল গেট লক করে দিয়ে মুহিতের আম্মুর সাথে কথা বলে ওর আম্মুর রুমে চলে গেল।মুহিতের আম্মু প্রেশারে মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পড়লো!রাসেল ওর লেপটপ নিয়ে কিছুসময় কাজ করতে৷……
–
রাত তখন প্রায় ১ টা বাজে…তখন রাসেলের হুট করে মিষ্টুর কথা মনে পড়ে। রাসেল মিষ্টুর রুমে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না তারউপরে মুহিতও নেই।রাসেল যেতে চাচ্ছিলো মিষ্টুর জর কমছে কি না দেখার জন্য! বাট একটা ব্যাচালার ছেলে এত রাতে একটা একটা মেয়ের ঘরে যাওয়াটা ভাল দেখায় না।রাসেল পানি খাওয়ার জন্য ওর রুম থেকে বের হতেই মিষ্টুর রুম থেকে কেমন গোঙানির আওয়াজ পায়! এবার রাসেল সাহস করেই মিষ্টু রুমের দিকে পা বাড়ায় তারপর মিষ্টু রুমে ঢুকে কাপা কাপা হাতে মিষ্টুর কপালে হাত দিয়ে দেখে প্রচন্ড জর মিষ্টুর। রাসেল সাথে সাথে মুহিতকে ফোন দেয় মুহিত ট্রেনে করে যাচ্ছিলো…..
–
মুহিতঃকি রে ঘুমাস নি তুই?
রাসেলঃভাই একটা পারমিশন নেওয়া জন্য তোরে ফোন দিলাম।আমার মনে হচ্ছে তোকে না জানিয়ে কাজ টা ঠিক হবে না এজন্য ফোন দিসি।(আমতা আমতা করে)
মুহিতঃকি হয়েছে বল ভাই?আম্মু আর মিষ্টু ঠিক আছে তো(উওেজিত হয়ে)
রাসেলঃনা মানে আসলে
মুহিত ঃভণিতা করিস না ভাই!প্লিজ বল না কি হয়েছে?
রাসেলঃআমি পানি খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হতেই মিষ্টুর রুম থেকে গোঙানির আওয়াজ পায় তারপর রুমে ঢুকে দেখি মিষ্টু জরে কাঁপছে ওর খুব জর বেড়েছে। মামনিকে ডাকিনি উনি এমনিতেই হাইপ্রেশার ওর মানুষ তাই….
মুহিতঃবোনের আবার জর বাড়ছে! আমার আসাটাই উচিত হয় নি….
রাসেলঃতুই টেনশন করিস না!আমি আছি তো। আর তোর থেকে একটা পারমিশন চাইতেই তোকে ফোন দিসি
মুহিতঃকিসের পারমিশন? (অবাক হয়ে)
রাসেলঃতুই যদি কিছু না মনে করিস তো আমি কি মিষ্টুকে কপালে পানিপট্টি দিবো।(আমতা আমতা করে)
মুহিতঃহুমম ভাই দে তারাতারি কর না! তোর দায়িত্বে ওদের রেখেছি যেটা ভাল হবে তুই কর।তোর উপর আমার বিশ্বাস আছে ভাই।
রাসেলঃ আচ্ছা তুই টেনশন করিস না!আমি আছি.. আচ্ছা তোকে আমি একটু পর ফোন দিয়ে আবার জানবো মিষ্টুর জর কমছে কি না?
মুহিতঃওকে
–
রাসেল মিষ্টুর রুমে গিয়ে ব্ল্যাকেট টা সরিয়ে মিষ্টু কপালে পানিপট্টি দিতে থাকে।ঠান্ডা পানি শরীরে পড়তেই মিষ্টুর কেঁপে ওঠে যায়। আর রাসেলের হাত চেপে ধরে। রাসেল রুমাল ভিজিয়ে কপালে রেখে আশপাশে তাকিয়ে টাওয়াল খুজতে থাকে! খুজে না পেয়ে ওর টাওয়াল টাই ভিজিয়ে আনে আর ব্ল্যাকেট সরিয়ে মিষ্টুর গলা,, হাত,, পা মুছে দেয়।টাওয়ালে দিয়ে মোছার জন্য আরো কাঁপুনি বেড়ে যায় মিষ্টুর। জরের ঘোরে মিষ্টু রাসেলকে মুহিত ভেবে রাসেলের কোমর জড়িয়ে ধরে আর কাঁপা কাঁপা গলাতে বলে থাকে..
