#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_51
🍁🍁
দুই ভাই পুরাই বারুদ!কেউ কারো থেকে কম না।মেঘ তো সাথে সাথে একশন নেই আর রোদ সে তো ঠান্ডা মাথায় বাঁশ দেয়।আর রোদ হচ্ছে ধীরে সুস্থে বাঁশ দেওয়ার টিচার।তবে মেঘ আর রোদ এই দুই ভাইকে অস্কার দেওয়া উচিত।
লাবলু আংকেলরা রোদের দেওয়া বাঁশ খেয়ে অসহায় প্রাণীর মত কিছুক্ষন থেকে উনারা পলায়ণ করতে বাধ্য হয়েছিলো!কারন এত বাঁশ খেয়ে দাড়িয়ে থাকাটাও বেমানান!তবে উনারা যাওয়ার আগে রোদ উনাদেরকে সযত্নে আটকে রেখেছিলো তারপর দুপুরের খাবার খাইয়েছে!লাবলু আংকেলরা
চুপচাপ এক জায়গায় দাড়িয়ে আছে!আর রোদ আলোকে ওর পাশে দাঁড় করিয়ে মাইক্রোফোন সবাইকে উদেশ্য করে বললো….!!
–আসসালামু আলাইকুম!আশা করি সবাই ভালো আছেন?আল্লাহর রহমতে আমি সহ আমার পরিবারের সবাইও ভালো আছি!আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জেগেছে? আমার বিয়ের কথা আপনারা তো শুনতে পাননি? তাহলে হুট করে বউ কোথায় থেকে আসলো?আসলে আমরা স্বপরিবারে আমার নানুর বাসায় গিয়েছিলাম! আর সেখানেই আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ করেন আমার বাবা মা! তারাই সাক্ষী থেকে আমাদের বিয়ে দিয়েছে আর ভেবেছিলেন এখানে এসে অনুষ্ঠান করে আপনাদের সবাইকে জানাবে!কিন্তু তার আগেই বাবা মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া এই দূর্ঘটনার জন্য সবকিছু স্থগিত করা হয়েছিলো!আমি চাইলে নতুন করে লোক দেখানোর জন্য আবার বিয়ের অনুষ্ঠানটা করতে পারতাম! কিন্তু যেখানে আমার বাবা মা তাদের দোয়া দিয়ে একবার বিয়ে দিয়েছেই তাই আবার বিয়ে করে লোক দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনি!আর এই হলো আমার ওয়াইফ আতকিয়া ইবনাত আলো!আমরা আপনাদের দোয়া নিয়ে নতুন করে আমাদের পথচলা শুরু করতে চাই! এজন্য আজকে আপনাদের দোয়া নিতে আমি এখানে এটেন্ড থাকতে বলছিলাম।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে এখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য! আপনারা নিজের মত করে ইনজয় করুন! ধন্যবাদ….!!(মুচকি হেসে)
তারপর রোদ মাইক্রোফোন টা হাত থেকে রেখে সাইডে রেখে দিলো!আর আলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো! এর মধ্যে আবির, আকাশ,রিদি,আশা সবাই এসে আলো আর রোদকে ঘিরে ধরলো!রিদি আলোর দিকে রোদকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো…!!
–হুম হুম বুঝলাম! এবার আমাদের টাকাটা দাও ব্রো (রিদি)
–কিসের টাকা??(রোদ)
–কিসের টাকা মানে কি ইয়ার?তোর বউকে এত কষ্ট করে সাজিয়ে দিলাম। আর তুই কি না বলছিস কিসের টাকা??(আবৃতি চোখ বড় বড় করে)
–ঢপ মারার জায়গা পাস না তাই না!আমার বউ সুন্দরী তাই ওকে সুন্দর দেখাচ্ছে। এসব ধান্দাবাজি ছাড় (আবৃতির মাথায় চাট্টি মেরে)
–ওরে বাটপার!ঠিকাছে আমারও দেখে নিবো তোমাকে দাড়াও মনু!লাগবেনা তোর টাকা এবার তো বল আলোকে কেমন লাগছে?(আশা)
–কোন রকম চালিয়ে নেওয়ার মত(ভাব নিয়ে)
–হা হা হা!রোদ তুই পারিসও বটে (আকাশ)
রোদের কথা শুনে আলো ওর মুখটা মলিন করে দাড়িয়ে রইলো!সবাই এটা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে। রোদও মুচকি হেসে দিলো!তারপর একটা সফট ড্রিংকের ক্যান এনে আলোর সামনে হাটু গেঁড়ে বসে পড়লো!আলো চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে! রোদ মুচকি হেসে বলতে শুরু করলো…!!
