#ফুপু_শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
#পর্ব:৬
অনেক খোঁজাখুজির পর, রেশমীর অনেক চেষ্টার পর নিশুর লোকেশন ট্রেস করা গেছে।
পুলিশ বাহিনী সহ সবাই সেখানে উপস্থিত হলো। লোকেশন ট্রেস করে জায়গা মত পৌঁছাতে প্রায় ঘন্টা খানিকের মত লাগল। একটা বড় বাঙলো বাড়ি। পুলিশ বাড়িটাকে পুরো বাড়িটার চারপাশে আটক করে ভিতরে ঢুকে সামনে দুটো ছেলেকে পেলো। তাদের আটক করে জিজ্ঞাসা করল, নিশু কোথায়? তারা পুলিশের ভয়ে বলল, দোতলায়। অাহু নিশাদ পুলিশের অপেক্ষা না করে, আগেই দোতলায় উঠে ঘর গুলো চেক করতে লাগল। আহু একটা দরজা খুলতেই দেখল ভিতরে চেয়ারের সাথে নিশু বাঁধা। নিশু দরজা খোলার শব্দে আহুর দিকে এক নজড় তাকিয়ে লজ্জায় চোখ নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইল। আহু নিশুর দিকে তাকাতেই দেখল ব্লাউজটা কাঁধের কাছ থেকে ছেঁড়া, ভিতরের টপস দেখা যাচ্ছে, পরনের শাড়িটা নেই, শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে থাকার কারণে, পেট নাভি দেখা যাচ্ছে। গালে চড়ের দাগ। পরপর বেশ কয়েকবার চড় মারলে ঠিক যেমন দাগ বসে তেমন দাগ বসে গেছে গালে। চুলের খোঁপায় পরা রজনীগন্ধা আর গোলাপের ফুলের খোঁপামালার ফুলগুলো ছিড়ে এলোমেলো হয়ে গেছে। আহুর কল্পনায় ছিলো না ও কোন দিন নিশুকে এমন ভাবে দেখবে।
নিশু সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এত শক্ত প্রকৃতির নিশুর আজ নিজেকে মেয়ে বলে পরাজিত মনে হচ্ছে! মাথা নিচু করে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। আজ নিশুর চোখের জলের রং দেখতে স্বচ্ছ হলেও ওগুলো চোখের জল নয় বরং হৃদয় ক্ষরিত লাল রক্ত। এত বছর যাবত যে সবসময় মেয়েদের সম্মান হানি হবার হাত থেকে তাদের বাঁচিয়েছে আজ সে নিজেই চরম লাঞ্চিত হলো। সত্যি আজ নিশুর জন্য বড্ড লজ্জার দিন, অন্যদের যে রক্ষা করতে পারত, সে নিজেকে রক্ষা করতে কী তবে ব্যর্থ হলো?
আহু নিশুর কাছে এসে হাত পায়ের বাঁধনগুলো খুলে দিলো। নিশু মনে মনে ভেবে রেখেছে, আজ থেকে আর ও আহুর দিকে তাকাবে না। তাকানোর মত দৃষ্টি নিশু হয়ত হারিয়ে ফেলছে। আহু নিশুর হাত ধরে বলল,
_নিশু আমার দিকে তাকাও।
নিশু আহুর দিকে না তাকিয়েই বসা অবস্থায় আহুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
_সরি আহু সরি। তোমার জন্য আজ নিশু থেকে তোমার লক্ষী নিশুর মত সেঁজেছিলাম। কিন্তু তোমাকে দেখাতে পারিনি। সরি!
আহু নিশুকে জড়িয়ে রইল। কাঁদছে দুজন কিন্তু শব্দহীন বোবা কান্না ওদের, রক্তক্ষরন দুজনার মনে হচ্ছে কিন্তু সেটা অদৃশ্য, বাইরের কেউ তা দেখতে পারবে না। এ রক্তক্ষরনের যন্ত্রণা শুধু এরা দুজনই বুঝতে পারবে, অন্য কেউ নয়!
একটু সময়ের মধ্যেই নিশাদ, রেশমী, পুলিশসহ বাকি সবাই রুমে হাজির হলো। নিশাদ নিজের বোনকে ওমন অবস্থায় দেখে পাথরের মত জমে গেলো। পৃথিবীতে কোন ভাইয়ের কাছে এর থেকে বিভৎস্য দৃশ্য হয়ত আর হতে পারে না। নিজের বোনকে অর্ধনগ্ন দেখার থেকে কষ্টকর আর লজ্জাজনক কোন মুহূর্ত হয়ত কোন ভাইয়ের কাছে নেই।
রেশমী চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখতেই এক কর্ণারে নিশুর শাড়িটা দেখতে পেলো। তিনি শাড়িটা এনে নিশুর কাছে দাড়িয়ে বলল,
_আহু তোরা সবাই বাইরে দাড়া আমি নিশুকে শাড়িটা পরিয়ে নিয়ে আসছি।
আহুর কানে কারো কথা যাচ্ছে না। ও তো নিশুকে নিজের মাঝে আকড়ে ধরে রেখেছে। রেশমী আহুর গালে হাত দিয়ে বলল, বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না।
১১!!
