শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর_২ লেখক-এ রহমান পর্ব ৮

0
519

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর_২
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৮

চমৎকার ঝলমলে একটা দিনের সূচনা হল। সকালের প্রথম রোদটা এসে পড়েছে ঈশার বারান্দার সেই অলকানন্দা ফুলটার উপরে। সোনালী রোদ্দুরের উষ্ণ স্পর্শে লজ্জায় মিইয়ে গেছে ফুলটা। তার পাশেই একটা প্রজাপতি বসে সেই লাজুকতার মহনীয় দৃশ্য উপভোগ করছে। আকাশে শুভ্র মেঘের আনাগোনা। কাল সারাদিনের কালো মেঘের উপস্থিতি রাতে প্রেম বর্ষণ ঘটিয়ে কেটে গিয়েছে। আজ শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর এর সূচনা হয়েছে দিনের শুরুতেই। ঝলমলে রোদ্দুরের উষ্ণ আলিঙ্গনে শুভ্র মেঘ তার বুকের মাঝে লুটিয়ে পড়েছে। জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিয়েই নিজের ভেজা চুল ঝেড়ে নিলো ঈশা। চুলের পানির ঝাপটা ইভানের মুখে গিয়ে পড়তেই ঘুমের মাঝেই চোখ মুখ কুচকে এলো তার। ঈশা সেদিকে খেয়াল না করেই আবার ঝাড়া দিলো চূলগুলো। ইভানের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ভীষণ বিরক্ত নিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
–ঈশা জানালাটা বন্ধ করো। আমি ঘুমাচ্ছি।

ঈশা ঘাড় বেকিয়ে তাকাল। মুচকি হেসে বলল
–আর ঘুমাতে হবে না। ওঠো।

ইভান উত্তর দিলো না। ঈশা এবার পুরো জানালা খুলে দিয়ে সেখান থেকে সরে দাঁড়ালো। সম্পূর্ণ রোদটা ইভানের মুখে এসে পড়লো। চোখ খুলে ফেললো। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল
–ননসেন্স! আমি ঘুমাচ্ছি দেখতে পাচ্ছ না? বিরক্ত করছ কেন? বন্ধ করো জানালা।

ঈশা ইভানের পাশে এসে বসল। মুচকি হেসে বলল
–৮ টা বাজে।

–তো কি হয়েছে?

ইভান ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করতেই ঈশা বলল
–অফিসে যাবে না? এখন না উঠলে দেরি হয়ে যাবে তো।

ইভান নীরব দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। কপালের চূলগুলো জত্ন করে কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে আবেগি কণ্ঠে বলল
–তুমি কি জানো ঈশা পাখি তুমি ভয়ঙ্কর সুন্দর! আর তোমার এই ভয়ঙ্কর রুপের মতো যদি বুদ্ধিটা ভয়ঙ্কর হতো তাহলে আমার এই জীবনে আমার আর কোন আফসোস থাকতো না। আমি এটা ভেবে শান্তি পেতাম যে একজন ভয়ঙ্কর সুন্দরীর পাশাপাশি ভয়ঙ্কর বুদ্ধি সম্পন্ন নারীকে আমি বিয়ে করেছি।

ইভানের কথা শেষ হলে ঈশা কিছুক্ষন ভাবল। এতক্ষন তার আবেগি কণ্ঠের মায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল ঈশা। কিন্তু শব্দগুচ্ছ মস্তিস্কে ঢুকতেই সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। বলল
–আমার মাথায় কি বুদ্ধি নেই?

ইভান কঠিন গলায় বলল
–তোমার বুদ্ধির নমুনা এই জীবনে অনেকবার দেখেছি। সেসব নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। এখন আমাকে ঘুমাতে দাও।

ইভান শুয়ে পড়লো আবার। ঈশা একটু ভেবে আবারো তাকে ডেকে তুলল। ইভান এবার রেগে গেলো। উঠে বসে বলল
–এই মেয়ে! কেন বারবার এভাবে ডাকছ? কি সমস্যা তোমার?

ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
–অফিসে যাবে না? এখন না উঠলে দেরি হয়ে যাবে।

–তোঁতা পাখির মতো সেই তখন থেকে একই কথা বলছ। আমার বুদ্ধিমতী বউ আজ কি বার সেটা জানো? ক্যালেন্ডার টা চেক করে দেখো।

ঈশা দেয়ালে টাঙ্গান ক্যালেন্ডারটার দিকে তাকাল। আজ শুক্রবার! ঈশা সেটা খেয়াল করেনি। তাই তো ইভান এতো রাগ করছিলো। সে দাঁত কেলিয়ে ইভানের দিকে তাকাল। বলল
–আমি আসলে খেয়াল করিনি। তুমি ঘুমাও।

বলেই উঠে যেতে নিলে ইভান হাত ধরে টান দিলো। ঈশা তার বুকের মধ্যে গিয়ে পড়লো। ইভান দুষ্টুমির সুরে বলল
–আমি মনে হয় কাল রাতে তোমাকে একটু বেশীই বিরক্ত করে ফেলেছি। তাই এখন আর সহ্য করতে পারছ না।

ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল ইভানের দিকে। বলল
–অসভ্যের মতো কথা বলবে না একদম। যা মুখে আসে তাই বল।

ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিলো। বলল
–বউয়ের কাছে এখন আমাকে সভ্য হয়ে কথা বলতে হবে। ঠিক আছে তাহলে বাইরে গিয়ে অসভ্যতামি করবো।

ঈশার শরীর রাগে জ্বলে উঠলো। সে জোরে জোরে শ্বাস টানছে। ইভান তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল
–তুমি যা বললে আমিও তাই বললাম। তাহলে রাগ করছ কেন?

ঈশা গভীর দৃষ্টিতে তাকাল। অভিমানী কণ্ঠে বলল
–কেন এভাবে না বলে চলে গিয়েছিলে? আর ফোন কেন ধরনি? বন্ধ করে রেখেছিলে। কথাও বলনি আমার সাথে। কত টেনশন হয়েছিলো জানো।

ইভান ঈশাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
–কিছুদিন একটু নিজের মতো থাকতে চেয়েছিলাম। এই মান অভিমানের মাঝে আমি ভীষণ এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলাম। সব কিছু কেমন অসহ্য লাগছিল। তাই কিছুদিন নিজেকে সময় দিতে চেয়েছিলাম। তোমাকেও সময় দিলাম নিজেকে গুছিয়ে নিতে। আবার আমাকেও গুছিয়ে নিলাম। আর পারছিলাম না তোমাকে ছাড়া থাকতে। এই সবকিছুর অবসান হওয়ার দরকার ছিল।

ঈশা অত্যন্ত নরম কণ্ঠে বলল
–তোমাকে না ইলহাম ভাইয়া এখনই অফিসে যেতে নিষেধ করেছিল। তুমি তবুও কেন গেলে?

ইভান ঈশার চুলের ভাজে হাত গলিয়ে দিয়ে বলল
–আমি ঠিক আছি। আমার যা প্রয়োজন সেটা পেয়ে গেছি। এখন আর সমস্যা নেই।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
–এটা দরকার ছিল ঈশা। খুব বেশী দরকার ছিল।

———–
টেবিলে চায়ের আড্ডা চলছে। ইফতি আর ইশান এসেছে সকাল সকাল। ঈশা মাত্র চা বানিয়ে এনে বসেছে চেয়ারে ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো। ইরা উঠে বলল
–সিয়া এসেছে মনে হয়।

ইশানের চোখ চকচক করে উঠলো। পুরোটা ঘুরে তাকাল সে দরজার দিকে। ইরা দরজা খুলতেই সিয়া ভেতরে ঢুকল। ইশান কিছু বলার আগেই ইভানের কণ্ঠ কানে এলো।
–আরে সিয়া কেমন আছো?

সিয়া প্রশস্ত হেসে বলল
–ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?

