#আধারে_তুমি,১৭,১৮
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৭
শাহানাজ বেগম ভাবতে ভাবতে শানের রুমে যেতে থাকে। শানের রুমের সামনে এসেই থেমে গেলো। ভাবলো এখন জিজ্ঞেস করবে কিনা ! নাকি একটু পরীক্ষা করে দেখবে !
দরজায় নক করতেই দরজা আপনা আপনিই খুলে গেলো। শাহানাজ বেগম সব কিছু ভাবা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকলো।
শান থানায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। শাহানাজ বেগম ছেলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো
” ব্রেকফাস্ট করে যাবে না !” শান চুল ঠিক করছিলো শাহানাজ বেগমের কথা শুনে না চলা থামিয়ে থমথমে মুখে মায়ের দিকে তাকালো। উত্তরে বললো
” আমি তো একটু আগেই ব্রেকফাস্ট করলাম সবার সাথে। আবার কেনো করবো ?” শাহানাজ বেগম মনে মনে নিজেকে বকা দিলো। শান চিন্তিত হয়ে বলে
” মা কি হয়েছে তোমার ? তুমি কি অসুস্থ ?” শাহানাজ বেগম মাথা নেড়ে বলে
” না না আমি ঠিক আছি। আমি বলতে এসেছি যে থানায় আজকে আর যেতে হবে না। তুমি তো থানার সিনিয়র অফিসার একদিন না গেলে কিছু হবে না।” শান শব্দহীন ভাবে হাসলো। হাসতে হাসতে বলে
” কি যে বলো মা ! আমি সিনিয়র অফিসার দেখেই তো আমাকে সব সময় যেতে হবে। পুরো থানার দায়িত্ব আমার কাধেই। একদিন ইমন সামলে নেবে ঠিকই কিন্তু সবাই তো সিনিয়রকেই ফলো করবে। যারা আমার আন্ডারে কাজ করছে তারা আমাকেই অনুসরণ করবে।”
শাহানাজ বেগম দুঃখি দুঃখি স্বরে বলে
” হ্যা বুঝেছি। আমি আরো ভেবেছিলাম সোহাটাকে গিয়ে দেখে আসবো। কেমন আছে মেয়েটা। কিন্তু তোর যখন এতো কাজ আমি একাই নাহয় চলে যাবো নাহলে নিলা তো আছেই।” শান আড়চোখে মায়ের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিনমিন স্বরে বললো
” নাহ একা যাবে কেনো ? তুমি যখন এতো আশা নিয়ে এসেছো তখন আমিই নিয়ে যাবো তোমাকে। তুমি রেডি হও গিয়ে। আমি চেঞ্জ করে আসছি।”
শাহানাহ বেগম শানকে আটকে বলে
” না না থাক। যখন ইউনিফর্ম পরেই ফেলেছিস তখন আজ থানায় চলে যা। আগামীকাল নাহয় যাবো।” শান বোকার মতো তাকিয়ে বললো
” এই তো এখনই বললে এখন যাবে তাই থানায় না যেতে আর এখন বলছো কালকে যাবে ?” শাহানাজ বেগম হেসে বলে
” আসলে তোকে তৈরি হতে দেখে ডিসিশন চেঞ্জ করে ফেলেছি। আচ্ছা সাবধানে যাস থানায়।”
শাহানাজ বেগম শানের রুম থেকে একপ্রকার দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো।
শান শাহানাজ বেগমের মতিগতি কিছুই বুঝলো না তবে মুচকি একটা হাসি দিলো। সোহার জন্য দুইদিন ধরে মনটা বেকুল হয়ে ছিলো। বলেছিলো সোহার খোঁজ নেবে কিন্তু সেই রেস্টুরেন্ট এর লোকটাকে হন্ন করে খুঁজছে শান। মনে মনে পন করেছিলো লোকটাকে খুঁজে বের করে আগে শাস্তি দেবে তারপর সোহার খোঁজ খবর নেবে কিন্তু শাহানাজ বেগম যখন যাচ্ছে তখন আর সোহাকে দেখার লোভটা সামলাতে পারলো না। দুদিন পর আজ শানের মনটাও কিছুটা ভালো হয়ে গেলো। তৈরি হয়ে থানায় উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।
সোহা যতোটুকু পারছে তার ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট এর প্রিপারেশন নিচ্ছে। ইতিও হেল্প করছে তাকে। সোহা আজ বায়না ধরেছে বাড়ির ছাঁদে যাবে। ঘরে বসে বসে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে সোহা। যেই মেয়ে একটু শান্ত হয়ে বসতে চায় না সে যে এই দুদিন, তিনদিন ধরে ঘরে বসে কাটাচ্ছে এটাই অনেক কিছু সবার কাছে। ইতির সাহায্যে ধীরে ধীরে ছাদে এসে পৌঁছায়। ছাঁদে পা রেখেই মুচকি হেসে বড় একটা নিশ্বাস ফেললো। কতোদিন পর তার প্রাণ প্রিয় ছাঁদে এসেছে। সোহা ধীরেধীরে ছাদ জুড়ে হাটতে থাকে আর তার প্রিয় ফুল গাছ গুলো ছুঁয়ে দিতে থাকে। ইতি বিরক্তের সঙ্গে বলে
