‘সিক্ত সুভানুভব’
[২০]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
রোদরা খেয়ে নিল আর আলো আর রোদের আম্মু সব গুছিয়ে যে যার রুমে চলে গেল।রোদ ওর আম্মুর রুমে গিয়ে দেখে ওর আম্মু সোফাতে বসে আছে,রোদকে দেখে রোদের আম্মু উঠে রোদের হাত ধরে বেডে বসালো।এটা নতুন কিছু না রোদে যখন মন খারাপ থাকে বা রেগে ওর আম্মুকে কিছু বলে কিছু সময় পরে রোদ নিজে এসে সরি বলে।আজও তার বিপরীত কিছু হয় নি।রোদ ওর আম্মু কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে আর রোদের আম্মু রোদের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। রোদ ওর আম্মু দিকে তাকিয়ে বলে,,।
–
রোদঃ আম্মু আমি সরি তোমার সাথে একটু জোরে কথা বলে ফেলছি,আসলে তখন রাগ কনট্রোল করতে পারি নি আমি।আর সব জানার পর আরো বেশি কষ্ট হচ্ছিল আমার,আমি প্রথমে মেনে নিতে পারি নি,,,সরি আম্মু।
আম্মুঃআরে বোকা ছেলে আমি কিছু মনে করিনি,তোর জায়গায় অন্য কোন ছেলে হলে এতকিছু এত সহজে মানতো না।তোমার কথায় রাগ করি নি আমি আব্বু,,, এসব নিয়ে কোন কথা হবে না।যাও অনেক রাত হয়েছে রুমে যাও।
রোদঃহুমম।
–
রোদের মনে হচ্ছে এখন ওর মত সুখী কোন মানুষ নেই,বুকের ভেতর চাপা কোন কষ্ট নেই, রোদ খুব সহজে মেনে নিয়েছে যখন দেখলো সব ওর আম্মু করছে।রোদের তখন মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায়ও ছিলো না কারন রোদের আম্মু শুধু রোদের না আরো দুজনের কথা ভেবেছে।রোদের আম্মু এমন কাজে রোদের এখন ওর আম্মুর প্রতি শ্রদধা বেড়ে গেছে, কত জন মা ই বা এটা পারে। রোদ রুমে গিয়ে দেখে আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে,রোদ চুপিচুপি পা টিপে টিপে গিয়ে পেছন থেকে আলোকে জড়িয়ে ধরে,আলো চমকে উঠে। আলোকে কে জড়িয়ে ধরেই আলোর কাঁধে মুখ রাখে রোদ।আলো ছাড়ানোর ট্রাই করলো বাট পারলো না দেখে, ওর আম্মুর সাথে কথা শেষ করে,আর রাগী চোখে রোদের দিকে তাকায়। রোদ আলোর নাকে টেনে দেয় আর একগাল হেসে বলে,,,,,
–
রোদঃএই বুচি এত রাগ করো কেন? আলো একটু কাঁদো তো,তোমাকে কান্না মাখা মুখ দেখতে আমার খুব ভাল লাগে।নাকটা কেমন লাল হয়েছে, আর কান্নার সময় তোমার ঠোঁটটা কাপে উফফ রে সেই কাপুনি ঠোঁট দেখে মন চাই খেয়ে ফেলি।আমাকে একটু তোমার ঠোঁট টা ৫মিনেটের জন্য ধার দাও তো।
আলোঃ কি দিয়ে পিটুনি দিলে আমি ভদ্র হবেন বলেন তো,আপনার মুখ এতো লাগাম ছাড়া কেন?এভাবে কেউ কথা বলে লজ্জা গুলো কি ব্যংকে জমা রাখছেন নাকি?
