ভালোবাসার প্রতিদান #রোকসানা আক্তার পর্ব-০৮

0
647

#ভালোবাসার প্রতিদান
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-০৮

“যদি তাই হয় তাহলে এখুনি আপনার ফ্রেন্ডকে কল দিতেছি। ওয়েট।”

বলে আকাশ ফোনটা হাতে নিয়ে তিথির সেই বন্ধুকে কল দেয়! তিথির অবস্থা ত বেসামাল।সে আকাশের কল দেওয়ায় কেনজানি স্থির থাকতে পারে নি।অস্থিরতায় ছুটে যায় তার সারা চোখমুখ।আমাদের সবার দিকে একবার টগবগ চোখে তাঁকিয়ে নিয়ে আকাশকে বলে উঠে,

“দেখুন,আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতেছেন।বেশি বাড়াবাড়ি ভালো না বলে দিলাম!”

আকাশ তিথির কথায় কোনো কর্ণপাত করলো না।ব্যস্ত মনে ফোনের উপর অনবরত টাচ করতে থাকলো।
“স্টপ দিস!জাস্ট স্টপ দিস!”

নাহ আকাশ এবারও শুনলো না।আকাশের কোনরকম রেসপন্স না দেখে তিথি এবার রিয়াশের দিকে তাকালো।ব্যথাতুর কন্ঠে বলে উঠলো,
“রিয়াশ?উনি যে এসব করছে৷ তুমি কিছু বলতেছো না কেন?তোমারও কি বিশ্বাস হয় আমি ওরকম করেছি?”

ঠিক তখনই রিয়াশ বলে উঠলো,

“তোমাকে আমার আর কস্মিনকালেও বিশ্বাস হবে না!”

রিয়াশের কথা শুনে তিথির টগবগ চোখজোড়া মুহূর্তে আলুর মতন আঁটকে গেল।চোখজোড়ায় খেলে গেল সীমাহীন বিস্ময়!ভারী গলায় বলে উঠলো,
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না রিয়াশ?”

রিয়াশ এবার চোখজোড়া তার বুঁজে আনলো।দু’পাশের দুগাল ফুলিয়ে নিয়ে ফস করে জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে দিয়ে আবার চোখজোড়া খুললো।বললো,

“বিশ্বাস করেছি।তবে এখন বিশ্বাস শব্দটাতে শুধুই ঘৃণা পাচ্ছি।তুমি কি করে পারলে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে!তার বদনাম রটে দিয়ে সবার সবার সামনে ছোট্ট করে আনলে? তুমি না তার বান্ধবী?ভার্সিটির সবথেকে বেস্ট ফ্রেন্ড!?কেউ তার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে এরকম করে!?”
“ওহ, তাহলে তুমিও ওদের কথা বিশ্বাস করে ফেললে!?”
“দেখো তিথি,তুমি আমাকে যতই ইনিয়ে বিনিয়ে সত্য বলার চেষ্টা করো না কেন আমার কাছে তা ততই মিথ্যে মনে হবে।বিশ্বাস করতাম আমি তোমার কথা।তবে ওসব যে সত্যিই তুমি ই করেছ তা তোমার এখন এই ভাবভঙ্গি ই বলে দিচ্ছে!”
“তারমানে ওটা আমিই করেছি এই তোমার কথা,তাই না?”
“ইয়েস!”

তিথি এবার রিয়াশের চোখের দিকে স্থির চাহনিতে তাকিয়ে থাকে।চোখের উপর টলমল পানির চিকচিক আভা ভেসে উঠছে।এই বুঝি সে কেঁদে ফেলবে।এক্ষুণি!কেদেও দিলো এক্ষুণি!দুইহাত দিয়ে সারা মুখ ডেকে কিছুটা নুইয়ে সে কি তার কান্না! ওর কান্না দেখে আমরা সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই।আকাশ এরফাঁকে আমার দিকে একফোঁড় তাকিয়ে ভ্রু নাঁচায়!অর্থাৎ তা দিয়ে সে বুঝাচ্ছে,”এখন আবার কোন নাটক শুরু হবে কি জানি।”