” তোকে না সিরি থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে আমার। অসভ্য বাদর একটা। এতো ঘুরাঘুরির কি আছে ? এখন যদি পেটের সেলাই এ টান পরে ব্যাথা পাস তাহলে দেখবি তোকে কি করি।”
সোহা মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলে
” ইমন ভাইয়া কি ফোন ধরছে না নাকি ? তার রাগ আমার উপর ঝাড়ছিস কেনো তুই ? ভাইয়া পুলিশ অফিসার। তার তো কাজ আছে নাকি ? এখনই এতো রেগে থাকলে বিয়ের পর তো তোদের সংসার নিয়ে টানাটানি চলবে দেখছি।”
ইতি মুখ কালো বলে
” ছাড় তোর সংসার ! এখনও বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো না বাড়িতে আবার সংসার ! কয়েকমাসের মধ্যে যদি বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে না যায় না ! তাহলে দেখবি আমি নিজেই অন্যকাউকে ধরে বিয়ে করে ফেলবো।”
সোহা ফিকফিক করে হেসে বলে
” আর ভাইয়া তোকে তোর বাসর থেকে তুলে এনে নিজেই বাসর করে ফেলবে তাই না !”
ইতি সোহার পিঠে ঠাসঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো কিন্তু সোহা থামলো না। সোহা ইতি আর ইমনকে নিয়ে মজা করতে থাকে। সন্ধ্যা হয়ে আসতেই সোহাকে নিয়ে নিচে এসে পরলো। ড্রইংরুমে গিয়ে বসে। সোহাকে দেখেই রিয়ানা রহমান চলে গেলো রান্নাঘরে। কিছুক্ষণ পর সিমি ফোলা ফোলা চোখ মুখ নিয়ে এসে হাজির হলো। সোহা সিমিকে রাগানোর জন্য বলে
” কিরে আপু আমার ভাইয়া কি তোর সাথে ব্রেকাপ করেছে নাকি ? কেঁদে কেটে দেখছি চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিস !” সিমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সোহার দিকে। মনে মনে একটাই কথা ঘুরতে থাকে সোহাকে নিয়ে। এতো কথা বলে কিভাবে মেয়েটা ! একটু চুপ থাকতে পারে না ? সোহার আবোল তাবোল কথায় কান দিলো না আজ। অনেক শান্তির ঘুম দিয়ে এসেছে। ঝগড়া করে মেজাজ বিগড়ানোর কোনো ইচ্ছে হলো না সিমির। রিয়ানা বেগম শষীকে দিয়ে সিমি আর ইতির জন্য চা আর সোহার জন্য গরম গরম চা পাঠালো। সেসব দেখেই সিমি আর ইতির মুখে বিশ্ব জয়ের শয়তানি হাসি আর সোহা মুখ কালো করে রাখে। তাকে এখন এই দুধ খেতে হবে। মনে মনে মারাত্মক রকমের কান্না পেলো কিন্তু কাদঁলো না সোহা। দিন খারাপ গেলে আরো অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয় এটা তো কিছুই না ! এসব ভেবে নিজের মনকে শান্ত করে নিলো। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও দুজনকে দেখিয়ে দেখিয়ে মজা করে দুধটা খেয়ে নিলো। ইতি আর সিমি মুখ টিপে হাসলো সোহাকে দেখে। দুজনও সোহাকে দেখিয়ে দেখিয়ে শব্দ করে চা করে খেতে লাগলো। সোহা রেগে ধুপধাপ পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ইতি ব্যস্ত হয়ে বলে
” আরে আস্তে যা !” সোহা কি শোনে কারো কথা ! নিজের মতো করে চলে আসে রুমে। এসেই পেটের ডান সাইড ধরে বসে থাকে মুখ ফুলিয়ে। রাগ দেখিয়ে আসতে গিয়ে এখন ব্যাথা করছে তার।
আজ শাহানাজ বেগমের সাথে শান সোহাদের বাড়িতে এসেছে। সাথে নিলা, নাইসা, তামিম, সালমাও এসেছে। বলতে গেলে আজ তাদের বাড়ির সবাই আসছে সোহাকে দেখতে। বাকিরা দুপুরের পর আসবে। সিমি, শষী, রিয়ানা রহমান তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত।
