Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
……………….. Part – 21……………………
★
মায়া রাতের খাবার শেষে লিয়ার চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।। কাজ শেষ করে লিয়া চলে গেলে মায়া কিছু কাপর চোপড় বের করল।। সেগুলো সব দাসী কাপড়।। একটা দাসী কে কিছু স্বর্নের মুদ্রা দিয়ে লোভ দেখিয়ে এই দাসী কাপড় গুলো মায়া যোগাড় করেছে।। না হলে সে তার কাজ করতে পারবেনা।। দাসী কাপড় গুলো পড়ে দর্পনে নিজের দিকে তাকালো।। বাহ্!! পুরোটাই দাসীর মত লাগছে নিজেকে।। তারপরও কিছু একটার অভাব মনে হল মায়ার।। ভালো করেই বুঝতে পারল মায়া কি সেটার অভাব।। কাজলের কালি একটু করে নিয়ে পুরো হাতে মেখে ফেলল।। তারপর হালকা হালকা ভাবে মুখে মেখে দিল।। যাতে সহজে কেউ না চিনে।। এবার আবারো দর্পনে তাকালো।। হ্যা এবার ঠিক আছে।। কোনো রকম ভাবে তাকে চেনার কোনো সুযোগ নেই।। কিন্তু””””” এবার একটু খটকা লাগল।। মায়া ধীরে ধীরে হাত তুলে চোখ স্পর্শ করল।। তার সবুজ চোখের জন্য সে ধরা খেয়ে যেতে পারে।। এখন কি করবে মায়া?? সবুজ চোখ সচরাচর কারো হয় না।। থাকলেও মায়া এখনো সবুজ চোখা কাউকে দেখে নি।। ভাবতে ভাবতে কোনো উপায় না দেখে শেষ মেস এভাবেই বেড়িয়ে পড়লো।। ঠিক করলো সহজে কারো দিকে তাকাবেনা।। মহলের মাঝপথে হাটতে লাগল।। তেমন বেশি রাত হয় নি।। তারপরও কেমন যেন সুনসান হয়ে আছে মহল টা।। মায়া হাটতে হাটতে সে দাসীদের কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল।। কক্ষের ভিতরে ঢুকেই একটু চমকে গেল।। কারন এর আগে মায়া কখনো বার্বান দাসী কক্ষে প্রবেশ করে নি।। এখানে দেখলো কিছু দাসী গল্প করছে কিছু দাসী ঘুমাচ্ছে।। আর কিছু দাসী পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত।। মায়া ওই দাসী কেও দেখল যে এখানে প্রথম আসার পর তাকে তার কক্ষের মধ্যে বন্দি করেছিল।। একটু এড়িয়ে এগিয়ে গেল।। সে পত্র আনয়ন কারী দাসী কে খুজছে।। খুজে না পেয়ে গল্প রত এক দাসী কে জিজ্ঞেস করল
.
—- আ-আমাকে একটু সাহায্য কর!!
.
—- কি সাহায্য দরকার তোমার??
.
—- আমি একজন কে খুজছি কিন্তু পাচ্ছি না।।
.
—- কাকে খুজছো??
.
—- আমি রাণী মায়ার কাছে যাতায়াতকারী দাসী দের খুজছি।।
.
—- তুমি না বললে একজন কে খুজছো?? আবার সব দাসী কেন??
.
—- না এ-এমনি ও-ওইখানে রাণী মায়ার খাবার নিয়ে””””””
.
—- কে তুমি?? তোমাকে তো আগে কখনো দেখি নি
.
ধক করে উঠল মায়ার বুক।। কি বলবে বুঝতে পারছে না।। কারন সব দাসী রাই এক যোগে তার দিকে তাকাচ্ছে।। আর চেনার চেষ্টা করছে।। মায়া আমতা আমতা করছিল।। বার্বান সম্রাটের মত বার্বান দাসী গুলোও এত ভয়ানক!! ঠিক সে সময় পিছন থেকে একজন কথা বলে উঠল।।
.
—- ও আমাকে খুজতে এসেছে।। ও আমার সেহেলি।।
.
