#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -২০
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
মাঝ রাতে মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুম হালকা হয়ে এল আমার। মিটমিট করে খুব কষ্টে চোখ দুটো খুলে উঠে বসলাম আমি। মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে চারদিকে চোখ বুলাতেই কিছুই দেখতে না পেয়ে শুয়ে পড়লাম। এটা হয়তো আমার ভ্রম ছিল। কই এ বাড়িতে এসেছি তিনদিন কেটেছে একবার ও তো এমন লাগে নি। হতেও পারে জায়গা বদল করেছি বলে এটা আমার মনের ভীতি। এমনিতেই ঘুম আসে না একদমই। মনের মধ্যে কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়ছে আমার। মনের সাথে পেরে উঠতে পারছি না। তূর্যর প্রতি আসক্তি ভালোই গ্রাস করেছে আমায়। যতই তূর্যর কাছে যেতে চাইছি ততই যেন কঠিন অতীত দেয়াল হয়ে দাড়াচ্ছে আমাদের মাঝে।
সকাল ৭ টায় ঘুম ভাঙল আমার। ফজরের নামাজ পড়ে শুতেই চোখ লেগে গেল। ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসতেই দেখা মিলল তোহাশ ভাইয়ার। মুচকি হেসে বলে উঠলাম,,,
—গুড মর্নিং ভাইয়া।
—গুড মর্নিং শ্রেয়া।
—আপু কোথায়?
–তোমার আপু হয়তো কিচেনে।
–আচ্ছা।
কিচেনে গিয়ে আরিয়ানা আপুর পাশে দাঁড়াতেই মুচকি হাসলেন আপু। আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,,
— শ্রেয়া তিতিশা কে উঠিয়ে রেডি করে দাও। ওর স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে।
–জ্বি আপু।
আমি পা বাড়াতেই আপু আবারও ডেকে উঠল। ফিরতেই নির্বিকার কন্ঠে বলল,,,
–তিতিশা ওর চাচ্চুর সাথে ঘুমিয়েছে। উপরের ডান পাশের রুমটা ওর চাচ্চুর। দেয়ালে দেখবে বড় অক্ষরে লিখা–“অনুমতি ব্যাতীত প্রবেশ নিষেধ ”
আপুর কথায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। একটা ছেলের রুমে যেতে হবে! আবার পেট ফেটে হাসি ও আসছে আপুর মুখে উচ্চারিত শেষ বাক্যটা শুনে। কোনোভাবেই হাসি আঁটকে রাখতে পারলাম না। হেসে দিলাম ফিক করে। আমার সাথে তাল মিলিয়ে হেসে দিল আপু ও।হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,,,
–আমার দেবর টা অত্যন্ত রাগী একজন মানুষ। এ বাড়ির মেম্বার ছাড়া কেউই ওর রুমে প্রবেশ করতে পারে না। ভয়ে ও কেউ রুমে প্রবেশ করবে না। মনে হবে কোনো ভুতের আস্তানা।
—তাহলে আমারও তো প্রবেশ নিষিদ্ধ আপু।
—- ওর ঘুম নয়টার আগে ভাঙে না। তাই কোনো ভয় নেই। চুপ করে ঢুকে তিতিশা কে কোলে তুলে নিয়ে আসবে। দেখবে দেবর সাহেব একদমই টের পাবে না।
আপুর কথায় সম্মতি জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম আমি। কোথায় থেকে চলে এল এই দেবর টেবর? কই এতোদিন তো দেখি নি! তিতিশা কে ঐখানেই ঘুমোতে হলো? এমনিতেই মনে দহন হচ্ছে প্রতিনিয়ত তার উপর আরেক উটকো ঝামেলা। দুরুদুরু বুক নিয়ে রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম আমি। আপুর কথা একদম সত্য। বড় করে লিখা দেয়ালে খোদাই করে। এমন করে লিখার কি আছে? রুম কি কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে? এখন আর হাসি পেল না আমার। বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল অনেক। দরজাটা হালকা করে চাপিয়ে রাখা। ধীরে ধীরে খুব সাবধানে রুমে প্রবেশ করলাম আমি। পুরো রুমটা অন্ধকার। সত্যিই আমার কাছে ও ভুতের আস্তানা মনে হচ্ছে। যে এই রুমে থাকে সেই ব্যাক্তি ও নিশ্চয়ই ভুতের চেয়ে কম হবে না। কম্পিত হৃদয় আর ভয় দু’টো নিয়ে বিছানার কাছে আসতেই নজরে পড়ল কালো টি শার্ট,, শর্ট প্যান্ট পরিধান করে উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে কেউ। সেদিকে খেয়াল না করে বিছানায় ভালো করে তাকাতেই দেখলাম তিতিশার কোনো চিহ্নই নাই। তিতিশা কি উঠে চলে গেল? এই মেয়ের আবার ভালো একটা গুণ আছে তা হলো অতিরিক্ত ডাকা ডাকি করে উঠাইতে হয় না। মাঝে মাঝে নিজেই জেগে যায় নিজেই ফ্রেশ হয়ে লক্ষী মেয়ের মতো বসে থাকে। যাক বেঁচে গেলাম!
