অতিথি
পর্ব:১৮
লেখা: মিশু মনি
.
মিশুর খুব সাজতে ইচ্ছে করছে।
ও আয়নার সামনে বসে খুব করে সাজল।চোখে কাজল দিলো, মুখে মেকাপ করল,লিপস্টিক দিলো,চুল গুলো সুন্দর করে বাধলো।সাজগোজ শেষ করে গান গাইতে গাইতে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
.
মর্ম নিজের রুমে এসে দেখল বিছানার উপরে মোবাইল রাখা।ফোনটা হাতে নিয়েই ও কল ডিউরেশন চেক করলো। মিশু তীব্র’র সাথে চল্লিশ মিনিট কথা বলেছে।একজন অচেনা লোকের সাথে এত কিসের কথা!
মর্ম’র মেজাজ বিগড়ে গেল।প্রচণ্ড রাগ উঠল মিশুর উপর। শুধু গালি খেয়ে ওর শিক্ষা হয়নি,এবার মাইর ও দিতে হবে।
মর্ম প্রচণ্ড রেগে মিশুর ঘরের দিকে এগোলো।
.
দরজা খুলতেই মর্ম অবাক! মিশুকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে।এত সেজেছে কেন মেয়েটা? এত সাজগোজে মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে বয়স হঠাত ই বেড়ে গেছে।মর্ম’র সকল রাগ নিমেষেই কমে গেলো।
মিশু বলল, কিছু বলবা?
– তুমি তীব্র’র সাথে চল্লিশ মিনিট কথা বলেছ কেন?
– তোমাকে বিভ্রান্তি তে ফেলার জন্য।
– কিহ!
– হ্যা।তুমি জ্বলবে,সেজন্য।
– হুম।এত সেজেছ কেন?
– আমার বুঝি সাজতে নেই? আজ খুব সাজতে ইচ্ছে করলো। তাই।
– অসম্ভব সুন্দর লাগছে!
মিশু লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে। আজ মিশুকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে কেন!
মর্ম এক পা এগিয়ে আসলো। মিশু দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বলল,অনেক রাত হইছে।নিজের রুমে যাও।
– যাচ্ছি।আগে বলো আর কখনোই তীব্র’র সাথে কথা বলবা না।
– বলবো না।
– প্রমিস?
– হুম।কিন্তু আমি কথা বললেই বা কি? তুমি এত জ্বলছ কেন?
– তুমি জ্বালাচ্ছ তাই।
– এত পুড়ছ কেন? এত রাগ দেখাচ্ছ কেন?
– তুমি যে পুড়িয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানাচ্ছ।তাই।
– হুম।তারপর সেই কয়লা আমি বেচে দিবো।
মর্ম বলল,নাহ।সেই কয়লা ছাই হবে।তুমি সেই ছাই নিয়ে ও খেলবা।
– আমি সেই ছাই দিয়ে দাত মাজবো।
– হা হা হা।পাগলী মেয়ে।
মিশু হেসে বলল, এখন যাও।অনেক রাত হইছে,ঘুমাবো।
– যদি না যাই?
– সারমর্ম,যাও বলছি।
– নাহ যাবো না।তোমাকে বড় ভালো লাগছে দেখতে।
– চলে যাও,তোমার আম্মু দেখলে খারাপ ভাববে।
– সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
মিশু দরজার সামনে দারিয়ে বলল,তুমিও যাও।আমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাবো।রাত একটা বাজে।
মর্ম মিশুর কাছে এসে ওর চোখের দিকে তাকালো।মিশু দৃস্টি নামিয়ে নিলো। মৈত্রি ভাইয়া বলেছিল,কখনো কেউ চোখের দিকে তাকালে নিজেকে সংযত করে নিবা।মনে পড়তে ই মৈত্রির প্রতি শ্রদ্ধা জেগে উঠল। ওই মানুষ টা সত্যিই অনেক ভালো!
