রৌদ্রবিলাসী
৮ম পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত
ছাদের মধ্যে কালিয়া ও বালিয়া দুজনকে বন্ধ করে রেখে আমি আর আহান ভাই রুমে চলে আসি।রুমে এসে আহান ভাই দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন।আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তে বলে উঠি,
–” আরে বাপরে,১১টা বাজলো কখন? ”
আমার কথা শুনে আহান ভাই মাথা তুলে তাকান।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে ‘হউফ’ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
–” উষু তোর সম্পর্কে কোনো কিছুই আমার অজানা নয়।তবে আজকে বুঝতে পারলাম আমি তোর বাবাকে এখনি চিনি না?ঘড়িটা তোর বাপ হইলো কেমনে শুনি? ”
কথাগুলো বলে তিনি উত্তরের আশায় আমার দিকে তাকান।এই মুহুর্তে আার তীব্রভাবে ইচ্ছা করতে থাকে তার গালের মধ্যে কষে একটা থাপ্পড় মারতে।বহু কষ্টে ইচ্ছাটা রোধ করে বিছানা থেকে বালিশ তুলে নিয়ে সোফায় রেখে দেই।তিনি দীর্ঘক্ষন সময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।অথঃপর হাতের ওপর মাথা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–” ওখানে গেলি কেন? ”
আমি তার এই প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিলাম।আমি এবার তার মতো হাতের উপর মাথা রেখে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলি,
–” ওমা,আপনি তো বললেন সেফারেট হবেন।উকিলকেও ফোন করলেন।তো যার সাথে ভবিষ্যাতে থাকবোই না তার সাথে এখন থেকে কি লাভ? ”
তিনি আমার কথা শুনে খানিকটা তাজ্জব হয়ে যান।তারপর তিনিও বালিশ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার সোফার সামনে এসে দাঁড়ান।আমি কিছু বলতে যাব এই মুহুর্তে তিনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে থাকেন,
–” একটা কথার প্রমাণ আজকে পেলাম।ছোটবেলা থেকে শুনতাম সবকিছু পরিবর্তনশীল।আজকে তার প্রমানও সচোক্ষে দেখলাম।সেদিনের ছোট বাচ্চা উষু যে নিয়মিত প্যান্টে প্রসাব করতো সে আজ কত ঢ্যাং ঢ্যাং করে কথা বলছে ”
তার কথা শুনে আমি তাজ্জব হয়ে যাই।কিছুক্ষন আগে কি বলতে চেয়েছিলাম সেই বাক্যটাও ভুলে যাই এই মুহুর্তে।তিনি এবার হাত দিয়ে আমাকে সড়িয়ে দিতে দিতে বলেন,
–” সর,আমিও সোফায় ঘুমাবো? ”
–” এহ,মামার বাড়ির আবদার।আমি আপনার সাথে থাকবো না ওকে! ”
–” নট ওকে ”
কথাটা বলে তিনি আমাকে একপাশে চাপিয়ে দিয়ে বালি রেখে শুয়ে পড়েন।তিনি সোফার পিছনের দিকে আর আমি সামনের দিকে।তিনি আমার থেকে কমপক্ষে হলে ২০কেজি ওজনে বেশি।সোফার পিছনের দিকটা সামনের দিকে তুলনায় অনেক হালকা হয়ে যায়।তাই মুহুর্ত সময় লাগে না আমাদের উল্টে পড়ে যেতে।
তিনি উল্টে নিচে পড়ে যান আর আমি তার উপরে।তার দৃষ্টি আমার মুখের উপর স্থির।আমিও তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।দুজনেরই নিঃশ্বাসের তাপ পরস্পরের মুখে পড়ছে।এভাবে কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম জানি তবে ইচ্ছে করছিল সারাজীবন তাকিয়ে থাকি।তিনি তারাতারি করে আমাকে সড়িয়ে দিয়ে কমড়ের মধ্যে হাত দিয়ে বলেন,
–” বুঝলি উষু আজকে আমার আরো একটা ভুল ধারনা ভেঙ্গে গেল।এতদিন তোকে ছাগলের পিচ্চি বাচ্চা ভাবতাম,ভাবতাম তোর কোনো ওয়েট নেই।কিন্তু এখন দেখছি তুই ডাইনোসরের বাচ্চা।বাপরে কি ওজন? ”
আহান ভাই আমাকে অপমান করলো নাকি খোটা দিল ব্যাপারটা এই মুহুর্তে বুঝতে পারি না।তবে আমার প্রচন্ড রাগ হতে থাকে এই মুহুর্তে।আমি বালিশ নিয়ে সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ি।শুয়ে পড়ার সাথে সাথে ঘুম এসে জড়িয়ে নেয় তার চাদরে।
পরেরদিন সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গে আহান ভাইয়ের ডাকে।তিনি আমাকে জাগিয়ে দিয়ে হাসি মুখে বলেন,
–” গুডু মরনিং,আচ্ছা ওঠ তো দেখি বিছানা নষ্ট করলি নাকি? ”
ঘুম থেকে উঠেই এরকম ফালতু মার্কা একটা কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় আমার।এমন সময় জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে চমকে উঠি আমি।আরে বাহিরে এত অন্ধকার কেন?