।
।
হঠাৎ বাহির থেকে ভেদ করে আসা সূর্যের আলোয় দেয়ালে একটা ছবি দেখতেই ভ্রু কুঁচকে এল আমার। ভালো করে দেখতে না পেরে আরেকটু কাছে গিয়ে দেখার জন্য উদ্ধত হতেই ফ্লোরে গোল কিছুর সাথে পা পেঁচিয়ে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে থাকা মানুষটার পিঠের ওপর গিয়ে পড়লাম আমি। আমার ঠোঁট দুটো গিয়ে লাগল ছেলেটার পিঠে। প্রচন্ড ব্যাথা পেলাম পেটে। কিন্তু ব্যাথার চেয়ে ও বেশি ভয় ও লজ্জা আমায় আঁকড়ে ধরেছে ভীষণভাবে। উঠার চেষ্টা করেও ব্যার্থ আমি। আচমকা কেউ টেনে উল্টো ঘুরিয়ে শুয়ে আমার উপর নিজের ভর ছেড়ে দিল অনাসয়ে। কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল আমার সাথে সাথেই। চোখ বন্ধ রেখেই জোরে চিল্লান দিতে গেলে লোকটা আমার মুখ চেপে ধরল শক্ত করে। রাগান্বিত স্বরে বলে উঠল,,,
— এতোদিন আমায় কষ্ট দিয়ে শান্তি হয় নি তোর এখন আবার লোক জড়ো করে সিনেমা দেখাতে চাচ্ছিস?
চেনা কন্ঠস্বর কানে আসতেই পিলে চমকে উঠল আমার। ভয়ার্ত মন নিয়ে পিট পিট করে চোখ মেলতেই মাথায় ব্রজপাত পড়ল। শ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম। তূর্য আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে। এতো শক্ত করে মুখ চেপে ধরেছে যে ব্যাথায় টনটন করছে গাল দুটো। যার জন্য পালিয়ে বেড়ানো সেই ব্যাক্তির বাসায়ই এসে পড়লাম আমি। বাসায় এসেছি তো এসেছি শেষ পর্যন্ত ওনার বেডরুমে ওনার বাহুডোরে!!! জমে গেলাম আমি। এক নিমিষেই ক্লিয়ার হয়ে গেল সবকিছু। তার মানে তিতিশার চাচ্চু তূর্য চৌধুরী। আর সেদিন তিতিশার আমায় শুভ্রপরী বলে ডাকা টা মিথ্যে ছিল না। তূর্য তো এখন কোনোভাবেই ছাড় দিবেন না আমাকে। অজানা ভয়ে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল আমার। মাথা দু পাশে নাড়াতেই মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলেন তূর্য। আমি কিছু বলার আগেই গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন। আকস্মিক হামলায় অবরুদ্ধ হয়ে গেলাম আমি। গলায় তূর্যর উষ্ম ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে বিছানার চাদর টা খামচে ধরলাম শক্ত করে। চিতকার করে তূর্য কে কিছু বলতে চাইছি কিন্তু আশ্চর্য মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না আমার। কিছু সেকেন্ড অতিবাহিত হওয়ার পর গলায় কামড় অনুভব করতেই ব্যাথাতুর শব্দ করে উঠলাম। প্রচন্ড লেগেছে। মনে হলো যেন কোনো হিংস্র পশু আমার মাংস কামড় দিয়ে খেয়ে ফেলেছে । গলায় কামড় বসিয়ে চোখের পলকেই সরে গেলেন তূর্য। কামড়ের স্থানে হাত চেপে ধরে বসে পড়লাম। বিছানা থেকে উঠতে উঠতে তূর্য গম্ভীর কন্ঠে বলতে লাগলেন,,,
–এখুনি রুম থেকে বেরিয়ে যাবি। নয়তো এর চেয়ে খারাপ কিছু করে বসব আমি। তিনদিন অসহ্য যন্ত্রণা দিয়েছিস আমায়। ভেবেছিস আমার থেকে দূরে চলে যাবি! কিন্তু তুই হয়তো জানিস না তূর্য চৌধুরী কোনো কাঁচা খেলোয়াড় না। কিভাবে নিজের প্রিয় কিছু নিজের করে রাখতে হয় তা তূর্য চৌধুরী খুব ভালো করে জানে।
তূর্যর কথাগুলো শুনে এক মিনিট ও সেখানে দাঁড়ালাম না। বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হেঁচকা টানে তূর্যর বুকে মুখ থুবড়ে পড়লাম আমি। দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে দাঁড় করালেন আমাকে। আমতা আমতা করে বললাম,,,
–কককি করছেন?