–সকাল সকাল তোমাকে দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো।

সিয়া ইভানের কথা শুনে হাসল। ইভান এসে ঈশার পাশের চেয়ারে বসল। ইশান তার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। ইভান নিজের ভেজা চূলগুলো আঙ্গুল দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল
–বস। চা খাবে তো।

সিয়া মিষ্টি হেসে বলল
–এখন খাব না ভাইয়া। ইরার সাথে একটু কাজ ছিল।

বলেই ইরা আর সিয়া ঘরে চলে গেলো। ইভান সামনে তাকাতেই ইশানের সূচাল দৃষ্টি চোখে পড়লো তার। ভ্রু কুচকে বলল
–কিছু বলবি?

ইশান তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এখনো সময় আছে ঈশা। নিজের ঘর বাঁচাতে চেষ্টা কর। নাহলে কান্না ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

ঈশা ঠোট চেপে হাসল। ইশান তার কাজে বেশ আশ্চর্য হল। ভ্রু কুচকে বলল
–তুই আমার কথা এখন বুঝতে পারছিস না কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারবি।

ইফতি ইশানের ঘাড়ে হাত রেখে বলল
–সবই বুঝলাম ভাইয়া। কিন্তু তোমার সমস্যাটা ঠিক বুঝলাম না। একটু খুলে বলবে?

ইশান চটে গেলো। কঠিন গলায় বলল
–আমার আবার কি সমস্যা? কি বলতে চাইছিস তুই?

ইভান মুচকি হেসে বলল
–কিছু বলতে চায় না শুনতে চায়। বলে ফেল তোর মনের কথাটা।

ইশান সরু চোখে তাকিয়ে বলল
–কি শুনতে চায়?

ঈশা শব্দ করে হেসে ফেললো। বলল
–ভাইয়া অযথা কেন কথা বাড়াচ্ছ। বলে ফেল। সুযোগ সব সময় আসে না কিন্তু।

ইশান দমে গেলো। একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। ওভাবেই কিছুক্ষণ থেকে বলল
–মেয়েটা অনেক ছোট। কি ভাববে কে জানে?

ইভান নিজের চুলের ভাজে হাত চালাতে চালাতে বলল
–ছোট বড় হিসেব করতে বসলে যদি পাখি উড়ে চলে যায় তখন কি করবি? তার আগেই খাচার দরজা বন্ধ করে ফেল। উড়ে যেতে যেন না পারে।

ঈশা গভীর দৃষ্টিতে তাকাল ইভানের দিকে। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। ইশান কে নিয়ে কথা বলতে বলতে অনেক সময় পেরিয়ে গেলো তাদের। এর মাঝেই তারা সকালের নাস্তা সেরে ফেলেছে। ঈশা টেবিল থেকে উঠে বলল
–তোমরা দুপুরে কি খাবে? আমি রান্না করবো।

ইফতি বলল
–তুমি যা রান্না করবে আমরা তাই খাবো। শুধু মনোযোগ দিয়ে একটু রান্না করো প্লিজ। কয়েকদিন একটু রান্নায় অমনোযোগী ছিলে সেটা আমরা বুঝতে পেরেই মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এই মেনে নেয়াটা আর বেশীদিন হয়তো চলবে না। তাই বললাম আর কি।

ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল ইফতির দিকে। ইভান আর ইশান শব্দ করে হেসে ফেললো। ঈশা আরও বেশী রেগে গেলো। রাগী চোখে একবার সবার দিকে তাকিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াল ঈশা। ইভান পেছন থেকে বলল
–মেজ বাবারা কবে আসবে?

ঈশা তাকাল। বলল
–জানি না। জিজ্ঞেস করিনি।

–এবার ফোন দিলে শুনে নেবে।

ইভানের কথা শেষ হতেই ঈশা বলল
–আচ্ছা। কিন্তু কেন?

ইভান সরু চোখে তাকাল। অবাক হয়ে বলল
–আমাকে কি ঘর জামাই রেখে দেয়ার প্ল্যান করেছো নাকি?

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here