মায়া পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল এই সেই দাসী।। যাকে সে খুজছে।। এর হাতেই পত্র আসত।। মায়ার কলিজায় পানি এলো দাসী টিকে দেখে।।
এবার অন্য দাসী টি বলে উঠল।।
.
—- তোমার সেহেলি হলে তোমার নাম জানেনা কেন??
.
—- কারন ও নতুন এসেছে।। আর তোমরা তাকে যেভাবে প্রশ্ন করছো তাতে সে ঘাবড়ে যাবে সেটা স্বাভাবিক।।
.
—- আমরা তাকে তেমন কোনো প্রশ্ন করি নি।।
.
—- হ্যা করেছো!! আমি আরবাগী কে তোমাদের নামে নালিশ দিব।।
.
—- কি বললে তুমি?? আমার নামে নালিশ দিবে???
.
দেখতে দেখতে দু পক্ষের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেল।। মায়া হা করে তাকিয়ে রইল তাদের ঝগড়ার দিকে।। হা ঈশ্বর!!! এরা কথায় কথায় এভাবে ঝগড়াই লিপ্ত হয়ে যায়?? মনে হচ্ছে হাতাহাতি শুরু হয়ে যাবে।। মায়ার ভয় করতে লাগল।। তাই সে ওই দাসী মেয়েটি কে টেনে নিয়ে এল।। টেনে নিয়ে আসতে আসতে মেয়েটি চিৎকার চেচামেচি করছিল।। এমন সব শব্দ উচ্চারন করছিল যেগুলো মায়া প্রথম বার শুনলেও তার কাছে সেগুলো খুবই অশ্লীল বলে মনে হল।। তারপরও না শোনার ভান করে মেয়েটি কে শান্ত হতে বলল।। কিন্তু মেয়েটি হাপাতে হাপাতে বলল
.
—- কত বড় সাহস আমার সেহেলির সাথে খারাপ ব্যবহার!! এত প্রশ্ন করছে যেন সে আরবাগী!! দেখে নিবো আমি তাকে।। তুমি চিন্তা করিও না।।
.
—– ঠিক আছে।।
.
এরপর মেয়েটি মায়ার দিকে ভ্রু কুচকালো।। তারপর কোমড়ে হাত দিয়ে বলতে লাগ.
—– তুমি কে?? কোন ধরনের সেহেলি আমার?? তোমাকে তো চিনি না।। তোমার জন্যই তো ঝগড়া করলাম।।
.
—- আম-মি তোমাকে খুজছিলাম।। তোমাকে প্রয়োজন তাই।।
.
—- আগে বল কে তুমি?? এ-একটু দাড়াও!!! তোমার চোখ”””””
.
তারপর মায়ার দিকে ভালো করে তাকিয়ে সে চিনতে পেরে তাড়াতাড়ি মাথা নত করে অভিবাদন জানিয়ে বলল
.
—– রাণী মায়া!!!!
.
দাসী টি হতভম্ব হয়ে করুন সুরে বলল
.
—- আ-আমাকে মাফ করবেন।। আপনাকে চিনতে পারি নি!!!
.
—- কোনো সমস্যা নেই।। তোমার সাহায্য প্রয়োজন আমার।।
.
—- বলুন রাণী মায়া।। কি করতে পারি??
মায়া কোমড়ের খোচর থেকে কিছু স্বর্ণ মুদ্রা ওই দাসীটির হাতে দিল।। তারপর বলল
.
—- আমাকে কয়েদ খানায় নিয়ে যাও।। ওখানে আমার কিছু কাজ আছে।।
.
—- রাণী মায়া”””””
.
—- যা বলছি কর।। দরকার হলে আরো ইনাম পাবে।।
.