শান অধীর আগ্রহে বসে আছে সোহাকে একপলক দেখার জন্য। আসার পর থেকে তার মনটা ছটফট করছে। কিন্তু নিজেকে শান্ত দেখানোর চেষ্টা করছে। শাহানাজ বেগম সিমিকে বললো সোহার রুমে নিয়ে যেতে। সিমি সবাইকে সোহার রুমে নিয়ে যায়। সোহার রুমে আসতেই সবার চোখ কপালে উঠে গেলো। সোহা এক বক্স টিস্যু নিয়ে বসেছে। কাঁদছে আর টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে রুমে ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে। ইতি সোহাকে বকেই যাচ্ছে। টিস্যু দিয়েই পুরো রুমের বারোটা বাজিয়ে রেখেছে। সিমি গিয়ে সোহাকে এক ধমক দিলো। সোহা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। কেউ কিছু বুঝছে না কেনো কাঁদছে বেচারী।
এদিকে মনে মনে শানের অবস্থা বেহাল। সোহাকে কাঁদতে দেখে তার একদমই ভালো লাগছে না। কেউ না থাকলে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতে পারতো কিন্তু সবার সামনে করতে পারবে না। শান মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে গেলো। সিমি ভ্রু কুঁচকে বলল
” তুই কাঁদছিস কেনো বলবি তো নাকি? কেঁদে কেঁদে টিস্যু নষ্ট করছিস কেনো তুই ?” শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে সোহাকে বুকে জড়িয়ে নিলো। সোহা আরো আহ্লাদী হয়ে কাঁদতে থাকে। শাহানাজ বেগম সিমিকে বললো
” আরে বউমা বকছো কেনো ? আমি দেখছি ওকে তুমি বসো গিয়ে।” ইতি সবাইকে বসতে বলে।
শাহানাজ বেগম সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
” কেমন আছিস মা ! কাঁদছিস কেনো ?” সোহা নাক টেনে টেনে বলে
” ভালো নেই একদম। তোমার কত্তো মিস করেছি জানো?” নাইসা দৌঁড়ে সোহার কাছে এসে বসলো। সোহা নাইসাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো। নাইসা মন খারাপ করে বললো
” আমাদের বাড়িতে যাওনি কেনো মিষ্টিপাখি ?”
সোহা ঠোঁট উল্টে বললো
” আমি তো অসুস্থ তাই। তবে তুমি আজকে থেকে আমার সাথে থাকবে। ঠিকাছে ?” নাইসা খুশি হয়ে হ্যা বলে। এরমাঝে টমি এসে উপস্থিত হয়। শান টমিকে দেখেই মুখ কুঁচকে নিলো। নাইসা টমিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। নিলা এগিয়ে এসে সোহার পাশে বসে বললো
” কাঁদছিলে কেনো গো সোহা ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” তোমরা আসবে আর আমাকে কেউ জানায়নি। একটু আগে মাত্র জানিয়ে গেলো। আগে জানলে আমি একটু সেজেগুজে তৈরি হয়ে থাকতাম।” সোহার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। শানের ইচ্ছে করলো ঠাস করে গিয়ে সোহার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিতে। এতো ছোট একটা বিষয় নিয়ে এতো কান্নাকাটি ? শানের মাথাই গরম হয়ে গেলো।
তামিম এগিয়ে এসে বলে
” তুমি তো এমনই অনেক সুন্দর আর সাজগোজের কি প্রয়োজন ?” সোহা তামিমকে এনে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো। ইতি তামিমকে দেখে ভাবতে ভাবতে বলে
” আচ্ছা তোমাকে তো আমি দেখছিলাম আপুর বিয়েতে। শুনলাম তুমিই নাকি সোহার উপর ক্রাশ খেয়েছো ?” তামিম ছেলেটা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো ইতির কথায়। এভাবে সবার সামনে না বললেও পারতো। এখন সবাই যদি তাকে নিয়ে মজা করে ! শাহানাজ বেগম, নিলা শব্দ করে হেসে দিলো। শান গম্ভীর হয়ে বসে থাকে।
.