–ভালবাসি তো!অনেক বেশি ভালবাসি!তোমার এই সরলতা!মায়াবী মুখে মিষ্টি হাসি,সিগ্ধ মুখে সিগ্ধতাকে।আমি ভালবাসি তুমি নামক আমার ন্যাচারাল বিউটি কুইন কে!রেগুলার যেমন সাধারন রুপে তোমাকে দেখি তুমি সেই ভাবেই আমার কাছে অসাধারণ! এজন্য আলাদা দিন বা আলাদা করে সাজগোজে দরকার নেই!তুমি নামক ব্যাধিতে আমি অনেক আগেই আক্রান্ত হয়েছি! আর শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি এই রোগেই আক্রান্ত থাকতে চাই! (শান্ত কন্ঠে মুচকি হেসে)
আলো রোদের কথা গুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো!রোদ যথেষ্ট সুদর্শন একটা ছেলে আর সব দিকে থেকে পারফেক্ট! তারপরেও আলোর মত একটা নগন্য মেয়ে এতটা ভালবাসে। আলো মাঝে এসবই নিয়ে ভাবে কারন রোদ আলোর থেকে দশগুন ভাল মেয়েকে ডির্জাব করে!আলোর কাছে এই প্রশ্নের উওর মিলে না! রোদ ক্যানটা আলোর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!আলো মুচকি হেসে রোদের হাত থেকে ক্যানটা নিলো! তারপর রোদের হাত ধরে টেনে দাড় করালো! রোদ ওর পকেটে থেকে একটা স্বর্ণের ব্যাচলেট বের করে আলোর হাত পড়িয়ে দিলো।
তখন আবিরা সহ সবাই করতালি আর সিটি বাজানো শুরু করলো!আলো লজ্জায় মাথা নিচু করে রোদের পাশে চুপটি করে দাড়িয়ে থাকলো!তারপর সবাই অনেক মজা করলো!খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে যে যার বাসায় চলে গেল!রোদ কয়েকজন লোক ডেকে সব কিছু পরিষ্কার করিয়ে নিলো।
প্রায় দেড় মাস পর…!!
রোদের পরীক্ষা যথাসময়ে শেষ হয়ে গেছে!এখন রোদ অফিস দেখাশোনা করে!অফিসের আগের রুলস গুলো বাদ দিয়ে এখন রোদ নতুন করে কিছু রুলস তৈরী করেছে!রোদ এখন সবকিছু নিজের মত করে দেখাশোনা করছে!আবির আর আকাশও রোদের অফিসে জয়েন্ট করছে!রোদ আগে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতো কিন্তু এখন তো ওর উপরে অনেক দায়িত্ব এসে পড়েছে!রোদ হাফিয়ে যাচ্ছে তবু আলো আর মেঘের মুখের চেয়ে সব মেনে নেয়!কারন আলোর আর মেঘের মুখের হাসি দেখলে রোদের সব কষ্ট ভুলে যায়! কারন আলো আর মেঘই এখন রোদের ভাল থাকার চাবিকাঠি…!!
রাত ৮ঃ৩০টার দিকে রোদ বাসায় ফিরে আর ধপ করে বেডের উপর শুয়ে পড়ে!আলো আর মেঘ তখন পড়ার টেবিলে পড়ছিলো!রোদকে দেখে মেঘ ফট করে বলে উঠলো…!!
–ইয়াহু দাভাই এসে গেছে!আর পড়া হবে না(লাফিয়ে উঠে দাড়িয়ে)
–না মেঘবাবু এমন করে না!পড়া শেষ না করলে কালকে টিচার কান ধরে দাড় করিয়ে রাখবে .!!
–আমার খুধা লাগছে বউমনি!এখন উঠে পড়ি প্লিজ
–একটু আগেই তো নুডলস আর কাবাব খেলে
–আবার খুধা লাগছে!আর কেমন কেমন জানি লাগছে..!!(পেটে হাত বুলিয়ে)
–এই পড়াটা শেষ করলেই তোমার ছুটি(আলো)
–বউমনি আমার শরীর চুলকাচ্ছে
–হয়েছে থাক আর পড়তে হবে না!এখন একটার পর একটা সমস্যা হতেই থাকবে!(রোদ)
–হুমম দাভাই একদম ঠিক বলছে!প্লিজ বউমনি উঠে পড়ি..!!প্লিজ! প্লিজ
–আচ্ছা
–ধন্যবাদ বউমনি!উমমম্মা (গলা জড়িয়ে ধরে আদর দিয়ে)
মেঘ উঠে এদৌড়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে কার্টুন দেখতে বসে গেল!আর আলো গুটিগুটি পায়ে রোদের কাছে গিয়ে রোদের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো!তারপর সব বোতাম খুলে রোদর বুকের উপরেই শুয়ে পড়লো!রোদ অবাক হলো না কারন বিগত দেড় মাস ধরে আলো এই কাজটাই করে আসছে!রোদ মুচকি হেসে বললো…!!
