এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_42

0
842

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_42
🍁🍁

রোদঃআরে ব্যস্!এখন দেখি আমার বিড়াল আমাকেই বলে ম্যাউ…(আলোর দিকে তাকিয়ে)

তারপর আলো রোদকে খাইয়ে দিলো!রোদের হাতের বাঁধন মেঘ এত হালকা করে বেঁধেছিলো যে রোদের জন্য খোলা এটা কোন ব্যাপার না।মেঘ ভাব নিয়ে রোদের দিকে এগিয়ে এসে রোদের হাতের বাঁধন খুলো দিলো। তারপর আলো আর মেঘ নিচে চলে গেল।আর এভাবে ওদের সময় গুলো কাটতে লাগলো…!!

২দিন পর________!!

আজকে রোদের বাবা মায়ের ঢাকার ফিরার কথা!এই দুই দিন রোদ ওর পড়াশোনা নিয়েই বিজি ছিলো!মাঝে মাঝে আলো আর মেঘ রোদের কাছে গিয়ে রোদকে রাগিয়ে দিয়ে আসতো!এখন আলো রোদকে আগের মত ভয় পাই না এখন বরং মেঘ আর আলো মিলে রোদকে হেনেস্তা করে।আলোর রোদের আম্মুকে ফোন দিলো…!!

আলোঃ হ্যালো আম্মু তোমরা কখন আসবে??

আম্মুঃকেন রে?আমি গিয়ে কি করবো? তোর সংসার তুই এবার সামলে নিতে শিখ।আমি আর ফিরবো না(মুচকি হেসে)

আলোঃ তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না আম্মু! তারাতারি তোমরা ফিরে এসো..??

আম্মুঃহুমম একটু পরেও আমরা গাড়িতে উঠবো!তা আমার দুই রাজপুত্র কই??

আলোঃ সারাদিন তো দুই জন মিলে কুস্তি করে এখনো তাই ই করছে।

আম্মুঃ হা হা হা!আমি এতদিন দেখছি এবার তুই দেখ..!!

মেঘঃ আম্মু দাভাই আমাকে মারছে খুব!তুমি তারাতারি চলে এসো তো (ফোন কেড়ে নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে)

আম্মুঃ আব্বাজান আপনি কি এমন রাজ কার্য করছিলেন যে এত হাঁপাচ্ছেন…!

মেঘঃ মারামারি করছিলাম আম্মু (দাঁত বের করে)

আলোঃ আম্মু তোমার দুইটা ছেলে এত দুষ্টু বলার বাইরে।একটাও কথা শোনে না…(নাক ফুলিয়ে)

আম্মুঃ এখন ওদের সব দায়িত্ব তোর! তাই তুই সামলে নে আম্মু। আমি আর এসবের মধ্যে নেই।

আলোঃ আম্মু তারাতারি এসো তোমরা কেমন!আর হ্যা সাবধানে আসবে..(মুচকি হেসে)

আম্মুঃ হুমম!তোরাও সাবধানে থাকবি..!!
আলোঃ আচ্ছা..!!

আলো ফোনে কথা বলা শেষ করে রান্না ঘরে চলে গেল!রোদের রুমে মেঘ আর রোদ মারামারি করছে।রোদ সকাল থেকেই মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো! কিন্তু মেঘ গিয়ে রোদকে কামড়ে,খামছি দিয়ে, চুল এনে ওর সাথে মারামারি করতে বাধ্য করেছে!রোদের সাথে যখন মেঘ পারছেনা এখন দৌড়ে এসে আলোর কাছে রোদের নামে বিচার দিয়ে যাচ্ছে মেঘ!আবারও মেঘ এসে রোদের নামে আলোর কাছে বিচার দিয়ে গেল!এই নিয়ে রোদের নামে ১৪ বার হলো মেঘের বিচার দেওয়া! আলো গ্যাসের চুলার পাওয়া কমিয়ে দিলো! তারপর পাশে থেকে ডাল ঘুটনিটা হাতে নিয়ে রোদের রুমে দিকে হাটা ধরলো…!! রোদ মেঘের প্যান্ট ধরে টানাটানি করছে আর মেঘ শক্ত করে ওর প্যান্ট ধরে গলা ফাটিয়ে চিৎকুর করছে!মেঘের চিৎকার করা দেখে রোদ হো হো হাসছে। আলো ওর হাতের ডাল ঘুটনিটা দিয়া ধরাম করে একটা শব্দ করলো!মেঘ আর রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো আর দুজনেই আলোর হাত ডাল ঘুটনি দেখে মারামারি থামিয়ে চুপ করে ভদ্র বাচ্চার মত বসে রইলো..!!

