বাঁক ( ২৭ পর্ব )

0
186

বাঁক ( ২৭ পর্ব )
____________

মিরা ধীরে ধীরে চোখের আড়ালে চলে যায়। মানহা আলগোছে চোখের জল মুছে নিয়ে লাউ গাছের ছাউনির নিচ থেকে রাস্তায় বের হয়ে আসে। ভোরের আলো পুরোপুরি ফুটতে শুরু করেছে। রাস্তার অন্যপাশের শিম গাছ থেকে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে। পুনরায় হাঁটতে শুরু করে মানহা, মনস্থির করে নিয়েছে বাজারে ফিরে যাবে সে। দিঘি দু’টা টলটলে পানিতে ভরা। মাঝখানের সবুজ ঘাসে ঢাকা সরু রাস্তাটা যেন জলের ওপর ভেসে আছে। মানহার সবকিছু ঝাপসা লাগছে। চোখ দু’টা বারবার ভরে যাচ্ছে জলে। পিছনে মিরাদের বাড়ি থেকে মোরগের ‘কুকুউক্কু’ ডাক শোনা যাচ্ছে। সরু রাস্তাটা ফেলে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের সামনে চলে এলো। ইউনিয়ন পরিষদের পেছনের কলোনির চাপাকলে দু’জন মহিলা ছাঁই হাতে দাঁত মাজতে মাজতে তার দিকে তাকিয়েই কী যেন বলছে। নিশ্চয় মৃদুলের সঙ্গে তার চটুল প্রেমকাহিনীর গল্পই করবে৷ বাজারে চেম্বার দেয়ায় মোটামুটি সবাই তাকে চিনে। মানহা বুঝতে পারে ব্যাপারটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবুও ভেঙে পড়ে না সে। লোকজন তো জানে না মৃদুলের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক। কতটা বছর অপেক্ষার প্রহর গুনে শৈশবের হিরোকে পুনরায় ফিরে পেয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে বাজারে ফিরে এলো। এখনও দোকানপাট খোলা হয়নি। কিছু কিছু মালবাহী গাড়ি প্রচণ্ড শব্দ করে যাচ্ছে আসছে৷ মানহা ফুটপাত ধরে হেঁটে মামণি ফার্মেসির সামনে এসে ঈষৎ সময় থমকে দাঁড়িয়ে থাকে৷ এখনই কী চেম্বারে চলে যাবে? পুরো রাত দু’জন এক সঙ্গে থেকেছে এটা মানুষ জানতে পারলে কি সমস্যা হবে না? মানহার আর ভাবতে ভালো লাগছে না। শরীর বড়ো জ্বালা করছে। ক্লান্ত আর অবসাদ দেহের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। ইচ্ছা করছে চেম্বারে ছুটে গিয়ে টানা একটা ঘুম দিতে৷ না-কি নানাবাড়ি চলে যাবে? ওরা না হয় একটু বকা দেবেন। তাতে কী আর হবে? নিজের মামা-মামীই তো। মায়ের পর এরাই তো তার আপনজন। মা তো এদের কাছেই তাকে রেখে গেছেন। অবিভাবকরা একটু কড়াকড়ি করতেই পারে। মানহা নিজেকে প্রবোধ দিয়ে নানাবাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে। এশিয়ান কমিউনিটি সেন্টার পেরিয়ে গ্রামের ইটের সরু রাস্তা দুইপাশে জমি। খানিকটা পথ হেঁটে যেতেই জলেস্বরী গ্রামের প্রথমে জামে মসজিদ। বিশাল ঈদগাহ। উঁচু মিনার। বাচ্চারা মক্তবে আসতে শুরু করেছে। ইটের রাস্তার বাঁ পাশ থেকে সবার বাড়ির রাস্তা গিয়েছে৷ ডান দিকে হাওর। মসজিদের পর গুনে গুনে আটটা রাস্তার পরেই মানহার নানাবাড়ি। সে মসজিদের সামনে এসে ওড়নাটা ভালো করে মাথায় দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। সামনে তাকিয়ে দেখে মামাতো বোন লতা। তাকে দেখেও কিছু না বলে চলে যাচ্ছে।
মানহা ডাকলো,

– ‘এই লতা।’

লতা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো,

– ‘কি বলবা বলো আমার মক্তবের সময় হয়ে গেছে।’

