ঠোঁট সতের,

0
319

#ঠোঁট

সতের,
রাধিকার বলে দেওয়া জায়গাতে আমি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এই দাড়িয়ে থাকাটা আমার জন্য স্বস্তিকর নয়। খুব অসস্তিকর অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে আমি। বারবার মনে পড়ছিল ঝরনা সেই চুমু দেওয়ার দৃশ্য টা। আর চুমুটা কেমন যেন ছিল। রস কস ছিল ঠিক । কিন্তু চুমুটা ছিল কেমন যেন একটা আতঙ্কের।মনে হচ্ছিল এই বুঝি শেষ বারের মত ঝরনা তার দুটো ঠোঁট আমার ঠোঁটের উপরে বুলিয়ে দিচ্ছিল। উষ্ণতা আমি খুঁজে পাইনি। তার ঠোঁটের রসের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলাম আমি একটা বাধা।যে রস টা আমাকে বলছিল বারবার তুমি যেওনা এখন কোথাও।

এসব ভাবতে ভাবতে রাধিকা আমার সামনে ব্ল্যাক কালার প্রাডো নিয়ে হাজির হয়।
তার এই প্রাডো গাড়ি দেখে আমি খুব অবাক হয়ে যাই। তাও আবার নিজে ড্রাইভ করে এসেছে।
ব্ল্যাক গ্লাস নামিয়ে আমাকে গাড়িতে উঠতে ইশারা করে।
আমি কোন কথা বলা ছাড়া তার পাশের সিটে গিয়ে বসি। তবে বসার পরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি।

এই গাড়িটা কার?

ও তখন আমাকে গা-ছাড়া ভাবে উত্তর দেয়।
কেন এটাতো আমার গাড়ি।

তোমার গাড়ি মানে। এর আগে তো তোমাকে কখনো এই গাড়িতে আসতে দেখি নি।

নিয়ে আসিনি তাই। আর আজকে ভাবলাম তোমাকে একটু সারপ্রাইজ দিই। বান্ধবী হিসেবে তো এটাতো কমপক্ষে দিতে পারি।

এই গাড়িতে উঠে আমার জন্য কি বা এমন সারপ্রাইজ হবে।

আরে বাবা, এমনও তো হতে পারে এই গাড়িটা তোমাকে সম্পূর্ণ দিয়ে দিতে পারি আমি। তাই না?

মজা করছো

এখানে মজা করার তেমন কিছুই নেই। তোমাকে মোটা অংকের টাকা দিচ্ছি ব্যবসা করার জন্য। আর এই গাড়িটা তো সামান্য একটা ব্যাপার।

তার মুখে এমন কথা গুলো শুনে আমি তাৎক্ষণিক যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এসব কি আমি সত্যি শুনছি নাকি কল্পনা দেখছি চোখের সামনে। ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারছি না।

খুব অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম।

ব্যাপারটা কি বলতো। তোমার কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

থাক তোমাকে কিছু বুঝতে হবে না, এখন যেখানে আছি সেখানে চলো।
তবে আজকে তোমার কাহিনী শুনতে চাচ্ছিলাম।তোমার স্ত্রী ঝর্নার সাথে তোমার পরিচয় কি করে হলো ভালোবাসা কি করে হলো বিয়ে কি করে করলা। সবকিছুই।

আমি তখন বুঝতে পারলাম। রাধিকা তার কথার প্রসঙ্গ উল্টিয়ে অন্যদিকে আমার মন ঘুরাতে চাইছে। তবে সমস্যা নেই কিছু একটা ঘটতে গেলে আমি বুঝে ফেলতে পারব।

আমি তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার গল্প বলতে শুরু করলাম।

