এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_52

0
832

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_52
🍁🍁

তারপর রোদ আলোর সাথে কথা বলে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল!আর আলো ওর চোখের পানি মুছে নিলো কারন কত জন মেয়েই বা এমন ভাবে হাজবেন্ডের সাপোর্ট পায়।আর এজন্যও সৌভাগ্য লাগে যেটা সবার কপালে জুটে না।

তারপর ওরা ডিনার সেরে নেয়! আর যে যার মত ঘুমিয়ে পড়ে!পরেরদিন রোদ আলোকে নিয়ে একটা ফ্যাশান ডিজাইনারের কাছে নিয়ে যায়!আর আলোকে উনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়!রোদের সাথে উনার খুব ভাল একটা সম্পর্ক আর উনি ফ্যাশান ডিজাইনার হিসেবে ফেমাসও!তাই রোদ আলোকে এখানে নিয়ে এসেছে।যদিও উনি রোদের জুনিয়র..!!

–আসসালামু আলাইকুম!কেমন আছো সাফিন??(রোদ)
–ওয়ালাইকুম সালাম রোদ ভাইয়া!আমি ভালো আছি!আপনি কেমন আছেন??কতদিন পর দেখা হলো…!!
–আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি..!!
–এতদিন পর আমাকে মনে পড়লো?(সাফিন)
–আজকাল একটু বিজি থাকি ভাই!এজন্য এদিকে তেমন আসা হয়না !আজকে তোমার কাছে একটু দরকারেই এসেছি বলতে পারো??
—জ্বি ভাই বলুন?আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আপনার দেওয়া কাজটি ভাল ভাবে করার ..!!
–এই হলো তোমার ভাবী!ওর ইচ্ছে ফ্যাশান ডিজাইনার হওয়ার। তুমি তো এই লাইনেই আছো এজন্য তোমার কাছে এসেছি।তুমি একটু দেখিয়ে দিবে, বুঝিয়ে দিবে..!!
–অবশ্যই ভাই!তা ভাবি আপনি কি আর্ট করতে পারেন??(আলোর দিকে তাকিয়ে)
–জ্বি টুকটাক পারি..!! (মুচকি হেসে)
–আপনি কালকে ৩ টা ডিজাইন করে আনবেন আপনার মন মত। আমি দেখবো তারপর বলবো আপনি কেমন পারেন..??
–জ্বি আচ্ছা (আলো)
–আর কি কি করতে হবে বলো..??(রোদ)
–ফ্যাশান ডিজাইনার হতে গেলে সর্বপ্রথম জানতে হবে…!! (সাফিন)

ফ্যাশন ডিজাইন কিঃ-
ফ্যাশন ডিজাইন হচ্ছে একটি সৃজনশীল পেশা। একটি পোষাকের সাইজ থেকে শুরু করে তার কালার, নকশা, প্রিন্ট, সেলাইএর ধরন ইত্যাদি এসবই করেন! একজন ফ্যাশন ডিজাইনার সৃজনশীলতা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হবার প্রথম ও প্রধান শর্ত। আপনাকে জানতে হবে কিভাবে নকশা আঁকতে হয়, কিভাবে রঙ এর ব্যবহার করতে হয়, কিভাবে দেহের কোন অংশকে ফুটিয়ে তুলতে হয়, কোথায় কুচি দিলে ভালো দেখাবে, আর কোথায় ফ্ল্যাট রাখতে হবে, কালার মিক্সিং ও কালার ম্যাচিং, এ সবই জানতে হবে।

রঙ কে ভালবাসতে হবে, কোনো বস্তুর ওপর আলো আর ছায়া পরলে কেমন দেখায় সেটা খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে,প্রতিদিন এসবের চর্চা করতে হবে। প্রখর ইচ্ছাশক্তি আর কাজের প্রতি ভালবাসার সাথে সাথে নিত্য নতুন আইডিয়া বের করতে হবে! এবং এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে হবে। এভাবে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার দিন দিন দক্ষ হয়ে উঠেন তার পেশায়।এখন অনেকেই বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ ঘুরে আসেন অথবা বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অন্যের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং পেশায় আসতে চান। এটা একটি ভালো দিক তবে তার ভেতর নতুন কিছু করার যোগ্যতা, ইচ্ছা ও প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে।আমি খুশি হয়েছি ভাবির এমন ইচ্ছাশক্তি আর আগ্রহ দেখে…..!!(সাফিন)

— সাফিন আমি চাই! তুমি ওকে নিজে হাত ধরে সব বুঝিয়ে দাও!তুমি কি ওকে একটু আলাদা করে সময় দিতে পারবে??(রোদ)
–ভাই ভাবি এই হাউজে এসে আমার সব কাজ গুলোকে ফলো করলেই সব বুঝতে পারবে ইনশাআল্লাহ! আর আমি তো আছি দেখিয়ে আর বুঝিয়ে দেওয়া জন্য।(সাফিন)
–এখানে কি আর কোন মেয়ে আসে নাকি তুমি একাই (রোদ)
–না! এখানে মোট১৫ জন ছেলে মেয়ে আসে ওরা ভাবির মত ফ্যাশান ডিজাইনার হতে ইচ্ছুক আর কয়েকদিন হলো ওদের ক্লাস নিচ্ছি…!!(সাফিন)
–ওরা কখন আসে??(রোদ)
–বিকাল ৪ টায় আসে! (সাফিন)
–আচ্ছা কালকে থেকে তোমার ভাবিও আসবে কেমন..(মুচকি হেসে রোদ)
–ওকে!সমস্যা নেই (সাফিন)
–আজ তাহলে আসি কেমন (রোদ)
–ওকে ভাই

তারপর রোদ আর আলো ওখান থেকে চলে আসলো!আলো চুপচাপ বসে আছে তাই দেখে রোদ মুচকি হেসে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো।

–কি হয়েছে আমার এলোকেশী??(ড্রাইভ করতে করতে)
–না কিছু নাতো..!!(বাইরের দিকে তাকিয়ে)
–মন খারাপ কেন ??না বললে বুঝবো কি করে?
–এসব কি এখন না করলেই নই??
–এটা কেমন কথা!সুযোগ পাচ্ছো কাজে লাগাও।
–আমি পারবো তো??যদি না পারি তখন?(মাথা নিচু করে)
–ইনশাআল্লাহ চেষ্টা, মনোবলশক্তি,আর ইচ্ছাটাকে প্রখর করো! তাহলে দেখবে কঠিন কাজও সহজ মনে হবে।ভয় পেলে কোন কাজই সঠিক ভাবে সম্পূর্ন করতে পারবে না।ভয় পেও না আমি আছি তো তোমার পাশে(রোদ)
–এসব কাজে মনোয়োগী হয়ে পড়লে, পরে আমাদের মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হবে না তো??(মাথা নিচু করে)
–নিজেরা ঠিক থাকলে দূরত্ব তৈরী হবে কেন?প্রতিটা সম্পর্কে বিশ্বাস আর বোঝাপড়া ঠিক থাকলে সব ঠিক থাকে বুঝলে।আমি আছি তো তাহলে ভয় পাও কেন??সব সময় তোমার পাশে আমাকে পাবে!(রোদ)
–হুমম!
–প্রতিটা মেয়ের স্বাবলম্বী হওয়া উচিত!নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত।নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলা উচিত কারন জীবনে পথ চলতে গেলে অনেকবার মুখ থুবকে পড়তে হয়!নিজে কিছু করতে পারলে কারো উপর নির্ভরশীল হওয়া লাগেনা।যেমন ধরো কারো মৃত্যু তো আর বলে আসে না তাই না!হাজবেন্ডের কিছু হলে যাতে ওয়াইফরা নিজে কিছু করতে পারে এটা ভেবে হলেও মেয়েদের কিছু করা উচিত! সবার হাজবেন্ড তো আর সারাজীবন বেঁচে থাকবেনা তাই না!তাই আ আম (আর বলতে না পেরে)

একটুকু কথা বলে রোদ আর কিছু বলতে পারেনা! কারন আলো ছলছল নয়নে অসহায় দৃষ্টিতে রোদের করে তাকিয়ে আছে!রোদ গাড়িটা এক সাইডে রেখে এক হাত বাড়াতেই আলো রোদের বুকে হামলে পড়ে শব্দ করেই কেঁদে দেয়!রোদ আলোকে কান্না থামাতে বলে! তারপর রোদ ওর বুকে থেকে আলোকে সরিয়ে আলোর দুই হাতে হাত রেখে বলে…!!

