#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১০ম_পর্ব
আগুন লেগে যায় চারুর শাড়ির আচলে।আদনান এখনো চারুর উপরে বসে আছে।আগুন আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে।আদনান থ মেরে শুধু দেখছে।চারু বুঝতে পারছে এভাবে থাকলে তাকে আগুনে পুড়ে মরতে হবে।এদিকে শাড়ির আচল থেকে বেডশীটও পুড়তে শুরু করেছে।আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে আগুনের আচ।একপর্যায়ে চারুর পেটে লাগে আগুনের ছ্যাঁকা।চারু এক ঝটকায় আদনানকে উপর থেকে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।দৌড় দেয় বাথরুমের উদ্দেশ্যে।দৌড়ানোর কারনে বাতাস পেয়ে আগুন আরো উঠতে শুরু করে।তবে বাথরুমে প্রবেশ করে বাথট্যাবে শাড়ির আচলটা রাখতে একেবারে নিভে যায় আগুন।চারু দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয় তারপর একটা মগে পানি নিয়ে দৌড়ে ঘরের মধ্যে আসে।এসেই পানি গুলো ঢেলে দেয় বিছানার উপর।আগুনটা নিভে যায় বেডশীট থেকে।তবে অর্ধেকের চেয়ে বেশি পোড়া গেছে বেডশীট ও তোশক।আরেকটু হলে বেডটাতেও আগুন লাগতো।
আদনান এখনো নিচেই পড়ে আছে।চারু একবার আদনানের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।চুপিচুপি সে প্রবেশ করে রিমির রুমে।রিমি নেই দেখে তারাতারি দরজাটা লাগিয়ে দেয়।তারপর ব্যাগ থেকে একটা জামা বের করে বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়।চেঞ্জ করে এসে সে আবার আদনানের রুমে যায়।আদনান সোফার উপর বসে আছে আর বেডশীটটা দেখছে।
চারু প্রবেশ করতে তার নজরটা পড়ে চারুর দিকে।চারু আদনানের সামনে দিয়ে বেডটার কাছে যায়।তারাতারি করে বেডশীটটা তুলে ফেলে।তোশক পোড়া যাওয়ার কারনে আরেকটা বড় বেডশীট বিছিয়ে দেয় সে।এবার সে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান তার দিকে তাকিয়ে আছে।হাতে দেশলাইটটা এখনো আছে।
১৭.
সমস্ত দিনটা পার করে ডিনার টেবিলে বসে আছে সবাই।লক্ষ্য ডিনার করা।রাহিনা বেগম সবাইকে খাবার তুলে দিচ্ছেন।আদনান প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।কমবেশি সবার নজরই তার দিকে শুধুমাত্র চারু বাদে।তার পেটে প্রচন্ড ক্ষিধা থাকার কারনে নজরটা খাবারের দিকে।রাহিনা বেগম চারুর প্লেটে খাবার দিতেই চারু খেতে শুরু করে।খাওয়ার মাঝখানে আমজাদ সাহেব বলে ওঠে,
—‘ তাহলে আমরা কালকে চলে যাচ্ছি। ‘
এই কথাটা শুনে হালিম সাহেব কড়া চোখে তাকান আমজাদ সাহেবের দিকে।
—‘ কালকে যাবেন মানে,আরো কয়েকদিন থাকুন ‘ হালিম সাহেব বলে।তার কথার প্রতিউত্তরে আমজাদ সাহেব বলে ওঠে,
—‘ নাহ আর থাকা যাবেনা।অনেকদিন হইছে,অফিসের একটা গুরুত্বপুর্ণ কাজ আছে তাই যেতে হবে। ‘
শেষ পর্যন্ত সবাই অনেক জোর করলেও আমজাদ সাহেব নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন।বাবা-মা চলে যাবে শুনে মনটা প্রচুর খারাপ হয়ে যায় চারুর।চোখের কোনে পানি চলে আসে।রিমি চারুর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,
—‘ খালা-খালু কালকে যাবে তার দুইদিন পর আবার আমরা খালা-খালুর বাসায় যাব। ‘
রিমির এই কথাটা শুনে মুখ তুলে তার দিকে তাকায় চারু।রিমির হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।রিমির কথার উত্তরে আমজাদ সাহেব বলে,
—‘ অবশ্যই যাবে ‘
সেদিনের মতো শেষ হয়ে খাওয়া-দাওয়া।সবার আগে টেবিল থেকে উঠে পড়ে আদনান।কারো সাথে কোনো কথা না বলে পানি খেয়ে চলে যায় নিজের রুমে।চারু সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ আমি কি আজ রিমির সাথে থাকবো! ‘
চারুর এরকম বোকা বোকা প্রশ্নে বিব্রত হয় তার বাবা-মা।কিন্তু রিমি মুচকি হেসে বলে,
—‘ বিয়ের পর কেউ বরের সাথে না থেকে ননদের সাথে থাকে নাকি ‘
