রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ৩৪
__________________________
[প্রাপ্তবয়স্ক ও কঠোর মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত। এবং কপি নিষেধ।]
নাশতার পর্ব সাড়তে সাড়তে বেলা সাড়ে দশটা হয়ে গেল ওদের৷ গরম পানিতে গোসলের পরও মাহির ঠান্ডাটা বেকায়দা আকারে লেগে গেছে। হাঁচি দিতে দিতে ক্লান্ত সে। গত দুই, তিনটা দিন ধরে ওকে আর আশফিককে ওষুধের ওপরই চলতে হচ্ছে।
বসার ঘরটাতে এসে টিভিটা খুলে বসেছে আশফিক সবেই। মাহি ওর জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করছে। তারপর বিকাল হলেই বেরিয়ে যাবে ও। এরপর ওদের মাঝে যোগাযোগ থাকবে কি থাকবে না, এ বিষয়ে কোনো কথাবার্তা হয়নি। রান্নাঘরের দিকটা একটু ভেতরে। বসার ঘর থেকে খেয়াল রাখা যায় না সেখানে। টিভি দেখতে দেখতে ফোনটা হাতে নিয়ে আশফিক বাবাকে কল করল। একটু সময় লাগল ধরতে৷ রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে মায়ের কণ্ঠ ভেসে এলো৷ বাবা বোধ হয় ওর ফোন পেয়ে মা’কে ডাকতে ডাকতেই কল তুলতে দেরি করেছিলেন৷
-‘আশফিক! তুই বাড়ি আসবি কবে? আসছিস না কেন তুই?’
-‘আম্মু আমি তোমার বউমার সঙ্গে একটু ঢাকার বাইরে আছি। আব্বু তো বোধ হয় বলেছে তোমাকে ওর পেশার ব্যাপারে৷’
-‘হ্যাঁ বলেছে। সেসব কথা পরে৷ তুই বাসায় আয়৷ আমি তোকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই, বাপ! তোর কিছু তো হয়েছেই। তুই আমার থেকে গোপন রাখছিস, তাই না?’
-‘হ্যাঁ, গোপন রেখেছি গত চারবছর ধরে। আমার বিয়ে হয়েছে মাহির সঙ্গে। আমরা নিজেরাই মাগুরা যাবার পথে এক মসজিগে গিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিলাম৷ সেটা গোপন রেখেছি সবার থেকে। বিয়ের কাগজপত্র আমার ঘরেই আছে৷’
এমন সংবাদ শুনে ফোনের ওপাশে আসমান আরা স্তব্ধ হয়ে রইলেন কয়েক পল, কী যেন ভাবলেন। তারপরই বললেন, ‘আচ্ছা ভালো করেছিস। মাহিকে নিয়েই বাসায় আয়৷ এসব নিয়ে তোর শ্বশুরের সাথে বসে কথাবার্তা বলব৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বলব। তুই বাড়ি আয় শুধু।’
-‘হ্যাঁ, বাড়ি তো আসব৷ আর কিছুদিন পর৷ মাহি বাসায় ফিরতে পারবে না এখন৷ ওর সামনে অনেক বড়ো দায়িত্ব। খবর টবর তো দেখো। দেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিদের আক্রমণ হতে পারে বলে সরকার অনেক প্রেশারে রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের।’
-‘ঠিক আছে বুঝলাম। ঢাকা তো ফিরবে ও? তোরা একসাথে চলে আয় আজকেই।’