মর্ম একদৃস্টে চেয়ে আছে।মিশু বলল,চলে যাও মর্ম। ১ টা বাজে।
মর্ম মিশুর কথা না শুনে মিশুর হাত ধরে এক টানে মিশুকে কাছে টেনে নিলো। মিশু ভয়ে ভয়ে বলল,ছি কি করছ?
মর্ম দুহাতে শক্ত করে ধরল মিশুকে।মিশু অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারল না।মিশু কখনো ই এই পরিস্থিতির কথা কল্পনাও করেনি।মর্ম’র কাছ থেকে এমন আচরণ সে আশা করেনি।মিশুর চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ল।মিশু যতই ছাড়া তে চেষ্টা করল, মর্ম ততই শক্ত করে ধরে ফেলল মিশুকে।
মিশুর বুক ফেটে কান্না আসছে।মর্ম মিশুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু,তার জন্যই মিশু এ বাড়ি তে এসেছে।কিন্তু আজ মর্ম এমন করছে কেন!
মিশু কেঁদে ফেললো।মর্ম আরও জোরে মিশুকে জড়িয়ে ধরলো।
.
পরদিন অনেক দেড়িতে মর্ম’র ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙার পর একে একে রাতের ঘটনা টা মনে পড়ে যাচ্ছে।মর্ম আপন মনেই হাসল।তারপর ভাবল, মিশু কি রাগ করেছে আমার উপর? রাতে পাগলের মত কিসব করে ফেলেছি! মিশু তো এসব পছন্দ করেনা।ও কি রাগ করেছে!
ভাবতে ভাবতে মর্ম উঠে পড়ল। ফ্রেশ হয়ে উঠে মর্ম নাস্তার টেবিলে আসলো। সবাই আছে,মিশু নেই।মর্ম ভাবল,মিশু হয়ত ঘুম থেকেই উঠেনি।
.
ধীরে ধীরে দুপুর গড়িয়ে আসলো। দুপুরের খাবার খেতে বসে মর্ম জিজ্ঞেস করল,মিশু কোথায়?
মা বললেন, জানিনা তো। সকাল থেকে ওকে দেখিনি।আমিতো ভেবেছি তুই ওকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিস।
মর্ম’র বুকে ধাক্কা লাগল এসে।মিশু গেল কোথায়? আবার জ্বরে রুমে পড়ে আছে নাকি?
মর্ম ছুটে মিশুর ঘরে চলে আসলো। ঘরে মিশু নেই!
এরপর বাড়ির ছাদ,বাগান,সব জায়গা খুঁজে খুঁজে দেখা হলো,মিশু কোথাও নেই!
মর্ম চিন্তায় পড়ে গেল।মিশু কোথাও নেই! তারমানে মিশু খুব আঘাত পেয়েছে।কিন্তু রাতে মর্ম’র কি হয়েছিল সে নিজেও জানেনা।মিশুকে জরিয়ে ধরে…….. ছিঃ ছিঃ
মর্ম নিজেই নিজেকে গালি দিতে লাগলো। কেন রাতে ওর সাথে এমন আচরণ করলাম! মিশুর চিন্তাভাবনা বিশুদ্ধ,খুব সহজ সরল,সাদা মনের একটা মেয়ে।অনেক পবিত্র মন মেয়েটার।আর আমি ওর সাথে এমন করতে পারলাম!
ভাবতে ভাবতে মর্ম’র কান্না পাচ্ছে ভীষণ।
.
মর্ম নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। বিকেল হয়ে গেছে মিশুর কোনো খোজ নেই।সবাই এখন তাকেই দোষারোপ করবে।সবাই দোষারোপ করুক,আপত্তি নেই।কিন্তু মিশু যেন ক্ষমা করে দেয়।রাতে ভুল হয়ে গেছে।মিশু যেন মাফ করে আমায়।
মৈত্রি এসে মর্মকে বলল,কি হইছে?
মর্ম স্বাভাবিক ভাবে বলল,কি হবে?
