এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_17 🍁🍁

0
1068

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_17
🍁🍁

________ওইদিকে আলো আর মেঘ দুজনে বকা খেয়ে ভীতু বিড়ালছানা মত বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে!কারো মুখে কথা নেই দুইজনের মুখটা চুপসে যাওয়ার বেলুনের মত…. মেঘ বলে উঠলো…!!

মেঘঃবউমনি দাভাইয়ের বকা খেয়ে এখন তোমার কেমন ফিলিংস হচ্ছে??

আলোঃ খুব খারাপ মেঘবাবু!আমাকে তোমার দাভাই শুধু শুধু বকা দেয়।(নাক টেনে টেনে)

মেঘঃ তুমিও একদিন দাভাইকে বকা দিয়ে সব শোধ করে দিও কেমন!আচ্ছা বউমনি এখন একটা কথা বলবো..!!

আলোঃ হুমম বলো!

মেঘঃ বাসায় বড় বোন বা বড় ভাই থাকা আর বাঁশের বাগান থাকা ওই একই ব্যাপার!বড় ভাই বা বোন যদি পড়াশোনাতে ভালো হয়! তাহলে আমাদের ছোটদের জন্য আরো এক ডজন বাঁশ ফ্রি ধরে রাখো।দাভাইয়ের জন্য আম্মুর কাছে আমি বাঁশ খেতে খেতে আমি পুরাই বাঁশখোর হয়ে গেলাম।আর ভাল্লাগেনা এ জীবনডার প্যারা!আমার এই জীবনডাই বেদনা….

আলোঃ হুমম একদম ঠিক বলছো..!

মেঘঃ বউমনি চলো তুমি আমি মিলে দাভাইকে কিলাই আসি।তারপর দাভাইকে বারান্দায় দিয়ে নিচে ফেলে দেই..!!

আলোঃ তোমার দাভাইয়ের সামনে গেলে আমার শরীর কাঁপতে থাকে আর গলা শুকিয়ে যায় মেঘ।

মেঘঃ আচ্ছা সুয়েটার পড়ে নাও তাহলে আর কাঁপবে না।

আলোঃ এই গরমে আমি সুয়েটার পড়বো কেন?আর তোমার দাভাই আস্ত একটা জলহস্তী’! ওরে তো তুললেই পারবো না।তাহলে বারান্দায় দিয়ে ফেলবো কিভাবে…??

মেঘঃ ওহহ তাই তো।

রোদের এখন সাওয়ার নেওয়ার দরকার !কারন ওর মাথাটা খুব গরম।তখন রোদ আকাশের মুখে সব শুনে নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারে না!রোদ বাইক নিয়ে ঐশী বাসায় যায়!রোদের রাগ খুব খারাপ এটা আকাশরা জানে! তাই ওরাও বেশ কয়েকজন মিলে রোদের সাথে যায়!রোদ ঐশীর বাসায় গিয়ে অনবরত কলিংবেল বাজাতেই আছে!ঠিক তখন বিরক্ত হয়ে ঐশী দরজা খুলে রোদকে দেখে অবাক হয়ে যায়!রোদ সাথে সাথে ঐশীকে থাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারে!ঐশী তাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে যায়!রোদ আবার ঐশীকে মারতে গেলে আকাশরা রোদকে থামায়….

রোদের চিৎকারে ঐশী বাবা মা দৌড়ে আসো!ঐশীর বাবা রোদের পূর্ব পরিচিত!ঐশীর বাবা রোদকে দেখে জিজ্ঞাসা করে….

ঐশী বাবাঃ রোদ বাবা তুমি এখানে? আর কি হয়েছে??(অবাক হয়ে)

রোদঃ কি হয়েছে সেটা আপনার এই বেয়াদব মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন??(দাঁতে দাঁত চেপে)

ঐশীঃ ওই ফালতু মেয়েটার জন্য তুমি আমার গায়ে হাত তুললে রোদ…..!!(এক গালে হাত দিয়ে)

রোদঃ তোর সাহস কি করে হয় আমার কলিজার গায়ে হাত দেওয়ার! আবার এখন তুই ওকে বলছিস ও ফালতু। আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো।এতদিন তোকে অনেক ছাড় দিয়েছি শুধু মেয়ে বলে! বাট আর কোন ছড়াছাড়ি হবে না..!! (আর দুইটা চড় মেরে আর হাত দিয়ে পাশের একুরিয়ামে আঘাত করে চিৎকার করে বলে)

একুরিয়াম ভেঙে পানি গুলো পুরো রুমে ছড়িয়ে গেছে!একুরিয়ামে থাকা মাছ গুলো মেঝেতে পড়ে লাফাচ্ছে।রোদ কিছুতেই ওর রাগ কনট্রোল করতে পারছে না।পাশের সেন্টার টেবিলে এক লাথি দিতেই সেন্টার টেবিলটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আকাশ ঐশীর বাবাকে সব বলে!ঐশী বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে!রোদ ঐশী বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে…

