রৌদ্রবিলাসী
৬ষ্ট পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত
আমি অবাক হয়ে একবার মেয়েটার দিকে আরেকবার আহান ভাইয়ের দিকে তাকাই।আহান ভাইয়ের তাকানো দেখে বুঝতে পারছি তিনি প্রচুর অবাক হয়েছেন।তবে তার অবাক হওয়ার কারণ আমি এই মুহুর্তে খুঁজে পাই না।মেয়েটা আর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে পুনরায় আহান ভাইয়ের আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।তারপর তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–” কেমন আছো? ”
আহান ভাই কিছু না বলে তাকে সড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।তারপর আমার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে বলে,
–” কে আপনি ভাই? ”
মেয়েটা হেটে হেটে আহান ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
–” আমি তোমার ভাই নই গার্লফ্রেন্ড! ”
–” আমার তো গার্লফ্রেন্ড নেই একটা বউ আছে,এইযে উষু ”
মেয়েটার তাকানো ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে আগে থেকে এসব জানে।আমি এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলি,
–” আপু আপনি কে? ”
মেয়েটা এবার আমার দিকে তাকায়।তারপর পুনরায় আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আহানের গার্লফ্রেন্ড বুঝলে।কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ে ”
মেয়েটার মুখে বিয়ের কথা শুনে আমি মাথা ঘুড়িয়ে আহান ভাইয়ের দিকে তাকাই।তিনি মেয়েটার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলেন,
–” ফালতু মেয়ে তোমাকে চিনিই না,আজকেই পরিচয় আর বলছো বিয়ের কথা।কতটা থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছে শুনি।আমি কিন্তু থাপ্পড়ের উপর ডক্টরেট কম্পিলিট করেছি সো ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিতে পারবো থাপ্পড় নামক বিষয়টা ”
আহান ভাইয়ের লম্বা প্রশংশা শুনে মেয়েটার কি ভাবগতি হয় দেখার জন্য আমি মেয়েটার দিকে তাকাই।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা হেসে বলে,
–” বাবু,এসব শয়তানি বাদ দেও তো।চলো আমার সাথে।আইসক্রিম খাব আমি।তুমি সেদিনের মতো আমাকে খাইয়ে দেবে।খবরদার আমার ওষ্ঠের দিকে নজর দিবে না ”
আহান ভাই এবার আমার দিকে তাকিয়ে বেশ গম্ভীর হয়ে বলে,
–” বুঝলি উষু আমি যেমন থাপ্পড়ের উপর ডক্টরেট কম্পিলিট করেছি তেমনি এই ফালতু মেয়েটা মিথ্যাে কথা বলার উপরে বি.সি.এস প্লাস ডক্টরেট কম্পিলিট করেছে।এর সাথে কথায় পাড়া যাবেনা।সো এখন আমাদের করণীয়…”
কথাটা অসম্পন্ন রেখেই আমাদের অবাক করে দিয়ে আহান ভাই মেয়েটাকে এক ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বের করে দেয়।অথঃপর সে উঠে দাঁড়ানোর আগেই ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।আহান ভাইয়ের এসব কান্ডকারখানা দেখে আমার চোখ উপরে উঠে যায়।তার মাথায় কি ঘুরছে বুঝতে পারি না।নিজের গার্লফ্রেন্ডকে কেউ এমনে ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বের করে দেয় নাকি?
আহান ভাই এবার ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে হফ করে মুখ দিয়ে বাতাস ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–” ধাক্কাটা ভালো ছিল না ”
আমি শুধু মাথা নাড়াই কিছু বলি না।ওদিকে মেয়েটা সমানতালে দরজার মেরেই চলেছে আে কথা বলেই চলেছে।তার কথার শব্দকে ছাপিয়ে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন,
–” তুই কি এত ভাবছিস?আমার প্রশ্নের উত্তর দে আগে? ”
আমি এবার আহান ভাইয়ের দিকে থেকে অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলি,
–” একজন মানুষ কতটা খারাপ হলে নিজের ওয়াইফকে রেখে অন্য একটা মেয়ের হাতে চুমু খায়,অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে ঘোরে আবার টাকাও দেয়।আবার যখন সেই মেয়ে বাসায় আসলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বের করে দেয়।যে মানুষটা মাসে মাসে কয়েকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দেয় সেই মানুষটার সাথে থাকার ইচ্ছা নাই বললেই চলে ”
আমার কথাগুলো বেশ ধর্য্য নিয়ে শ্রবণ করেন তিনি।অথঃপর চোখ তুলে আমার দিকে তাকান।আমার দিকে তাকানো অবস্থায় বলে ওঠেন,