‘আচ্ছা তাহলে চলে যা’ বলে মানহা পুনরায় হাঁটে। খানিক্ষণ পর নানাবাড়ির রাস্তায় ঢুকে সে। কাঁচা রাস্তার দু’পাশে উঁচু উঁচু গাছ। বাঁ পাশে পুকুর ঘাট। পুকুর পাড়ে বাঁশঝাড়ের পাশে ওর মায়ের কবর। বন্যঘাসে কবরটা ছেয়ে গেছে। বাড়ির যতই কাছাকাছি আসছে মানহার বুক ধুকধুক বাড়ছে। নিজেকে শান্ত করার জান্য সান বাঁধানো ঘাটে নেমে মুখ হাত ধুয়ে নিল। পুকুর থেকে সুপারি গাছের মাঝখান দিয়ে বাড়িতে ঢোকার রাস্তা। সামনে গরু আর লাকড়ি ঘর। বাঁ পাশ দিয়ে উঠোনে গেল সে। সামনের যে জাম্বুরা গাছ দেখা সেটায় মা গলায় দড়ি দিয়েছিলেন। বারান্দায় গ্রিল। দরজার ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানো। মানহা ভয়ে ভয়ে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে খুলতে লাগলো। শব্দ শুনে ভেতর থেকে মামা বললেন,

– ‘কে?’

– ‘মামা আমি।’

তখনই তিনি চিল্লাচিল্লি শুরু করলেন। সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল। ফার্মেসিতে যাওয়ার জন্য প্যান্টের বেল্ট পরে রেডি হচ্ছিলেন। বেল্ট হাতে নিয়ে বারান্দায় তেড়ে আসলেন মারতে। মানহা তাকিয়ে দেখে মামী আঁটকে রাখতে পারছেন না। মামা প্রচণ্ড ক্রোধে বলে যাচ্ছেন, ‘তুই খানকি আমার বাড়িতে আসবি না৷ তুই আমার ইজ্জত মেরেছিস। সারা রাত নাগরের লগে কাটিয়ে ভোরে এসেছিস তাই না? তোর এই বাড়িতে জায়গা নাই। চোখের সামনে থেকে চলে যা বলছি, না হলে এই বেলের বাড়ি একটাও মাটিতে পড়বে না।’

লজ্জায় অপমানে মানহার মরে যেতে ইচ্ছা করছে। চারদিকে ঝাপসা চোখে তাকায় সে। পাশের বাড়ির ছেলে-বুড়োরা ‘হা’ করে তাকিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি উঠোন পেরিয়ে গরু ঘরের আড়ালে যায়। কান্নায় শরীর বারবার কেঁপে উঠছে। ওড়না দিয়ে চোখের জল মুছে পুকুর ঘাটে গিয়ে আবার মুখ ধুয়ে-মুছে নেয়। অপেক্ষা করছে মামীর। হয়তো তিনি ফিরিয়ে নিতে আসবেন। কিন্তু কেউ এলো না। উলটো আশেপাশের বাড়ির মানুষরা এখন ঘাট পাড়েও উঁকিঝুঁকি মারছে। পুনরায় বাজারের দিকে হাঁটতে শুরু করে। কী হচ্ছে কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না। চিন্তাশক্তি যেন নাশ হয়েছে। বাজারে আসতে আসতে রাস্তায় অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হলো। সবাই কেমন করে যেন তাকাচ্ছে৷ শরীর জুড়ে ক্লান্তি আর অবসাদ। পা দু’টা ভারি লাগছে। আর যেন হাঁটতেই পারবে না। কোনোভাবে মানহা মসজিদ পেরিয়ে বাজারের গলিতে এলো। বাজারের দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে । সবাই কেমন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে, মিটমিট করে হাসছে। মানহার অস্বস্তির সীমা রইল না। ইচ্ছা করছে কবর খুঁড়ে ঢুকে পড়তে। মামণি ফার্মেসির সামনে এসে সিঁড়ি বেয়ে সোজা উপরে আসে। ভ্যানিটিব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে আবার লাগিয়ে বেডরুমে যায়। মৃদুল এখনও ঘুমোচ্ছে৷ ক্লান্ত মানহা ভ্যানিটিব্যাগ টি-টেবিলে রেখে মুখ ঢেকে কান্নায় কেঁপে কেঁপে উঠলো। ক্রমশ কান্নার তোড় বাড়তে থাকে। শব্দ শুনে মৃদুলের ঘুম ভেঙে গেল। সে হকচকিয়ে বিছানায় উঠে বসে দেখে সোফায় বসে মানহা কাঁদছে। সে বিছানা থেকে উঠে মানহার পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বললো,

– ‘কি হয়েছে? কাঁদছো কেন হঠাৎ?’