.
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৮
শাহানাজ বেগম, নিলা শব্দ করে হেসে দিলো। শান গম্ভীর হয়ে বসে থাকে। সবাই গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরে। কথা বলতে বলতে একসময় সোহার শানের দিকে চোখ পড়লো। এতোক্ষণে শানকে একবারও খেয়াল করেনি সোহা। সোহার সেদিনের কথা মনে পরে যায়। শানের স্পর্শের কথা এখনও ভুলতে পারেনি। সোহা হঠাৎ তামিমের হাত ধরলো কিন্তু ভ্রু কুঁচকে হাত ছেড়ে দিলো। আড়চোখে শানের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগে
” কোথায় ! তামিমকে ছুঁলে তো সেইদিনের মতো লাগলো না। তাহলে উনি হাত ছোঁয়ার পর সেদিন অদ্ভুত ফিলিংস কেনো হচ্ছিলো ?”
নিলা সোহাকে অন্যমনস্ক দেখে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলে
” কি গো কোথায় হারিয়ে গেলে ?” সোহার হুশ আসতেই আলতো হেসে বলে
” তোমরা আমার সাথে থাকলে আমি আবার কোথায় হারিয়ে যাবো ?” ইতি সোহাকে ধাক্কা দিয়ে বলে
” কে কখন কোথায় হারিয়ে যায় বলা তো আর যায় না।” সোহা ভেংচি দিয়ে বললো
” এসব কথা তোর জন্যই খাটে আমার জন্য না।”
নিলা হাসতে হাসতে বলে উঠে
” যখন যার সময় হবে সেই হারিয়ে যাবে। তখন আর কেউ তাকে হাজার খুঁজলেও খুঁজে পাবে না। তাই সময় থাকতেই প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে নিতে হয়। ” সবাই কথাটা শুনে হেসে উড়িয়ে দিলেও শান পারলো না। কথাটা শুনে শানের টনক নড়ে উঠে। শাহানাজ বেগম চুপ করে বসে রয়েছে। বাচ্চা মেয়েদের সাথে এসব নিয়ে হাসাহাসি করলে দেখতে নিশ্চই বেমানান লাগবে ! তাই চুপ করেই ছিলো। এবার মুখ ফুটে বললো
” সোহা টেস্ট কবে দিচ্ছিস ?”
কথাটা শ্রবণ হতেই সোহা মুখ কালো করে নিলো। চোখ মুখ শুকিয়ে বলে
” আর টেস্ট ! কয়েকদিন পরেই তো টেস্ট দিতে হবে সব। প্রিপারেশন নিলেও কি ! ইশান ভাইয়াই তো বেড রেস্টে থাকতে বলেছে। টেস্ট দিতে পারবো কিনা সেটাই ভাবছি।” শাহানাজ বেগম আড়চোখে শানের দিকে তাকালো। শান চুপ করেই গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছে। শাহানাজ বেমন সোহার গালে হাত রেখে বলে
” তুই প্রিপারেশন নে ভালো করে। ইশানের সাথে আমি কথা বলে দেখবো। আচ্ছা তোরা গল্প কর আমি বাইরে যাচ্ছি।” শাহানাজ বেগম উঠে বেরিয়ে গেলো। সিমি শাহানাজ বেগমের সাথে চলে গেলো। বাকিরা বসে গল্প করতে থাকে। আর শান বিরক্ত হতে থাকলো এখানে বসে বসে। সবার সামনে যে সোহার সাথে কথা বলবে বা সোহাকে দেখবে সেই উপায়ও নেই। শান হাজারো বিরক্তি উঠে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
অনেক্ষণ পর একে একে সবাই উপর থেকে নিচে নেমে আসে। শান বারবার তাকিয়েও সোহাকে দেখতে পেলো না। শাহানাজ বেগম শানের কাহিনী খেয়াল করলো। তিনি নিলাকে জিজ্ঞেস করলো
” সোহা কোথায় নিলা ? ” নিলা শাহানাজ বেগমের পাশে বসে বললো
” সোহা কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গিয়েছে। ঘুম যেনো না ভাঙে তাই চলে আসলাম।” শাহানাজ বেগম বাহবা দিয়ে বলে
” খুব ভালো করেছো। কিন্তু নাইসা কোথায় ?”
