রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ১১
__________________________
[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত আমার লেখা।]
নিচতলায় বৈঠকখানার ঘরটা গোছগাছ শুরু করেছে মাহি। আশফিককে ডেকে এসেছে দশ মিনিট হলো, অথচ পাত্তা নেই তার। রাগ করে বসে রইল না কি? আরেকবার কি ডাকবে? ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরের দিকে এগোলো, তার মাঝেই নেমে এলো আশফিক। ওকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে বলল, ‘ড্রিংকস, স্ন্যাকস, সব কিনে আনছে ওরা। কিছুই করতে হবে না। ঘর গুছিয়েছ?’
-‘হুঁ, শেষ গোছানো।’
রসুইঘরের দরজাতে ওকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘কোন ঘর? সেখানে গিয়েই না হয় বসি, চলো।’
-‘এই তো বসার ঘরটাই তো পরিপাটি করলাম। তুমি কি কোনো শোবার ঘরে আয়োজন করতে বলছ?’
-‘তেমনটাই তো চাইছিলাম। এতগুলো মানুষ, ফ্লোরিং করে বসে মুভি দেখলে বেশি আনন্দ হবে। তোমার ল্যাপটপের সঙ্গে প্রজেক্টর দেখলাম। তাহলে তো ওটার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে না।’
একটু চিন্তামগ্ন লাগল মাহিকে, তবু সায় দিলো, ‘ঠিক আছে, আনিস ভাইয়ার ঘরেই চলো তাহলে। ওর ঘরে নিচে বিছানা করা। আর প্রজেক্টর আমার না, রায়ান ভাইয়ের।’
বলে সোফার ফোম আর কুশনগুলো তুলে নিলো। আশফিকও সাহায্য করল। এবার দুজন একত্রে পুরো ঘরটা গোছালো। সদর দরজাতে ঠকঠক আওয়াজ হলো হঠাৎ৷ রুমকি সবাইকে নিয়ে হাজির হয়ে গেছে। রিমন আসবার জন্য বায়না ধরেছিল৷ বেচারা বাবার বকুনি খেয়ে আর আসবার সুযোগ পায়নি।
হাতে কোল্ড ড্রিংকস্, চিপস্, আরও নানারকম হালকা জলখাবার নিয়ে একে একে ঘরে ঢুকে পড়ল ওরা। শেষে পরাগ ঢুকতে ঢুকতে আশফিকের কানেকানে বলল, ‘শেষবার বলছি, বেশি বেশি করবি না কিন্তু।’
বক্র চোখ করে তাকাল আশফিক ওর দিকে, ফিসফিসিয়ে বলল, ‘প্রেগন্যান্ট করব না, ভয় নাই।’
কথাটা বলে ও চলে যেতেই পরাগ ঠোঁট কামড়ে ধরে চেয়ে রইল, বিড়বিড় করে বকল, ‘শা’লা লু’চ্চা!
যে যেমন আসন পেয়ে বসে পড়তেই ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অপি ডাকল, ‘তুমি আসো না ক্যান? দাঁড়ায় দাঁড়ায় মুভি দেখবা?’
