আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love] #Season: 02 #Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr] #Part: 15…

0
546

#আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 15…

বিকেলের দিকে রিক্সায় বসে তুর অন্তির কথাগুলো ভাবছিল। কতটা যথার্থতা আছে ওর কথায়। ইহানের সাথে আদৌতেও কী ওর এরকম সম্পর্ক হতে পারে? কিন্তু তা কী করে হয়? ইহান ওর ব্যাপারে এরকম ভাবতেই বা কী করে পারে? ইহান তো ওর ছোট। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না আনহার।

‘আফা আইসা পড়ছি।’

‘হুমম।’ রিক্সা ওয়ালার ডাকে ঘোর ভাঙে আনহার।ও রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

বিকেলের শেষ প্রান্ত গোধূলির অগ্রভাগে সূর্য তার ডিউটি শেষে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। পশ্চিম দিগন্তে ডুবন্ত আলোর ছটায় গোধূলি নিজেকে বিভিন্ন রঙে আচ্ছাদিত করে রয়েছে। লাল, কমলা, হলুদ রঙের আভায় ছেয়ে আছে আকাশটা। কিছুক্ষণের মাঝেই অন্ধকার নিবৃত্ত হবে ধরণীতল। নদীর পাড় ধরে হাঁটার কারণে আলোকবিহীন জলস্থল কালচে হয়ে পড়ছে। ঝিরিঝিরি মৃদু বাতাসে উড়ছে আনহার চুল। অবাধ্য চুল গুলোকে আনমনে বার বার আটকাতে ব্যস্ত আনহা। সে তো তার ভাবনায় বিভোর। তখন থেকে চেতন মনের খেয়ালে অবচেতন মন ইহানের কথাই ভেবে চলেছে।

কিছুদূর যেতেই কারও আওয়াজে থেমে যায় আনহা। সামনে তাকিয়ে দেখে নদীর পাড় ধরে থাকা ঘাটের সিঁড়িতে কতগুলো ছেলে বসে আছে। আশেপাশের মেয়েদের সংখ্যাও নেহাত কম না। কয়েকজন প্রেমিক-প্রেমিকার জুটিও দেখা যাচ্ছে। আনহা সন্তপর্ণে সেখানে ইহানকে খুঁজতে লাগল। কিছুদূর যেতেই চেনা এক কণ্ঠে হাসির শব্দ পেল। এগিয়ে গেল আনহা সেদিকে। এতক্ষণ মুখে হাসির ছটা থাকলেও এবার যেন তা ক্রোধে পরিণত হলো। হবে নাই বা কেন? ইহান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেশ আয়েশে সিগারেট টানছে। পাশে জিহাম বসে নদীরে ঢিল ছুড়ছে।

আনহার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। কেন হলো জানে না। কার উপর তাও জানে না। ইহানের নাকি জিহামের। ইহান সিগারেট খাচ্ছে বলে? নাকি জিহাম কিছু বলছে না বলে। ও দেরি না করে সবার সামনে জিহামের শার্টের কলার ধরে সজোরে থাপ্পড় বসায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যায় জিহাম। গালে হাত দিয়ে নির্বোধের মতো একবার আনহা আরেকবার জিহামের দিকে তাকায়। আনহার এ-কাজে ওখানে বেশ একটা থমথমে ভাব। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কী হয়েছে ব্যাপারটা জানার জন্য। জিহাম করুন চোখে আনহা দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এটা কী হলো আনহা?’

পরক্ষণেই আরেকটা চড় পড়ল জিহামের গালে। বলল, ‘ রেসপেক্ট দিয়ে কথা বল আনহা না। আনহা আপু। তোর সিনিয়র আমি।’

এবার যেন ইহান আর জিহাম দু’জনের চোখ কোটর হতে বেরিয়ে আসার উপক্রম। ইহান দ্বিধান্বিত কণ্ঠে আনহার দিকে তাকিয়ে রইল। ওর নীরবতায় জিহাম কিছুটা ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, ‘আপু বলব মানে? তোমার বয়স আমার বয়স সেইম। হতে পারি তোমার এক ক্লাস জুনিয়র।’

‘এ তোর লজ্জা করে না আমার বয়সী হয়ে জুনিয়র হয়েছিস।’

‘আমি…’

তখনি ইহান কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল, ‘জিহাম চুপ কর। আর আন…’ থেমে গেল ইহান। ওকে আনহা বলাতে যদি ক্ষেপে যায়। জিহামের মতো ওর গালেও থাপ্পড় বসায়? ভাবতেই গলা খাঁকারে ইহান বলল, ‘দেখুন আনহা এভাবে সিনক্রিয়েট করবেন না। পাব্লিক প্লেস সবাই দেখছে। এ’কথায় আনহা ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। ভ্রু নাচিয়ে বলে, ‘আমি কী করব তোকে বলব?’