তামিম বললো
” নাইসাকে দেখেছি আপুর রুমে পাশের রুমে চলে গিয়েছে।” ইতি উঠে কিছু বলার আগেই শান বলে উঠলো
” ভাবির রুমে গিয়েছে হয়তো আমি নিয়ে আসছি।” নিলা বললো গিয়ে নিয়ে আসতে। শান হাটতে হাটতে উপরে চলে গেলো। সোহার রুমে ঢুকে দেখে সোহা ব্ল্যাংকেট এর নিচে বা পাশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। শান ধীর পায়ে সোহার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। সোহাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে একদম মায়াবিনীর মতো লাগছে। শানের ইচ্ছে করলো তার মায়াবিনীকে একটু ছুঁয়ে দিক কিন্তু নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রাখে নিজের মাঝেই। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখলো সোহার ঘুমন্ত মুখশ্রীতে কিছু ছোট ছোট উড়ন্ত চুল এসে বসেছে। শান ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে নিলো। বেডে হাত রেখে কিছুটা ঝুকে আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় সরিয়ে দিলো চুল গুলো। সোহা ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠলো। শান সাথে সাথে সোজা হয়ে যায়। চলে আসতে নিলেই হাতে টান পড়লো শানের। শান তাকিয়ে দেখে সোহা এক আঙুল দিয়ে শানের ঘড়িতে হাত পেঁচিয়ে রেখেছে। শান অবাক হলো এটা দেখে। শান খেয়ালই করেনি সোহা কখন ধরেছে। শান হাত ছাড়িয়ে নিতেই সোহা ঘুমের মাঝে বলে উঠে
” হুহ হুশ হুশ ! আমাকে চুড়ি করতে এসেছে, আম্মু ! হুহহ..” শান কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েটা ঘুমের মাঝেই আবোলতাবোল বকছে আমার মা কেও ডাকছে। শান সোহার হাত ছাড়িয়ে নিলো মুচকি হেসে ঝুকে সোহার কপালে চুমু দিয়ে বললো
” চুড়ি করেছো তুমি ! আমার মন চুড়ি করে বসে আছো অথচ নিজেই জানো না।” শান মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
শাহানাজ বেগম চোরের মতো নিচে নেমে এলো। নিলা শাহানাজ বেগমকে দেখে বলে
” মা কোথায় গিয়েছিলেন ? আন্টি খুঁজছিলো আপনাকে।”
শাহানাজ বেগম জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো। শানের কিছুক্ষণ পরই সবার চোখের আড়ালে উপরে গিয়েছিলো। সালমার সব ধারণা যে ক্ষণে ক্ষণে ঠিক সেটা বুঝে গেলো। মনে মনে খুশির বন্যা বইতে থাকে। এরমাঝে নিলা আবারও ডেকে উঠতেই শাহানাজ বেগম খুশি খুশিতে বললো
” হ্যা হ্যা যাচ্ছি। কতো বড় একটা খবর !” নিলা ভাবতে থাকে শাহানাজ বেগম কিসের খুশির কথা বলছে। কিন্তু অনেক ভেবে কোনো খুশির খবর আছে বলে মনে করতে পারলো না। ভাবা বন্ধ করে গল্পগুজবে মেতে উঠে। শান নাইসাকে নিয়ে নিচে নেমে আসে।
দুপুর হয়ে আসতেই বাড়ি ভর্তি হয়ে গেলো। ইমতিয়াজ রহমানও চলে আসে এরপর মুসফিক চৌধুরী, ইশান, সামির সবাই চলে আসলো। দুপুরের রমরমা পরিবেশ বাড়িতে। ইতি গিয়ে সোহাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে নিচে নিয়ে আসে। সবাই সোহাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে থাকে। দুপুরের খাবারও হাসিমজার মাঝে শেষ করলো। শান চুপচাপ থাকলেও এই পরিবেশটায় সবার সাথে মেতে উঠে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই সবার শলাপরামর্শ শুরু হয়। কথা হতে হতে শাহানাজ বেগম বললো