–প্রতিদিন তুমি আমার ঘামে ভেজা শার্ট পরিহিত অবস্থায় আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরো কেন??
–আমার ইচ্ছে তাই জড়িয়ে ধরি(মুচকি হেসে)
–এমন ইচ্ছে হওয়ার কারনটাই তো জানতে চাচ্ছি??
–আমার ইচ্ছে হয় তাই আমি এমন করি আপনার কি?আমি কিন্তু এবার খুব বিরক্ত হচ্ছি! কেউ যেন আমাকে এখন আর ডিস্টার্ব না করে!(নাক ফুলিয়ে)
–ওকে কুল কুল বউ!আমি আর আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না! আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যান(মুচকি হেসে)
–আমি আপনার এই ঘামে ভেজা শার্টে আমার পাপ্য ভালবাসা খুজি (রোদের বুকে মাথা রেখে)
–মানে??
–মানে হলো এই যে,আপনার এই ঘামে ভেজা শার্টে আমি এক টুকরো ভালবাসা খুঁজে পাই!
–তাই বলে ঘামে ভেজা শার্টে ভালবাসা??(রোদ)
—হুমম! আমাদের জন্যই তো এত কষ্ট করে শরীরের ঘাম ঝরান!আর এই ঘামের জন্য আপনার থেকে দুরে সরে থাকবো ভাবলেন কি করে?একটা কথা মনে রাখবেন কারো কারো কাছে এই ঘামে ভেজা শার্টও মূলবান বলে মনে হয়! যদিও অনেকের কাছে কথাটা লেইম মনে হইলেও এটা আমার কাছেই সঠিক মনে হয়!তবে কথাটা কে কেমন ভাবে নিবে সেটা তাদের ব্যাপার! তবে এই যুক্তিটা আমার মত বর পাগল মেয়েদের কাছে সঠিক বলেই মনে হবে বুঝলেন।(মুচকি হেসে)
আলোর কথা শুনে রোদ মুচকি হাসলো!রোদের কিছু বলার নেই কারন আলোর বলা কথা দিয়েই আলো রোদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে!কতটা মেয়েই বা এমন করে ভাবতে পারে?রোদও অনেক খুশি হয় বাট প্রকাশ করে না।রোদ মুচকি হেসে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো।….!!
–আম্মু আমাকে সেরা উপহারটাই দিয়ে গেছে!আর সেটা হলো তুমি!জানো এখন আমার মনে হয় পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ আমি..(আলোর কপালে আদর দিয়ে)
–তাই বুঝি
–হুমম!আচ্ছা আলো তোমার মনে হয় না তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াবে!নিজে কিছু করে নিজের পরিচয় গড়ে তুলবে(শান্ত সুরে)
–না! আমি এভাবেই ভালো আছি।আর আমি এভাবেই অনেক সুখী (মুচকি হেসে)
–আমাকে বলো তোমার স্বপ্ন কি??কি হওয়ার ইচ্ছে তোমার?
–একটা সময় ফ্যাশান ডিজাইনার হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো!বাট এখন আর এসব ভালো লাগে না।(উঠে দাঁড়িয়ে)
–আমি আছি তো তোমার পাশে! আর আমাকে সব সময় তোমার পাশে আমাকে পাবে।
–থাক না এসব
–আমি চাই মিসেস রোদ মেহবুব নাম বাদেও তুমি নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলো!আমি
চাই আমার বউ নিজের পায়ে দাঁড়াক! আমি তোমার পাশে আছি তো! এবার তুমি তোমার নিজের মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি বাড়াও!আর কোন কথা না তুমি তোমার স্বপ্নপূরণ করার জন্য নিজেকে তৈরী করো।(আলোর দুই গালে হাত রেখে)
তারপর রোদ আলোর সাথে কথা বলে ওয়াশরুমে চলে গেল!আর আলোর ওর চোখের পানি মুছে নিলো!কারন রোদের মত কতজন হাজবেন্ডই বা পারে এভাবে সাপোর্ট করতে, উৎসাহ দিতে!আর কতজনই মেয়েই বা পাই এমন সাপোর্ট!আর এমনভাবে সাপোর্ট পেতেও ভাগ্য লাগে…!!
To be continue…..!!