শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি #রোকসানা_আক্তার #পর্ব_২০/শেষ পর্ব

0
520

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব_২০/শেষ পর্ব

আকাশ সামনে ছিল তাই বিড়বিড়িয়ে বলি নিহাল কল করেছে।আকাশ বলে,
“হ্যাঁ,কথা বলো।

নিহালের কল রিসিভ করি।ওপাশ থেকে,
” কি অবস্থা তোদের সবার?”
“হু,আলহামদুলিল্লাহ আছি।”
“তোদের বাসায় গতকালও গেলাম।শুনলাম তারপর তুই আর আসিস নি বসায়।শ্বশুর বাড়িতো বাপের বাড়ি পেয়েছিস মনে হয়।হিহিহিহি।”
“নাহহ…সেরকম কিছু না।”
“আচ্ছা যাইহোক,শোন…!”
“হু,বল?”
“আগামীকাল আমি তোর শ্বশুর বাড়িতে আসতেছি।”

নিহাল এখানে আসবে শুনে ধাতস্থতা হয়ে গেলাম কিছুটা।আসার তো কারণ নেই।নাকি বিয়ে করবে তার দাওয়াত দেওয়ার জন্যে আসবে।জিজ্ঞেস করলাম,
“বিয়েসাদীর কি অবস্থা তোর?বিয়ে করেছিস?”
“এতকথা বলতে পারবো না এখন তোকে।কালকে আসতেছি…।তারপর বাকিটা বলবো নি।রাখি এখন।আর অনেক রাত হয়েছে।স্বামীকে সময় দে এবার।বায় বায়।”

নিহালের শেষ কথাটা শুনে “হা” হয়ে গেলাম।আকাশ এতক্ষণ সব কথা শুনতেছিলো।তাই বলল,
“কি বললো নিহাল?”
“কাল ও নাকি এই বাসায় আসতেছে।বুঝতেছি না হঠাৎ কেনো আসবে।নাকি বিয়ের দাওয়াত টাওয়াত দিতে আসবে কে জানে।”
“নিহাল এখনো বিয়ে করেনি?”
“আমি সিউর জানি না।”

পরদিন নিহাল সত্যিই আসে।আর সাথে ফুঁপী।সাথে করে পাঁচ কেজির মতন মিষ্টি নিয়ে আসে।আমি নিহালকে দেখে যতটা না অবাক হই,তারথেকে বেশি অবাক হই ফুপীকে দেখে।অবাকের সহিত এক ঝলকা খুশীও।অনেকদিন পর ফুপীকে দেখলাম আজ।ফুপীকে জড়িয়ে ধরলাম,

“কেমন আছো,ফুপী?আজ অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম।”
“আমিও।”
“বসো ফুপী।”

সবাই সোফায় বসলো।নিহাল আসবে শুনে আকাশও সেদিন আর অফিসে যায়নি।আকাশ ফুপী এবং নিহালের সাথে এসে বসে।শাশুড়ী মা কিছু বানাতে ব্যস্ত হয়ে যান।তবে আজকে বেশ অবাক হলাম শাশুড়ী মায়ের কার্যকলাপে।আমার সাথে ঝামেলা থাকার সময় আমার বাপের বাড়ির কোনো লোকজন এলে দেখতাম না কখনো এতটা উত্তেজিত হতেন আপ্যায়নের জন্য আজ যতটা হচ্ছেন।খুশি হলাম মনে মনে খুব।মানুষ আসলে সবসময় একরম থাকে না।চোখের সামনে আমার শাশুড়ি মা এবং নিহালের পরিবর্তন হওয়াটা সত্যিই কতটা আনন্দদায়ক তা বোঝানো মুশকিল।আমি শাশুড়ী মায়ের সাথে কাজে হাত লাগালাম।ফুপী এবং নিহালের খাবারদাবার শেষ হলে কথা মাঝে হঠাৎ ফুপর বলে উঠেন,

“সবাই কে দেখলাম।তা সুপ্রভা তোর ননদকে যে দেখতে পাচ্ছি না?”

বললাম ফুপীকে,
“ও ওর রুমে হয়তো, ফুপী।”
“ডেকে নিয়ে আয় তো।”

ফুপী সূবর্ণার খোঁজ করতে দেখে আমি কিছুটা হলেও অবাক হলাম।কিছুক্ষণ পর সূবর্ণাকে নিয়ে এলাম।ফুপী হেসে সূবর্ণার হাত টেনে নিয়ে কাছে বসালেন।বললেন,

“কেমন আছো মা?”