–
মিষ্টুঃভাইয়া আর ঠান্ডা পানি দিও না প্লিজ!আমার খুব শীত করছে প্লিজ ভাইয়া আর দিও না..(কাঁপা কাঁপা গলাতে….)
রাসেলঃ মিষ্টু না মুছে দিলে তো জর যাবে না!
মিষ্টুঃনা ভাইয়া আর দিও না
–
মিষ্টু রাসেলের কোমর জড়িয়ে ধরে আছে!মিষ্টুর শরীর খুব গরম থাকায় রাসেলের শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে।মিষ্টু রাসেলের পেটে মুখ গুজে শুয়ে আছে।রাসেল কি করবে ভেবে পাচ্ছে না!তবে রাসেলের মনে খারাপ কোন চিন্তা আসে নি। রাসেল কিভাবে মিষ্টুর জর কমানো যায় কি করে সেটা নিয়েই ভাবছে।রাসেল মিষ্টুকে ওর থেকে সরিয়ে বালিশের শুইয়ে দেয় আর জোর করে মিষ্টুকে পানি খাওয়ায়।আর বসে বসে কপালে পানিপট্টি দিতে থাকে! অনেকটা সময় পর মিষ্টুর জর কমে তখন রাসেল মুহিতকে ভিডিও কলে দেখায় আর বলে মিষ্টুর জর কমছে। তারপর মুহিত নিশ্চিত হয় আর রাসেলকে ধন্যবাদ জানায়।
–
রাসেল মিষ্টু ঘুমন্ত মুখে দিকে তাকিয়ে আছে!আর মনে মনে ভাবছে,…
রাসেলঃ নিদ্রাকুমারী তোমাকে যে বড্ড বেশি ভালবেসে ফেলেছি আমি!তোমার পারমিশন বা তোমার বাসার কারো পারমিশন ছাড়া তোমাকে আমি টার্চ করতে চাইনি।আমি তোমাকে এখনো বৈধভাবে নিজের করে পাইনি এজন্য মুহিতের পারমিশন নিলাম।আমি খুব তারাতারি তোমাকে বৈধ ভাবেই নিজের করে নিবো নিদ্রাকুমারী! তুমি কবে বুঝবে আমি তোমার প্রতি কতটা দূবল। তোমার দুষ্টুমি,, তোমার সরলতা, রাগ,সব কিছুর মিলিয়ে তুমি অসাধারণ একজন মানবী।মিষ্টু তুমি কবে বুঝবে আমার মনে কথা!তবে আজ বেহায়া মনটা অন্য কিছু চাচ্ছে,,,, আমি যে নিজেকে কিছুতেই আটকাতে পারছি না।আমাকে মাফ করে দিও নিদ্রাকুমারী।আমার জানা নেই আজকে পর তোমাকে এত কাছে থেকে দেখার সুযোগ পাবো কি না… তাই
–
রাসেল মিষ্টুর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়!তারপর বেশ কিছুক্ষন মিষ্টুর মাথাতে হাত বুলিয়ে দেয়।রাসেল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৪ঃ৩০টা বাজে!রাসেল মিষ্টু ব্ল্যাকেট টেনে দিয়ে আর এসি বন্ধ করে দেয়। তারপর ওর রুমে চলে যায় আর মিষ্টুর কথা চিন্তা করতে করতেই একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
–
পরেরদিন সকালবেলা মিষ্টু ভাঙে ৬ঃ৩০ দিকে!এখন জর আর নেই বললেই চলে।মিষ্টু ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে বাগানে যায়।আর……
রাসেলের ঘুম ভাঙে কারো ঝগড়ার আওয়াজ শুনে!রাসেল হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠে। কারন চিৎকার শুনেই বোঝা যাচ্ছে মিষ্টুর গলার আওয়াজ!না জানি এই সকালবেলা কি অঘটন করে বসলো কে জানে?
চলবে….