ঝরনা আর আমার পরিচয় ফেসবুকে। আমি এক সময় গল্প লিখতাম। সময়ের ব্যবধান আর এখন লেখা হয় না। আর গল্পের নায়িকা যেহেতু আমার সাথেই থাকে।সুতরাং নায়িকা কে আলাদাভাবে কল্পনা করে তাকে আবার লিখে অনুভব করতে আর ইচ্ছা হয় না।তাকে আমি জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে পাশে বসেই অনুভব করতে পারি।
তবে ফেসবুকে পরিচয় এবং চার বছর সম্পর্ক তারপর বিয়ে এসব গল্প শুনলে সবার কাছে খুব অদ্ভুত লাগে। ফেসবুকে সম্পর্ক হয়ে বিয়ে হওয়াটা কি এই যুগেও সম্ভব। এরকম প্রশ্ন অনেকেই করেছে আমাকে। কিন্তু আমার আর ওর ব্যাপারটা একদম আলাদা।
ফেসবুকে এই চার বছরের সম্পর্কে তার সাথে আমার কখনও দেখা হয়নি। তাকে কোনদিন এর সামনে গিয়ে ভালোবাসি বলা হয়নি।কিন্তু এ ফেসবুকে তার সাথে প্রেম করে আমি মাত্র একদিন দেখা করে সে দিনই তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে চলে এসেছি।
সে ছেড়ে আসলো আমার ভরসা করে তার বাবা মা। আর আমি ছাড়লাম আমার পরিবার। কারণ তার পরিবার মানলেও আমার পরিবার মানতো না। মানতো না কারণ হচ্ছে, আমার পড়াশোনা এখনো শেষ হয়নি। আরো অনেক ধরনের কারণ আছে। আর আমার পরিবার যদি না মানে তার পরিবার ও আমার হাতে তাকে তুলে দেবে না। এই কারণেই দুজনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে দুজনের ঘর ছেড়ে বের হয়ে যায়। অথচ তার চেয়ে বয়সে কিন্তু আমি ছোট। আর এটা আমি ভালো করে না জানলেও সে খুব ভালো করেই কোথাও থেকে যেন জেনে গেছিলো। কিন্তু আমাকে সে ছাড়েনি। আর যখন দুজনে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। তখন সে প্রতিজ্ঞা করেছিল আমাকে সে নিজ হাতে গড়ে তুলবে একটা গর্ব অবস্থায় আমাকে নিয়ে যাবে।
তবে সে আমাকে বিশ্বাস করত না। তার ভিতর একটা ভয় ছিল। যদি আমি তাকে ছেড়ে চলে যায়। একা করে। তাহলে তো সে কোন পথে যেতে পারবে না। এই ভয়টা তার ভেতর খুব বেশি ছিল। কিন্তু এখন অতটা নেই। এই দুই বছরে নিজেদের মধ্যে নিজেকে বেশ ভালো করে মানিয়ে নিয়েছি। এই হলো আমাদের সংক্ষিপ্ত ঘটনা, মোট কথা হচ্ছে। আমরা দুজন দুজনের পরিবার থেকে পালিয়ে আছি। আমার যেদিন বড় একটা পজিশন হবে। সেদিন সে আমার হাত ধরে তার পরিবারের সামনে দাঁড়িয়ে বলবে। এই ছেলেটা হচ্ছে আমার বর।
তবে আমাদের প্রেম টা আসলে অদ্ভুত ধরনের ছিল। এতটা দূরে থেকে দুজনে প্রেম করেছি। কিন্তু মনে হতো মাঝে মাঝে, আমরা দুজন দুজনের খুব কাছাকাছি আছি। এটাই ছিল আমার ভালোবাসা পাওয়ার সংক্ষিপ্ত কথা।

রাধিকা আমার মুখে এসব সুনে বলে। হ্যাঁ, তোমাদের দুজনের গল্পটা বেশ দারুন। আর এই জন্যই তোমাদের দুজনের জন্য আমি স্পেশাল কিছু গিফট এনেছি। পেছনে দেখো একটা বক্স আছে ,বক্স টা এখনই খোলো।

আমি কিছু না জিজ্ঞেস করে মুচকি হাসি দিয়ে পিছনে তাকালাম।
পিছনে তাকিয়ে দেখি সত্যিই একটা বক্স। আর তখন বক্সটা কাছে নিয়ে খুলে দেখি। ভেতরে শাড়ি পাঞ্জাবি পারফিউম আরো নানান ধরনের জিনিস আছে।

আমি তখন বকা দিয়ে রাধিকা কে বলি। এসব করার কি দরকার ছিল।
ও তখন হেসে বলে।

এসবের মজা তুমি বুঝবানা। এগুলা মানুষ মানুষকে ভালোবেসে গিফট করে। আর ভাবিকে আমার খুব ভালো লাগে। খুব বেশি ভালো লাগে তার ভালোবাসাটা। সত্যি বলতে, উনি তোমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারে না। আর এই ভালোবাসাটা আমার কাছে খুব অবাক লাগত অদ্ভুত ও লাগতো। তার কেয়ারিং গুলো ছিল খুব অদ্ভুত। তোমাকে একটা ছায়ার মত সব সময় আগলে রাখে। তোমার কপালটা আসলে অনেক লাকি। যার জন্য এমন একটা মেয়ে পেয়েছো জীবনে।

আমি কথা শোনার মাঝেই পারফিউমের বোতলটা নাকে লাগিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম।

কিন্তু তারপরে আমার আর কিছু মনে নেই।

আমার যখন জ্ঞান ফেরে। তখন আমি একটি চেয়ারের সাথে বাধা। আমার পুরো শরীর ভেজা পানিতে। আর চারিদিকে কেমন যেন একটা ভ্যাপসা অবস্থা

Written by-Ibna Imtiaj

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here