আলোঃ এসব কি???(রেগে গিয়ে)

মেঘঃআমি কিছু করিনি সব দাভাইয়ের দোষ

রোদঃ আমিও কিছু করিনি(বাচ্চাদের মত করে)

আলোঃ সকাল থেকে চার বার রুম গুছালাম তারপরেও তোমরা রুমে কি অবস্থা করছো (জোরে)

মেঘঃ আমি এমন করিনি! আমি শুধু ডিগবাজি দিসি

আলোঃ তারাতারি রুম গুজাবে দুজন মিলে। তা না হলে এই ডাল ঘুটনি দিয়ে আজকে তোমাদের ডালের মত ঘুটে নিয়ে টানা রোদে শুকাতে দিবো। (নাক ফুলিয়ে রেগে গিয়ে)

রোদঃ বাব্বা!আমার বউ তো দেখি শাষণও করতে পারে বুঝি..!!(দুষ্টু হেসে)

আলোঃ আব্বু আম্মু আসছে আমাকে রান্না করতে হবে!আপনারা দুইজন তারাতারি করে রুম গুছিয়ে নিবেন।আর যদি কোন হাউকাউয়ের শব্দ শুনি তো কে দোষ করলো দেখবো না!এসেই….!! (ডাল ঘুটনি দেখিয়ে)

আলো কথাটা বলে চলে গেল!রোদ আর মেঘ রুম গুছাতে শুরু করলো!রোদের আব্বু রোদকে ফোন দিলো তারপর মেঘ আর রোদ দুজনের সাথে কথা বললো!রোদের আব্বুরা গাড়িতে উঠেছে তাই রোদকে জানালো।রোদ ওর বাবাকে সাবধানে আসতে বললো..!!রোদ আর মেঘ রুম গুছিয়ে নিচে গেল।রোদ হাতে বই নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে বইয়ে পাতাতে চোখ বুলাচ্ছে আর মেঘ বসে ডোরাকেক খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।আলো রান্না ঘরে রান্না করছে।রকি মেঘের পাশে বসে মেঘের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে!আলো এসে রোদকে একমগ কফি দিয়ে গেল!রোদ কফি খাচ্ছে আর বইয়ের পাতায় চোখ বুলাচ্ছে!এর মাঝে আকাশ রোদকে ফোন দিলো…!!

রোদঃ হুমম বল..!!(ফোন রিসিভ করে)

আকাশঃকই তুই

রোদঃ বাসায়

আকাশঃ সারাদিন বাসায় কি করিস রে তুই শালা??
রোদঃ বউ পাহারা দিচ্ছি (বাঁকা হেসে)

আকাশঃ এজন্য গুনি লোকেরা বলে বিয়ে করলে বন্ধুরাও পর হয়ে যায়।আজকে বুঝলাম রে বন্ধু (আফসোসের সুরে)

রোদঃহুমম!আপনার পেছন পার্টে লাথি দিমু এত বেশি বোঝার জন্য! আর লাথিটা আপনি নোবেল হিসেবে গ্রহন করবেন কেমন…!! (হেসে হেসে)

আকাশঃ থাক!তোমার আর বের হওয়া লাগবে না বন্ধু! তুমি বাসাতেই থাকো!আংকেলরা কবে ফিরবে..??

রোদঃ আজকে ফিরবে..!!

আকাশঃ আচ্ছা তাহলে থাকো বন্ধু তুমি বউ পাহারা দাও।আমরা তো আর সেই কপাল করে পয়দা হয়নি। এখন আমরা একবার পেছনে থাবড় দেই! আর একবার কপালে থাবড় দেয়। এটা দেখে যদি বাবা মা দয়া কইরা একখান বিয়া দেয় তো…!!

রোদঃ হা হা হা! হুম হুম এটাই কর আর এটাই বেটার হবে..!!বেস্ট অফ লাক..!(হেসে হেসে)

আকাশঃওকে কি আর করা!থাক তাহলে কেমন!বাই
রোদঃ হুমম!বাই

রোদ উঠে ওর রুমে গিয়ে সাওয়ার নিলো!তারপর একটা ঘুম দিলো।রাতে অনেকটা সময় পড়াশোনা করে এজন্য ঘুম পুরা হয় না।আলো ওর হাতের কাজ শেষ করে মেঘকে গোসল করিয়ে নিজেও গোসল সেরে নিলো!আলো রোদকে খেতে ডাকতে এসে দেখে রোদ ঘুমাচ্ছে তাই আলো আর ডাকলো না রোদকে!আলো খাবার নিয়ে মেঘকে খাইয়ে দিয়ে মেঘের রুমে মেঘকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।মেঘের সাথে বকবক করতে করতে আলো নিজেও ঘুমিয়ে পড়ছে কখন টের পায়নি…!!