সূবর্ণা আমার দিকে দৃষ্টি এটলো কিছুটা।চোখের ইশারায় বুঝালাম,কথা বল।সূবর্ণা জবাব দিলো,
“জ্বী,আলহামদুলিল্লাহ।”

ফুপী হাসলেন।তারপর আমাদের সবার দিকে তাকালেন।স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
“একটা কথা বলতাম।আমি যেকারণে আজকে নিহালকে নিয়ে এসেছি…।একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি সূবর্ণার।সূবর্ণাকে আমি আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাই।যদি আপনাদের কোনো অমত না থাকে।আর নিহাল সূবর্ণাকে অনেক পছন্দ করে।”

ফুপীর কথা শুনে কমবেশি সবাই ই অবাক হলাম।তবে আকাশ বললো,
“মানে কীভাবে সম্ভব…!”

নিহাল বলে উঠলো তখন,
“সূবর্ণার সাথে আমার আগ থেকেই সম্পর্ক ছিল। আর আপনারা তা হয়তো জানেন।আর আমার তখনকার স্বভাব আপনাদের কারোই পছন্দ হয়নি।আমি এটা স্বীকার করি আমি তখন অনেক খারাপ ছিলাম।খুবই খারাপ ছিল।কোনো ভদ্র ঘরের ওইরকম হয় তা নিয়ে আমি এখনো নিজেই নিজের কাছে অনুতপ্ত!তবে তাই বলে আমি যে সূবর্ণাকে মিথ্যে ভালোবেসেছি তা কিন্তু নয়।বিশ্বাস করুন সূবর্ণাকে আমি অনেক ভালোবেসেছি!যেইদিন জেলখানায় দাঁড়িয়ে বাবার মুখ থেকে শুনি সূবর্ণার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,বুকটা ফেটে ফেন চৌচির হয়ে যাচ্ছে! চারদেয়ালের মাঝখানে শুধু গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হয়েছিল।কাঁদতে পারি নি সেদিন।কষ্ট পেয়েছি খুব!সেদিন সূবর্ণাকে নিয়ে অনেকটা রাগও জমেছিলে,সে সত্যিকারে আমাকে ভালোবাসেনি।নাহলে আমাকে কীভাবে পারলো খুব সহজে ভুলে যেতে?কীভাবে!আজকেও সূবর্ণা কে ভালোবাসি আমি!সুপ্রভা,বিশ্বাস কর আমি সূবর্ণাকে আজও অনেক ভালোবাসি।সেদিন মামির কাছে সূবর্ণার অবস্থার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম!যেখানে বিয়ে হয়েছিলো জানিনা কেনো কেন্সেল করলাম বিয়েটা!আজকে এখানে অনেক বড় আবদার,অনেক বড় অনুরোধ নিয়ে এসেছি…আমি আজলের নিহাল আগের নিহাল না।অন্যরকম হয়ে গেছি।সূবর্ণাকে আমার কাছে তুলে দিলে আমি সূবর্ণাকে কোনোদিনও কষ্ট দিব না।বিশ্বাস করুন ভাই আমাকে।দয়া করে অবিশ্বাস করবেন না।”

আকাশও চুপ হয়ে গেলো,এবং আমিও চুপ হয়ে গেলাম মুহূর্তে। আকাশ এক পর্যায়ে বলে উঠলো,
“আমি বুঝতে পেরেছি সব।এবং বিশ্বাসও করেছি সব! তবে বিষয় হলো সূবর্ণা তো ডিভোর্সী এখন!”
“তা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই ভাইয়া!আমি কতবার বলবো।আমি সূবর্ণাকে ভালোবাসি।”

ফুপী বললো,
“আচ্ছা তোমরা আরো সময় নাও।”

বলে ফুপী এবার সূবর্ণার দিকে তাকান।বলেন,
“মারে…মেয়েদের আসল বাড়ি হলো তার স্বামীর বাড়ি।স্বামী যদি খারাপ হয়ে বসে সত্যিই মেয়েটির এর থেকে বড় কষ্ট আর কিছুই হয়না।মন খারাপ করে থাকবে না। সমস্যা আছে,মহান আল্লাহই তার সমস্যার সমাধান করে দেন আবার।”

সূবর্ণা চুপ করে রইলো…।

সন্ধের পর আকাশ যখন বিছানায় এসে বসলো।আমি বললাম আকাশকে,
“কি সিদ্ধান্ত নিলে?”
“নিহাল তো মনে হয় আগের থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।”
“হ্যাঁ,অনেক।”
“সূবর্ণার কোনো আপত্তি আছে?একটু খবর নিয়ে জানাও তো..?”
“আচ্ছা। আমানকে দেখো।আমি গেলাম।”

সূবর্ণার রুমে এলাম।সূবর্ণা চুপচাপ বসে আছে।বাতি বন্ধ।বললাম,
“কিরে বাতি অফ করে বসে আছিস যে?”