রোদঃ এই তিনটা বছর ভদ্র ছিলাম আর কোন ভদ্রতা নয় অনলি অভদ্রতা আর রোমাঞ্চ,দুষ্টুমি,,, কোন কথা শুনবো না।এতদিন তো বিরহে কেটেছে এখন আর এসবের জায়গা নেই। আম্মু বলছে তারাতারি নাতি-নাতনি দিতে সো আগেই এর প্রোসেস শুরু করতে হবে। কি বলো ম্যাম।
আলোঃআপনি আসলেই অসভ্য।
–
বাইরে খুব বৃষ্টি নেমেছে মুশল ধারে,,,আজকে আকাশ যেন মাটির বুকে আছড়ে পড়ছে।কেমন একটা শীত শীত ভাব এসে গেছে,আলো গিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় বাইরের রাস্তাতে পিচঢালা রাস্তাতে বৃষ্টির বড় বড় ফোটা আছড়ে পড়ছে , একটা ঠান্ডা বাতাস এসে শরীরে কেমন অনূভূতি সৃষ্টি করছে।আলোর দেখে রোদও বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় আর রোদকে উদেশ্য করে বলে,,,,
-“যে টুকু সময় তুমি থাকো কাছে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার রিদয়
জুড়ে নামে অথৈই আঁধার।”
রোদ আলো এতক্ষণ একহাত পকেটের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ালে সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে গান টা শুনছিলো।তারপর আলোর দিকে এগিয়ে এসে রোদ আলোর কোমর টেনে আরো কাছে আনে,আলো খুব লজ্জা পায় কেমন একটা অনুভূতি ফিল করে, যে অনুভূতি ভালবাসার মানুষ খুব কাছে আসলে ফিল হয়।আলো হালকা কাঁপছে আর ওর
মনে হচ্ছে ওর হার্টবিট দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমেছে যে এত দ্রুত বিট করছে।আলো রোদকে হাত দিয়ে ঠেলছে আর রোদ মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখছে ওর দিকে ঠোঁট এগোতে থাকে। আর যখনই রোদ আলোর ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে যাবে,ওমনি পাশের রুম থেকে মেঘ চিৎকার করে রোদকে ডাকতে থাকে,রোদ আলোর দিকে তাকায়। আলো আর রোদ দুজনই মেঘের রুমে দিকে যায়।
–
মেঘের রুমে ঢুকে দেখে মেঘ নেই, ওর বেডে blanket টা এক সাইডে জড়ো করে রাখা আর ফ্যান চলছে আবার এসিও চলছে।রোদ চারদিকে চোখ বুলিয়ে মেঘকে খুঁজে বাট মেঘকে কোথাও দেখলো না।রোদ মেঘকে ডাকলো,,,,
–
রোদঃমেঘ তুমি কোথায়?কি হয়েছে চিৎকার করে ডাকলে কেন?
আলোঃ মেঘবাবু কই তুমি।
মেঘঃ দাভাই আমি এখানে আছি।
রোদঃকোন খানে দেখতে পাচ্ছি না তো।
মেঘঃএই যে বেডে blanket এর মধ্যে আমি,আমার রুমে ফ্যানটা বন্ধ করো তো,আমার বের হতে কষ্ট হচ্ছে,,,
রোদঃতুই ফ্যান বন্ধ করার জন্য এভাবে চিৎকার করে আমাদের ডেকে আনলি।
মেঘঃ না শুধু ফ্যান না এসিটাও বন্ধ করে দাও,আমার হাত বের করতে কষ্ট হচ্ছে,,, উফফ এত শীত লাগছে কেন?বউমনি দেখো তো বৃষ্টিটা কমছে নাকি,,,(ওভাবে জড়োসড়ো হয়েই কথা গুলো বললো)
আলোঃ মেঘ তুমি ঠিক ভাবে শুয়ে পড়ো, এভাবে শুয়ে থাকলে পরে ঘাড় ব্যাথা করবে।আমি সব বন্ধ করে দিচ্ছি।
রোদঃদেখছো কেমন ফাজিল দেখছো?মেঘ তুই আর মানুষ হবি না তাই না রে,সব সময় আমার রোমাঞ্চে তোর ভিলেন না হলে চলে না।