আনহার মুখে তুই কথাটা শুনে ইহান স্তব্ধ। অযাচিত তুই বলে সম্মোধন করার পাত্রী তো আনহা নয়। তাহলে এর মানে কী?

ইহানের ভাবনার মাঝেই আনহা ওর দিকে এগিয়ে গেল। ওর মুখোমুখি দাঁড়াতেই আনহা ওর কাঁধ বরাবর হলো। ইহান কিছুটা দূরে সরে প্রশ্ন করল, ‘কিছু হয়েছে?’

‘আমার কী হবে? কিছু না। কিন্তু কাল যদি আমার লকেট না পাই তাহলে অনেক কিছু ঘটাব। ভালোও ভালোও আমার লকেট ফেরত দিয়ে যাবি কাল।’

রেগে যায় ইহান। বলে, ‘একটা লকেটের জন্য এমন করছেন কেন? হাজার টাকার জিনিস?’

‘তার চেয়েও বেশী। কারও দেওয়া উপহার ছিল সেটা। ছোটবেলা থেকে আগলে রেখেছি। অনেক দামি লকেটা আমার জন্য। তাই কাল যদি না পাই..
আমি জানিনা কী করব?’

বলেই ধরে হাঁটা ধরল আনহা। কিছুদূর যেতেই পেছন ফিরে তাকাল ইহানের দিকে। ইহান এখনো বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে। আনহা হালকা হাসল। তারপর চলে গেল সেখান থেকে।

ও যেতেই জিহাম ওর কাছে আসে। ইহানকে বলে, ‘এটা কী করল বলত অয়ন? ও শুধু শুধু আমাকে মারল কেন? আমি কী করেছি? আর কীসব বলে গেল? সিনিয়র, জুনিয়র মানে কী এসবের?’

ইহান চিন্তিত মুখে বলল, ‘আমিও তো তা বুঝতে পারছি না।’ পরক্ষণেই পিছন ফিরে আনহার হাসির কথা মনে হলো। এবার যেন না চাইতেও ব্যাপারটা জট পাকিয়ে গেল। যাওয়ার আগে আনহা হাসল কেন?

রাত ১০টা…

আনহা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আদা দেওয়া লাল চা খাচ্ছিল। হঠাৎই নজর যায় নিচে। বাইকে বোধহয় দুইটি ছেলে বসে আছে। উপর থেকে চেহারা ভালো মতো বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা কিছু নিয়ে কথা বলছে। আনহা ভালোভাবে লক্ষ্য করল ছেলে দু’টোকে দুজনেই স্বাভাবিক রয়েছে। বেশী কিছু চিন্তা করল না ও। সেখান থেকে রুমে চলে গেল। অন্তি বিছানায় মোবাইল টিপছে। মেয়েটা সারাটাদিন মোবাইলের ভেতরে যে কী পায় কে জানে? মোবাইলের ব্যাপারে কিছু বলাটাও বোকামি। তাই আনহা ওর পাশে গিয়ে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।

কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আনহা ধড়ফড় করে উঠে বসল। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে অন্তির দিকে তাকায়। অন্তি মুখ বিধ্বস্ত হয়ে আছে। বলে চলে আরেকটু হলে কেঁদেই দেবে। আনহা চিন্তিত মুখে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে তোর?’

অন্তি বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠল। বলল, ‘তোরে বলছিলাম না তুই ঐ শয়তানের নাম করবি না। দেখ তুই নাম করছোস আর ও হাজির?’

‘ও হাজির মানে? ইহান আসছে নাকি?’

‘আহা! ইহান আসছে নাকি বাসায়!’ ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলে আবার ভ্যা করে উঠে বলল, ‘নিচে দাঁড়িয়ে আছে।’

‘তা তুই কাঁদছিস কেন?’