আমার কেনজানি সেই মুহূর্তে খুব হাসি পেয়ে গেল।আমি অন্যদিক তাকিয়ে হাসিটা চাপিয়ে নিলাম।তিথির এবার কান্নার বেগ কিছুটা কমে এলো।সে বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে মাথা তুললো।গলায় খানিকটা জোর এনে রিয়াশকে বলে উঠলো,

“যেদিন প্রথম তোমায় প্রিয়ার সাথে ভার্সিটির ক্যান্টিনে দেখি সেদিন আমি তোমার ওই দুই গালে টোল পড়া হাসির প্রেমে পড়ে যাই।সেদিন থেকে তোমাকে নিয়ে আমার মাঝে এক অন্যরকম মায়া আবেগ,আবেশ, ভালোলাগা শুরু হয়ে যায়।তুমি যখন
প্রিয়া সাথে কথা বলতে,ঘুরতে,হাঁটতে, গল্প করতে আমি আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাদের দুজনকে দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম তোমার ওই পাশের জায়গা টুকুতে প্রিয়া না হয়ে তিথি হলে কেমন হতো?খুব ভালো হত তাই না?তারপর থেকে আমার সারা দেহ,মন গেঁথে যায় প্রিয়াকে সরানের চিন্তা।সারারাত সে চিন্তা আমার ঘুম আসতো না।তার যন্ত্রণায় সারারাত আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেত!তারপর একদিনই একটা প্লান বানাই প্রিয়ার একটা ছবি দিয়ে খারাপ একটা ছবি বানাবো।যেটা দেখামাত্রই রিয়াশের ফ্যামিলির কেউ সাথে সাথে তাদের সম্পর্ক রিজেক্ট করে দেয়।রিয়াশ হয়তো নাও করতে পারে যেহেতু তার পাঁচ বছরের ভালোবাসা।তাই তার উপর আমার ওতটা বিশ্বাস না থাকলেও তার ফ্যামিলির উপর ছিল।আর জটলা টা একভাবে না একভাবে ত বাঁধবেই তাই না!তারপর কি হলো সেই রিয়াশও আমাকে অবাক করে দিয়ে ছবিটা বিশ্বাস করে ফেললো!তবে সবথেকে হাস্যকর বিষয় হলো প্রিয়ার সাথে যার ছবি ট্যাগ করা হলো তার ছবিটি আমি নেট থেকে আপলোড করে তারপর দিয়েছি।আর প্লানটা আমার যে মোটামুটি একটা জায়গায় এসে ফুলফিল হয়ে গেল তা ভাবতেই সেদিন আমার সে কি হাসি!অবশেষে বিয়েটাও ভাঙ্গলো।আর রিয়াশকে আমার করে পাওয়া হলো!আর এসব কি আমার খুব অন্যায়? তোমাকে ভালোবাসা টা কি আমার অন্যায় হয়েছিল?বলো রিয়াশ?বলো?”

বলতে বলতে তিথি আবারো কেঁদে দিলো!রিয়াশ তাতে একটুও মায়া দেখালো না।তাতে তার রাগটা আরো বেড়ে গেলো!বলে উঠলো,

“এবার রাখো তোমার ন্যাকামো!তাড়াতাড়ি কেঁটে পড়ো এখান থেকে!”
“হ্যাঁ যাচ্ছি।চলেই যাচ্ছি!”

বলে তিথি এবার আমার দিকে তাঁকায়!আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে,

“প্রিয়া?আমাকে ক্ষমা করে দে!আমি তোর বেস্ট বান্ধবী হয়েও তোর সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি!এখন বুঝলাম যাকে আমি পাগলের মতন ভালোবাসাম তাকে পেতে তোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করাটা ছিল বোকামো!জীবনের সবথেকে বড় বোকামো!”
” পৃথিবীর সব মানুষই পরে তার সব ভুল বুঝে ফেলে!আর ক্ষমাও হয়ে যায়।এই সবটাই চিনেমা।বাট আমার কাছে এখনকার মুহূর্তটা চিনেমা না!এটা বাস্তব জীবনের কোনো এক খন্ডায়িত রূপ!”
“তারমানে তুই আমাকে ক্ষমা করবি না?”