আমার মনের কথা ধরে ফেলেন আহান ভাই।তিনি কফির কাপ নিয়ে সোফায় বলে চুমুক দিতে দিতে বলেন,
–” প্রচন্ত আকাশ খারাপ।যেকোনো মুহুর্তে বড় ধরণের বৃষ্টি হতে পারে বুঝলি,বড় ধরণের ”
এই মুহুর্তে আমার ছাদের মধ্যে যেতে প্রচুর ইচ্ছে করে।এমনিতেও শাওয়ার যেহেতু নিতেই হবে তো বৃষ্টিতে একটু ভিজলে কি হয়?আমি আহান ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই সোজা ছাদে চলে যাই।আহান ভাই পিছন থেকে আমাকে কয়েকবার ডাকলে আমি সেদিকে কর্ণপাত না করে সোজা চলে যাই।আহান ভাই কিছুক্ষন আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কফির কাপ নিয়ে তিনিও আমার পিছনে রওনা হন।
কিছুক্ষন হাটার পরে আমি পৌঁছে যাই ছাদের মধ্যে।ছাদে পৌঁছে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি চারদিকে।সম্পুর্ন গগনজুড়ে বিরাজ করছে শতশত মেঘ।এমনভাবে একে অপরের সাথে আষ্ঠেপৃষ্টে আছে মনে হচ্ছে কোনো এক কারনে তারা খুব খুশি।আজ হয়তো পৃথিবী লোকের মানুষের মতো তাদের ঈদ,এজন্যই হয়তো এত খুশি তারা।নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানিকণা ছেড়ে…
আহান ভাই কফির কাপ হাতে নিয়ে ছাদে উঠে আসেন।তিনি আস্তে আস্তে হেটে আমার পাশে এসে দাঁড়ান।আমি তারদিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই তার পরণে একটা টাউজার আর গায়ে একটা হালকা টি-শার্ট।বুঝতে পারি তিনিও বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তৈরি।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি বৃষ্টির অপেক্ষায়।আহান ভাই ছাদের প্রাচীরে হেলান দিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলেন,
–” আজকের এই আবহাওয়াটায় একটা অন্যরকমের অনুভূতি আছে বুঝলি উষু।আজকের এই আবহাওয়াটায় কিছু একটা করতে ইচ্ছে করছে আমার।কেউ একজনকে খুব কাছে টানার ইচ্ছে করছে? ”
তার কথা শুনে আমি ভ্রু-কুঁচকে তার দিকে তাকাই।অথঃপর ভ্রু-নাঁচিয়ে বলি,
–” কাকে কাছে টানার ইচ্ছে করছে শুনি? ”
আহান ভাই মুচকি হেসে কাপের বাকি কফিটুকু একবারে শেষ করে সেটা ফেলে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–” বললাম না কেউ একজনকে।কিছুক্ষন পর দেখতে পাবি ”
আহান ভাই কার কথা বলছে সত্যি এই মুহুর্তে বুঝতে পারি না আমি,বোঝার চেষ্টাও করিনা।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আনমনে বলি,
–” ইসস,কখন আসবে এই বৃষ্টিটা।একটু তারাতারি আসলে কি হয়?সত্যি আজকের এই আবহাওয়াটায় অন্য রকমের অনুভূতি রয়েছে।খুব ভাল লাগছে ”
বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে একপর্যায়ে হুট করেই আকাশ খুব জোড়ে গর্জন করে ওঠে।সাথে সাথে মেঘগুলো ছড়িয়ে দেয় তাদের পানিকণা।সেই পানি কণা গুলো বৃষ্টিরূপে নেমে আসে ধরণীতে।আমি দুহাত মেলে দিয়ে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করি বৃষ্টি কণাগুলোর সাথে,কিন্তু তারা আমাকে আপন করে নিতে রাজি নয়।তাইতো আমার শরীর বেয়ে নেমে যাচ্ছে কেউ অবস্থান করছে না একস্থানে।
হুট করে খুব জোড়ে গর্জন করে ওঠে গগন,আশেপাশের গাছপালা গুলো নিজের নিয়ন্ত্রন হাড়িয়ে ফেলে মাতাল হাওয়ার কারনে।তারা সবাই যথাক্রমে একদিকে হেলছে আর দুলছে।এমন সময় কেউ আমাকে পিছন দিকে ফেরায় খানিকটা টেনে।পিছনে ফিরে আমি এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে পাই।আমি দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরি।চোখের কোণে জমা নেয় পানিকণা…
চলবে..ইনশাআল্লাহ
{আজকে দিতে দেরি হলো এর জন্য দুঃখিত।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন}
নামাজ পড়ুন।আল্লাহ হাফেজ