নিশুর কিডনাপ হবার সাতদিন পর।
আগের মত স্বাভাবিক নেই নিশু। সবসময় নিজেকে রুম বন্দী করে রাখে। কারো সাথে কথা বলে না। যে মেয়ে দু ঘন্টা ঠিকমত এক জায়গায় স্থির থাকত না, সে সারাদিন রুমে বসে থাকে। নিজের ভাই থেকে শুরু করে কারো সাথে কথা বলে না। নিশাদের নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হয়। নিজের বোনকে রক্ষা না করতে পারা ভাইয়ের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
আহু রোজ দেখা করতে এসে ফিরে যায়। রোজ নিশুদের বাড়িতে এসে নিশুর রুমের দরজার কাছে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে। নিশু দরজার অপর পাশে বসে থাকে। আহু কথা বলে নিশু শোনে কিন্তু উত্তর নিশু দেয়না। চুপ করে শোনে আর নীরব কান্না করে। আহু দরজার ওপাশে কান পেতে থাকা নিশুর অস্তিত্ব অনুভব করে। আজও আহু নিশুর রুমের দরজার কাছে বসে রয়েছে! নিশু ঠিক দরজার অপর পাশে। দরজার সাথে কান লাগিয়ে শুনছে আহু কী বলে! আহু দরজার কাছে গিয়ে বলল,
_নিশু——
_নিশু নিশ্চুপ!
_নিশু——-
_নিশু তখনও নিশ্চুপ।
_নিশু আজ তো একটু কথা বলো! গত সাত দিনে তুমি আমার সাথে একটুও কথা বলোনি। আজ একটু বলো প্লিজ। তোমার কন্ঠ না শুনে শান্তি পাচ্ছি না।
_নিশু নিঃশব্দে কাঁদছে।
_নিশু তোমার মনে আছে, মাস চার আগে তুমি একটা মেয়েকে হসপিটালে দেখতে গিয়েছিলে। মেয়েটা সুইসাইড করতে চেয়েছিল, কারণ মেয়েটাকে কেউ রেপ করেছি। তুমিই মেয়েটাকে বুঝিয়েছিলে জোড় করে ছুঁয়ে দিলেই কেউ নষ্ট হয়ে যায় না। মেয়েরা অত সস্তার বস্তু নয় যে জোড় করে ছুঁয়ে দিলে নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি তখন মেয়েটাকে #সমীকরণের_মিশ্রণ নামক একটা বই পড়তে দিয়েছিলে যেখানে একটা গল্প ছিলো #আবহমান তুমি বলেছিলে গল্পটার নায়ক মেহেদীর মত ছেলে হয়না। আমি সেই গল্পের নায়ক মেহেদীর মত হতে চাই না। শুধু ওর মত প্রিয় মানুষটার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতে চাই। নিশু গল্পের রুশা কিন্তু ধর্ষিত হবার পরও নিজের মনোবল অটুট রেখেছিল তবে তুমি আমাদের নিশু হয়েও কেন পারছ না। তুমি তো ধর্ষিতা নও! তোমাকে ওরা শুধু তুলে নিয়ে গিয়েছিল এছাড়া তো তোমার কোন ক্ষতি হয়নি। নিশু প্লিজ একবার আমার মুখোমুখি হও। আমি তোমায় কিছু বলতে চাই।
নিশু দরজা খুলে আহুর পাশে বসে বলল,
_আমার সাথে ওরা ঠিক কী কী করছে শুনবে তুমি! আসো ভিতরে!
১২!!
এলাকার সবার মতে নিশুর ধর্ষন হয়েছে। কিন্তু যেটা পুরোপুরি ঠিক না। নিশুর ধর্ষন হয়নি। শুধু অপহনে করা হয়েছিল।
নিশুকে ওদের এলাকার কমিশনারের ছেলে সাকি তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কারণ নিশু সাকিকে একবার সর্বসম্মুখে অপমান করেছিল। নিশু সেদিন সাকিকে অপমান করে ভুল কিছু করেনি। সাকি সেদিন একটা মেয়ের সাথে খুব নোংড়ামি করছিল। আর নিশু সেটার প্রতিবাদ করেছিল মাত্র। সেই রাগটা মিটাতেই সাকি নিশুকে কিডনাপ করেছিল। কিন্তু ওরা নিশুর সাথে তেমন কিছুই করতে পারেনি। সাকি এবং সাকির দুই বন্ধু জাহিদ এবং উজ্জ্বল এর বলা অনুসারে, ওরা নিশুকে সকালে নিশুদের এলাকা থেকে কিডনাপ করে বাঙলোতে আনে ঠিকই কিন্তু তখনই সাকির বাবা জরুরি কাজে তিন জনকেই ডেকে পাঠায়। যার ফলে ওরা নিশুকে অজ্ঞান অবস্থায় বেঁধে রেখে নিজেদের কাজে গিয়েছিল। দুপুরের পর ফিরে সাকি নিশুর কাছে যায়। কিন্তু তখন আবার সাকির বাবা সাকিকে ফোন দেয়, ওর দাদা নাকি মারা গেছে। সাকির দাদা মারা যাবার কথা শুনে সাকি চলে যায় আর জাহিদ, উজ্জ্বলকে রেখে যায় নিশুকে পাহারা দিতে। আর ওদের বলে যায়, ওর আগে যেনো নিশুকে কেউ স্পর্শ না করে। জাহিদ আর উজ্জ্বল সাকিকে ভিষন ভয় পায় তাই সাকির কথার অবাধ্য হয়নি। সাকি আবার ফিরে আসার আগেই পুলিশ সেখানে যায় আর নিশুকে উদ্ধার করে।
পরের দিন সাকিকে আটক করা হয়েছে। কিডনাপিং ও এ্যাটেম টু রেপ করার অপরাধের মামলা করা হয়েছে ওদের নামে। বিচার কার্জ কী হয় দেখা যাক।
১৩!!
আজ নিশু আহুর সাথে নিজের বিয়ে ভেঙে দিয়েছে।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
চলবে______