–কাঁদছো কেন?আচ্ছা বাবা সরি! আর এমন কথা বলবো না তাও কান্না করে না সোনাবউ আমার।প্লিজ আর কেদো না।আমি তো কথার কথা এমনি বলছিলাম..(এক হাতে কান ধরে)

–হারাতে হারাতে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি!তুমি আর এমন কথা বলো না আর প্লিজ রোদ।কারন তোমার কিছু হলে আমি একেবারে শেষ হয়ে যাবো!এসব কথা শোনা তো দুরে থাক! আমি ভুলে কল্পনাও করতে পারিনা।আমি আয়ু দিয়ে হলেও আল্লাহ যে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখে!আমি তোমার সব কথা শুনবো তবুও এসব কথা আর বলো না! এসব শুনলে আমার কষ্ট হয় আমার দম আটকে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়(রোদের গলায় মুখ লুকিয়ে কেঁদে কেঁদে)

–আর এমন বলবো না!প্রমিস (আলোর কপালে আদর দিয়ে)
–হুমম(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে)
–এত ভালবাসিস কবে থেকে হুম?আমার বউটা একটু বর পাগল এটা জানতাম! কিন্তু এতটা বরপাগল এটা তো জানা ছিলো না তো!(আলোর দুই গালে হাত রেখে)
–অসভ্য এখন ঢং করা হচ্ছে। (রোদের বাহুতে কিল বসিয়ে)
–হা হা হা! তুমি ডাকটাই তো বেস্ট ছিলো আর আপনিতে সীমাবদ্ধ থেকো না সোনাবউ।
–শখ কতো (ভেংচি কেটে)
–হা হা হা! শখ তো হবেই দশটা না পাঁচটা একমাএ বউ বলে কথা (হেসে)

তারপর রোদ আর আলো একেবারে আর্ট পেপার,পেন্সিল, রাবার,কাটার, আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাসায় ফিরলো!রোদ বাসায় এসে আলোকে বললো নেট থেকে কিছু আর্ট করা দেখে তারপর ট্রাই করে দেখতে!আলোর ফোনে ওয়াইফাই কানেক্ট করা নেই!রোদও ওয়াশরুমের তাই আলো মেঘের কাছে গেলে ওয়াফাই এর পাসওয়ার্ড জানতে…!!

–দাভাই কি আনলো আমাকে খেতে দাও বউমনি!একটু বেশি করেই দিও (মেঘ ডোরেমন দেখতে দেখতে)
–দিচ্ছি (রান্নাঘর থেকে)
–এই নাও খাও! সব খাবে নষ্ট করবেনা আর আমাকে একটা তথ্য দাও তো মেঘুসোনা (বার্গার আর চিকেন রোল দিয়ে)
–কি তথ্য জানতে চাও বলো বউমনি??(খেতে খেতে)
–মেঘবাবু ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড টা বলো তো..!!
–“মুখে বলতে পারবো না নিষেধ আছে”
–কেন??
–কি কেন বউমনি??(আলোর দিকে তাকিয়ে)
–মুখে পাসওয়ার্ড বলতে পারবেনা কেন?আর বলতে কি হবে?(ভ্রু কুচকে)
–হা হা হা! বউমনি এটাই আমাদের বাসার ওয়াফাই এর পাসওয়ার্ড! দাভাই রেখেছে এমন পাসওয়ার্ড। (খিলখিল করে হেসে)
–লও ঠ্যালা!এ আবার কেমন পাসওয়ার্ড তবে
যেমন তোমার দাভাই তেমনই রেখেছে ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড!গাধা একটা…(মুখ ভেংচি দিয়ে)

আলো কথাটা বলে চলে গেল!আর মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকলো!

To be continue….!!
(বানান ভুল হয়ে থাকলে নিজ দায়িত্বে শুধরে নিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here