#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -২৩
#লেখিকা -আসরিফা সুলতানা জেবা
সকালে ঘুম ভাঙল ফোনের ভাইব্রেশনে। ব্যাথায় ও ঘুমের দাপটে চোখ দুটো মেলে তাকানোটা ও নির্মম হয়ে দাড়িয়েছে। ফোন বেজে চলছেই লাগাতার।প্রচুর রাগ হচ্ছে আমার।ইচ্ছে করছে ফোনটা কে ভেঙে চুরমার করে দেই। পাশ থেকে ফোনটা টেনে চোখ বন্ধ রেখেই হ্যালো বলতেই তেতে উঠল প্রিয়ু।
— কটা বাজে জানিস? দশটা বাজে। এতোক্ষণে তোর আমাদের বাড়িতে থাকার কথা। মা ও ভাইয়া বার বার জিজ্ঞেস করছে তুই এখনো কেন আসিস নি! নুসাইবা আপু ও চলে এসেছে সকালেই বেবি নিয়ে আর তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।–ক্রুদ্ধ কন্ঠে কথাগুলো বলল প্রিয়ু।
প্রিয়ুর তেজী স্বর কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই এক লাফে উঠে বসলাম আমি। উড়ন্ত পাখির মতো আমার ঘুমও উড়ে গেল নিমিষেই। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে দশটা বেজে গেছে। প্রিয়ুর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে স্ক্রিনে দৃষ্টি তাক করতেই দেখলাম সত্যি সত্যিই দশটা বাজে। আজকাল কি হল আমার? এতো ঘুম কবে এসে সঙ্গী হল আমার? আজ প্রিয়ুদের বাসায় ছোট খাটো অনুষ্ঠান। আত্মীয় -স্বজন,,বন্ধু -বান্ধবদের মিলন মেলা ও বলা যায়। আন্টি সকাল সকাল উপস্থিত হতে বলেছিল আমায়। কিন্তু আমি তো গাধার মতো ঘুমে ব্যস্ত। মানুষ ঠিকই বলে কান্না করলে ঘুম ভালো হয়। তূর্যর বুকে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলাম। ওনিই হয়তো কোলে করে রুমে শুয়ে দিয়ে গেছেন ভাবতেই এক ঝাঁক অনুভূতি জেঁকে বসল আমার মন পাঁজরে। হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠতে নিয়ে সোফার দিকে দৃষ্টি পড়তেই হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল বহুগুণ। সোফায় বসে আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছেন তূর্য। ঠোঁটের কোণায় মৃদু হাসি বহমান। চুল গুলো ভেজা। হয়তো মাত্রই শাওয়ার নিয়ে আমার রুমে এসেছেন। আমার চোখ দুটোতে দৃশ্যমান অমায়িক স্নিগ্ধতায় ভরপুর তূর্যর সুন্দর মুখ টা। কালো শার্ট টা ওনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছেন শতগুণ। এতো সুদর্শন ও কোনো যুবক হয়! মন পিঞ্জিরাতেই আবদ্ধ হয়ে রইল প্রশ্নটা। ওনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্ন করার অসীম সাহসিকতার অধিকারী যে আমি নয়। সম্মোহন থেকে ফিরে আসতেই অভিশঙ্কায় গাল দুটো লাল হয়ে এল আমার। বিছানা থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে দিলাম তাড়াতাড়ি করে। এহেন কান্ডে তূর্যর হাসির বেগ বেড়ে গেল। সোফা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই উঠে গেলাম আমি। পা বাড়াতেই তূর্য নরম স্বরে বলে উঠলেন,,,
–স্টপ দেয়ার শুভ্রপরী।