মুভি দেখার নাম করে সবাই বসল তো ঠিকই, কিন্তু কী মুভি দেখবে তা কেউ ভেবে রাখেনি আর না পারছে এখন বাছাই করতে। ফোনটা হাতে নিয়ে মাহি এক কোণাতে বসে ওদের বাকবিতণ্ডা দেখছে তো আরেকবার ঘাড় পেছনে ফিরিয়ে আশফিককে। যে কিনা ওর বরাবর দেওয়াল ঘেঁষে বসে আছে। এই ব্যাপারটাই ওর স্বাভাবিক লাগছে না মোটেও। কেন যেন অস্বস্তি, অস্থিরতা নিজের ভেতরে টের পাচ্ছে। তখন নিচে বসতে না বসতেই আশফিক ঘুরে এসে ওর পেছনে ধপাত্ করে বসে পড়ল। সেই থেকে শুধু মনে হচ্ছে কখন না পেছন থেকে আশফিকের হাতজোড়া ওর পিঠে বা কোমড়ে বিচরণ শুরু করে। বন্ধুবান্ধবের মাঝে ওর দ্বারা এমন বেশরম কাজবাজের শিকার অসংখ্যবার হয়েছে পূর্বে। সেই সময় আর সেই সম্পর্ক এখন আর নেই ঠিক, তাও সেই আশঙ্কা মনের ভেতর খচখচ করছে।
-‘আ…আব…! আচ্ছা আশফি, তুমি অমন পেছনে গিয়ে বসলে কেন? সামনে এসে বসো না!’ সঙ্কোচ গলাতে বলল মাহি।
মেঘ না চাইতেই জল ঢেলে দিলো উপরওয়ালা, এমন প্রতিক্রিয়া হঠাৎ স্পষ্ট হলো আশফিকের চেহারায়, কেমন অন্যরকম স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘কেন? তুমি কি কিছু ফিল করছ?’
-‘কী?’ ঝট করে পেছনে তাকাল মাহি।
-‘না কিছু না। পরাগ, হৃদয় ওরাও দেখো অপিদের পেছনেই বসেছে। বসতে হয়েছে আর কী ওদের। লেডিস ফার্স্ট কিনা। আমি তোমাদের সামনে গিয়ে বসি তাহলে কীভাবে?’
আর কী! এ বিষয় নিয়েও কি তর্কাতর্কি করা যায়! ব’জ্জা’ত’টা সবার সামনে ভদ্র সেজে বেড়ালেও ওর কাছে এসে হয় ভদ্র শ’য়’তা’ন একটা।
অবশেষে মুভি বাছাই হলো। অসম্ভব রোমান্টিক একটা মুভি ‘আ ওয়াক টু রিমেম্বার।’ এত সময় যাবৎ ধৈর্য নিয়ে মুভি দেখা হয় না মাহির কয়েক বছর। একটুতেই তাই খুব অধৈর্য অধৈর্য লাগছে ওর। এখন না সম্ভব সবাইকে ফেলে রেখে উঠে পড়া। খুব কষ্টের সঙ্গে মনোযোগ ধরে রাখবার চেষ্টা করল সে। আশফিককে নিয়ে মনের ভেতরের বাধবাধ ভাবটাও ভুলতে চাইছে এ অসিলায়৷
কাহিনিতে মনোযোগ সকলের আটকে পড়ার মাঝেই মাহির ফোন ভাইব্রেট করল। দিব্য কল করছে। উজ্জ্বল হয়ে উঠল মাহির মুখটা। কথা বলবার বাহানায় উঠতে গেলেই জারিন বসিয়ে দিলো, ‘আহা মাহি, প্লিজ জরুরি ফোন না হলে পরে কথা বোলো৷ এক সঙ্গে এমন সময় আর কবে পাবো বলো তো!’
অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ল মাহির সকলের সাথে বসে মুভি দেখা। আসলেই তো, এমন আনন্দমুখর পরিবেশ তো ফিরে পাবে না ও সকলের সাথে। এবারের ছুটি শেষ হলেই আবার কত মাসের জন্য একটানা কাজ। তবে দিব্যকেও নিরাশ করল না। মেসেঞ্জারে ওদের কথা চলতে থাকল।
মাহির ঘাড়ের ওপর থেকে আশফিক অনিমেষ চোখে দেখে চলেছে ওদের মেসেজিং। দিনকে দিন ওদের এই ধরনের মুহূর্তগুলো অসহনীয় হয়ে উঠছে ওর কাছে। না যায় বলা আর না যায় সওয়া! বড়ো বড়ো করে দু’বার নিঃশ্বাস ফেলে ধৈর্য ধরল।
-‘বারেবারে শুনতেছি বলো না ক্যান? কী মুভি দেখো?’