রোদঃ আংকেল আপনি রাজনীতি করেন সবাই জানে!আর আপাতত যে পদে আছেন সেটাও হারাবেন যদি আপনার মেয়ে একই ভুল আবার করে।কেউ না জানুক আপনি তো জানেন রোদ মেহবুব আসলে কি??তাই বলছি মেয়েকে সামলান! আর আমাকে চেতানো ফল বড্ড বেশি খারাপ হবে।লাস্ট ওয়ানিং দিয়ে গেলাম! যদি কালকে আপনার মেয়ে গিয়ে আলো সরি না বলে তো!….. তো সেটা কালকেই আপনাকে আপনার শখের পদ ত্যাগ করতে হবে। মাইন্ড ইট…..!!(রেগে গিয়ে)

ঐশীঃরোদ আই লাভ ইউ! আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি! প্লিজ একবার আমার কথা ভাবো।

রোদঃ হা হা হা! তোর মত মেয়েকে ভালবাসবে রোদ মেহবুব!যার একসাথে ৭ টা ছেলের রিলেশন চলে।ঐশী তোকে লাস্ট ওয়ানিং দিলাম আলোর থেকে দুরে থাক!ওকে কষ্ট দিলে এবার তোর ছাড় নাই….!!

ঐশীর বাবাকে এমন বড় নেতা হওয়ার সুযোগ রোদই করে দিয়েছিলো!কারন বড় বড় নেতারা রোদের পূর্ব পরিচিত! রোদকে দেখে অনেক রাজনীতিতে আসার অফার করেছিলো! বাট রোদ নিজেকে এসবে মধ্যে জড়ায় নি! আর ঐশীর বাবা রাজনীতিতে একটা বড় পদে ঢুকতে চেয়েও ঢুকতে পারছিলো না! এজন্য উনি রোদকে আগেই বলে রেখেছিলো!আর রোদই এভাবে উনাকে বড় নেতা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলো…!!আর রোদের যে কেমন রাগী একটা ছেলে কিছু দিন উনি খুব ভালো করেই বুঝে গেছে….!!

রোদরা ঐশীর বাসা থেকে বের হয়ে আসে!তখন সিয়াম জোর করে রোদকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়!কারন তখন একুরিয়ামে আঘাত করাই একুরিয়ামের কাঁচ ভেঙ্গে রোদের হাতে ঢুকে গেছে।
ডাক্তার রোদের হাতের ঢুকে থাকা কাঁচ গুলো বের তারপর পরিষ্কার করে হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তারপর রোদ বাসায় চলে আসে…!!

রোদ অনেকটা সময় নিয়ে সাওয়ার নিয়ে বের হলো! তারপর ড্রেস বদলে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর সাদা একটা গেন্জী পরে রুমের বাইরে গেল!রোদ আলোর রুমে ঢুকে দেখে মেঘ নেই! আলো বেডের উপর বসে নখ কামড়াচ্ছে…!!

রোদঃ এই মেয়ে নখ খাচ্ছো কেন??এটা খুব বাজে অভ্যাস একটা।(দাঁতে দাঁত চেপে)

আলোঃভা ভাই ভাইয়া আপনি..?? ক ক কিছু লা লা লাগবে।

রোদ আলোর দিকে এগিয়ে যায়! তারপর বেডের উপরে রাখা মেঘের স্কেলটা হাতে নিয়ে রাগী চোখে আলোর দিকে তাকায়! আলো ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে পিছিয়ে যায় আর কাপতে থাকে!রোদ আলোকে আরো ভয় পাইয়ে দিতে স্কেল দিয়ে বেডের উপর জোরে জোরে বেশ কয়েকটা বারি দিলো!আলো চোখের পলক ফেললেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়বে আলোর গাল বেয়ে!আলো গলার দিয়ে কথা বের হচ্ছে না!মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে।রোদ দাঁতে দাঁত চেপে আলোকে বললো…

রোদঃ তুমি তখন মেঘকে কি পড়াচ্ছিলে…(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃ ক ক কখন
রোদঃ আমি এর আগে যখন রুমে ঢুকছিলাম!নিজের পড়া বাদ দিয়ে ম্যাম সাজা হচ্ছে তাই না।
আলোঃবা বা বাংলা অনুবাদ আর শব্দার্থ পড়াচ্ছিলাম।
রোদঃ এই মেয়ে তুমি কি নিজে পড়তে পারো? যে মেঘকে তুমি পড়াচ্ছিলে বলো (বেডে আরেকটা
বারি মেরে)
আলোঃ আম আমম মা মানে
রোদঃ বেশি পড়া শিখে গেছো তাই না!এবার আমি তোমাকে পড়া ধরবো! যদি না পারো তো তোমাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।(দাঁতে দাঁত চেপে)