থেমে গেলাম ওনার মুখে উচ্চারিত বাক্যটা কর্ণধার হতেই। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার গালে হাত ছোঁয়াতেই শিহরণ জেগে উঠল সারা দেহে। চোখের পলক ফেলতেই ঠোঁটের ছোঁয়া একে দিলেন অবলীলায়। একটু ঝুঁকে কানের পাতায় চুমু আঁকতেই প্রচন্ড জোরে ঝড় শুরু হল আমার ছোট্ট হৃদপিণ্ডে। পিছিয়ে এলাম আমি। ওনার সামনে দাড়িয়ে থাকা আমার পক্ষে কিছুতেই পসিবল না এ মুহুর্তে। তূর্যর আসক্তি আমায় ঘিরে ধরেছে ভয়ানকভাবে। এমন আসক্তিতে আসক্ত হতে চাই আমি বহুবার। চোখে মাদকতা বিরাজমান। নেশাময় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে পা বাড়াতেই দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম আমি। চিল্লিয়ে উঠলেন তূর্য। দুষ্ট স্বরে বলে উঠলেন,,,
–কতক্ষণ থাকবে ওয়াশরুমে? তুমি যতক্ষণ না বের হবে আমি কিন্তু এখান থেকে ও এক পা ও নড়ছি না।
ওনার কথা শুনে মাথা ঘুরে গেল আমার। বলে কি এই ছেলে? পাগল হয়ে গেলেন নাকি! আমাকে আজ সারাদিন ওয়াশরুমে রেখে মেরে ফেলার ধান্দা করেছেন নির্লজ্জ, বেয়াদব তুর্য চৌধুরী! বের হলেই আটকা পড়তে হবে ওনার বাহুডোরে আর না বের হলে আঁটকে থাকতে হবে ওয়াশরুমে।অপরদিকে প্রিয়ুদের বাসায় না গেলে প্রিয়ু একটা চুল ও রাখবে না আমার মাথাতে। এ কোন জ্বালায় পড়লাম রে বাবা! যাই হোক আগে ফ্রেশ হয়ে নেই। মুখ ধুয়ে দরজা টা একটুখানি খুলে মাথা বের করতেই রুমের কোথাও তূর্যর হদিশ পেলাম না। আনন্দে টগবগিয়ে উঠল মনটা। পা চেপে চেপে বের হয়ে কাপড় নিয়ে আবার দৌড় লাগলাম ওয়াশরুমে। গোলাপি ও সাদা রঙে মিশেলে একটা লং কুর্তি পড়ে রেডি হয়ে গেলাম ফটাফট। ড্রয়ার থেকে পার্স বের করতে গিয়ে চোখে পড়ল শুভ্র রঙা একখানা চিরকুট। বিস্মিত হলাম আমি। বিস্মিত নয়নে চিরকুট টা হাতে তুলে নিলাম।
❝ আজ আমাদের হলুদ সন্ধ্যা। তোমার কানে কি কেউ পৌঁছে দিয়েছে এই কথাটা? দেয় নি তো তাই না? আমিই জানিয়ে দিলাম গোধূলি বিকেল,,রক্তিম আকাশ কে স্বাক্ষী রেখে দুজন হাঁটতে চলেছি এক নতুন পথে। আজ বাদেই কাল আমার শুভ্র রাঙা পরী আবদ্ধ হতে চলেছে আমার শূন্য বাহুতে। তৈরি তো তুমি শ্রেয়া? তৈরি না হলেও যে হতে হবে তোমায়। আর কতো অপূর্ণ রাখবে আমায়। পূর্ণতা নিয়ে পদক্ষেপ করো আমার জীবনে,, আমার প্রাণস্পন্দন হয়ে।❞
ধপ করে খাটে বসে পড়লাম আমি। এক ফোঁটা জল ঝড়ে গেল টপ করে। হদস্পন্দন যেন থমকে গেল মুহুর্তেই। বিশ্বাস করতে পারছি না আমি। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না একটা দিন পেরুলেই সারাজীবনের জন্য তূর্যর হয়ে যাব। মন প্রাণ জুড়ে বয়ে যেতে লাগল প্রশান্তির বাতাস। অশ্রুসিক্ত নয়ন কোনোভাবেই বাঁধ মানতে রাজি নয় আজ। কিভাবে বুঝাব? কাকে বুঝাব আমার মনের হাল! খুশিতে মানুষ কেন কাঁদে তা আজ অনুভব করতে পারলাম। নিজের বহু আকাঙ্ক্ষার অজস্র ভালোবাসার জিনিসটা পেয়ে গেলে খুশির বদলে কান্নাটাই সঙ্গী হয়ে উঠে। আমায় এক মুঠো খুশির ঝলক উপহার দিয়ে কোথায় হারালেন তূর্য? চিরকুট টা হাতে নিয়ে দৌড়ে তূর্যর একদম নিকটে এসে দাঁড়ালাম আমি। আমাদের মাঝে একটু ও ফাঁক নেই। নেই কোনো দূরত্ব। দিক বিদিক ভুলে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জরিয়ে ধরলাম তূর্য কে। তূর্য ও আমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরে কিছু টা উপরে উঠিয়ে নিলেন। প্রচন্ড হাঁপাচ্ছি তূর্যর গলা জরিয়ে ধরে। আরেকটু উপরে তুলে নিয়ে আমার কপালে কপাল ঠেকালেন তূর্য। নাকে হালকা ঘষা দিতেই আমি হাঁপানো কন্ঠে বলে উঠলাম,,,
–চচচচিরকুটের লিখা গুলো সত্য তূর্য?