-‘আরে ভাই বললামই তো রোমান্টিক একটা মুভি৷ নামধাম মনে নাই।’
-‘নাম জানতে সময় লাগে, না? আমারে বলদ লাগে? আমি যেন বুঝতেছি না তুমি ইচ্ছা করে বলতেছ না!’
রাগের ইমোজিসহ মাহি লিখল, ‘তা বোঝেনই যখন জিজ্ঞেস করেন ক্যান?’
-‘ধুর মিয়া! না কইলা৷ কহন শেষ হবে?’
-‘রাত বারোটার আগে না মনে হচ্ছে।’
-‘ভালো, তা দেখো তোমার মুভি। গেলাম আমি।’
-‘না, যেয়েন না। মুভিতে মন নাই৷’
-‘তাইলে আসো আমার ফটো চুজ করে দাও। আমি একেকটা করে এডিট মাইরে পাঠাইতেছি।’
-‘এই বা’ল’ডা খবরদার! চাকরি পাইছি আপনার ফটো চুজ করার?’
-‘আরে দেখোই না। অত চ্যাতো ক্যান?’
তারপরই হুড়মুড়িয়ে এক গাদা ছবি এসে ভিড়ল মাহির ইনবক্সে। আজকের অধিকাংশ ছবিগুলোই একটা বাঙালি মেয়ের সঙ্গে নানা ভঙ্গিতে তোলা দিব্যর। এই মেয়েটা নতুন বন্ধু মনে হচ্ছে ওর। এর আগে মেয়েটিকে দেখা যায়নি। জিজ্ঞেস করতে চেয়েও শেষ মুহূর্তে ইচ্ছে দমাল। তাই নিজে থেকেই দিব্য তার প্রসঙ্গ তুলল, ‘এই মেয়েটার কাহিনি শুনবা?’
-‘শোনান।’
-‘আমি খোলামেলা মনের মানুষ হলেও বিশ্বাস করো বাঙালি মেয়েদের নির্লজ্জতা সহ্য করতে পারি না। কষ্ট লাগে কেন যেন। মনে হয় এই বিদেশিদের কাছে আমরা বাঙালি আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে ফেলতেছি৷ যার কারণে ওরা আমাদের আরও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে৷’
-‘গা ঘেঁষা মেয়ে?’
-‘শুধু গা ঘেঁষা না। তোমারে দেখাই দাঁড়াও৷ কত কিছুই তো শেয়ার করি। এটাও দেখাই। মনে কিছু নিয়ো না।’
হঠাৎ করেই ইনবক্সে মেয়েটির ভিন্ন একটি ছবি এলো, যেখানে নগ্ন বুকে সে। সাথে আরেকটি স্ক্রিনশট। দিব্যকে বিমোহিত করতে অ’শ্লী’ল ঢঙের কথা তার। চকিতে দিব্যর মেসেজ এলো আবার, ‘আমি পারলে ওই ইমোজির মতোই ওর মুখে বমি করে আসতাম।’
-‘তাহলে তার সাথে এতগুলো ছবি কীসের? বুঝলাম না।’
-‘ওগুলো তো এমনিই তোমারে দেখার জন্য দিলাম। প্রথম যেদিন পরিচয় হলো সেদিনেরই তোলা এগুলো। তারপর কথাবার্তা একটু আধটু হতেই এই কিচ্ছা তার। খালি আমার কাছে হলেও বুঝতাম সে আমারেই শুধু সিডিউসড করতে চায়। অথচ আমার ফ্রেন্ড যোনে প্রায় সবার কাছে। বুঝতেছ তো কী জন্য?’
-‘হুঁ, সে এক সঙ্গে সবার সাথে ঘুমাতে ভালোবাসে।’ সঙ্গে লজ্জা পাওয়া ইমোজি মাহির।
দিব্যও হাসির ইমোজির সাথে লিখল, ‘ওমা! কী ভদ্র, সুশীল মেয়ে! গ্রুপ সে* এর বদলে ঘুমানোর কথা বললে আল্লাহ পাপ কম দেবে, তাই না মাহি? হা হা!’