আলোঃ……

রোদঃ “আমি খুব সুদর্শন ছেলে” এটা ইংলিশে ট্রেনেসলেশন করো..!!
আলোঃ….
রোদঃ কি হলো বলবে নাকি মার খাবো বলো(জোরে ধমক দিয়ে)
আলোঃ ইউ আর এ ভেরি হ্যা হ্যান্ডসাম বয়(ভয়ে ভয়ে )
রোদঃ আমি তোমাকেই ভালবাসি..
আলোঃআই ডু লাভ ইউ
রোদঃ তুমিই আমার বউ হবে
আলোঃইউ উয়িল বি মাই ওয়াইফ
রোদঃ আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি(শান্ত সুরে)
আলোঃ আই আই
রোদঃ বলবে নাকি মার খাবে!এটা না পারলে তোমাকে এখন মেরে প্রতিবন্ধী করে দিবো।

আলোঃ আই রিয়েলি লাভ ইউ (চোখ মুখ খিচে)

রোদঃ হুমমম আপাতত হয়েছে! আজকের মত ছেড়ে দিলাম। এর পর যদি আমার থেকে কোন কথা লুকিয়েছো তো। তখন শাস্তি কাকে বলে সেটা দেখাবো…!!

রোদ আলোর রুমে থেকে বের হয়ে ওর রুমে ঢুকতে যাবে! তখনই রোদের আব্বু পেছন থেকে বলে উঠলো।

রোদের আব্বুঃ উহুম! উহুমম! আমার ছেলে তো দেখি ভালোই টিচারগিরি করতে পারে।বাহ্ দারুন তো

রোদঃ না মানে আব্বু (লজ্জা পেয়ে)

রোদের বাবাঃ থাক আব্বু তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না!আমিও এইকথা কাউকে কিছু বলবো না! তুমি তোমার ক্লাস চালিয়ে যাও।তবে মেয়েটা তোমাকে খুব ভয় পাই! এভাবে ভয় দেখিও না।তাহলে ভালবাসার ভ ও তোমার কপালে জুটবে না।হা হা হা

রোদঃহুমম (মুচকি হেসে)

তারপর রোদ আর ওর বাবা ছাদে গিয়ে গল্প জুড়ে দেয়!রোদ ওর বাবাকে সব কথা শেয়ার করে।রোদ ওর আম্মুকেও অনেক কথা বলে বাট সবটা বলে না! কারন রোদের আম্মু সব সময় উল্টো বুঝে তুলকালাম বাধিয়ে বসে থাকে!রোদ আর রোদের বাবা প্রায় দিন বাবা ছেলে মিলে খোলা আকাশের নিচে বসে সাথে গরম ধোঁয়া উঠা কফি নিয়ে গল্পে মেতে উঠে।রোদের বাবা বিজনেস নিয়েও রোদের সাথে আলোচনা করে! রোদের বাবার ভাষ্যমতে রোদের থেকে ইউনিক কিছু ধারণা পাওয়া যায় যেগুলো করলে বিসনেজ টাকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব….. আর হয়েছেও তাই।

রাত সাড়ে দশটার দিকে সবাই এক সাথে খেতে বসে।আলো আর একবারো রোদের দিকে তাকায় নি!কেন তাকাবে শুধু শুধু রোদ আলোকে বকা দেয়, আলোও চিন্তা করছে রোদের সাথে আর কোনদিন কথা বলবে না।রোদ বেশ কয়েকবার আলোর দিকে তাকিয়েছে।সবাই খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়!আলো বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের ঢাকা দেখছে! রাত এগারটা বাজে তাও এত গাড়ি যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে! মাঝে মাঝে ফুরেফুরে বাতাস এসে গায়ে লাগছে! আকাশের তারা গুলো জ্বল জ্বল করে জ্বলে জানান দিচ্ছে ওরাও জেগে আছে….!!

আলো খোলা চুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে!মাঝে মাঝে দমকা বাতাস এসে চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে! বাগান থেকে হাসহেনা ফুলের গন্ধে চারদিকে ছড়িয়ে গেছে!

আলো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে…

_______এই শহরে সুখ আছে..!!
__________কিন্তু নেই কোন শান্তি ..!!
_______এখানে রুপের কদর করতে সবাই পারে..!!
_______কিন্তু মনের খবর কতজনই বা রাখে ..!!
____এখানে সবকিছু থেকেও শূন্য রয়েছেঅনেককিছু
____এখানকার মানুষ টাকা ছাড়া বোঝেনা কোনকিছু
______তাই সবাই দ্রুতগতিকে ছুটতে থাকে টাকার ___________পিছুপিছু!!

#আলোমনি______!!

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here