রৌদ্রবিলাসী দ্বিতীয় পর্ব

0
835

রৌদ্রবিলাসী
দ্বিতীয় পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত

–” তোমার বাচ্চা আমার পেটের মধ্যে ”
আপুর এই কথাটা শুনে আহান ভাই রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় এবং বলে,

–” শোন এশা,তুমি ওই বিয়েটার কথা বলছো তাই না?দেখ আমি সম্পুর্ন গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমাদের বিয়ে হয়নি।ওই সময় আমরা দুইজনই চেতনা হাড়িয়ে পড়ে ছিলাম।আমার মনে হচ্ছে আমাদের বিয়ে হয়নি আর তুমি বলছো বাচ্চার কথা।এটা কিরকম ফাজলামি শুনি? ”

এশা আপু মাথা নিচু করে ফেলে।আমি এবার খানিকটা কৌতুহল নিয়ে আপুর দিকে তাকাই।তারপর তার মুখটা উপরের দিকে তুলে নিয়ে বলি,

–” আপু তোর মেডিকেল রিপোর্ট কোথায়?সেটা দেখা ”

আপু এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” এখনো চেকআপ করানো হয়নি।তবে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি মা হতে চলেছি ”

আমি এবার আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,

–” তো আপনি প্রমাণ দেন যে আপনাদের বিয়ে হয়নি ”

আহান ভাই এবার বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে আমার আর আপুর দিকে তাকিয়ে থাকে।অথঃপর দীর্ঘ একটা নিঃস্বাস ফেলে হাওয়ার মধ্যে।তারপর এশা আপুর দিকে দৃষ্টিপাত করে হুট করে প্রশ্নটা তার দিকে ছুঁড়ে দেন তিনি,

–” আচ্ছা আমাদের তো হুশ ছিল না কিন্তু তু‌মি জানলে কেমনে আমাদের বিয়ে হয়েছে? ”

আচমকা এই প্রশ্নটা শুনে আপু চমকে ওঠে।সে প্রশ্নের উত্তরটা লুকানোর জন্য টালবাহানা শুরু করে।আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে কিছু একটা লুকাচ্ছে?কিন্তু কি লুকাচ্ছে?আমি এবার দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠি,

–” কালকে মেডিকেল চেকআপ করানোর পর বোঝা যাবে? ”

আমার কথার সাথে আহান ভাই একমত হন কিন্তু আপু টালবাহানা শুরু করে।আ‌মি বুঝতে পারছি আপু চাইছে না চেকআপটা করানো হোক কিন্তু কেন?তার মানেটা স্পষ্ট সে মিথ্যো বলছে।সবশেষে আহান ভাইয়ের কড়া দৃষ্টি ও আমার জোড়াজুড়িতে আপু রাজি হয়ে যায়।আহান ভাই আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,

–” কালকে একজনের কপাল খুলবে আর একজনের বন্ধ হবে।দেখা যাক কার কপাল খোলে ”

কথাটা বলে তিনি রুম থেকে বের হয়ে যান।রুম থেকে বেড়োনোর আগে তিনি বলে যান আর আসবেন না আজকে।আমরা যেন ঘুমিয়ে পড়ি।আহান ভাই বের হতেই আমি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসি।তারপর আপুর সামনে বসে পড়ি।চোখের দৃষ্টি স্থির রাখি তার দিকে।তারপর কড়া দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলি,

–” আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি তুই মিথ্যাে বলছিস।কিন্তু কেন? ”

আপু এবার মাথা তুলে আমার দিকে তাকায়।তারপর রুমের চারদিকে একবার চোখ বোলায়।তারপর পুনরায় আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” আমি ইচ্ছে করেই পালিয়েছিলাম।আর হ্যা এতক্ষন থেকে যে কথা গুলো বললাম সব মিথ্যো ”

আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকাই।‌অযাথা মিথ্যে কথা বলার দরকার কি বোঝার চেষ্টা করি।আপু আমার মনের ভাবনাটাকে ধরে ফেলে।সে বিছানার উপর পা তুলে আরাম করে বসে পড়ে।তারপর নিজের মধ্যে একটা রাজকীয় ভাব নিয়ে এসে বালিশে হেলান দিয়ে বলে,

–” বৎস,তোমার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি কেন মিথ্যে বলেছি?কেন বলেছি তার বাচ্চা আমার পেটে?কোথাকার বিয়ের কথা বলছি আমরা?কেনই বা তার সামনে কান্না করে এরকম অভিনয় করলাম?তুমিতো এসবই জানতে চাও তাইনা ”

আপুর এই ধরনের ব্যবহার দেখে আমি বাকরুদ্ধ।কিছুক্ষন আগে কান্না করা মেয়েটা এখন হাসির রাজ্যের রানী হয়ে গেছে।আমি ভ্রু-কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে তার মাথায় হাত দেই।তারপর অন্তরচক্ষু স্থাপন করে বোঝার চেষ্টা করি কোন জায়গার তারটা হুট করে ছিড়ে গেল?আমার কাহিনীকারবার দেখে অবাক হওয়া জিজ্ঞাসা করে,

–” তোর আবার কি হইলো? ”

আমি গভীর মনযোগ দিয়ে তার মাথাটা পরিক্ষা করতে করতে বলি,

–” দেখতেছি কোন জায়গার তারটা পট করে ছিড়ে গেল ”

আপু এবার খানিকটা রেগে আমার হাতটা সড়িয়ে দেয়।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” ফাজলামো বাদ দিয়ে শোন! ”