— কিছু না। জাস্ট আমাকে দেওয়া কষ্টের শাস্তি দেওয়া এখনো বাকি। একটু একটু করে পুষিয়ে নিব। এখন বরং আরেকটু পানিশমেন্ট দেয়া যাক,,,
কথাটা বলেই আমার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলেন তূর্য। বড় বড় নয়নে তাকিয়ে ওনার বুকে খামচে ধরলাম আমি। আগের চেয়েও ডিপলি স্পর্শ দিতে লাগলেন আমার ওষ্ঠদ্বয়ে। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে চোখ কটমট করে তাকালেন তূর্য। গায়ের টি শার্ট টা খুলে বুকের কাছের খামচে ধরা অংশ টা দেখিয়ে বললেন,,,
–কি করেছিস এটা? নখ বিঁধে গেছে। তোর নখ যদি আর বড় দেখেছি তাহলে আঙুল কেটে ফেলে দিব আমি।
ঢুক গিললাম আমি। নখ তো বেশি বড় না। বলতে গেলে দেখা যাবে তর্ক করি বলে আবারও শাস্তি দিবে। তার চেয়ে ভালো হবে কেটে পড়ি।
–শুন যাওয়ার আগে রুম টা একদম পরিষ্কার করে দিয়ে যাবি।
কথাটা বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলেন তূর্য। আমিও চট করে পুরো রুম গুছিয়ে নিলাম। নিচে একটা ফুটবল পড়ে ছিল। সব এই শয়তান ফুটবলের দোষ। এটা কে বারান্দা দিয়ে নিচে ফেলে দিলাম আমি। এলোমেলো পায়ে সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে চলে এলাম রুমে। দৌড়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে গেল আমার। ধপ করে বসে পড়লাম চেয়ারে। একি হাল করেছেন ওনি? রক্ত জমাট বেঁধে গেছে গলার কাছের অংশে। ছলছল চোখ নিয়ে আয়নার দিকেই তাকিয়ে রইলাম আমি। এখান থেকে চলে যাওয়ার কোনো উপায় ও আমার নাই। কাগজে স্বাক্ষর করে দু’ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি আমি। দরজায় কারো নক করা শব্দে গলায় ওড়না টা পেচিয়ে নিলাম। দরজা মেলতেই একজন সার্ভেন্ট আমার দিকে অয়েন্টমেন্ট এগিয়ে দিয়ে বলল,,,
—ম্যাম!!স্যার পাঠিয়েছেন এটা আপনার জন্য।
নিজে ক্ষত করে আবার নিজেই ক্ষত শুকানোর ধান্দা! আহারে বেয়াদব তূর্য চৌধুরীর অন্যরকম ভালোবাসা। কিছু না বলে মেয়েটার হাত থেকে অয়েন্টমেন্ট টা নিয়ে নিলাম আমি। আয়নার সামনে দাড়িয়ে গলায় লাগাতেই ছ্যাঁত করে জ্বলে উঠল ক্ষত অংশটা। চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল। এতো পাষাণ কেন ওনি! ওড়নাটা ভালোভাবে পেচিয়ে নিয়ে ড্রইং রুমে আসলাম। তিতিশা নাস্তার সময় আমায় না দেখলে হুলস্থুল বাঁধিয়ে দিবে। ড্রইং রুমে কোথাও তূর্য কে না দেখে স্বস্তির এক নিশ্বাস ফেলে তিতিশার পাশে গিয়ে বসলাম আমি। তোহাশ ভাইয়া,,আরিয়ানা আপু ও এসে বসল। তিতিশা কে নাস্তা প্লেটে দিয়ে আমি নিজের জন্য নিতেই কোথা থেকে তূর্য এসে আমার প্লেট টা কেড়ে নিয়ে বসে পড়লেন চেয়ারে। অবাক ভঙ্গিতে চেয়ে রইলাম আমি। ওনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
— তোমার কি এতোটুকুও জ্ঞান নেই যে নিজের বর কে ডাকতে হবে নাস্তার জন্য? তা না করে নিজে নাস্তা খেতে বসে গেছে। ভাবী তুমি কি ওকে এ কদিনে কিছুই শিখাও নাই? প্লেন টা কিন্তু আমার ছিল ওকে এ বাসায় আনার। তার আগেই তোমরা কাজ সেড়ে ফেললে কিন্তু তা বলে তো এই নয় যে দেবর কে না খাইয়ে মেরে জা কে পেট ভরে খাওয়াবে।
ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত থাকা সবার দিকে তাকাতেই দেখলাম তোহাশ ভাইয়া,,,আরিয়ানা আপু মিটমিট করে হাসছে আর খাবার খাচ্ছে। লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার মতো অবস্থা আমার। সবাই সবকিছু জেনে প্ল্যান করে এ বাড়িতে আনল আমাকে। চেয়ার থেকে উঠে চলে যেতে নিলে আমার হাত টা টেনে ধরে আবারও নিজের পাশের চেয়ার টা তে বসিয়ে দিলেন তূর্য। পা দিয়ে চেয়ার টা টেনে একদম নিজের মুখোমুখি এনে বসালো আমাকে । মুচকি হেসে খাবার নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরতেই তিতিশা হাত তালি দিয়ে বলে উঠল,,,
–ওয়াও চাচ্চু। তুমি একদম হিরো। মিস হা করো। চাচ্চুর হাত ব্যাথা করবে তো।
এতটুকু বাচ্চার মুখে এমন কথা শুনে বিষম খেলাম আমি। তিতিশা ও সব জেনে কেমন বোকা বানালো আমাকে!!! ভাইয়া আপুর সামনে কিভাবে খায় ওনার হাতে সেটা ভেবে উঠতে যাবো ওনি চোখ রাঙিয়ে তাকালেন আমার দিকে। উঠতে গিয়েও আর ওঠা হলো না আমার। মুচকি হেসে ভাইয়া ভাবী বলে ডেকে উঠলেন তূর্য । তোহাশ ভাইয়া সাড়া দিতেই তূর্য বলে উঠলেন,,,
–তোমাদের সামনে আমার হবু বউ কে খাইয়ে দিলে তোমাদের কোনো প্রবলেম নেই তো?
–একদমই না। তবে আমার বোনকে বেশি উতক্ত করবি না।– হেসে বললেন তোহাশ ভাইয়া।
তূর্য খাবার মুখের সামনে ধরতেই মাথা নিচু করে খেয়ে নিলাম আমি। এ কেমন জালে ফেঁসে গেলাম! হৃদয়ে জমায়িত ভালোবাসা গুলো ও কেমন আমার মস্তিষ্কের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। মনের সাথে আর পেরে উঠছে না মস্তিষ্ক। মাথা নত রেখেই পুরো খাবার শেষ করলাম। চুপ করে তিতিশা কে রেডি করিয়ে দিয়ে বাহিরে এনে গাড়িতে তুলে দিলাম। আরিয়ানা আপু বা অন্য কারো সাথে কোনো কথাই বললাম না। রেডি হয়ে ভার্সিটির জন্য বের হতেই বাইক নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন তূর্য। কি আর করার,,,বাধ্য মেয়ের মতো উঠে পড়লাম বাইকে। ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকতেই দেখলাম ফিহা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। তূর্য আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে উঠলেন,,,
–আজ তো মাত্র দু’টো ক্লাস। ক্লাস শেষে একা যাবে না তুমি। আমার সাথেই যাবে। ওকে?
সম্মতি জানিয়ে ক্লাসে আসতেই প্রিয়ু ঝেকে ধরল আমাকে। এতোদিন কেন ওর ফোন ধরি নি! কেন ভার্সিটি তে আসি নি! একের পর এক প্রশ্ন। থেমে নেই মেয়েটা। প্রিয়ু কে সব খুলে বলতেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল বেঞ্চে। ভাবলাম হয়তো আমার বিরহের কথা শুনে কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা কিন্তু পরক্ষণেই আমাকে ভুল প্রমাণিত করে উল্লাসের সাথে বলে উঠল,,,,
–বাহ্!!! জিজু তো সেই মাপের প্লেয়ার। কি ডোজ টাই না দিল তোকে? আ’ম ইমপ্রেসড! তা বিয়ে কবে খাচ্ছি বল?