বলে বাতি অন করলাম।হঠাৎ বাতি অন করায় সূবর্ণার চোখ কিছুটা কুঁচকে উঠলো।আমি হেসে যেয়ে ওর পাশে বসলাম।দম ছেড়ে বললাম,
“একটা কথা বলতে এসেছি তোকে।”
“বলো?”
“নিহালের প্রস্তাবে তোর কোনো অমত আছে?”

সূবর্ণা এবার চুপ হয়ে গেল।
“কথা বলতেছিস না যে?”
“আমার অমতে মা বিয়ে দিলো…!এমনকি বিয়ের আগে তুমি একটিবারের জন্যেও জানতে চাইলে না..নিহাল ভাইয়াকে আমি ভালোবাসি কি না!ভাবী?নিহাল ভাইয়া আমার জীবনে প্রথম পুরুষ ছিল,হ্যাঁ মানি যে তখন আমার কিশোরী মন ছিল,তাই ভুলে পা বাড়িয়েছি সেদিকে।কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাদের শত কথার মাঝেও একমুহূর্তেও মনে হয়ে নিহাল ভাইয়া আমাকে ঠকাচ্ছে!ঠকালাম আমি!অন্য কাউকে বিয়ে করেছি।অথচ বুঝতে পারছো ভাবী এতকিছুর পরও সে আমাকে আপন করতে চাচ্ছে!”

বলে কাঁদো মুখো হয়ে যায় সূবর্ণা।আমি সূবর্ণাকে জড়িয়ে ধরি আলতো।

————————————-
আজ নিহালের সাথে সূবর্ণার বিয়ের দীর্ঘ তিনবছর পার হলো।সূবর্ণার একটা দুই বছরের মেয়ে আছে।খুব সুখে শান্তিতে সংসার কাটছে সূবর্ণার।আমাদের পরিবারও এখন দুশ্চিন্তামুক্ত।
সূবর্ণা আজ ওর স্বামীকে নিয়ে এ বাসায় বেড়াতে আসবে।তাই সকাল থেকেই কাজ করতেছি।হঠাৎ আমান স্কুল থেকে ফিরেই দেখি সোফার উপর চুপচাপ বসে আছে।কাজ রেখে ওর কাছে গেলাম।বললাম,

“আমান?কিছু হয়েছে বাবা?”
“বাবা কোথায় মা?”
“তো বাবা রুমে হয়তো।”
“ডাকো তো?”
“বেশি দরকার?”
“বলেছি ডাকতে,ডাকো।”

আমি হেসে আকাশকে নিয়ে এলাম।আমান বললো উঠলো,
“বাবা,তোমার নামে বিচার আছে!”
“কি বিচার?”
“কালকে তুমি আমাকে ” Rainbow” poem টি পড়াও নি।বললে ম্যাম জিজ্ঞেস করবে না।ম্যাম আজকে এটাই জিজ্ঞেস করেছে।আমি কিছু বলতে পারিনি।পরে।ম্যাম রাগ হয়ে আমাকে বলে,
“বোকা!”

বলে আমানের কাঁদো মুখে অভিমান যেন আরো জমা হয়।আমি এবং আকাশ ছেলেকে বুঝানোর চেষ্টা করি।ছেলেটা না একটু অন্যরকম!সামান্য কথায়ও রাগ করতে থাকে।বোঝাতে সে-কি মুশকিল।পরে নানান কথা,নানান লোভ দেখিয়ে আমি এবং আকাশ সামলাই।
“আচ্ছা বাবা,যাও এবার রুমে যাও।মা আসতেছি একটু পর।”

আমান চলে যাওয়ার পর এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি,
“আপনার ছেলেটা না একদম আপনার মতন!খালি ছিঁচকাদুনে।”
“আমি ছিঁচকাদুনে?”
“অনেক।”
“সত্যি?”

বলে আকাশ আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।আর ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।মতিগতি ভালো ঠেকছে না।বললাম,
“এই কি করতে চাচ্ছেন?”
“ভালোবাসতে।মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতে।”
“এই ভরদুপুরেও মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসার ভাষণা আসে?”
“প্রিয় মানুষটার প্রতি ভালোবাসা সবসময়!শূণ্যতার সবকিছুতে যার পূর্ণতা মাখা,তাকে যখন তখন,যেকোনো সময়ে আদর ইচ্ছে করে।”

আমি হাসলাম বাঁকা ঠোঁটে।সেই বাঁকা হাসির উপর আকাশ আলতো একটা কিস বসিয়ে দিলো!

সমাপ্তি….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here