” ইশান! সোহার তো কয়েকদিন পর টেস্ট তখন কিভাবে কি হবে ?” সবাই বেশ চিন্তায় পরে যায়। ইশান কঠোর গলায় বললো
” আরে এই অবস্থায় বাইরে কোথাও যাওয়া ঠিক নয়।” মুসফিক চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বললো
” একদিনের জন্য জার্নি করলে বেশি কিছু হবে না।”
ইশান তার স্বর খাদে নামিয়ে নিয়ে বললো
” বাবা ! সোহার বেড রেস্ট চলছে সেখানে ছোট জার্নিও রিস্ক হতে পারে।” ইমতিয়াজ রহমান শান্ত ভাবেই বললো
” চিন্তা করবেন না আপনারা। টেস্ট দিতে হবে না এখন। আগে সুস্থ হোক তারপর সব দেখা যাবে।”
শাহানাজ বেগম আগ বাড়িয়ে বললো
” তা বললে কি করে হয় ভাইজান ! মেয়েটার ভবিষ্যৎ এর ব্যাপার। আরো অন্যান্য সুযোগ থাকলেও সোহা চাইছে যখন ওর পছন্দের ভার্সিটিতে পরতে তখন এটা চেষ্টা করা উচিত। আপনাদের আপত্তি না থাকলে শান নাহয় সোহাকে এডমিশন টেস্ট এর জন্য নিয়ে যাবে।”
মাঝপথে সামির বললো
” শান কেনো ? আমিও নিয়ে যেতে পারবো। বাবা আপনি নাহয় অনুমতি দিতেই দিন।”
শাহানাজ বেগম সামিরকে চোখ রাঙানি দিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে
” নাহ তোর বাবা বলেছে তাদের নাকি আবার কোনো ডিল এসেছে ! তুই তোর কাজ কর শানের সেদিন তো থানা বন্ধ থাকবে তাই শানই নাহয় যাবে।”
সামির বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। অফিসে নতুন ডিল কবে আসলো ? সামির মুসফিক চৌধুরীর পানে তাকালো। তিনি নিজেও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। দুজনের কেউই শাহানাজ বেগমের কাজকর্ম কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। ইশারায় ইশারায় কথা বলে ঠিক করলো বাড়িতে গিয়ে এটা নিয়ে কথা বলবে।
ইমতিয়াজ রহমান ভেবে বলে
” ঠিকাছে এতো করে যখন বলছেন তাহলে শানই নিয়ে যাবে।”
ভার্সিটির কথা রেখে এবার সবাই অন্য কথায় মন দিলো।
বাড়িতে ঢুকে একে একে সবাই সোফায় গা এলিয়ে বসে। সালমা নিশ্বাস ফেলে বলে
” আমি ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতাছি।” নিলাও সালমার সাথে চলে গেলো। শান ঘাড় বাঁকাত বাঁকাতে উপরে চলে গেলো। সামির শাহানাজ বেগমকে বললো
” মা আমাদের অফিসে নতুন ডিল এসেছে কবে ? আমরাই তো জানি না।” ইশান ভ্রু কুঁচকে বলে
” ডিল না আসলে কি মা না জেনেই বলেছে ?”
সামিরকে বলতে না দিয়ে মুসফিক চৌধুরী বললো
” সেটাই তোর মাকে জিজ্ঞেস কর। আমাদের অফিসে খবর আমরাই জানি না আর উনি জেনে গেলো ! দুইদিন আগেই তো একটা ডিল পেলাম এখন আবার কোন ডিলের কাজ ?”
শাহানাজ বেগম আমতা আমতা করে বলে
” এমনি বলেছি। যাই হোক ডিল না আসলেও এসে পরবে চিন্তা করো না তো কেউ ! আর আমার ডিল আমাকে বুঝতে দাও।”
বাবা, ছেলে তিনজনই সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকায়। শাহানাজ বেগম ঢোক গিলে নাইসাকে কোলে তুলে নিজের রুমে চলে গেলো।
.
.
চলবে………..