প্রিয়ুর এমন রসাত্মক স্বর শুনে মেজাজ গরম হয়ে এলো আমার। তীক্ষ্ণ নজর নিবন্ধ করে বললাম,,,
–তোর কাছে এটা মজা লাগছে প্রিয়ু? তুই কি চাস ওনি একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করে মানুষের খোঁটা শুনুক? আমি জানি ওনি মরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ও আমাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র আফসোস করবে না কিন্তু এই সমাজ? এই সমাজের মানুষের কটুবাক্য ওনার রাতের ঘুম কেঁড়ে নিবে ঠিক আমার মতোই!
–তুই কেন এমনটা ভাবছিস শ্রেয়া? তূর্য ভাইয়া তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। সব বিপদে তোর ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। কারো সাহস নেই ওনাকে বা তোকে কটুকথা বলার। তূর্য ভাইয়া কে ভয় পায় না খুব কম মানুষই আছে। আর আসল কথা কি জানিস তুই ভীতু। এই তোর প্রতিবাদী রূপ? এই তোর বেঁচে থাকার লড়াই? সিচুয়েশন ফেইস করার বদলে কেন পালিয়ে বেড়াচ্ছিস? তুই ভাবছিস তূর্য ভাইয়ার থেকে পালিয়ে বেড়ালে ওনি সুখী হবে? কিন্তু আমার কি মনে হয় জানিস? তুই হারিয়ে গেলে তূর্য ভাইয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। একটা সুখী জীবন পাওয়ার অধিকার তোরও আছে। প্লিজ তূর্য ভাইয়া কে আর কষ্ট দিস না। নিজেও ধুঁকে ধুঁকে মরিস না। প্রতিবাদ করতে শিখ শ্রেয়া। না চাইতে ও পাওয়া অতিরিক্ত প্রণয় নিজের পায়ে ঠেলে দিস না।
প্রিয়ুর কথাগুলো মস্তিষ্কে বিচরণ করতে লাগল। সত্যিই কি আমি ভুল করছি? বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে লড়াই করে কি এক নতুন জীবন শুরু করা উচিত? হুম আমি ভাববো নিজের জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য।
ক্লাস শেষে পার্কিং এরিয়া তে এসে তূর্যর অপেক্ষায় দাড়িয়ে রইলাম আমি। মনে মনে অংক কষেছি অনেক। সিদ্ধান্ত নিয়েছি পালিয়ে বেড়াব না আর। গত পাঁচ মাসের সব কথা খুলে বলব তূর্য কে। সব বলেই তূর্যর মতামতেই ওনার সাথে এক নতুন জীবনে পদার্পণ করব। ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাসের উত্তাপ এসে আঁচড়ে পড়তেই হৃদয়টা কেঁপে উঠল দ্রুত গতিতে। কানের অতি নিকটে তূর্যর স্লো ভয়েসের আভাস পেতেই চোখ বুঝে এল আবেশে।
–কখন আসলে?
–এইতো আপনি আসার ঠিক ৬০ সেকেন্ড আগেই।
— ৬০ সেকেন্ড অপেক্ষা করানোর জন্য সরি শ্রেয়সী । ক্লাস শেষে স্যারের সাথে জরুরি কাজে অফিসে গিয়েছিলাম।
কি অদ্ভুত!! ওনার মুখের কথাগুলো হৃদস্পন্দন কেমন বাড়িয়ে দেয়। নিজের নামটা কে ও ওনার মুখে বেশ ভালো লাগছে আমার কাছে। মন বলছে এতো সুন্দর নাম কারো হয়!! এতো সুন্দর নাম কারো হয় কিনা জানিনা! তবে তূর্যর মোহনীয় কন্ঠে নামটা খুবই সুন্দর,,,অন্যরকম! দৃঢ় স্বরে বললাম,,,
–ইট’স ওকে।
–চলো তাহলে,,
—হুম।
বাইকে উঠে মাথা এলিয়ে দিলাম তূর্যর পিঠে। হালকা হাসলেন তূর্য। যাকে এক কথায় বলা যায় তৃপ্তিদায়ক হাসি।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)