মানহা কান্না থামিয়ে মাথা তুলে তাকায়। মৃদুলের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর অনেকটা কমে গেছে। মৃদুল ওর মুখ দেখে অবাক হয়ে বললো,

– ‘তোমার এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে বলো? চোখ লাল হয়ে গেছে।’

মানহা ওড়না দিয়ে মুখ মুছে মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘কিছু না, তুমি আমায় একবার জড়িয়ে ধরবে?’

– ‘কেন?’

– ‘প্রশ্ন না করে ধরবে?’

মৃদুল অনিচ্ছায় তাকে জড়িয়ে ধরে। মানহা ভেজা গলায় বললো ‘কবুল কবুল কবুল’।

মৃদুল হাসতে হাসতে মানহাকে ছাড়িয়ে বললো,

– ‘মাথা গেছে না-কি তোমার?’

মানহা না হেঁসে দু-হাতে আঁজলা করে মৃদুলের মুখ ধরে বললো,

– ‘তুমিও বলো।’

মৃদুল উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে বললো,

– ‘তাহলে কী বিয়ে হয়ে যাবে?’

মানহা না হেঁসে পুনরায় বললো,

– ‘ছোট বেলায় আমি ইরফান ইশি আর তুমি এসব খেলেছিলাম মনে আছে তোমার?’

– ‘আজ হঠাৎ আবার কী হয়েছে তোমার বলো তো?’

– ‘তুমি বিরক্ত হচ্ছ?’

মানহার মুখের দিকে তাকিয়ে এই মুহূর্তে মৃদুলের ভীষণ মায়া হচ্ছে। ইচ্ছা করছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সেও ছোটবেলার মতো তিনবার কবুল বলুক। দু’একটা ভালোবাসার কথা বলুক। ভরসা দিক। কিন্তু তার যে আবারও ডুব দিতে হতে পারে। জীবনটা বাঁক নিতে পারে অন্যদিকে। তখন তো মানহা বিষাদের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে। মিছেমিছি কেন মেয়েটিকে স্বপ্ন দেখাবে। যা দেখিয়েছে তাও অনেক বেশি হয়ে গেছে। মানহা পুনরায় তাড়া দিয়ে বললো,

– ‘কি হলো কথা বলো, তুমি বিরক্ত হচ্ছ?’

মৃদুল মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘না।’

মানহা পুনরায় তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

– ‘সর্দি আর জ্বরে তোমার ভয়েজ অনেক সুন্দর লাগছে।’

– ‘কি বলো? অসুস্থ হলে ভয়েজ সুন্দর হয়?’

‘হু, খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে’ কথাটি বলে মানহা ফিক করে হেঁসে ফেলে। মানহার এই ফিক করে হাসিটা মৃদুলকে এলোমেলো করে দেয়। তবুও সে নিজেকে প্রশ্রয় দেয় না।

– ‘মানহা মুখ হাত ধুতে হবে।’

মানহা ছেড়ে দিয়ে বললো,

– ‘ও হ্যাঁ তুমি তো আবার সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছো, যাও মুখ-হাত ধুয়ে আসো, আমি নাশতা দিচ্ছি।’

মৃদুল সম্মতি জানিয়ে বাথরুমে গেল। মানহার আজ রান্নাঘরে যেতে একদম ভালো লাগছে না। জানে মৃদুল খেতে একটু বেশিই পছন্দ করে তবুও আজ কিছু বানানোর মতো মানসিকতা তার নেই। দু’টা ডিম সেদ্ধতে দিয়ে অন্যপাশে চা বসায়। মৃদুল খানিক পর মুখ মুছতে মুছতে রান্নাঘরে এসে বললো,

– ‘তুমি রাতে এখানেই থেকেছো তাই না?’

মানহা মাথা তুলে তাকিয়ে বললো,

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘লোকজন জানতে পারবে না? জানলে কী হবে বুঝতে পারছো?’

