এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_48 🍁🍁

0
809

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_48
🍁🍁

বিকাল সাড়ে ৪ঃ৩০ টার দিকে তিনজন ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলো!তারপর বাগানে কিছুসময় হাটাহাটি করলো!রোদ আলো মেঘ তিনজন মিলে ওদের বাগানের গাছগুলোতে পানি দিলো, আগাছা সাফ করলো।মেঘ তো বাগানে রকির সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে।

রোদ আর আলো বাগানে পেতে রাখা চেয়ারে বসলো।রোদ চেয়ার থেকে হুট করে উঠে আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে! আর আলোর দুই হাতের হাত রেখে বেশকিছু সময় আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো! বাট কিছু বললো না।আলো এখনো সেই সাহস হয়নি রোদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার তাই আলো রোদের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।তবে আলো একবার রোদের চোখের দিকে তাকাতেই বুঝে গেছে রোদের এই চোখের ভাষা! কারন এই চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে মুখে না বলা নিঃস্বার্থ কিছু ভালবাসার কথা।রোদের এই চোখের দৃষ্টিও এটাই বলে দিচ্ছে যে…”আমি তোমার পাশে আছি আর থাকবোও সারাজীবন ” ❤❤

রোদ কিছু বললো না বাট আবার চেয়ারে বসে পড়লো।তারপর একটু পরেই মাগরিবের আযান দিলো তাই ওরা বাসায় গিয়ে নামাজ আদায় করে নিলো।তারপর রাত প্রায় ৮ টার দিকে আবির,আকাশ,রিদি আর আশা রোদের বাসায় আসলো।সবাই এক সাথে ছাদে গিয়ে মাদুর পেতে আড্ডা দিতে শুরু করলো!আড্ডার মাঝখানে আলো কখন নিচে চলে গেছে কেউ খেয়াল করে নি!আলো আর শিউলি মিলে সবার জন্য কফি,পকোড়া,চিপ্স, আর মিষ্টি রেডি করে নিলো।আলো এই মধ্যেই রাতের খাবারের আয়োজনও করে ফেললো!আলো শিউলিকে নিয়ে ছাঁদে গেল সবাইকে নাস্তা গুলো দিলো…!!শিউলি চলে আসতে নিলে আলো শিউলি হাত ধরে বসিয়ে দিলো….!!

শিউলিঃ ভাবিমনি আমি নিচে যাই পিলিগ
আলোঃপিলিগ না কথাটা হবে প্লিজ!আর প্লিজ বললে হবে না! নিচে গিয়ে একা একা তুমি কি করবে শিউলি আন্টি।এখানে সবাই আছে তুমিও এখানে আড্ডা দাও ভালো লাগবে।
শিউলিঃ তোমরা আড্ডা দাও আমি নিচে যাইগা।
রোদঃ নিচে তো কেউ নেই.??
শিউলিঃআসলে হইলো গিয়া রোদ বাবা এহন শ্রীময়ী হইবো আমি যাইয়া শ্রীময়ী দেখি তোমরা আড্ডা দাও কেমন।
আলোঃ ওহহ এবার বুঝেছি। হা হা আচ্ছা তুমি যাও..
শিউলিঃ থানকুশ
মেঘঃ ওয়েলকুশ
সবাইঃহা হা হা

সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর হাসাহাসি করছে!এর মধ্যে আলো বলে উঠলো…!!
আলোঃ আপনাদের কারোর সাথেই আমার তেমন কথা হয়নি। আপনারা তো সেইম ইয়ারের তাই না(মুচকি হেসে)
আবিরঃ হুমম আমরা একই গোয়ালেরই গরু
রিদিঃ বল তোরা বলদ (হেসে)
আকাশঃ এই রিদি একদম ফাউল কথা বলবি না।
আশাঃ রিদি শুধু ফাউল কথা বলছিস কেন বলতো?ওরা তো বলদ না ওরা তো বুইড়া ষাড়।(দাঁত বের করে)
আবিরঃসব ফাউল কথা!আমার হলাম এখনো কচি বাচ্চা বুঝলি! তাই আমাদের এসব বলবি না।
আকাশঃ রোদ বিয়ে করেছে তাই রোদই শুধু ওর সতীত্ব হারিয়েছে।এছাড়া আমি আর আবির হলাম পিওর সিঙ্গেল
রিদিঃ ছেলে মানুষের সতীত্ব থাকে বুঝি ( চোখ বড় বড় করে)

আকাশের আর রিদির কথা শুনে আলো অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আর অবাক হওয়ার কারন এদের কথার এমন শ্রী দেখে।এর মধ্যে কফি খেতে খেতে রোদ ভীষম খেয়েছে! কারন বেচারা বিয়ের পর বউকে তেমনভাবে টার্চও করতে পারেনি এখনো,আর সে নাকি…….!! আলো উঠে রোদের পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলো।একটু পর রোদের কাশি থামলো! আলো রোদের পাশেই দাড়িয়ে থাকলো কারন রোদ রেলিংয়ের উপরেই বসে ছিলো।আলো রোদের পেটের কাছের টি শার্ট খামছে ধরে আছে।এটা যদিও কেউ এখনো খেয়াল করে নি।রোদ আলোর মুখে দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে???