– মিশু কোথায়?
– জানিনা।আমিও ওকে ই খুজছি।
মৈত্রি রেগে বলল,মেয়ে টা কোথায় আছে আমরা কেউ জানিনা।ওর কাছে ফোন ও নেই।এখন মিশুর আব্বু কল দিলে আমরা কি বলবো?
মর্ম চুপ করে আছে।
মৈত্রি বলল,তুই রাতে মিশুকে গালি দিয়েছিস?
– না।
– চড় থাপ্পড় দিয়েছিস?
– না।
– তাহলে? এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে? আমার চোখের দিকে তাকা।
মর্ম মাথা নিচু করেই আছে।মৈত্রী বলল,কি করেছিস বল?
মর্ম অপরাধীর মত বলল,ওকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু..
মৈত্রী কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মর্ম’র গালে।পরপর তিন টা থাপ্পড় দিয়ে নিজের চোখেই পানি এসে গেল।
মর্ম কাঁদছে।
মৈত্রি বলল,কখনো তোর গায়ে হাত তুলিনি।মিশুর মত একটা মেয়ে খুঁজে দেখাতে পারবি? তুই এত অপমান করার পর ও মিশু হেসে হেসে তোর সাথে ঘুরতে গেল।আমার ভাঙা সম্পর্ক টাকে জোড়া লাগিয়ে দিলো। কি পবিত্র একটা মেয়ে।আর তুই কিভাবে ওর সাথে এটা করতে পারলি?
– আমি জানিনা।অজান্তেই ভুল হয়ে গেছে।
– এ জন্যই আব্বু ওকে নিয়ে আসার জন্য আমাকে পাঠিয়েছিল।তোকে পাঠায় নি।মিশুকে এখন খুঁজে বের কর।মিশু খুব আঘাত পেয়েছে,সহ্য করতে পারেনি।
.
অনেক খুঁজে ও মিশুকে কোথাও পাওয়া গেল না।দিনে দুইবার মিশুর আম্মু কল দিয়েছিল।বলা হয়েছে মিশু মর্ম’র সাথে বেড়াতে গেছে।
.
রাত ৮:৩০.
মিশুর বাবা মিশুর মাকে বললেন, তুমি মিশুকে কল দিয়েছিলা আজ?
– হ্যা।কথা হয়নি।ঘুরতে গিয়েছে নাকি।
– আমরা কবে যাবো ঢাকায়?
মা হেসে বললেন,দুদিন পরেই যাই চলো।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলেই মা থমকে গেলেন। মিশু দারিয়ে!
মিশু মাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।মা ও কেঁদে ফেললেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, কার সাথে আসলি? সারপ্রাইজ দিলি তাই না? মর্ম এসেছে?
মিশু চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।মা অবাক হয়ে বললেন, কাদছিস কেন বলবি তো?
– আমি একা এসেছি!
মিশুর বাবা মা দুজনেই থ!!
মিশু নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। অনেক চেষ্টা করেও কেউ মিশুর মুখ থেকে কিছু বের করতে পারেনি।
কাজী বাড়ি তে কল দিয়ে জানালে তারা ও কিছু বলতে পারলেন না।শুধু মৈত্রি বলল,আনটি মিশুর দিকে খেয়াল রাখবেন। আমি আপনাদের বাসায় আসবো কাল কে।
.
মিশুর বাবা মা বুঝতে পারলেন মিশু ওদের কারও উপর মন খারাপ করে চলে এসেছে।মিশু অনেক অভিমানী। কিন্তু তাই বলে ঢাকা থেকে চলে আসা টা একদম উচিৎ হয়নি।
.
মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মা জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে ও বলবি না কি হইছে?
মিশু শুধু জবাব দিলো, ছেলেরা খুব খারাপ!
মা মিশুর বাবার দিকে তাকালেন। মৈত্রি না আসা পর্যন্ত কিছু বুঝা যাবে না।
মিশু মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল।
( চলবে…)