টিভির চ্যানেল বদলে যাচ্ছিল আশফিক কথার মাঝে। নিউজ চ্যানেলটা সামনে পড়তেই শিরোনাম দেখে চোখ আটকে গেল ওর। বিস্ফোরিত চাউনি মেলে সংবাদ উপস্থাপিকার কথা শুনতে থাকল। গতকাল রাত থেকে বিমানবাহিনীর এয়ার মার্শাল, এয়ার কমোডোর, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট, গ্রুপ ক্যাপ্টেন নিখোঁজ। তারা প্রত্যেকেই ছুটিতে ছিলেন। এবং বাংলাদেশের বিশিষ্টি দুই অস্ত্র ব্যবসায়ী, তারা গতকাল সন্ধ্যাতে ঢাকা সোনারগাঁও হোটেলে ব্যবসায়িক আলোচনাতে ছিলেন। তারাও নিখোঁজ সেই রাত থেকেই৷ আর সব থেকে চমকপ্রদ খবর হলো আজ সকাল সাতটাই দুবাই থেকে আগতপ্রায় যাত্রীবাহী প্লেনটা বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু প্লেনের পাইলটদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, প্লেনটাকে কোনোভাবে ট্রেস করা যাচ্ছে না। স্বজনদের ভীড় জমে গেছে বিমানবন্দরে।
মা’কে আশফিক কোনোরকমে জানিয়ে দিলো, ‘হ্যাঁ, ঢাকায় ফিরবে৷ কিন্তু বাসায় না৷ দেশের বাইরে যেতে হবে ওকে অপারেশনের জন্য। আমি গাজীপুর আছি৷ একটু ঘুরেফিরে আসি এখানটা। তুমি চিন্তা কোরো না৷ মাহি রান্নাবান্না করছে। ও এলে একটু পর ভিডিয়ো কল দেবো তোমাদের। রাখছি এখন৷ তুমি একদম নিশ্চিন্তে থাকো। আমি আলহামদুলিল্লাহ ঠিক আছি।’
রিমোটটা হাতে নিয়ে আশফিক স্তম্ভিত হয়ে রইল। খুবই ভয়াবহ অবস্থা দেশের৷ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নিখোঁজ হওয়াটাই সব থেকে বেশি বিপজ্জনক। যদি এই কাজ কোনো মাফিয়া সংগঠন করে থাকে তবে ওদের চক্রটা খুব বিশাল এবং মারাত্মক৷ আর অবশ্যই ক্ষমতাসীন লোকেদের সহায়তাও আছে এর পিছে৷ কিন্তু প্লেন নিখোঁজ, বিমানবাহিনীর প্রধান, অফিসার, তারাও নিখোঁজ। এ থেকে কী ধারণা করা যায়? জঙ্গিদের হাত আছে? না কি মাফিয়া? না কি দুটো সংগঠনই এক সঙ্গে?
-‘তুমি এখানে থাকতে চাও আশফি? না কি ঢাকা যাবে?’
ভাবনাচিন্তার মাঝে মাহি কখন যেন পাশে এসে বসেছে টের পায়নি আশফিক। ওর দিকে তাকাতেই মাহি বলল, ‘বাসায় গিয়েই থাকো। আন্টিকে সামলে নিয়ো। এখানে একা থাকতে কষ্ট হবে তোমার।’
-‘আজকের এই সংবাদ তুমি জানতে?’
মাহির দৃষ্টি আবদ্ধ টিভিতেই, ‘গতকাল রাতেই আমার কাছে খবর এসেছিল। কিন্তু আমি ফোন অফ করে রেখেছিলাম। রুমাকে কল করেছিল কাকু। কিন্তু ও আমাদের বিরক্ত করতে চায়নি রাতে৷ তাই আজ সকালে কাকুর কল করার কথা বলল৷ আমি ঝটপট ফোন ওপেন করতেই মেসেজ, কল পেয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে আমাকে ঢাকায় ফিরতে বলা হয়েছে।’
-‘তুমি রেডি হও৷ আমরা এখনই বের হবো। আমি সত্যিই এখানে থাকতে পারব না।’
মাহি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল।
.
.