–” তোর কথার আংশিক কিছু অংশ বুঝতে পারছি।তবে তুই যেটা ভাবছিস সেটা ভুল।ভুল না জাষ্ট দেখার ভুল।আসল কাহিনীটা শুনলে বুঝতে পারবি! ”
–” আমার শোনার ইচ্ছা নাই।আমি সচোখে যেটা দেখেছি এটাই অনেক।আপনার বানানো কাহিনী শুনে একটুও পাপ বাড়ানোর ইচ্ছা আমার নাই ”
কথাগুলো তার দিকে না তাকিয়েই বলি আমি।
আমার কথা শুনে আহান ভাই দীর্ঘ সময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।আমি তার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি।তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠেন,
–” তারমানে তুই সেফারেট হতে চাইছিস? ”
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু দাঁড়িয়ে থাকি।আহান ভাই আরো কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠেন,
–” সবকিছু না জেনে একজন মানুষকে ভুল বুঝে তার থেকে সড়ে যাওয়া ঠিক নয়।তবে তুই যদি যেতে চাস আমি আটকানোর কে?তবে কথাগুলো শুনলে হয়তো কিছু বুঝতি পারবি। ”
–” কিন্তু আমি শুনতে চাই না ”
আমার কথা শুনে আহান ভাই বেশ রেগে যায়।একটা পুঁচকো মেয়ে তার মুখের উপর দিয়ে না বলে দেবে আর তিনি এলাকার সম্ভ্রান্ত মাস্তান হয়েও কিছু করতে পারবেন না এটা কি করে হয়?তিনি এবার এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে একটা তোয়ালে হাতে তুলে নেয়।অথঃপর আমি কিছু ভেবে ওঠার আগেই তিনি আমার হাত দুটো পিছনদিকে পেচিয়ে ধরে বাধতে শুরু করেন।
আমি অবাক হয়ে তার কান্ডকারখানা দেখছি।এই মুহুর্তে যে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত আমার সেটাও ভুলে গেছি আমি।একপর্যায়ে বাধা হলে তিনি আমাকে বিছানায় বসিয়ে দেন।তারপর আমার সামনাসামনি বসে আমার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলেন,
–” শুনতে হবে তোকে? ”
এমন সময় খুব জোড়ে বারি পড়ে দরজায়।তারমানে মেয়েটা এখনো যায়নি।এবার মেয়েটা বেশ চিল্লিয়ে বলে,
–” আমি আজকে চলে যাচ্ছি তবে আবার আসবো।আমাকে তোমার জীবন থেকে কেউ সড়াতে পারবে না মি: আহান ”
কথাগুলো বলে মেয়েটা হপদপ করে চলে যায়।আমরা স্পষ্ট তার চলে যাওয়া বুঝতে পারি।আহান ভাই সেদিকে থেকে মন ঘুড়িয়ে পুনরায় আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–” তোকে শুনতে হবে।শোন ”
আমি মনে মনে ঠিক করে ফেলি তার মিথ্যা কথা শুনবো না,না,না।শুনবো না।তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী অনবরত চিল্লাতে থাকি আমি।আহান ভাই আমার চিল্লান শুনে বেশ বিরক্ত হন।তিনি অত ভাবাভাবি বাদ দিয়ে নিজের ঠোটের সাথে আমার ঠোট মিলিয়ে দেন।আচমকা তার এই কান্ডে আমি অজ্ঞান হয়ে যেতে ধরি।তিনি মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে তার পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার মুখে গুজে দিতে ধরেন।
আমি তারাহুরো করে বলি,
–” খবরদার আমার মুখে ওই রুমাল দিবেন না।ছি.এই রুমাল দিয়ে কত কিছু করেন আপনি।আর ওইটা আমার মুখে দিবেন।একদমি না,কখনো না ”
আহান ভাই বেশ সময় নিয়ে আমার কথাগুলো চিন্তা করেন।তারপর বুঝতে পারেন যে আমি ঠিকই বলছি।তাই তিনি রুমালটা পুনরায় পকেটে ঢুকিয়ে রেখে একটা ভালো কাপড় আনার জন্য রওনা দেন।
২মিনিট পার হয়ে যায় কিন্তু তিনি এখনো আসতেছেন না দেখে আমি উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করি।এমন সময় জালানার দিকে নজর পড়তেই আমি চমকে উঠি।আরে এতো কালিয়া মাস্তানের ভাই বালিয়া মাস্তান।এত উপরে উঠলো কিভাবে?
সে জালানার কাছে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–” উষু আমার কাছে চলে আসো।আরে আহানের কথা বাদ দেও।দরজা খুলে দেও তুমি আমি তোমাকে নিয়ে যাই। ”
আমি মনে মনে ভাবি,ব্যাটা বলদ।তোর কাছ থেকে পালিয়ে এসে আবার তোর কাছে যাব।এমন সময় দরজায় দেখা দেয় আহান ভাই।তিনি জালানার দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে দাড়ান।তার পকেট থেকে একটা পেন বের করে জালানার দিকে এগিয়ে যান।তারপর কলম দিয়ে বালিয়া মাস্তানকে সুরসুরি দিতে থাকেন।সে সুরসরি সহ্য করতে না পেরে নেমে যেতে থাকে।
আহান ভাই এবার আমার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মুখে কাপড় গুজে দেয়।তারপর বলতে শুরু করে তার মিথ্যা কাহিনী।মিথ্যা নাকি সত্য কে জানে?তবে যদি মিথ্যা হয় তো..
চলবে…ইনশাআল্লাহ