–মিথ্যা মনে হচ্ছে বুঝি?–মুচকি হেসে বললেন ওনি।
–উঁহু,, স্বপ্ন মনে হচ্ছে তূর্য। এমন এক সুখের স্বপ্ন যা কখনও দেখি নি আমি। আমি জাগতে চাই না তূর্য। এই স্বপ্ন টা কে আকড়ে ধরে রাখতে চাই। আমি আপনার হতে চাই।
কথাটা বলেই কেঁদে দিলাম আমি। আমায় নিচে নামিয়ে দাঁড় করালেন তূর্য। পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে বললেন,,,
–মেকআপ গুলো কান্নায় বিসর্জন দিয়ে দিলে শ্রেয়া? ইশশ কি করলে এটা?
ওনার এমন রসাত্মক কথায় অভিমানী দৃষ্টিতে তাকালাম আমি। হাসলেন ওনি। মুগ্ধ স্বরে বলে উঠলেন,,,
–তুমি তো মেক-আপ করো নি তবে মুখ কেন ফুলিয়েছ অভিমানিনী?
–আমি মুখ ফুলায় নি তূর্য।
কথাটা বলেই চারদিকে নজর দিতেই চমকে উঠলাম আমি।মুখ হা হয়ে গেল আমার। ডান হাত টা আপনা আপনি চলে গেল মুখে। পুরো ড্রইং রুম সাদা, লাল গোলাপ দিয়ে একদম সাজানো। তার মানে সত্যি সত্যিই আজ হলুদ সন্ধ্যা। ড্রইং রুমে কেউ নেই। কেউ থাকলে আজ ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেত শিওর। খুশিতে আত্মহারা হয়ে ভুলেই গেছি কোথায় অবস্থান করছি। আমার ওড়নাটা টেনে নিয়ে ঘোমটা দিয়ে দিলেন তূর্য। কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বললেন,,,
–ড্রাইভার নিয়ে যাবে তোমায় প্রিয়ুদের বাসায়। সাবধানে যেও। প্রিয়ুর সাথেই থাকবে। প্রিয়ু ফোন দিয়েছিল আমায়। এখানে কিছু অ্যারেঞ্জমেন্ট শেষ করে দুপুরের দিকে যাবো আমিও আয়ুশ। নিজের খেয়াল রাখবে।
–ওকে।
গাড়িতে এসে বসতেই তূর্য হাত টা ধরলেন আলতো করে। মুচকি হেসে বললেন,,,
–মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা। কারো বাঁকা কথায় কান দিবে না শ্রেয়া। জানোই তো পাছে লোকে কিছু বলে।
তূর্যর কথার পরিপ্রেক্ষিতে হাসলাম আমি। মাথা দুলিয়ে বুঝালাম একদমই কান দিব না কারো কথায়। বরং কানে তুলো গুঁজে রাখব নয়তো জবাব দিব বিনয়ের সাথে।
———————————–