রাস্তার দু’ধার ঘেঁষে সেগুন গাছ আর সেগুন গাছ। ছায়াবীথি একটা পথ৷ আশফিক এমন পথেই মাহির পাশাপাশি হাঁটতে চেয়েছিল নীরবে। চাওয়াটা শুধু মনের মাঝেই থেকে গেল। মাহি ফোনে ব্যস্ত। বাইরের পরিবেশটা দেখতে দেখতে আশফিক মাঝেমধ্যে ওকে দেখছে। গাড়িটা বেশ দ্রুতই চলছে ওদের। আর আশফিকের মনে হচ্ছে ওদের এক সঙ্গে চলার সময়টাও ধীরে ধীরে কমছে। মাহি ওকে খোলাখুলি বলুক বা না বলুক, ও জানে আবারও ওদের পথ ভিন্ন হতে চলেছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য।
কথা শেষে মাহি আশফিকের দিকে ঘুরল, সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুঁজে আছে আশফিক। বিমর্ষ মুখখানি ওর। দুশ্চিন্তায় কপালে দু’তিন ভাঁজ পড়ে আছে। মাহি প্রকাশ করতে পারছে না একটা দিনের ব্যবধানে নিজের কঠোর মনের কতটা পরিবর্তন ঘটে গেছে তার। আশফিকের সঙ্গে সাধারণ জীবনযাপন, সংসারের লোভে পড়ে গেছে, সেটও বলতে পারছে না।
-‘তুমি কী করবে আশফি? চলে যাবে? বলেছিলে তো বেশিদিন থাকতে পারবে না!’
চোখ বোঁজা রেখেই আশফিক ধীরকণ্ঠে জানাল, ‘তুমি ফিরবে তারপর ভাবব ওসব নিয়ে।’
অল্প হাসল মাহি, ‘আমাদের জীবনে কত সমস্যাই তো আসে৷ তাই বলে কি আমরা কর্ম না করে বসে থাকতে পারি?’
-‘আমার জীবনের সমস্যাটা মারাত্মক পর্যায়ের৷ সেটার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে আমার।’
মাহি কাছে এসে বসল আশফিকের, ওর কোলের ওপর রাখা হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মাহি স্বীকারোক্তি দিলো, ‘দ্বিতীয়বার আমি তোমার প্রেমে পড়েছি আশফি!’
আশফিক মুচকি হাসল। চোখদুটো খুলে জানালার বাইরে তাকাল। মাহির দিকে ফিরল না, ‘তাহলে সাকসেস আমি!’
-‘হুঁ, তাই আমি ঠিক করেছি কাজ শেষে ফিরে আমরা হানিমুন করব আমাজন।’
কথাটা কানে পৌঁছতেই আশফিক চকিতে ওর দিকে ফিরল, ‘হানিমুন আর আমাজন শব্দটাই তো উচ্চারণ করলে, না? মানে হানিমুন আর আমাজন শব্দ পাশাপাশি কখনও হতে পারে?’
-‘নিঝুম দ্বীপ আমার জন্য সব থেকে বাজে অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি হলেও ম্যানগ্রোভে কাটানো ওই একটা ঘণ্টায় আমি তোমার পাশে বসে কী ফিল করেছি তা তুমি জানো না। অ্যাডভেঞ্চার আমারও পছন্দ, ভীষণ পছন্দ। জঙ্গলে অ্যাডভেঞ্চার এর আগে হয়েছে ক্রিমিনাল ধরতে। কিন্তু বরের সঙ্গে রোমান্স করতেও যে জঙ্গল দারুণ একটা রোমাঞ্চকর জায়গা তা সেদিন তুমি সাথে না থাকলে বুঝতেই পারতাম না৷ আমাজন তোমার লক্ষ্যে পৌঁছনোর চূড়ান্ত সোপান হলেও এটা আমার জন্য শুধুই হানিমুন প্লেস হবে। একদিকে ভয়ও থাকবে অন্যদিকে তোমার আমার তাবুঁতে প্রেম চলবে। ভেবে দেখো, কী দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে না আমাদের?’