মেঘঃযা বাবা আমি কি করলাম?বউমনি তোমার বরকে বলো আমি কিছু করিনি।আর তোমরা রোমাঞ্চ করছিলে আগে বললেই হতো একটু পরে ডাকতাম,,,বউ দাভাই কিন্ত আমাকে বকছে শুধু শুধু।
আলোঃও বর মেঘবাবু কিছু করে নি,ওকে আর বকা দিও না।
–
রোদ আর আলো ওরা মেঘের রুমের জানালার glass টেনে দিয়ে পর্দা টেনে দিল,তারপর চলে গেল।
–
আলো ঘুমানোর জন্য বালিশ ঠিক করছিলো তখন, রোদ ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে আসে,আলো রোদের দিকে তাকিয়ে দেখে, রোদের মুখে রোদ পানির ঝাপটা এত জোরে দিয়েছে যে সামনের চুল গুলোও ভিজে গেছে,চুল গুলো দিয়েও টপটপ করে পানি পড়ছে প্যান্ট পায়ের কাছে জড়ানো পায়ের পশম গুলো ভিজে পায়ের সাথে লেপ্টে আছে,,।আলো রোদের পায়ের দিকে তাকিয়ে পশম গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে,রোদ টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে দেখে আলো বিছানার মাঝখানে বসে আছে।আলোর দৃষ্টি অনুসরণ করে রোদও ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে ওর পা দেখে,,,, আর মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি আটে।
–
রোদঃএই মেয়ে তুমি এত লুচু কেন?আমার পায়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?এভাবে একা একটা ছেলেকে পেয়ে এভাবে দুষ্টু নজরে তাকাচ্ছো কেন শুনি?আমার বুঝি লজ্জা করে না।
আলোঃইয়ে মানে আসলে আপনার পায়ের পশম গুলো খুব মোহনীয় লাগছে।
রোদঃসিক্সপ্যাক বডি বানিয়েছি জিম করে,এত handsome,চোখ,মুখ,ঠোঁট থাকতে তুমি কি না আমার পায়ে পশম দেখে Crush খেলে,,,, আর আমাকে মোহনীয় লাগছে না, আমার পায়ের পশমকে মোহনীয় লাগছে ভাবা যায়। এটাও দেখার বাকি ছিলো।আচ্ছা বাদ দাও আজকে বাইরের খুব বৃষ্টি হচ্ছে, সো খুব রোমান্টিক ওয়েদার তাই।
আলোঃ না খুব খারাপ ওয়েদার।
রোদঃতাই নাকি?
–
রোদ আলোর দিকে এগিযে যায় আর একটানে আলোকে নিজের বুকের উপর টেনে নেয়। তারপর খুনশুটিতে মেতে ওঠে, রোদ আর আলো দুজন দুজনেই একটা পবিএ বন্ধনের মাঝেই ওরা একে অন্যের হয়।আর ভালবাসাময় আর খুনশুটিময় একটা রাত পার করে।
পরেরদিন সকালে আলোর ঘুম ভাঙ্গে,, আর ঘুম ভেঙে দেখে রোদ এক হাতে উপর ভর দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আলো রোদের এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোদের বুকে লুকায়, আর রোদ হেসে আলোকে তার বাহুডোরে আটকে রাখে।
–
ওরা আজকে আলোদের বাসাতে যাবে,,রোদের আম্মু মেঘকে যেতে দিবে না, তারপরেও আলো ওকে জোর করে নিয়ে যায়। ওরা বেরিয়ে পড়ে আলোদের বাসাতে যাওয়ার উদেশ্য করে,রোদ প্রথমবার শশুড়বাড়ি যাচ্ছে এজন্য রোদের আম্মু গাড়ি বিভিন্ন ধরনের, ফল, মিষ্টি দিয়ে দেয়।আজকে আলো ড্রাইভ করছো আর পাশের সিটে রোদের কোলে বসে আছে।দু’ভাইই আলোর দিকে গল্পে মেতে উঠলে।আলো ইচ্ছে করে ড্রাইভ করতে চাই রোদ মানা করার পরেও শুনে নি।ওর সবাই হাসি,দুষ্টুমির মধ্যেই আলোর বাসায় পৌঁছে যায়।
–
চলবে,,,!!