সিক্ত সুভানুভব’ [৩১]

0
270

‘সিক্ত সুভানুভব’
[৩১]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ আর আলো দৌড়ে বের হলো, একটা গাড়িতে উঠে আলোর আম্মু চলে যাচ্ছে, রোদ আর আলো দ্রুত পায়ে হেটে গাড়িতে এসে বসে,আর গাড়ি স্টাট দেয়।

রোদ গাড়িটা ফলো করতে থাকে,পাহাড়ি রাস্তা এজন্য জোরে ড্রাইভও করতে পারছে না।যে গাড়িটাকে ফলো করছে সেটা অনেক দুরে,আলো কতদিন পর ওর মাকে দেখলো আর ওর মাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়,আজ কতটা দিন পর ওর আম্মুর মুখটা দেখলো,রোদ আলোর কান্না না সহ্য করতে পারছে, আর না কিছু বলতেও পারছে না।

রোদের গাড়িটা দ্রুত ড্রাইভ করার চেষ্টা করছে বাট পাহাড়ী রাস্তার জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ওরা আরেকটু সামনে এগোতেই,আর একটা ঝামেলাতে পড়লো।একটা বাস পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টে নিচে পড়ে গেছে,সেখানে জটলা বেধে আছে। ওরা কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে ,তারপর একটু রাস্তা ফাঁকা হওয়াতে সামনের দিকে এগোতে থাকে, আলোর আম্মুর গাড়িটা আর দেখা যাচ্ছে না, এজন্য রোদ এবার গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয়।

আলো: রোদ আমি আমার আম্মুকে আবার হারিয়ে ফেলবো না তো ?এতদিন পর আবার আমি আম্মুকে এভাবে হারিয়ে ফেললে নিজেকে আর মাফ করতে পারবোনা। প্লিজ রোদ!তুমি আমার আম্মুকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও, আমি আর তোমার কাছে কিছু চাইবো না।( কেঁদে কেঁদে)

রোদ: বোকা মেয়ে !কাঁদে না, দেখো আল্লাহর রহমতে আমরা তোমার আম্মুকে পেয়ে যাবো । তুমি একদম টেনশন করো না এইভাবে কেঁদে কেঁদে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না, এখন তোমাকে শক্ত থাকতে হবে ।তুমি যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়ো তাহলে আমি কিভাবে নিজেকে সামলাবো বলো, আমি তো তোমার চোখের পানি দেখতে পারিনা। প্লিজ তুমি এভাবে কেঁদো না( মন খারাপ করে)

আলো: রোদ আমার মত হতভাগী মেয়ে আর আছে কিনা একবার ভেবে দেখো তো ?আমার মা বেঁচে আছে ,তবুও দেখো আমি মায়ের কাছে নেই ,আমি আমার মায়ের কোলে মাথা রাখতে পারিনা। কতদিন মায়ের হাতে খাইনি, কতদিন মায়ের শরীরে মা মা গন্ধ টা পায়নি। আমি এবার মারা যাব রোদ আমি আর পারছি না। বড্ড বেশি ভালোবাসি আমি আমার তিনটা আম্মুকেই,। আমি আমার তিনটা আম্মুকেই আমার সাথে চাই( কেঁদে কেঁদে)

রোদ: আল্লাহ ভরসা !তুমি একদম চিন্তা করো না। ওপর ওয়ালা যা করে আমাদের ভালোর জন্যই করে ।এখানে তোমার আমার আর সবার ভালোর জন্য, এখানে হয়তো কোন মীরাক্কেল ঘটবে, আর এই সিচুয়েশনে যা হবে ভালো হবে না হয় খারাপ হবে। তবে যা-ই ঘটুক দুটোকেই আমাদেরকে মেনে নিতে হবে। কারণ বাস্তবতা বড়ই কঠিন সেটা তোমার থেকে ভালো কেউ জানে না।

আলো: হে আল্লাহ!আর কত সহ্য করব আমি। আমি যে আর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। আমার বাবাকে কেড়ে নিলে,।আমার মাকেও আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিলে, আমার জীবনটা কেন এরকম অগোছালো ?আমার জীবনটা কেন সবার মত না, যখন ভাবি একটু ভালো থাকবো তখনই আমার সাথে এমন কিছু অঘটন ঘটে , আর আমার জীবনটা ওলট-পালট করে দেয়।কেন আমি সবার মতো ভালো থাকতে পারিনা( আলো কাঁদছে আর কথাগুলো বলছে)

রোদ পারছে না কিছু বলতে, আর না পারছে আলোর এরকম আহাজারি কান্না সহ্য করতে। রোদ ভালো করে খুঁজলো বাট গাড়িটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,ওরা আবার হারিয়ে ফেলছে। আসলে ভাগ্য ওদের সাথে নেই, এজন্য আলোর আম্মুকে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলল।

রোদ এক সাইডে গাড়ি থামালো, আলো দৌড়ে গাড়ি থেকে বের হলো, কিন্তু গাড়ির কোনো চিহ্ন খুঁজে পেলো না,তাই মাটিতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। রোদ আলোর কাছে এগিয়ে গেল ,আর আলোর পাশে বসতেই আলো রোদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো ,সাথেবুক ফাটা আর্তনাদ। যে যেমন পরিস্থিতিতে পড়ে সেই সে পরিস্থিতির মর্ম বোঝে, আলোর এখন সেই অবস্থা।