আশফিক বুঝতে পারে মাহির ইচ্ছাকৃত বোকা বোকা কথাগুলো বলছে শুধুই ওকে হালকা রাখতে। তবুও হাসে ও। কারণ, এই মাহিই ছিল চার বছর আগের। ওর বাধ্য প্রেমিকার মতো৷ যে সব সময় লক্ষ রাখত ও কীসে খুশি থাকবে আর কী করলে ভালোবাসা আরও বেশি পাবে। ওকে বুকের কাছে এনে বলল, ‘আমি তোমাকে নিয়ে কখনওই আমাজন যাব না, মাহি। আমার দ্বারা তোমার যাতে আর এক চুলও আঘাত না লাগে, আমার উদ্দেশ্য আর লক্ষ্য থাকবে সেটাই। আমি শুধু প্রার্থনা করব আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে, যেন আমাদের এক সঙ্গে আজীবন বেঁচে থাকার সুযোগ দেন।’
মাহি আশফিকের বুকের বাঁ পাশটাই মাথা ঠেকিয়ে ওর হৃৎস্পন্দনের ধ্বনি শুনতে শুনতে একই প্রার্থনা মনে মনে সেও রাখল।
সময় নিজের গণ্ডি ওদের জন্য সত্যিই ছোটো করে দিয়েছে। মিষ্টি আদর আর কথার ফাঁকে ঢাকা ওদের মূল গন্তব্যে কখন পৌঁছে গেছে খেয়ালই করেনি ওরা। আশফিককে নিয়ে মাহি বাসার নিচে দাঁড়াতেই ওকে জিজ্ঞেস করল আশফিক, ‘এটাই কি আপাতত আমাদের শেষ সাক্ষাৎ?’
মাহি ম্লান হেসে বলল, ‘অপারেশনে যাওয়ার পূর্বে শুধু তোমার সঙ্গেই দেখা করে যাব৷ তোমাকে সঠিক সময় আমার কাছে নিয়ে আসা হবে। কথা দিচ্ছি।’
ড্রাইভারকে আশফিক গাড়ি থেকে নেমে আসতে বলল হঠাৎ৷ মাহিকে নিয়ে ক্ষণিকের জন্য আবার গাড়িতে ঢুকে স্থান, কাল, সব কিছুকে তুচ্ছজ্ঞান করে মাহির দু’গাল, কপাল, চিবুক অবশেষে ঠোঁটে অবাধ উষ্ণ চুমু খেলো দীর্ঘক্ষণ।
__________________________________________
প্রধান কার্যালয়ে মাহিকে একজন ফাইটার পাইলট হিসেবে প্রবেশ করতে হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও এনএসআই এর অধীনে দায়িত্ব গেছে সকল নিখোঁজ প্লেনের যাত্রী, বিমানবাহিনীর অফিসার, দুই অস্ত্র ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করে আনার। তবে সরকার আলাদা আলাদাভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের দায়িত্ব দিয়েছেন। মাহি সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ বিমান ওড়াবে।
দুইটা দিন অতিক্রম হয়ে গেছে। এনএসআই সংস্থার সহায়তায় সঠিক তথ্য পাওয়া গেছে নিখোঁজ বিমানটা মেঘালয়ের ছোট্ট গ্রাম কংথং এ আছে। যেখানের মানুষ ভাষা এবং নামের বদলে বিভিন্ন রকমের শব্দের মাধ্যমে একে ওপরকে সম্বোধন করে। এই ছোট্ট গ্রামের মানুষদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে, তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে পুরো গ্রামটা দখলে নিয়ে নিয়েছে জঙ্গিরা। একে একে সেখানে গোলাবারুদ এমনকি ক্ষেপণাস্ত্রও সংগ্রহে রেখেছে এই উগ্রপন্থী যোদ্ধারা। আরও চাঞ্চল্যকর খবরটি হচ্ছে চারজন বিমানবাহিনীর অফিসারের মাঝে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ও