মানহা কোনো জবাব দিল না।

– ‘বাচ্চামু করছো মানহা।’

মানহা ডিম তুলে প্লেটে নিয়ে বললো,

– ‘খোসা একটু ছাড়িয়ে দিতে পারবে?’

মৃদুল সম্মতি জানিয়ে ডিমের খোসা ছাড়াতে গেল।
মানহা ফ্রিজ থেকে দু’টা আপেল এনে চাকু দিয়ে কেটে একটা প্লেটে নিল।

মৃদুল আবার বললো,

– ‘কেউ খেয়াল না করলেও তোমার মামা নিশ্চয় খেয়াল করবেন।’

মানহা এবার ক্রোধান্বিত চেহারায় তাকিয়ে বললো,

– ‘খেয়াল করলে আমার কোনো সমস্যা নেই, তোমার আছে?’

মৃদুল মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘তোমার কথা ভাবছি আমি।’

– ‘আমাকে নিয়ে এতো ভাবনা থাকলে এখনই নিয়ে বিয়ে করে ফেলো। দরকার হয় এখান থেকেই চলে যাব। তুমি যা পারো একটা কর্ম করে আমাকে খাওয়ালেই চলবে। এই জীবনের কাছে আমার ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু চাওয়ার নেই। আগেই তোমাকে এসব বলেছি আমি।’

মৃদুল আর কোনো জবাব দিল না। ডিমের খোসা ছাড়িয়ে প্লেটে রাখলো। মানহা হাত ধুয়ে অল্প একটু লবণ নিয়ে ডিমে মাখিয়ে প্লেট দু’টা হাতে নিয়ে বললো,

– ‘খেতে আসো।’

মৃদুল ওর সঙ্গে গিয়ে সোফায় বসে। মানহা প্লেট ঠেলে দিল। মৃদুল ডিমে কামড় দিয়ে বললো,

– ‘ইরফান কিছু জানিয়েছে?’

– ‘হ্যাঁ জানিয়েছে।’

– ‘কি বললো?’

মানহা সবকিছু বললো মৃদুলকে। সবকিছু শুনে সে বললো,

– ‘তাহলে এখন শুধু ইশিদের কলের অপেক্ষা ছাড়া আর কিছু করার নেই।’

মানহা আপেলে কামড় দিয়ে বললো,

– ‘তোমার কোনো আইডিয়া থাকলে বলো।’

– ‘তেমন কিছু নেই।’

– ‘তাহলে আর কি করারই বা আছে।’

মৃদুল আর কিছু বললো না। দু’জন পুনরায় নাস্তায় মনযোগ দিল। খানিক্ষণ পর মানহা গেল চা আনতে। চা এনে টি-টেবিলে রেখে বললো, ‘আজ খুব ক্লান্ত লাগছে তাই এক্সট্রা কিচ্ছু বানাতে ইচ্ছা করছিল না।’

– ‘কেন তোমার কি এগুলো খেয়ে হচ্ছে না আরও লাগবে?’

মৃদুলের রসিকতা বুঝতে মানহার ক্ষীণ সময় লাগলো। তারপর ফিক করে হেঁসে অন্য প্রসঙ্গে গিয়ে বললো,

– ‘শোনো, নাস্তা করে আমি একটা বাসা দেখতে যাব।’

মৃদুল চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,

– ‘কেন?’

– ‘বিয়ে ছাড়া কি এখানে এক সঙ্গে থাকবো না-কি?’

– ‘তোমার নানাবাড়িতে যাবে।’

– ‘না সেখানে যাচ্ছি না।’

– ‘তাহলে আমি আগের জায়গায় গিয়ে থাকবো তুমি এখানেই থাকো।’

– ‘না তার দরকার নেই, এমনিতেই ইশি আর আন্টিকে পেলে আলাদা বাসা লাগবে।’

– ‘আগে তো পাও।’

– ‘এতো নিরাশ হচ্ছ কেন? পাব দেখে নিয়ো।’

– ‘পেলেই হলো।’

– ‘তোমার জ্বর অনেকটাই কমে গেছে। আজ ওষুধ খেলে পুরোপুরি সেরে যাবে।’

– ‘হ্যাঁ, কিন্তু তোমাকেও ক্লান্ত লাগছে। একটু রেস্ট নিয়ে বাসা দেখতে যাও।’

– ‘না, বাসা দেখে এসে ঘুমাবো।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

দু’জনের নাস্তা শেষ হলে মানহা সবকিছু গুছিয়ে এসে বললো,

– ‘আমি যাচ্ছি, তুমি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দাও।’

মৃদুল বসা থেকে উঠে বললো,

– ‘আচ্ছা চলো।’

মানহা বাইরে চেল গেল। মৃদুল দরজা বন্ধ করে এসে প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে। ফাতিহার অনেকগুলো কল দিয়েছে। সে কল ব্যাক করলো। ওপাশে বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।

– ‘হ্যালো।’

– ‘হ্যাঁ ফাতিহা কেমন আছো?’