চারু বুঝতে পারে তাকে আজ আদনানের সাথে থাকতে হবে।সকালের ঘটনার পর আদনানের সাথে একবারও কথা বলেনি চারু।আদনান কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও এড়িয়ে গেছে চারু।চারু খাবার শেষ করে পানি খেয়ে রওনা দেয় আদনানের ঘরের উদ্দেশ্য।আস্তে করে দরজা খুলে দেখে আদনান কি করতেছে?কিন্তু সে আদনানকে ঘরে দেখতে পায় না।কৌতুহল নিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে চারু।
ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয় সে।তারপর ছোক-ছোক করে খুঁজতে শুরু করে আদনান নামক বস্তুটাকে।চারু খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে দেখতে পায় আদনান ব্যালকনির ইজি চেয়ারটা বসে আছে।বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আছে নীল ডায়েরীটা।চারু আস্তে আস্তে করে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একোর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে আদনানের ঠিক পিছনে।আদনান নীল ডায়েরীটা বুকে জড়িয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।চারু মনে মনে ভাবে,এই ছেলেটা এত ছ্যাচকাঁদুনি কেন?একটা মেয়ের জন্য কেউ এরকম থেকে থেকে কাঁদে।
চারু গিয়ে দাঁড়ায় একেবারে আদনানের সামনে।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে ভালো করে বসে।চারু সরাসরি আদনানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ ঘুমাবেন না! ‘
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুই ঘুমিয়ে পড় ‘
চারু এবার দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে।তারপর একটা টুল নিয়ে গিয়ে ঠিক আদনানের সামনে বসে পড়ে।আদনান অবাক হয়ে চারুকে দেখছে।এবার চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ আমি আপনার মতো ছিঁচকাদুনে ছেলে জীবনেও দেখি নাই।একটা মেয়ের জন্য কেউ এভাবে কাঁদে বলেন? ‘
চারুর বলার ভঙ্গি এমন ছিল যা দেখে আদনান না হেসে পারে না।আদনানকে হাসাতে পেরে চারু নিজে নিজে খুশি হয়।আদনান ঠোটের কোণে হাসিটা রেখে বলে,
—‘ আমি কই কান্না করতেছি।আমিতো এমনি বসে আছি।ভাবছি তখনকার জন্য তুই আমাকে মাফ করেছিস কিনা? ‘
চারু ভাবে এই সুযোগ।সে আদনানকে বলবে আপনি যদি আমার এই কথাটা রাখতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে মাফ করবো।
তার ভাবনার শেষে আদনান বলে ওঠে,
—‘ তুই কি আমাকে মাফ করেছিস? ‘
চারু গলাটা পরিষ্কার করে বলে,
—‘ নাহ করিনি তবে করতে পারি যদি আপনি আমার একটা কথা রাখতে পারেন। ‘
আদনান ভ্রু-কুঁচকে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ কি কথা? ‘
চারু হাসতে হাসতে বলে,
—‘ আপনি আর কখনো কাঁদবেন না।কখনো না!কথা দিন? ‘
এই বলে চারু তার হাতটা আদনানের দিকে এগিয়ে দেয়।আদনান কি যেন ভেবে হাসতে হাসতে চারুর হাতের উপর হাত রেখে বলে,
—‘ আচ্ছা যা কথা দিলাম। ‘
চারু এবার বলে,–‘ চলুন ঘুমিয়ে পড়ি ‘
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,–‘ তুই ঘুমা আমি একটু পর ঘুমাবো ‘
চারু ধপ করে আদনানের কোলে বসে পড়ে।চারুর এরকম কাজে আদনান অবাকের শেষ সীমানা পার হয়ে যায়।মুহুর্তের মধ্যে তার মাথার তার আবার ছিড়ে যায়।পকেট থেকে বের করে পকেট নাইফ।যেটা তার কাছে সবসময় থাকে।শুধু তার কাছে নয় পকেট নাইফ কমবেশি অনেক মানুষের কাছেই থাকে।এই নাইফটা দিয়ে কোনো কোনো সময় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আদনান নাইফটা বের করে।চারু চমকে ওঠে।সে কোল থেকে ওঠার আগেই….
চলবে..
{একটা কথা আজকে সবাই শুধু নাইস\\নেক্টট কমেন্ট করবেন।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।