আলোঃ হারাতে হারাতে আমি বড্ড বেশি ক্লান্ত।আপনিএখান থেকে সরে বসুন! আর না হলে আমাকে এভাবে ধরে থাকতে দিন।

আবিরঃ রোদ নিচে এসে বস ভাই! এভাবে বলার মানুষ পেতেও ভাগ্য লাগে??
রোদঃ হুমম….(মুচকি হেসে নিচে বসে পড়লো)
আকাশঃ তারপর রোদ আমরা চাচ্চু হবো কবে??
রোদঃ খুব তারাতারি (দুষ্টু হেসে)
আলোঃ আমি নিচে যাচ্ছি! (দৌড় দিয়ে)
আশাঃ আরে আলো যেও না!দিলি তো মেয়েটাকে লজ্জা পাইয়ে।তোরা আসলেই মানুষ হবি না।
আবিরঃযা বাব্বা!এখানে লজ্জার কি আছে শুনি?আমার জব টা হয়ে যাক তারপর দেখিস, আবৃতিতে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো। আর এক রাতেই তোদের আন্টি আংকেল করে দিবো। (ভাব নিয়ে)
আশাঃ আবৃতি এই কথা জানলে তোকে পুঁতে ফেলবে
আবিরঃ এই তোরা জানিস রবি কি করছে??
আবিরঃ ওই বাইনচো* এর কথা আর বলিস না তো বাল।শালা এক সপ্তাহ আগে ৩ হাজার টাকা ধার নিয়ে এখনো ফেরত দেয়নি…..!!

মেঘঃ যেতে যেতে পথে পূর্নিমা রাতে
চাঁদ উঠে ছিলো গগনে!
শালা,বাইনচো* চাঁদ উঠে ছিলো গগনে।

কেউ এতক্ষণ খেয়াল করেনি এখনো এখানে মেঘ বসে আছে!মেঘ রোদের ফোনে গেম খেলছে আর গান বলছে!আর মেঘের গান শুনেই সবাই ওর দিকে তাকায়!আবির আর আকাশ করুন দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ আবির আর আকাশকে বলে দিয়েছে রোদের বাসায় আসলে যাতে গালি দিয়ে কথা না বলে! কিন্তু আবিরের মুখ স্লিপ করে গেছে।আর বাচ্চাদের ভাল কোন কথা শিখাতে বসলে দেখবেন কাল ঘাম ছুটে যাবো কিন্তু ভাল কথাটা শিখাতে পারবেন না।বাট ওদের সামনে একটা গালি দেখবেন ফট করে ওরা ওটাই মুখস্থ করে নিবে।রোদ কৌশলে মেঘকে নিচে পাঠিয়ে দিলো।কারন এখন মেঘকে বকাবকি করলে ওটাই ও আরো বেশি করে বলবে।তাই রোদ মেঘকে পরে বুঝিয়ে বলবে ….!!মেঘ নিচে যেতেই রোদ সবার উদেশ্যে বললো……!!

রোদঃ আজকে রাতে সবাই ডিনার করে যাবি।আর কালকে দুপুরের আমার বাসায় তোদের লাঞ্চের দাওয়াত রইলো!কাল সকাল সকাল আমাদের সব ফেন্ডস রা উপস্থিত থাকবি কেমন।আর আরেকটা কথা….!!

আবিরঃ কি কথা..??আর হঠাৎ দাওয়াত কেন??

রোদঃ কারন আছে!আর রোদ মেহবুব কারন ছাড়া কিছু করেনা।আমি তোদের কিছু কথা বলছি তোরা কথাগুলো সিম্প্যাল ভাবেই নিস প্লিজ…!!

আকাশঃ বলতো তুই আগে..??

রোদঃ আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমাকে আমাদের বিজনেসের হাল ধরতে হবে।তোরাও পরীক্ষা শেষ করে হয়তো জব খুঁজবি! তাই বলছি তোরা চাইলো আমার অফিসে জয়েন্ট হতে পারিস।কারন আমার নিজের অফিস থাকতে তোরা কেন অন্যের অফিসে জব করবি ।আর এখন তোরা ছাড়া আমারই বা কে আছে বল!তোরা ভাবিস না আমি আমার স্বার্থের জন্য তোদের এসব বলছি! তাহলে বলবো এটা তোদের ভুল ধারনা হবে ।কারন আমি তো জানি এখনকার যুগে একটা জব খুঁজে পেতে কতটা কষ্ট করতে হয়!আর আবির এই জবটা করলে আবৃতির বাসাতে গিয়ে মাথা উঁচু করেই বলতে পারবি যে, তুই আবৃতির দায়িত্ব নেওয়া মত সার্মথ্য এখন তোর আছে।আমি অনেক ভেবেই কথাগুলো বলছি….!!