‘হারামি এমনি এমনি দাঁড়ায় নাই। বালডায় নেশা কইরা দাঁড়াই আছে। আমাকে ফোন কইরা ধমকি দিতাসে আমি যদি নিচে না যাই তাহলে মাইক নিয়ে ঢেরা পিটাই বলবে আমি নাকি ওরে ছ্যাকা দিসি?’ বলেই কান্না করে দিল।

‘ছ্যাকা দিছোস মানে! তুই আবার কবে ইহানরে ছ্যাকা দিলি?’ অবাক হয়ে জানতে চাইল আনহা।

অন্তি নাক মুছে বলল, ‘আমি ওরে ছ্যাকা দিতে যামু কেন? ওর সাথে কি আমার প্রেমের সম্পর্ক? কুত্তাডায় ব্লাকমেইল করতাসে? কইতাসে মাইক দিয়ে রাত ১২টা বাজে সবারে জানাইবো। কল দিছে কেটে দিছিলাম বলে ম্যাসেজ করে বলছে এই দেখ মেসেজ।’

অন্তি আনহাকে মেসেজটা দেখায়। আনহা মেসেজটা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তারমানে তখন যে দু’টো ছেলেকে দেখেছিল তা জিহাম আর ইহান ছিল। কিন্তু ওরা তো স্বাভাবিক। তখনি ঘড়ির দিকে নজর যায়। দু’ঘন্টা হয়ে গেছে। ১২টা বাজে। ও ঘুমিয়ে গিয়েছিল তাই বলতে পারবে না।

‘ওই আনহা এখন কী করমু?’

‘আচ্ছা তুই ভয় পাচ্ছিস কেন বলত? তুই কী সত্যি সত্যি ছ্যাকা দিছোস যে ভয় পাবি?’

কথাটা শুনেই অন্তি ওর মাথায় গাট্টা মারল। বলল, ‘আব্বে সালি সেটা ইহান জানে আর আমরা জানি। পাড়ার লোক, আমার বাব-মা তো জানে না। তাছাড়া পাশের বাসায় আমার বিএফ থাকে। ও যদি জানতে পারে তাইলে…। তারচেয়েও বড় কথা ইহান আমার ছোট। এখন যদি কেউ বলে—প্রেম করবি ভালো কথা বয়সে ছোট ছেলের লগে করতে গেলি কেন? বড়গুলা কী মরছিল। আর করছোস যখন ছ্যাকা দিলি কেন? ভাবতে পারোস কী হইব? ঐ সালায় কী চাল খাটাইছে?’

ভাবনায় পড়ে গেল আনহা। ইহান এমনটা কেন করছে? তখনি মনে পড়ে জিহামকে মারার কথা! ইহান ভেবেছে লকেটের কারণে জিহামকে মেরেছে। তাই তার প্রতিশোধ নিতে ও অন্তিকে টার্গেট করেছে। সর্বনাশ এই ছেলের কোনো বিশ্বাস নাই। ও পারে না এমন কোনো কাজ নাই। সত্যি যদি মাঝ রাতে মাইক নিয়ে এমন কিছু করে তাহলে তো কারণ পরে দশানো হবে। বদনামি আগে হবে। ইহানের যে মেন্টালিটি ও তো এটাও ভাব্বে না এতে অন্তির কী হবে।

আনহার ভাবনা শেষ না হতেই মোবাইলে আওয়াজ আসলো। মেসেজ করেছে ইহান। তাতে লেখা, ‘কিরে ছলনাময়ী নাগিন নিচে আসবি নাকি উপরে উঠে তোর বিষ দাঁত ভাঙমু। না সবাইরে তোর আর আমার কিউট প্রেমের সম্পর্ক বলমু। ৪৫ সেকেন্ড টাইমে নাইলে… মাইক আনছি মাইকেলাস করতাম আপনি আমার বাচ্চার মা হওয়ার কথা বলে আমাকেই অনাথ করে দিছেন।’

মেসেজটা পড়ে অন্তি আনহাকে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘আনহা এবারের মতো বাঁচাই দে। কসম কাইটা কইতাসি বইন ভবিষ্যতে ইহান তোরে টাইনা নিলেও আমি কিছু কমু না।’

অন্তির এ-কথায় আনহার মুখে অন্ধকার নেমে এল। এখন কী হবে? ও ভেবেছিল ইহান ওকে কিছু বলবে। কিন্তু ফাজিলটা ওর ধারণা মিথ্যে করে অন্তিকে টার্গেট করল। ইসস! কেন যে জিহামকে মারতে গেল। এর চেয়েও ওকেই দুইটা দিলে পারত। অন্তিকে তো ফ্যাসাদে পড়ত হতো না। কিন্তু এবার কী হবে?

.
.
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
ভুল-ভ্রান্তির থাকতে পারে। চেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here