হেসে উঠল মাহিও অনুচ্চস্বরে। ছেলেদের সঙ্গে কখনো কথাতে পারা সম্ভব নয় ওর। সে সব ছেলেদের কথাই বা ভাবছে কেন? তার জীবনে নিকটতম আত্মীয়র বাইরে মাত্র তো দু’জন ছেলে বিদ্যমান। তার একজন দিব্য ফারহান আর আরেকজন ছিল আশফিক জাওয়াদ। এ দু’জনের ব্যক্তিত্ব দু’রকম হলেও সে কারও সাথেই কখনো কথাতে পেরে ওঠেনি। তবে এদের মধ্যে বর্তমান তার মনে অনুভূতির অধীশ্বর কে? এ দ্বিধাদ্বন্দের চৌকাঠ মাড়িয়ে উঠবে সে কবে? মেসেজ লেখা বন্ধ করে আনমনে ভাবতে বসে গেল ও। হাতের মধ্যে ফোনটা আবার কেঁপে উঠতেই কানে এসে বাড়ি খেলো এক প্রেমিক যুগলের প্রেম প্রতিজ্ঞা বাণী। বড়ো স্ক্রিনটিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ওর, সারা সময় মুভিতে মনোযোগ না থাকলেও ছেলে-মেয়ে দু’টির ভালোবাসার মুহূর্তটুকু নস্টালজিয়া করে তুলল ওকে। আশফিককে ঘিরে অতীত আর্তিগুলো এই চারটা বছরে আজ অবধি কাউকে বোঝায়নি ও, কেউ বুঝতে চায়ওনি। ওর জন্য কারও কি সময় ছিল? যাকে হৃদয় কুঠুরির সর্বস্বটুকু দিয়ে শূন্য হলো, তার মায়া কাটিয়ে উঠলেও তার দেওয়া মিছে ভালোবাসা আর অকাট্য সত্য বেদনাটুকু ওকে আজও ছেড়ে গেল না। যে-কোনো ওজরে তা ওর মন কুঠুরির দ্বারে এসে খাঁড়ায়।
অন্যমনস্ক মাহি কোথায় হারিয়ে গেল? স্ক্রিনে মুভির প্রধান ভূমিকাতে থাকা চরিত্রদু’টোর কথোপকথন মাহিকে কি খুব আকৃষ্ট করছে? মুভিতে ডুবে গেলেও এখন আর আশফিক মুভি দেখার সুযোগ তো দেবে না ওকে। তবে মেয়েটা চোখের পলকেই প্রচণ্ড উদাসীন হয়ে পড়ে। এমন বৈরাগী আগে ছিল না।
যন্ত্রণাদাতা মানুষটি আজ খুব কাছে। ইচ্ছে করছে মাহির আশফিকের জন্য হৃদয়ে পুষে রাখা বি’ষ বাণীগুলো উগড়ে দিতে, সেদিনের করা চড়া অপমানের শোধটাও নি’র্ম’ম খু’নী’র মতো আশফিককে যন্ত্রণাগ্রস্ত করে নিতে। কিন্তু তা দেবার অথবা নেবার হলে তো এ চারদিনেই পারত। সে সব কিছু মনে রাখতে চায় আর সেই দিনের আঘাতের বদলা প্রতিটা দিন একটু একটু করে নিতে চায় বলেই এত অটলতা।
ইতঃপূর্বেই ঘরে এক আশফিক ছাড়া প্রত্যেকে বিনা বাক্যে বেরিয়ে গেছে। তাও মিনিট পাঁচেক পূর্বে। মাহির পূর্ণ নজর ছিল ফোনে, দিব্যর সঙ্গে কথা জমে উঠেছিল যখন। সাদিয়া হঠাৎ শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে ছোটো শিকদার বাড়িতে চলে গেছে রুমকিকে সঙ্গে করে। তারপরই সকলে একে একে কেটে পড়েছে মাহি দৃষ্টি তুলে চাইবার আগেই। উদাসীনা মাহি স্মৃতিবেদনায় বিভোর হয়ে আশেপাশে খেয়াল করেনি পরবর্তী সময়েও।
পুরোনো যাতনা চেপে ফেলল মাহি অন্তরের গহ্বরে। মুভিটা এখন খুব টানছে ওকে। যাক অবশেষে! আজকের রাতটা অন্য দিনের তুলনায় হবে তাহলে একটু আলাদা। মন্দ না অবশ্য তা। দিব্যকে পরে কল করবে জানাতে মেসেজ লিখতে শুরু করল। তাতে কথা আদান-প্রদান আরেকটু বাড়ল। আর এ ফাঁকেই পরিবেশের বদল ঘটিয়ে ফেলল আশফিক।
দিব্যকে ক্ষণিকের জন্য বিদায় লিখতেই এবার কর্ণকুহরে পৌঁছল নারী পুরুষের মিলিত শী’ৎ’কা’র। অবিলম্বে মাথা তুলল মাহি। স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে কোনো নারী পুরুষ দুজন সিক্ত চুমুতে বুঁদ হয়ে আছে। আরও যা দেখা যাচ্ছে তা সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে দেখার মতো নয়। এমন একটা মুভি পছন্দ করল ওরা কীভাবে? লজ্জায় অবনত চোখজোড়া মাহি চারপাশে ঘুরাতেই আচম্বিত অবাক হলো। কেউ নেই! চট করে পিছু ফিরে পেলো কেবল আশফিককে। আশ্চর্য, এত সময় আশফিকের অতি নিবিড়ে বসে ছিল ও তা টেরই পায়নি! ঢেমনা মিনসেটা কী সাবলীল ভঙ্গিতে দেখছে অন্তরঙ্গ তামাশাগুলো। চোখের প্রাঞ্জলতায় প্রকাশ পাচ্ছে তার, তুমুল আগ্রহী সে এতে। বুকের মধ্যে তখনি ছলকে উঠল রক্ত, অস্থিরতায়।চোখ বুজতেই ফিরে গেল পেছনের সময়ে। বদ্ধ ঘরে, আলো-আধারিতে আশফিককে কাছে টানার আর দূরে ঠেলার দোলাচলে পরাজিত মাহির আত্মসম্পর্ণ তার দুই বাহুর মাঝে। আধখোলা রাতের পোশাকের ভেতর ওর তুলোর মতো কোমল দেহতে আশফিকের ক্রমাগত ওষ্ঠ স্পর্শ …! না না আবারও নয়! অতীতের অপূর্ণ সম্পর্কের সেই আকাঙ্ক্ষিত প্রেম, সোহাগ আজ আর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে চায় না সে।
নিম্নঠোঁট কামড়ে মুখের ভেতর গুঁজে আশফিক নিঃশব্দে খুব হাসছে। যাবার সময় সৌরভ দরজা ওপাশ থেকে বন্ধ করে গেছে, জানালা খুলে ডাকলেও কাউকে পাওয়া যাবে না।
মাহি সটান বসে আছে। ওর অভিজ্ঞ চোখ দরজা দেখে যেমন বুঝে গেল এপাশ থেকে খুলবার কোনো উপায় নেই, তেমনই ওর চতুর বুদ্ধি ধরে ফেলল, সব কিছুই আশফিকের ইচ্ছায় ঘটছে। এ বাড়িতে এই মুহূর্তে তারা দুই যুবক যুবতী ছাড়া আর কেউ নেই, তা সেও অবগত। ল্যাপটপ আশফিকের কোলে, পেছনে ফিরেই তখন দেখেছিল তা। বে’য়া’দ’ব, শ’য়’তা’ন’টা তাকে এমন নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে কেন? এইসব নোংরামো দেখিয়ে ওকে উত্তেজিত করে তুলতে চায়! জ’ং’লী, জা’নো’য়া’র একটা!