আমি মাথা নাড়িয়ে বলার অনুমতি দেই।আপু আমার কাছ থেকে সাড়া পেয়ে বলতে শুরু করে,

–” আসলে আমার ইচ্ছা ছিল না ওই লাল বান্দরটার সাথে সংসার করার।তাই বিয়ের দিন সকালে পালিয়ে যাই।আর ও যে বলতেছে আমার সাথে ওর প্রেম ছিল,আচ্ছা তুই বলতো কেউ যদি নিজে নিজে কাউকে ভালোবেসে ভাবে যে সেও তাকে ভালোবাসে তাহলে কি সেটাকে প্রেম বলে।সে নিজে নিজে ভালোবাসতো আর ভাবতো আমিও তাকে ভালোবাসি,মানে মানুষের মাথার কয়টা তার ছিড়লে এরকম হতে পারে ভাব তো একবার? ”
আমি তার দিকে না তাকিয়েই বলি,

–” কমপক্ষে ২টা ”

আপু আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ধমকায়।তারপর পুনরায় বলতে শুরু করে,

–” তাকে মিথ্যা কথা বলার কারনটা হলো সে অলরেডি আমাকে খোঁজার জন্য গুন্ডা ভাড়া করছে।তাই তাকে তার বন্ধুদের নাম বললাম তাহলে আর কিছু হবে না।আর হ্যাঁ তার বাচ্চা আমার পেটে না তবে একজনের বাচ্চা আমার পেটে হবে এটা ঠিকই এবং তার সাথে আমার বিয়েও হয়ে গেছে।আর আহানের সাথে বিয়ের কাহিনীটা শুনলে তুই হাসতে হাসতে মরেই যাবি।মানে এতটা বোকা বানিয়েছি তাকে..”

আমি এবার বেশ আগ্রহ নিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে বলি,

–” প্লিজ বলো না ”

আপু আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ধমকিয়ে বলে,

–” শুনলে হাসতে হাসতে মরে যাবি।আমি চাই না তুই এত তারাতারি মর ওকে।যা ঘুমা!আর হ্যা আমি চলে যাচ্ছি।গুড বাই ”

কথাগুলো বলে আপু উঠে দাঁড়ায়।তারপর আমার আর কোনো কথা না শুনে চুপি চুপি রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি উঠে দরজার কাছে যেতে যেতে সে হাওয়া।বাহিরে বের হয়েও তাকে দেখতে পাই না আর।
আমি বিষয়টা নিয়ে তত না ভেবে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।এক ঘুমে পাড় করে দেই বাকি রাতটা।

পরেরদিন সকাল বেলা নিজের মুখের কাছে হালকা গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে আমার মুখটা।প্রথমে একচোখ খুলে তাকিয়ে চমকে উঠি।সাথে সাথে খুলে যায় ২য় চোখটা।আহান ভাই আমার উপরে ঝুকে আছে।আমি এক লাফ সরি এক লাফ দিয়ে উঠে বসি।আহান ভাই আমার দিকে বেশ হাসি-খুশি দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।অথঃপর মাথায় হালকা একটা বাড়ি মেরে খানিকটা ঝাঝালো গলায় বলে,

–” উষু,তোকে এখন ভারসিটিতে যেতে হবে সেটাও বেমালুম ভুলে গেছিস।ভুলবিই তো,তোর ধান্দাই তো ভার্সিটি ফাঁকি দেয়া।চল উঠ! ”

আমি বেশ কিছুটা সময় নিয়ে তাকাই আহান ভাইয়ের দিকে।তার মতের কোনো ভাবান্তর না দেখে চুপ করে উঠে পড়ি।তারপর ড্রেস নিয়ে সোজা ওয়াসরুমে চলে যাই।রেডি হয়ে বের হই একেবারে।বের হয়ে দেখি আহান ভাইও রেডি।তার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে জানতে পারি,সে আমাকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যাবে।আমি প্রথমে না করতে চাইলে তিনি কঠোর গলায় জানিয়ে দেন তিনি কোনো পুঁচকো মেয়ের কথা শুনতে রাজি নন।

ব্রেকফাষ্ট শেষ করে সবার কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে বিয়ের পরেরদিনই ভারসিটি পথে রওনা দেই।আমার পাশে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন আমার বর আহান।কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের দীর্ঘ পথের যাত্রা শেষ হয়।আহান ভাই গাড়িটা ভার্সিটির ভিতরে ঢুকিয়ে দেন।আমি তার কাছ থেকে বিদেয় নিতে গেলে তিনি বলে ওঠেন,

–” শোন পুঁচকো মেয়ে,ছেলেদের সাথে কথা বলবি না।কেউ কোনো কিছু দিলে খাবি না বুঝলি ”

তার কথাবাত্রা শুনে আমার মনে হতে থাকে আমি মনে হয় ৫বছরের বাচ্চা।এমন সময় পিছন থেকে একটা ছেলেকণ্ঠ আমার নাম ধরে ডাকে।আমি খানিকটা অবাক হয়ে পিছনে ঘুরি।ছেলেটাকে দেখেই চিনে ফেলি।আরে এতো সেই ভন্ড ছেলেটা যে সবসময় আমার পিছন পিছন ঘুরে বেড়ায়।তার সম্পর্কে রিচার্চ করার পর জানতে পেরেছি সে এই এলাকা কালিয়া মাস্তানের ছোট ভাই।

ছেলেটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।আহান ভাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।এমন সময় ছেলে আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে পিছন থেকে একটা গোলাপ ফুল বের করে বলে,

–” আই লাভ ইউ উষা..প্লিজ এক্সেপ্ট মি ”

চলবে..

{এতদিন পর গল্প লেখার পরও এত রেসপন্স আশা করি নাই সত্যি।আপনাদের ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার নাই।ভালোবাসা নিবেন আমার পক্ষ থেকে}

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here