– ‘তা আর জাইনা আপনের কি লাভ কন?’

মৃদুল হেঁসে বললো,

– ‘এতো অভিমান? আর আপনি করে বলছো কেন?’

– ‘আপন মাইনষেরে তুমি কইরা বলতে হয়, পরকে না।’

– ‘আরে বাবা আমি পর হয়ে গেলাম।’

– ‘হ, পরই তো, তা নয় তো কি? আজ কয়দিন ধইরা কল দেই রিসিভও করো না, ঘুরাইতেছেও না। এখান থাইকা গিয়াই পর হইয়া গেছো।’

মৃদুল উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে বললো,

– ‘আরে না, বললামই তো কোম্পানিতে মোবাইল নিয়ে ঢুকতে দেয় না।’

– ‘হ, রাইতেও কোম্পানিতে কাজ থাকে আপনের।’

– ‘তোমাকে বলতে ভুলে গেছি। আমি ইশি আর মায়ের সন্ধান পাইছিলাম। ডিউটি শেষে এসব নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে থাকি।’

– ‘তাই না-কি, তো পাইছো তাদের?’

– ‘না, পাইনি। ট্রেনে চট্টগ্রামও গিয়েছিলাম।’

– ‘বাবা ট্রেইনে?’

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘তা পাইলেন না যে, এখন কি করবেন?’

– ‘এখনও খুঁজাখুঁজি চলছে। আর ইরফানের কথা বলেছিলাম না? তার সাথে দেখা হইছে গতকাল।’

– ‘এতোকিছু হইয়া গেল?’

– ‘হ্যাঁ, তাইতো কল দিতে পারি না।’

– ‘আইচ্ছা আরেকটা কথা শোনো।’

– ‘কী।’

– ‘লাল ছাগলটা বিক্রি কইরা দিছি।’

– ‘কত দিয়ে?’

– ‘তিন হাজার টাকা।’

– ‘আচ্ছা ভালো করছো।’

– ‘তোমার কি টাকা লাগবো? লাগলে বিকাশ কইরা দিতাম।’

মৃদুল না করতে যাচ্ছিল। হঠাৎ মনে হলো টাকা পেলে মানহার জন্য কিছু একটা কিনবে। তারপর বললো,

– ‘আচ্ছা আমার নাম্বারে পনেরশো টাকা বিকাশ করে দিয়ো। ছোটাছুটি করতে টাকা লাগে অনেক।’

– ‘আইচ্ছা বিকালে পাঠিয়ে দিমু রাখছি এখন।’

– ‘আচ্ছা।’

ফোন রাখার খানিক পরেই কলিং বেল বেজে উঠল। এতো তাড়াতাড়ি তো মানহা ফিরে আসার কথা না৷ তাহলে কে এলো? মৃদুল উঠে দরজা খুলে দিতেই মানহা তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো,

– ‘আরে কী হয়েছে? দরজা খোলা কেউ দেখে ফেলবে তো।’

– ‘দেখুক মৃদুল, এবার আল্লাহ আমাদের দিকে সুনজর দিয়েছেন।’

– ‘কি হয়েছে বলবে তো।’

– ‘ইরফান কল দিয়েছিল ইশির সন্ধান পেয়েছে।’

– ‘বলো কী? কীভাবে পেল?’

মানহা জবাব না দিয়ে মৃদুলের মুখ আঁজলা করে ধরে জল ছলছল চোখে বললো,

– ‘ওদেরকে আজ পেয়ে গেলে কালই আমরা বিয়ে করবো, ঠিক আছে?’

– ‘মানহা সব সময় মজা ভালো লাগে না। বলো কীভাবে পেয়েছে, কোথায় আছে ওরা।’

_____চলবে____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here