প্রিয়ুদের বাসায় ঢুকতেই চোখ কপালে উঠে গেল আমার। প্রিয়ুর আত্মীয় স্বজন কেউ বাদ আছে কিনা আসার সন্দেহ হচ্ছে। প্রিয়ুর ফুফাতো মামাতো ভাই বোন সব আড্ডায় মত্ত সাথে শিহাব ভাই ও। আমাকে দেখেই দৌড়ে এল প্রিয়ু। প্রিয়ুর হাত ধরে সবার কাছে গিয়ে সালাম দিতেই মুখ তুলে তাকালেন শিহাব ভাইয়া। ওনাকে দেখে কিছুটা চমকালাম। অনেক পরিবর্তন হয়েছে ওনার চেহারায়। পড়ার সুবাদে জাপানে ছিলেন প্রায় চার বছর। প্রিয়ুর ফুফাতো মামাতো ভাই বোন সবাইকেই আমার চেনা। নুসাইবা আপুর বিয়েতেই পরিচয় সবার সাথে। সবাই একসাথে সালামের জবাব দিলেন। শিহাব ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি পড়তেই লক্ষ্য করলাম ওনি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে। ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম আমি।ওনার এই চাহনি অজানা নয় আমার।আমাদের মেয়েদের একটা বিশেষ গুণ হল কেউ আমাদের দিকে কেমন নজরে তাকাই তা দিব্যি বুঝতে পারি। শিহাব ভাইয়ার অবলোকন বুঝেছি চার বছর আগেই। ওনার মনে যে আমায় নিয়ে অনুভূতি জমে আছে তা আমি বুঝতে পারলেও মেনে নেওয়ার উপায় ছিল না। ওনাকে প্রিয়ুর ভাইয়া ছাড়া অন্য কিছু কখনও ভাবতেই পারি নি আমি। শুকিয়ে যাওয়া গলায় জিজ্ঞেস করলাম,,,,
–কেমন আছেন ভাইয়া?
— বেঁচে আছি।–দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলেন শিহাব ভাইয়া।
হেঁসে উঠল সবাই। শিহাব ভাইয়া উঠে আমায় জায়গা করে দিলেন বসার জন্য। মলিন হেসে বসে পড়লাম আমি।
।
।
নুসাইবা আপুর সাথে আড্ডা দিলাম এতোক্ষণ। ওনার বেবি টা বেশ কিউট। একদম গুলু মুলু। আন্টি সবার জন্য লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন। ওনার হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে যেতে লাগলাম প্রিয়ুদের বাড়ির বা দিকটায়। ওইদিকে পুকুর পাড়ে খুব সুন্দর করে ঘাট বানানো। সেখানেই আড্ডা দিতে ব্যস্ত সবাই। প্রিয়ুদের বাড়ির এই পুকুর টা কখনোই ভরাট করে নি প্রিয়ুর বাবা। ঠান্ডা বাতাস শান্তির এক স্থান। কে চাইবে এতো সুন্দর জায়গাটা নষ্ট করতে! আকস্মিক শিহাব ভাইয়া রাস্তা অবরোধ করে দাঁড়ালেন। শিহাব ভাইয়া এসে সামনে দাঁড়াতেই ভয়ে হাত ফসকে ট্রে টা পড়ে যেতে নিলে ধরে নিলেন ওনি। একজন কে ডেকে শরবতের ট্রে তার হাতে ধরিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,,,
–তোমার সাথে আমার কথা আছে শ্রেয়সী।
—কককি কথা ভাইয়া?
–ভয় পাচ্ছো?
–নননা।
—মনে আছে ছোট বেলায় খুব ভয় পেতে আমায়?