আলোর এভাবে কান্না করা দেখে রোদ নিজেকে সামলাতে পারছে না ,রোদেরও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।রোদ যেখানে আলোর কয়েক ফোটা চোখের পানি পরলেই , সহ্য করতে পারে না, বাট আজকে সেই আলো রোদের বুকে এভাবে হাউ মাউ করে কাঁদছে।আসলে এগুলোর ওদের হাতে নেই, আজকে ভাগ্য ওদের সাথে বড্ড বেঈমানি করছে, আর বার বার ওদের কষ্টটা বাড়িয়ে দিচ্ছে ।

রোদ আলোকে তুলে গাড়িতে বসায়, তারপর রোদ ওর বাপিকে ফোন দিয়ে সবকিছু জানাই , আর আই.জি( পুলিশ পরিচালক) এর সাথে কথা বলে এবং রাঙ্গামাটি জেলাতে যে দায়িত্বে আছে,তাকে আই ,জি অর্ডার করে যেকোনো মূল্যে যেন আলোর আম্মুকে খুঁজে বের করে দেওয়ার জন্য।

কারণ পুলিশ পরিচালকের সাথে রোদের একটা সম্পর্ক আছে, যার কারণে এত সহজে আলোর আম্মুকে খুঁজে দেওয়ার কাজটা শুরু করতে পারল ,রোদ আর আই,জি পূর্ব পরিচিত। রাঙ্গামাটি জেলা তে হইচই পড়ে যায় আলোর আম্মুকে খুঁজে বের করে দেওয়ার জন্য, যে কোন রকমের পদ্ধতি অবলম্বন করেই হোক আলোর আম্মুকে খুঁজে বের করতেই হবে এটাই আই,জির অর্ডার।( কারণ এটা আই.জির কড়া নির্দেশ)

ওদিকে আলোর আম্মু জানেইনা, উনার একটা কলিজার টুকরা মেয়ে আছে, আর আম্মু আম্মু বলে ডেকে আহাজারি সাথে বুক ফাটা আর্তনাদ করে উনাকে কাছে ডাকছে। আলো আর রোদ রিসোর্টে ফিরে আসে ,সকাল থেকে আলোকে কিছু খাওয়াতে পারেনি রোদ,অনেক কষ্ট করে এখন অল্প একটু খাবার খাইয়ে আলোকে একটা ঘুমের ওষুধ দিয়ে দেয়। কারণ আলোর এখন ঘুমের খুব প্রয়োজন ,আলো এখন জেগে থাকলে কান্নাকাটিতে ভেঙ্গে পড়বে।

রোদেরও একটু পুলিশ স্টেশনে যাওয়া দরকার, আলোকে এভাবে একা রাখা ঠিক হবে না এর জন্য মেডিসিন দিয়ে ঘুমাতে বলে। আর ওকে রুমে রেখে, বাইরে থেকে ডোর লক করে দিলেই এনাফ,কারন চাবি রোদের কাছে থাকবে। পুলিশ স্টেশন থেকে রোদকে ফোন দিয়েছিল, আলোর আম্মুর সম্পর্কে কিছু তথ্য জানার জন্য, আর আলো এখন কথা বলার মত অবস্থায় নেই। রোদ আলোকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে, ভালো করে শুইয়ে দিল, আলোর ওপরে ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে হালকা করে এসি দিয়ে, আলোর কপালে একটা কিস করে দিয়ে রুম লক করে চলে গেল।

আলো ওর আম্মু খবর পেয়ে ওর আম্মুর কাছে দৌড় যায়।আর গিয়ে দেখে ওর আম্মুর বডিটা সাদা কাপড়ে মোড়ানে,আলো ধপ করে ওর মায়ের লাশের পাশে চুপচাপ বসে পড়ে,মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে, চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। চারটা বছর পর ওর আম্মুকে খুঁজে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলছে,আলো এবার উঠে ওর আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে এবার চিৎকার করে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলো,,,,,,

চারপাশের মানুষ গুলোও আলোর কান্না দেখে কাঁদছে,রোদও আলোকে সামলাতে পারছে না। রোদও কাঁদছে, রোদের আম্মু, বাপি,সজীব, রিদিতা(নতুন বাবা-মা)সবাই কাঁদছে। কেউ আলো শান্তনা দেওয়া ভাষা খুজে পাচ্ছে না।আলো মনে হচ্ছে ওর প্রাণটা কেউ ছুরি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে,,,

আলোঃ আম্মু! রে তুমি আবার আমাকে রেখে চলে গেলা।আম্মু আমি বাঁচবো কি করে আম্মু?আমাকেও নিয়ে যাও তোমার সাথে,বার বার তোমরা আমাকে রেখে কেন চলে যাও?বাবার থেকে লাল চুড়ি চেয়েছিলাম,এজন্য আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো, আজকে তুমি আমাকে ফাঁকি দিলে আম্মু, আর যে খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মু আমাকে একটু আদর করে **রাজকন্যা ** বলে ডাকো না আম্মু। আম্মু ও আম্মু!আম্মু রে আমাকে এভাবে রেখে যেও না রে, আম্মু চারটা বছর তো দুরে ছিলাম,এবার চিরতরের জন্য দুরে ঠেলে দিলা।
তুমি আমার থেকে দুরে থাকো তাও আকাশের তারা হয়ে যেও না রে আম্মু! আম্মু তোমাকে আমি বড্ড বেশি ভালবাসি আম্মু,,,

চলবে,,,!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here