আবিরঃহুমমম! আমাদের এতটা বিশ্বাস করা জন্য ধন্যবাদ! এভাবেই বা কতজন পারে বন্ধুর কথা ভাবতে!আর আমরা একসাথে কাজ করলে ইনশাআল্লাহ বিজনেসটাকে আরো ভালো একটা পজিশনে নিয়ে যেতে পারবো।

রোদঃ হুমম!এজন্য তোদের বললাম।তোরা সময় নিয়ে ভেবে আমাকে জানাস।

তারপর রোদ,আকাশ আর আবির আশা রিদিসহ সবাই নিচে গিয়ে!সবাই আলোর সাথে গল্পও জুড়ে দিলো।সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিতে শুরু করলো!আকাশ ফট করে বললো…!!

আকাশঃ আলো তোমাকে ভাবি ডাকবো নাকি নাম ধরে ডাকবো?
আলোঃভাইয়া আপনারা আমাকে নাম ধরে ডাকবেন আর ভাবি বলে আমাকে পর করে দিবেন না। আমিও ভাইয়া ডেকে আমার ভাইয়ের আসনে বসাতে চাই।বন্ধুর বউ না আপনারা আমাকে বোন মত নাম ধরে ডাকলেই আমি খুব খুশি হবে (রান্নাঘর থেকে মুচকি হেসে)
আবিরঃ আমাদের বোন হলে ভুল করলেই পিটুনি দিবো! তখন রাগ করা যাবে না।
আলোঃ আমি এটাই তো চাই..!!
আকাশঃ সত্যি তো
আলোঃ একদম
আবিরঃ তা কি রান্না হচ্ছে শুনি??
আলোঃ বিরিয়ানী
রোদঃ আমার বউয়ের রান্না খেয়ে দেখিস সারাজীবন হাত চাটতেই থাকবি (পেছন থেকে আলোর গলা জড়িয়ে ধরে)
রিদিঃ তাহলে তো খেতেই হয়!
আবিরঃ ঘ্রাণেই বোঝা যাচ্ছে রান্না দারুন হবে
রোদঃহুমম!দেখতে হবে না বউ কার..কোয়ালিটি আছে ব্রো (দুষ্টু হেসে)

আলো রোদের থেকে ছাড়া পাওয়া জন্য রোদের হাত সরানোর চেষ্টা করছে। আর রোদ দুষ্টু হেসে আলোকে জাপটে ধরে আছে।আলো বিরবির করে বললো…!!

আলোঃ এসব কি হচ্ছে?? ভাইয়ারা সামনে আছে উনারা কি ভাববে??
রোদঃ গাইজ্ তোরা কি কিছু ভাবছিস আমি এমন ভাবে আছি তাই (দুষ্টু হেসে)
আবিরঃ একদমই না!ক্যারি অন ব্রো। (ওদের মত আবার গল্প জুড়ে দিয়ে)
রোদঃ দেখলে তো ওরা কিছু ভাবছে না।
আলোঃআপনি হুট করে ভদ্র থেকে অভদ্রের রুপ ধারণ করলেন কেন শুনি??(দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে)
রোদঃ তুমিই তো আমাকে স্বাভাবিক হতে বলছো।আর স্বাভাবিক হতে গেলে আমার অত্যাচার তো তোমাকে সহ্য করতেই হবে বউ। (দুষ্টু হেসে)

আলোঃ আপনি ভদ্র রুপে ফিরে আসুন প্লিজ! আমি আপনার এমন রুপ মানতে পারছিনা।(করুন সুরে)

রোদঃ কেবল তো শুরু সোনাপাখি!আজকে না আমি অনেক কিছু নিয়েই ভাবলাম আর এর সঠিক উওরটাও আমি এখন পেয়ে গেছি।আজকে থেকে রোদ অন্য রুপে রুপান্তরিত হবে! শুধু আলো আর মেঘ নামক আমার ভাল থাকার পার্সওয়াডদের জন্য। এবার আমিও ভাল থাকতে চাই। থাকবেনা তুমি আমার পাশে…!!(মায়াবী দৃষ্টিতে)

আলোঃ আমি আছি আপনার পাশে! ভালো, মন্দ সব মুহূর্তেই আপনি আমাকে আপনার পাশে পাবেন কথা দিলাম।(মুচকি হেসে)
রোদঃ সত্যি তো
আলোঃহুমম
রোদঃ তাহলে তুমি প্রস্তুত হও!নিজেকে পরিপূর্ণ করার জন্য। (দুষ্টু হেসে)
আলোঃ মানে
রোদঃমানে কিছু না..!!কালকে জন্য নিজেকে রেডি থেকো। (দুষ্টু হেসে)

আলো রোদের এত এই হাফ কথার মানে বুঝতে না পেরে চুপ থাকলো।রোদ রান্না ঘর থেকে বের হয়ে ড্রায়নিং টেবিল থেকে জগ নিয়ে রান্না ঘরের এসে মুখে পানির ঝাপটা দিলো।তারপর আলোর ওড়নার এক কোনায় মুখ মুখে নিলো!রোদ এত জোরে মুখে পানি ঝাপটা দিয়েছে যে সামনে চুল গুলোও হালকা ভিজে গেছে।রোদ আলোর ওড়না দিয়ে চুলগুলোও হালকা করে মুছে নিলো।তারপর রোদ ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আবির আকাশকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে কি একটা কাজের জন্য….!!

To be continue….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here