২ ঘন্টা পর রোদের ফোন একটা ফোন আসে!ওয়ার্ডড্রেপের উপর ফোন থাকায় রোদেরও ইচ্ছে করছে না উঠে ফোনটা রিসিভ করতে!এভাবে তিনবার কল কেটে যাওয়ার পর, আবার রোদের ফোনের রিংটোনটা বাজতে থাকে!রোদ উঠে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর বাবার গাড়ির ড্রাইভার ফোন করছে!রোদ কল রিসিভ করে কানে ধরে হ্যালো বলতে…!!

রোদঃ হ্যালো…!!

ড্রাইভারঃ রোদ বাবা গো সর্বনাশ হয়ে গেছে (কেঁদে কেঁদে)

রোদঃ ক ক কি হয়েছে আংকেল?আপনি কাঁদছেন কেন???(কাঁপা সুরে)

ড্রাইভারঃ রোদ বাবা আমাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে রোদ বাবা! স্যার আর মেডাম আর নাই গো রোদ বাবা!গাড়িটা পাহাড় থেকে খাদে পড়ছে..!
(কেঁদে)

রোদঃ ম ম মানে ক কি সব যাতা বলছেন?আমার আব্বু আম্মু নেই মানে কি ড্রাইভার আংকেল ( চিৎকার করে কেঁদে দিয়ে)

ড্রাইভারঃ আমি গাড়ি থেইকা লাফ দিসি কিন্তু স্যার মেডাম নামার আগেই গাড়ি পাহাড় থেইকা খাদে পড়ছে..!! (কেঁদে কেঁদে)

রোদঃ আ আ আপনি এখন কোথায়??? আমি এক্ষুনি সেখানে যাবো??

ড্রাইভারঃআমি রামগড় আছি রোদ বাবা (কেঁদে কেঁদে)

রোদঃ আম আম আমি এখুনি আসছি

রোদের চিৎকার শুনে মেঘ আর আলো ঘুম থেকে এক লাফে উঠে রোদের রুমে দৌড়ে যায়!রোদকে কাঁদতে দেখে আলো কিছু বুঝতে পারেনা।রোদ ওর গাড়ির চাবি নিয়ে এক হাতে আলোর হাত আর আরেক হাতে মেঘের হাত ধরে জোরে পা চালিয়ে নিচে নেমে যায়!রোদ শিউলি বাসায় থাকতে বলে আলো আর মেঘকে নিয়ে রোদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে..!!রোদ বার বার চোখ মুছে তাও চোখ চোখের পানিতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে! আলো রোদের চোখে পানি দেখে জিজ্ঞাসা করেই ফেললো…!!

আলোঃক ক কি হয়ে রোদ???

রোদঃ ড্রাইভার আংকেল ফোন দিয়েছিলো।আব্বু গাড়িটা নাকি এক্সিডেন্ট করছে।

আলোঃ কিহহ

মেঘঃ আম্মু! আম্মুর কাছে যাবো আমি দাভাই(কেঁদে দিয়ে)

রোদঃমেঘ সোনা আব্বু আম্মুর কিছু হবে না। তুই একদম কান্না করবি না। আমরা ওখানেই তো এখন যাচ্ছি সোনা তুই কাঁদিস না ভাই আমার (মেঘের চোখ মুছে)

রোদের কথা শুনে মেঘ কেঁদে দেয়!আলো, মেঘ, রোদ তিনজনের চোখ দিয়েই অঝোরে পানি পড়ছে!সবাই একটা চিন্তা করছে যেন এসব কিছু মিথ্যা হয়।রোদ খুব দ্রুত ড্রাইভ করছে!ঢাকা থেকে রামগড় প্রায় ৪ ঘন্টার রাস্তা! অতি দ্রুতি ড্রাইভ করাতে রোদ ৩ ঘন্টায় এসে পড়ছে!রোদ ড্রাইভার আংকেলকে ফোন দিলো। ড্রাইভার আংকেল এক্সিডেন্টের জায়গায় নিয়ে গেল!ড্রাইভারে মাথা ফেটে গেছে স্থানীয় লোকে ড্রাইভার আংকেল কে কাছের হাসপাতালে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।

রোদ সেই পাহাড়ে কাছে গিয়ে দেখে ওদের গাড়ির কোন চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।গাড়ি পাহাড় থেকে একদম পাহাড়ের নিচে পড়ছে!রোদ ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো!রোদ মেঘ দুইজনেই আহাজারি করে কাঁদতে শুরু করলো!আলো কাকে সামলাবে রোদকে নাকি মেঘকে নাকি নিজেকে…!!মেঘ আর রোদের কান্না ধ্বনি পাহাড়ে প্রতিধবনি হচ্ছে। ওদের তিনজনের এই কষ্টের আহাজারি কান্নার সাক্ষি এই পাহাড়,আকাশ আর গাছপালা…..!!ওদের কষ্ট এখন কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না! কারন যার যখন হারায় সেই তখন সেই কষ্টটার মর্ম বুঝে….!!

To be continue…..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here