কিন্তু স্ক্রিনের ছেলে-মেয়েদু’টোর অধিকতম অন্তরঙ্গতা, অ’শ্লী’ল শী’ৎ’কা’র ধ্বনি, না চাইতেও শরীরের কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে, বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে শিরাতে শিরাতে, কানের পাশাপাশি গাল গরম হতেই দু’গাল চেপে ধরল মাহি। এমন বিচ্ছিরি পরিস্থিতিতে আটকা পড়ে উপস্থিত বুদ্ধিও লোপ পাচ্ছে। এমনিতেও এই চমৎকার গুণটি ওর তুলনায় আশফিক প্রশংসাযোগ্য।
হাতের কাছে এই মুহূর্তে ওর একে-৪৭ আ’গ্নে’য়া’স্ত্র’টা থাকলে চোখ বুঁজে আশফিকের মা’থা’টা উ’ড়ি’য়ে দিতো নিশ্চিত। তা এখন না পারলেও ওর গ’লা’টা এক্ষুনি টি’পে ধরে আ’ধ’ম’রা করে ফেলা অপরিহার্য।
যেই কথা সেই কাজ। উলটো ঘুরে আশফিকের গ’লা চে’পে ধরতেই আশফিক ওর পিঠ আকড়ে কাছে টেনে নিলো, ‘বড়ো বেশি খালি খালি লাগে আমার বিরহী মন। এই যে তোমার ছোঁয়ায় আমি কামনায় উতলা হচ্ছি। আমি চাই এই উতলা আমি বারবার তোমার জন্যই হই। তোমার প্রেমী হৃদয় জাগ্রত করো মাহি! আমার এই মন পুড়ে কয়লা হবার আগেই আমায় আদর করবে একটু? একটু আদর করো প্লিজ!’
স্বরভাঙা অধীর গলায় প্রণয়ের ডাক ওর। প্রেম আদুরে বৃষ্টিতে ভিজতে মাহির জন্য আশফিকের আকুল আহ্বান, আকুল প্রতীক্ষা। ওর অবাধ্য হাতদু’টো দ্বারা অবিরত মাহির নির্মেদ উদর আর পৃষ্ঠদেশ মর্দিত হতেই কামনার ঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে তুলল মাহিকে। আজও … সেই আজও আগের মতোই দ্যুলোক ভুলক্ ভুলে আত্মাদর বিস্মৃতি হলো ওর, আশফিকের হৃদয় নিংড়ানো প্রণয় বর্ষণে চাপা পড়ে গেল অভিমানের স্তূপ। মনের দূরত্বের মাপকাঠিতে শ, ক্রোশ বিভেদ থাকা দুজন প্রাক্তন প্রেমিক যুগলের ঠোঁটের অন্দরে অন্দরে কথা শুরু হয়, জিভ ছুঁয়ে যায় মুখের ভেতরের জমি, নাকে নাক ঘষে আলতো আদর। প্রেমের সেই প্রথম দিকের মতো আজও মাহির কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের ফাঁকে আশফিকের ঠোঁট, সেই সময়ে দুজনের চোখের পাতা ছুঁইছুঁই হয়ে যায় আর প্রজাপতির পাখার মতো ডানা ঝাপটায়, ভালোবাসায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় আশফিক মাহির দু’চোখের পাতায়, নাকের ডগায়, ঠোঁটের কোণে, ঠোঁট ছাড়িয়ে সারা শরীর ছড়িয়ে যায় আদর।
সাবলীল বাংলাতে এই উপন্যাসটা লিখব। যারা সহজ, সাবলীল লেখা পড়তে পছন্দ করেন এই লেখাটা তাদের জন্যই।
ইসরাত জাহান দ্যুতি