গ্রুপ ক্যাপ্টেনের লাশ মিলেছে সিলেট বিছানাকান্দিতে। নিখোঁজ অস্ত্র ব্যবসায়ী দু’জন গুম। তবে তারা এখনও ঢাকার মধ্যেই। এমন রহস্যের সূত্র মিলে গেছে। তাদের খুব কাছাকাছিও পৌঁছে গেছে পুলিশ কর্মকর্তারা৷ এরকম ভয়াবহ পরিণতি আজ অবধি বাংলাদেশে ঘটেনি। জনগণের কাছে খবর পৌঁছে গেছে দেশ ও দেশের চারপাশে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছে। সিরিয়ার মতোই না এ দেশটাও ইসলামিক স্টেটদের হাতে নির্যাতিত হয়, জনগণের সেই ভয়ে জড়সড়ভাব। তাদেরকে সামাল দিতেও সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে বিরোধী দল জনগণদের আরও বেশি উষ্কে দিচ্ছে। দু’টো দিনেই দেশে অরাজকতা সীমার বাইরে।
বিমানবাহিনীর দু’জন ক্যাপ্টেনের লাশ পাবার পর থেকে খুব খেপে গেছে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷ এই জঙ্গিদের মাঝে নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা তারা বাংলাদেশেরই নাগরিক। আর তাদের পিছ থেকে সম্পূর্ণ ইন্ধন ও ব্যাকআপ দিচ্ছে আইএস। জঙ্গিরা যেন মুখোমুখি না এসেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে সরকারকে। ওদেরকে দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ, দেশের জঙ্গিদের আটক করে হত্যা করা এবং জঙ্গিবাদ ধ্বংসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণেই চরম ক্ষিপ্ত ওরা। ওদের জঙ্গি সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা, যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে নিজেদের কব্জায় আনাই প্রধান উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। বিমানবাহিনীর অফিসারদের দু’জন খু/ন করে এবং অন্য দু’জনকে অস্ত্রের মুখে রেখে সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে ওরা ছোট্ট বার্তা পাঠিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পঞ্চাশজন ইনটেলিজেন্স অফিসারকে ওদের হাতে তুলে দিতে হবে৷ এর বিনিময়ে বাকি দুই বিমানবাহিনীর অফিসার, আটক রাখা বিমান ও যাত্রীদের মুক্তি দেবে৷ নয়তো প্রত্যেকের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ভিডিয়ো ওদের কাছে তিনদিনের মাঝে পৌঁছে যাবে। দুই অস্ত্র ব্যবসায়ীদের আটক রেখে প্রচুর অস্ত্র নিজেদের হাওলাতে আনার চেষ্টা করছে ওরা। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ, সেনাবাহিনী, তারা কঠোর নিরাপত্তা রেখেছে বর্ডারে, স্থলবন্দরে ও বিমানবন্দরে৷
মাত্র তিনটা দিন সময় হাতে৷ সেনাবাহিনী প্রধান কর্মকর্তা ও সকল অফিসার আলোচনা শেষে প্রস্তুতি নেয় যুদ্ধে নামার। দুটো ভাগে বিভক্ত করা হয় তাদের। এক দলে ক্যাপ্টেন তাফরিদ নেওয়াজ রাজ্য থাকবে অধিনায়ক।