দাসী টি আর কোনো প্রশ্ন করল না।। মায়া কে নিয়ে যেতে লাগল।। বেশ কিছুক্ষন পর কয়েদ খানার ফটকে পৌছুলো তারা।। ওই খানে ভীষন মোটা ধরনের জাদরেল সৈন্য পাহারাদার দেখে মায়া কিছুটা ঘাবড়ে গেল।। কিন্তু মায়ার কিছু করতে হল না।। যা করার দাসী টি করল।। সে সৈন্যটির হাতে কিছু মুদ্রা গুজে দিল আর জাদরেল সৈন্য টা বিনা বাক্যে তাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দিল।। ভিতরে প্রবেশ করেই গুমোট অন্ধকারের ধাক্কা খেল মায়া।। কেমন একটা ভ্যাপসা গন্ধ চারদিকে।। আরো খানিকটা এগিয়ে যেতেই একটা উৎকট গন্ধ নাকে ধাক্কা দিল। দম বন্ধ হয়ে আসছে মায়ার।। যেন কোথাও ইদুর মরে পঁচে আছে।। মায়া তাড়াতাড়ি নাক চেপে ধরল।। এখানে কয়েদি রা কিভাবে থাকে??
আরো ভিতরে এগিয়ে যেতেই সারি সারি মশালের আলো মায়ার নজরে এলো।। এরপর বিশাল পাথরের তৈরি কক্ষ।। আর লোহার শিকল দেয়া।। সেখানে বিভিন্ন কয়েদিরা অাছে।। তবে রাত হওয়ায় পুরো কয়েদ খানা এখন ঘুমে তলিয়ে।। তারা আরো কিছু দুর এগিয়ে একজন চিকন ধরনের সৈন্যর সামনে গিয়ে দাড়ালো।। তারপর ওর হাতে ও দাসী টি কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা গুজে দিল।। এবার দাসী টি ফিস ফিস করে মায়ার কানে কানে বলল
.
—– রাণী মায়া আপনার কি দরকার ইনাকে বলতে পারেন।। এ সব খবর দিবে আপনাকে।।
.
মায়া এবার সৈন্যটির আরেকটু কাছে গিয়ে দাড়ালো।। তারপর ওই সৈন্যটিকে আস্তে করে বলল
.
—- আপনার কাছে বীরের কি খবর আছে??
.
সৈন্যটির কপালে একটা চিন্তার ভাজ পড়ল।। তারপর বলল
.
—– কোন বীর??
.
—- যাকে রাণী মায়ার সাথে ধরা হয়েছিল!!
.
—- ওকে তো ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।।
.
—- সত্যি কি ছেড়ে দেয়া হয়েছিল?? ছেড়ে দেয়া হলে ওকে পাওয়া যাচ্ছে না কেন??
.
—- পাওয়া যাচ্ছে না??
.
—- নাহ!!
.
—- তাহলে ওর আশা ছেড়ে দেন।।
.
—- কেন??
.
—- কারন ও বেচে নেই।। ওকে নিশ্চয় অন্ধ কুটুরী তে নেয়া হয়েছে।। আর ওখানে নিলে নিশ্চিত মৃত্যু।।
.
কলিজা কেপে উঠল মায়ার।। তাহলে কি ওই বার্বান সম্রাট তাকে মিথ্যা বলেছে?? খানিকটা ইতস্থত করে আবার সৈন্যটা বলল
.
—- যখন খোজ পাওয়া যাচ্ছেনা মানে এই না??
.
মায়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাদঙ্গের ভয়ঙ্কর সুর ন্যায় একটা সুর আসতে লাগল।। তারা তিন জনই চমকে উঠল শব্দে।। সৈন্য আর দাসীটির চোখে মুখে ভয় দেখা গেল।। মায়া বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল এটা কিসের আওয়াজ?? দাসী টা তাড়াতাড়ি মায়ার হাত টেনে ধরে একটু পিছিয়ে নিয়ে ফিস ফিস করে বলল
.
—– সর্বনাশ রাণী মায়া!!! সম্রাট এদিকে আসছেন।। এই সুর সম্রাট এখানে আসার আগে সতর্কতা হিসেবে দেয়া হয়।।
.
মায়ার কলিজা শুকিয়ে যেতে লাগল অলোকের আসার কথা শুনে।। ঠিক সে সময় সম্রাটের আগমন ধ্বনি শোনা গেল।। ভয়ার্ত গলায় দাসী টি বলল
.
.
.
—– রাণী মায়া আ-আমরা কি করব???
.
(চলবে)
Home “ধারাবাহিক গল্প” Every Thing Is Fair In Love And War – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara...