‘সিক্ত সুভানুভব’
[০৮]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
রোদ আলোকে অনেক খুঁজেও কোন খবর পেলো না,রোদ চেয়ারে দুইদিয়ে মুখ ডেকে বসে আছে।রোদের রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে,রোদ উঠে ম্যানেজারের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,,
রোদঃতোকে বলছিলাম না ওর দিকে খেয়াল রাখতে,তুই তো সেইজন্য আলাদা কিছু টাকাও নিয়েছিস,তাহলে আলো কোথায় গেল,,তুই বলতে পারছিস না কেন?একটা মেয়েকে একা একা বের হয়ে গেলো আর তোদের সেটার উপর গুরুত্ব নেই,,
ম্যানেজারঃআজ সকালে ম্যম বের হয় নি,আজকে সকালে যদি বের হতো তাহলে অবশ্যই রেজিস্ট্রি খাতাতে নাম থাকতো,কারন কেউ আসলে বা বের হলে সিগন্যাচার করার একটা নিয়ম আছে,,
–
রোদ ম্যানেজারে কলার ছেড়ে দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে হনহন করতে করতে চলে গেল,আর যাওয়া সময় বলে গেল যদি আলো ফিরে আসে তাহলে রোদকে ইনফম করতে।রোদের আলোর জন্য খুব টেনশন হচ্ছে,কারন আলো রাস্তা পার হতে পারে না,চারপাশটাও ওর সব অচেনা।রোদ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর চারদিকে খেয়াল করছে কিন্ত আলো কোথাও নেই,রোদের এবার খুব রাগ হচ্ছে, আলোর উপর।রোদ রাগে গজগজ করতে করতে আলোকে বকা দেওয়া শুরু করলো।
–
রোদঃএই ফাজিল মেয়েটাকে একবার পায় এক চড়ে ওর সব দাঁত খুলে দিবো।ও এত সাহস কোথায় থেকে পেলো যে,আমাকে না জানিয়ে ও হোস্টেল থেকে বের হয়ে গেছে।আলো তোমাকে একবার পাই তারপর বোঝাবো রোদ কি জিনিস?
–
রোদ বাসায় চলে গেল বাসায় পৌঁছে কারো সাথে কোন কথা না বলে ওর রুমে চলে গেল,অন্য দিকে মেঘের সাথে মেঘের আম্মু বিদেশী কুকুরের বাচ্চা কিনতে গিয়েছিলো,মেঘ সেদিন রোদের থেকে এই ছোট কুকুর ছানাটা কেনার জন্য টাকা নিয়েছিল। মেঘ ওর আম্মুকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছিল কুকুরছানা টা কিনে দেওয়ার জন্য, রোদের আম্মু বাসায় ফিরে দেখে রোদ বাসায় ফিরেছে, রোদ ওর রুমে গেছে, মেঘ কুকুর ছানাটাকে নিয়ে রোদের রুমে দৌড়ে চলে গেল, মেঘ রোদের রুমে গিয়ে দেখে, রোদ বেডের সাথে হেলান দিয়ে পা দুটোকে সোজা করে দিয়ে বসে আছে। মেঘ গিয়ে রোদের পাশে বসে আর কুকুর ছানাটাকে দেখিয়ে বলে,,
–
মেঘ: দা ভাই তোর থেকে যে টাকাটা নিয়েছিলাম, ওই টাকাটা পিকুকে কেনার জন্য নিয়েছিলাম, দেখনা দাভাই পিকুটা দেখতে কত কিউট তাই না , একদম আমার মত,,দাভাই তোর কি হয়েছে কথা বলছিস না কেন? আমার পিকুটাকে একটু কোলে নিয়ে আদর করে দে, এই পিকু যা দাভাইয়ের কোলে হিসু দিয়ে আয়
রোদ: মেঘ আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি ,আপাতত তুমি এখন তোমার রুমে যাও , আমি পরে তোমার পিকুকে আদর করে দিবো। আপাতত আমার মুড ভালো নেই তুমি এখন যাও মেঘ।
মেঘ: আচ্ছা( মন খারাপ করে)
–
মেঘ ওর আম্মুকে বললো রোদের মন ভালো নেই , মেঘের পিকুকে রোদ কোলে লে না নেওয়াতে, মেঘ মন খারাপ করে ওর রুমে চলে গেল। রোদের আম্মু রোদের রুমে গেল, গিয়ে দেখে রোদের চোখ থেকে ফোটায় ফোটায় পানি পড়তেছে আর সেটা রোদ আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে। রোদের আম্মু অবাক হয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে, কারণ এত সহজে ভেঙ্গে পড়ার মতো ছেলে রোদ নয় তাহলে কি এমন কারণ যে যার কারণে চোখের পানি। রোদের আম্মু রোদের কাছে গিয়ে বসলো, রোদ মাথা তুলে ওর আম্মুকে দেখে, ফ্লোরেই ওর আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। রোদের আম্মুর রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর রোদ চোখ বন্ধ করে আছে ও
রোদের মুখটা শুকিয়ে গেছে। রোদের আম্মু রোদের এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
–
আম্মু: আমার রোদ বা বাবার কি হয়েছে? কার এত বড় সাহস আমার বাবাটা কে কষ্ট দিয়েছে ?আমাকে বলতো সে কে? তার নামটা বলো তো তাকে আমি আচ্ছা করে বকা দিয়ে দিব,
–
রোদ: আম্মু তোমার অজান্তে আমি না অনেক বড় একটা দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিলাম ,কিন্তু দায়িত্বটা আমি ঠিকমতো পালন করতে পারিনি কারণ আমি ভুল করে ফেলেছি। আম্মু আমি পারিনি একটা অসহায় মেয়েকে আগলে রাখতে, আম্মু তোমার ছেলেটা বড্ড বেশি পচা আম্মু, আমি খুব বড় মুখ নিয়ে বলেছিলাম ওকে সেভ রাখবো ভালো রাখবো পাশে দাঁড়াবো। আমার হয়তো কোনো ভুলের কারণে ও হারিয়ে গেছে ,আম্মু আমার থেকে ও চলে গেল সেটাতে কষ্ট নেই, কিন্তু একবার বলে যেত, ওর তো পৃথিবীতে আর কেউ নেই।কোথায় গেছে সে,কি করছে? আমি কিছুই জানিনা। আম্মু আমার খুব টেনশন হচ্ছে ও একা একটা মেয়ে আমাদের এই নিষ্ঠুর সমাজ তুমিতো বুঝ
–
আম্মু:আমি জানিনা কি হয়েছিলো বাট আল্লাহ যা করে ভালো জন্য করে বাবা,তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না।তুই এভাবে ভেঙে পড়লে হবে না বাবা,তোকে আমি এভাবে দেখতে পারবো না।আমি জানি আমার ছেলে সামান্য বিষয় নিয়ে ভেঙে পড়ার মত কোন ছেলে না,,,।
–
রোদ আর ওর আম্মুর আর কিছুসময় কথা বলে,রোদের আম্মু চলে গেলে, রোদের ফোন বের করে ম্যানেজারকে ফোন দেয়,,,আলোর খোঁজ পাওয়া গেছে কি না সেটা জানার জন্য? কিন্ত কেউ আলোর কোন খোঁজ দিতে পারে নি,আলোর উপর রোদের খুব অভিমান হয়।রোদ তো আলোর এভাবে হারিয়ে যাওয়ার কারনটাই খুজে পাচ্ছে না।আলোর এভাবে মিসিং হয়ে যাওয়াতে রোদ আলোর জন্য পুলিশের কাছে মিসিং ডায়রী লিখে আসে,বাট আলোর কেউ কোন খোঁজ দিতে পারছে না।ফাহাদ, আবির,সাগর সবাই সবার মত চেষ্টা করেও আলোর কোন খোঁজ মিলছেনা,রোদ আলোর আগের বাসাতে গিয়েও খোঁজ করে আলো বা ওর আম্মু কেউ এখানে আসে নি।রোদ আবার হতাশ হয়ে ফিরে যাই,,,
–
৩ বছর,,,
আজকে আলোর এভাবে হারিয়ে যাওয়া ৩বছর হচ্ছে, আর এই ৩ টা বছরে রোদ নিজেকেও একবারে বদলে ফেলছে,এখন একটা শক্ত খোলসের মধ্যে নিজেকে ঢেকে রাখতে পছন্দ করে,আগের থেকে এখন রোদ আরো বেশি রাগী হয়ে গেছে,তবে অফিসটা এখন রোদ একাই দেখে,অফিসের সবাই রোদকে খুব ভয় পায়।আলোর এভাবে হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রোদের মুখের হাসিটাও চলে গেছে।দুইদিনের পরিচয় রোদের মনে অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে সেটা শুধু আলোর নিষ্পাপ মুখ আর ওর সরলতা দিয়ে।তবে এই ৩ টা বছরে একটা মূহুর্তের জন্য রোদ আলোকে ভুলতে পারে নি।
–
আজকে সকালে,,,
সকালে বেলা ব্রেকফাস্ট করতে রোদের বাপি সহ এসে ড্রায়নিং টেবিলে বসে,বাট মেঘ আসে নি,কারন উনার ঘুম এখনো ভাংগে নি,মেঘ এখন ক্লাস5 এ পড়ে,বাট ও আগের থেকে একচুল পরিমান নিজেকে বদলাতে পারি নি, আগের তুলনায় এখন আরো বেশি দুষ্টমি করে।সাহেলা বাকিদের খাবার বেড়ে দেয় আর সবাই খাওয়া শুরু করে।রোদের মা রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,,
আম্মুঃরোদ এভাবে আর কতদিন বল বাবা,গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন নিজেও বিজনেসম্যান হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছো,তাই আমি আর তোমার বাবা তোমার বিয়ে দিতে,,
রাফাত চৌধুরী (রোদের বাপি)=রোদ জীবনটা কিন্তু ছেলে খেলা না,আর তুমি যা বলবে আমরা মেনে নিবো তা কিন্ত না।ভুলে যেও না আমরা তোমার বাবা,মা, আমরা কখনোই তোমার খারাপ কিছু চাইবো না।
রোদঃ আম্মু আমি ঘুরিয়ে কথা বলা একবারে পছন্দ করি না,সো যা বলবে সরাসরি বলবে,আর বাবা আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না,তাই আমাকে তোমরা প্লিজ জোর করবে না।
আম্মুঃআমরা চাই তোমার বিয়ে দিতে,কারন এভাবে তো আর জীবন চলে না তাই না।আর তোমারও তো বিয়ের বয়স হয়েছে এখন নিজের পায়ে দাড়িয়েছো তাহলে এখন তো কোন সমস্যা আমি দেখতে পাচ্ছি না।
রোদঃ আম্মু আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না বলছি তো,আর আমাকে এসব বলবে না তো,আমার এসব একদম ভালো লাগে না।এসব বাদ দিয়ে কথা বলো তুমি,,,আর বিয়ে না করলে কি মানুষ বাঁচেনা নাকি তাদের বাঁচতে দেওয়া হয় না কোনটা।আমি এসব নিয়ে এখনো ভাবিনি,,
আম্মুঃআমি সেটা বলি নি রোদ,,তুমি আমাদের ভুল বুঝছো বাবা,সব বাবা,মা তো চাই তাদের সন্তান ভালো থাকুক,বিয়ে করে সুখে সংসার করুন তাই না।
রোদঃ আচ্ছা আমি উঠি, আমার লেইট হচ্ছে,,, আর আম্মু এসব লেইম কথাবার্তা বলবে না,,,বাই
–
রোদ উঠে রাগ করে হনহন করতে করতে চলে যাই,আর মেঘ কেবল ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে নিচে নামে।মেঘের ঘুমের রেশ এখনো কাটে নি,ভাল করে না তাকিয়ে মেঘ হাটতে গিয়ে কার্পেটে বেধে পড়ে যায়,আর যেভাবে পড়েছে সেভাবে শুয়ে শুয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে,সবাই দৌড়ে যাই আর মেঘকে টেনে তুলে।মেঘের খুব একটা ব্যাথা লাগে নি বাট এমন একটা ভাব করছে মনে হচ্ছে খুব ব্যাথা পেয়েছে,আসলে মেঘ এমন করার কারন হচ্ছে আজ স্কুলে ওর পরীক্ষা আছে আর পড়া হয়নি এজন্য ওর এমন অভিনয়।মেঘ ওর বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখের থুতু দিয়ে দেয়,,,। রোদের মা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে,,আর বলছে,,
–
আম্মুঃ চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াস নাকি,কতদিন বলবো মেঘ সবসময় দুষ্টুমি ভাল না,একটু চোখ কান খোলা রেখে হাটবি।একটা কথাও তোরা শুনিস না
মেঘঃচোখ তো কপালের নিচেই ছিল,আসলে ছোট ছোট চোখ দুটো এতকিছু দেখে কভার করতে পারছে না।আর আমার কি দোষ বলো তো আম্মু?আমি তো সহজ মনেই নিচে আসছিলাম, হুট করে চোখ বন্ধ করে হাটার ইচ্ছে হলো, আসলে ঘুম চোখ থেকে যাচ্ছিলো না তাই
বাপি আর আম্মু রেগে মেঘের দিকে তাকালেন।
–
ওদিকে রোদকে বিয়ের কথা বলাতে ও আরো রেগে গেছে,অফিসে ঢুকে ম্যানেজার বলে দিলো, যাতে এখন ওকে কেউ ডিসটাব না করে,রোদ ওর কেবিনে গিয়ে খুব জোরে ডোর লক করে ব্লেজার খুলে টাই টা ঢিলে করে নিজের চুল নিজেই দুই হাত দিয়ে খামচে ধরে, পাশে রাখা একটা সোফাতে বসে পড়লো। আজকাল রোদের রাগটা খুব বেশি হয়ে গেছে,রোদ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা কনট্রোল করার চেষ্টা করছে।
চলবে,,