দু’দিনের মাঝে সকল প্রস্তুতি শেষে মেঘালয়ের কংথং গ্রামে তল্লাশিতে নেমে পড়েছে। একদিকে সেনাবাহিনী অন্যদিকে এনএসআই সংস্থার ইনটেলিজেন্ট এজেন্টরা। মাহি ও অন্যান্য যোদ্ধা পাইলট প্রস্তুত আছে শুধু আদেশের। ঘাঁটির সন্ধান মিলে গেলেই আকাশ পথ থেকে বোমা নিক্ষেপ করবে তারা।
যুদ্ধ বিমানে চড়ার আগে আশফিক শেষবারের মতো কেবল দূর থেকে মাহিকে যোদ্ধা বেশে দেখতে পেয়েছিল। এক দিকে যেমন গর্বে বুকটা ভরে উঠছিল ওর, তেমনই অন্যদিকে মাহিকে হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয় ক্রমশ হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছিল। চাইলেও ওরা পারেনি একটাবার একে অপরের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে।
রাত সাড়ে তিনটা নাগাদ ক্যাপ্টেন রাজ্য তার সৈনিক নিয়ে একটা ঘাঁটির সন্ধান পায়। কিন্তু ওরা প্রস্তুতি নেবার আগেই ওদের দিকে গুলি ছুটে আসতে থাকে সামনে থেকে। দু’তরফা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এর মাঝে রাজ্য মাহিকে ওয়্যারলেস যোগাযোগ মাধ্যমে প্রস্তুত হতে বলে দিয়েছিল। কিন্তু বোমা নিক্ষেপ করলেই তারা যতজন সৈনিক আছে তারাও নিহত হবে৷ তাই বাধ্য হয়ে রণে ভঙ্গ দিলো ওরা। খুব সাবধানে বিপজ্জনক জায়গা থেকে সরে এসে মাহিসহ অন্য দু’জন পাইলটকে অনুমতি দিলো আবার৷ ঠিক ছ’মিনিটের মাথায় পুরো ঘাঁটি চোখের পলকে বিস্ফোরণে ছারখার হয়ে গেল।
তবে আগাম সতর্কসংকেত পেয়েছিল এই ঘাঁটির লিডার কায়সার কামাল। তাই দ্রুতই সেখান থেকে সটকে পড়েছিল বাকিদের লড়তে বলে। খুব বেশি দূর ও আর যেতে পারেনি৷ রাজ্যদের হাতেই সমর্পণ করতে হয় ওকে৷ ওর কাছে নিখোঁজ বিমান আর সেখানের যাত্রীদের সন্ধান শুনলে জঙ্গি লিডার জান দেবে তবু সন্ধান দেবে না জানায়। রণমূর্তি রূপে রাজ্য এক নিমেষে ওর কপালের মাঝ বরাবর গুলি করে বসে৷
এই যুদ্ধের মোড় পালটে যায় আধ ঘণ্টার মাঝেই৷ সারা আকাশ কাঁপিয়ে দু’জন ফাইটার পাইলটের বিমানে হানা দেয় জঙ্গি সংগঠনের ক্ষেপণাস্ত্র। কিছু সময়ের ব্যবধানে দু দু’টো যুদ্ধ বিমান ধ্বংস হয়ে গেল। মোট বারোটি যুদ্ধ বিমান যুদ্ধে নামবে। সর্ব প্রথম তিনটি বিমান যুদ্ধে নেমেছে৷ মাহিসহ ও আরও দু’জন দক্ষ যোদ্ধা।
রাজ্য লাগাতার তিনজন ফাইটার পাইলটের সঙ্গেই সংযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তন্ময় শেখ ছাড়া মাহি এবং অন্য একজন পাইলটকে সংযোগ করতে পারল না।
আপনাদের কথা মতোই পর্ব বাড়ালাম আরও একটা। ক্যাপ্টেন রাজ্যকে চিনেছেন তো? এটা স্বপ্নচোরা প্রেমীদের জন্য প্রথম চমক। আরও দু’টি চমক অপেক্ষা করছে। মাহি এই উপন্যাসে সর্ব প্রথম একজন যোদ্ধা। তারপর সে কারও বউ। তাই ওর পরিণতি নিয়ে হতাশ হবার আগে ভাববেন ও বহু আগেই নিজেকে উৎসর্গ করেছে দেশের তরে।
ইসরাত জাহান দ্যুতি