–হহহুম।
— ভয়ের জন্যই কখনো আমার চোখের ভাষা পড়তে পারো নি তাই না?–তাচ্ছিল্য স্বরে কথাটা বলে উঠলেন শিহাব ভাইয়া।
অবাক হলাম আমি। ওনার প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই আবারও বলে উঠলেন,,,
—- বিয়ে কেন করে নিলে শ্রেয়া? জানো তোমার বিয়ের কথা শুনে কতোটা ক্ষত হয়েছিল আমার হৃদয়ে? তুমি তো আমার মনের কথাই বুঝো নি।
–আআআপনাকে আমি ভাইয়ের নজরেই দেখতাম।
রেগে গেলেন ওনি। তেড়ে এলেন আমার দিকে। ক্ষোভ নিয়ে বললেন,,,
–আমি কখনো তোমাকে ছোট বোনের নজরে দেখি নি। আর হারিয়ে ফেলে ও ফিরে পাওয়া আরেকটা সুযোগ ও হারাতে চাই না আমি। আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই শ্রেয়া।
❝বাহ্!!! আজ আমাদের হলুদ সন্ধ্যা অথচ আমার হবু বউকে বিয়ের প্রস্তাব । আমি কিন্তু বউ দিচ্ছি না। বউ আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয়। ❞
চক্ষু দুটো স্থির হয়ে গেল আমার। সামনেই সাবলীল ভঙ্গিতে দাড়িয়ে তূর্য। ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। শিহাব ভাইয়া কে আবার কিছু করবেন নাতো? কিন্তু আমার ভয় কে উড়িয়ে দিয়ে শিহাব ভাইয়ার সাথে হাত মিলালেন তূর্য। আমাকে এক হাতে নিজের সাথে জরিয়ে নিলেন ওনি। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ওনার বাহুতে আঁটকে রইলাম আমি। আয়ুশ ভাইয়া ও পাশে এসে দাড়ালেন সাথে প্রিয়ু। রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে শিহাব ভাইয়ার আখিদ্বয়। ভীষণ টেনশন হচ্ছে ওনার জন্য। ওনি যদি তূর্যর ব্যাপারে একটু ও জানতেন তবে চোখ দুটো তোলার ও সাহস পেতেন না। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বললেন তূর্য,,,
— আজ আমাদের জীবনের নতুন একটি ধাপ। কাল থেকে তূর্যর অর্ধাঙ্গিনী রূপে চিনবে সবাই শ্রেয়া কে। রাতে চলে আসবে সবাই বাড়িতে। হুট করেই যেহেতু বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই হুট করে হাজির হয়ে যেও সবাই। আরেকটা কথা দোয়া করো সবাই কেউ যেন আর আমার পিঞ্জিরার পাখিকে কেঁড়ে নেওয়ার সাহস না পায়। তাহলে রক্তাক্ত হতে বেশি সময় লাগবে না তার।
ঠান্ডা কন্ঠে হুমকি! বাহ্!! শিহাব ভাইয়া কিছু না বলে চলে গেলেন সাথে সাথেই। প্রিয়ু এসে ঝাপটে ধরল আমাকে। আয়ুশ ভাইয়া হেসে বললেন,,,
–বলেছিলাম না খুব শীগ্রই পরিবর্তন হতে যাচ্ছে তোমার জীবন। এবার হারিয়ে যেও না। আমার কলিজার বন্ধু টা কে দম বন্ধ পরিস্থিতিতে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যেও না। কংগ্রাচুলেশনস জেরি।
এক মিনিট ও স্থায়ী হলেন না আয়ুশ ভাইয়া। প্রিয়ু কে সাথে নিয়ে চোখের পলকেই পালিয়ে গেলেন। কিন্তু ওনার চোখের কোণে চিকচিক করা পানি টা আমার নজর এড়ায় নি। ভালোবাসা সার্থপরের রূপ কেন ধারণ করে? কেন যাকে পাব না তাকেই মন দিয়ে বসি আমরা?ভালেবাসা কাউকে কাদায় তো কাউকে সুখের পরশ দেয়। প্রিয়ু ও আয়ুশ ভাইয়া কে ধুকে ধুকে মরতে দিব না আমি। একদিন সুখী হবেন দুজন।শুধু বাকি একটু প্রচেষ্টা যা আমাকেই করতে হবে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তূর্যর দিকে তাকালাম আমি। হাতটা ধরে বললাম,,,
—চলুন না বিয়ের শপিং করতে যাই।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কোনো ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। আজকের পর্ব টা হয়তো ভালো হয় নি।🤕)