চুপ করে থাকি!তিথি হাঁক ছেড়ে এবার বলে উঠে,

“ওকে…..! ক্ষমা না করলে আর কিছুই বলার নেই।ভালো থাকিস!আর এই যে ভাইয়া(আকাশকে উদ্দেশ্য করে),আপনার সাথেও খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি।ক্ষমা করবেন!

বলে চলে গেল তিথি।সবাই তাকিয়ে থাকলো তার চলে যাওয়ার দিকে।তার চলে যাওয়ার সবার দৃষ্টিতে ছিল কারো এক রাশ রাগ,একরাশ ঘৃণা,বা একরাশ তাচ্ছিল্যতা।তবে আমার কেমন ছিল তা আমি নিজেও জানি না।তিথি চলে যাবার পর আমি আকাশকে বলি,

” তো চলুন, আমরা চলে যাই।”

আকাশ মাথা নেড়ে তা সায় দিতে যাবে তখনই রিয়াশ বলে উঠলো,

“আই’ম সরি, প্রিয়া!সামান্য একটা ছবিতে আমি এতটা অন্ধ হয়ে গেলাম ভাবতে এখন আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে!আরেহ আমি কি তখন এক মুহূর্তের জন্যেও ভাবি নি যে এখনকার যুগে কারো ছবি মিসইউজ করা খুব ই ইজি?এতটা উদাসীন ছিলাম কেন আমি?”

“সেটা আপনি ই ভালো করে জানেন!”
“আপনি?!”

রিয়াশের এ’কথার পিঠে আর কিছু বলার ইচ্ছে জাগ্রত হলো না।রিয়াশের বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,

“আন্টি-আঙ্কেল, আসি।ভালো থাকবেন।”

বলে এলাম আকাশকে নিয়ে সবার সামনে থেকে।সামনে থেকে এসেও রিয়াশের সামনে আবারো পড়ে গেলাম যখন তাদের বাসার মেইন ডোর পার হয়ে ছোট্ট একটা ঝিঁলের মতন পুকুরের কাছে এলাম।রিয়াশ আমাদের পেছন থেকে ডেকে উঠে দাঁড় করিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো।ব্যথাতুর গলায় বললো,

“প্রিয়া, আমার উপর খুব রাগ না তোমার?”
“পথ ছাড়েন!”
“আচ্ছা ছাড়বো। আগে বলো?”
“বলছি না পথ ছাড়তেন?!”
“প্রিয়া এভাবে রাগ করে না প্লিজ!আমিতো সেদিন ইচ্ছে করে ওরকম করি নি।আর যদি জানতাম ওটা মিথ্যে তাহলে…!”

আর পারলাম না অদম্য রাগটাকে চাপাতে।চট করে বলে উঠলাম,

“যেই মানুষটি আমার সাথে পাঁচ পাঁচটা বছর সম্পর্ক রেখেও আমাকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারে নি!শেষপর্যন্ত এই দিলো আমার ভালোবাসার প্রতিদান!
তাকে আর ক্ষমা !আর কখনো আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না!কখনোই না!আই জাস্ট হেইট ইউ!হেইট ইউ!”

বলে সোঁজা পাশ কেঁটে চলে এলাম!

(আসসালামু আলাইকুম,প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা,আমি গত দুইদিন যাবৎ কিছুটা অসুস্থ ছিলাম।কাল সন্ধা থেকে আবার আমার মা!তবে খুবই প্রবলভাবে অসুস্থ্য আমার মা।মাকে আজ রাত আঁটটায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্যে।আর জানি না এরপরেও রেগুলার গল্প দেওয়া সম্ভব হবে কিনা!বুঝেন ই ত কেমন পরিস্থিতির মধ্যে আছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here