🍁আরহাম🍁 #The_Innocent_Boy #Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা #পর্ব (২৮)

🍁আরহাম🍁 #The_Innocent_Boy

#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা

#পর্ব (২৮)
_________

তোর এই অবস্থা কেন কিভাবে হলো? খুব কি বেশি লেগেছে? ডাক্তার এর কাছে চল তাড়াতাড়ি, কি যে করিস না বাবু তুই আমার ভালো লাগে না কিছু। কেন যে সাবধানে চলিস না আর সারাদিন কোথায় ছিলি জানিস আমি কতোটা টেনশনে ছিলাম? এক দমেই কথা গুলো বলে চললেন আরহামের মা।

-রিলাক্স মা, আমি ঠিক আছি সামান্য একটু লেগেছে। কিন্তু আহনাফ কার সাথে এলো? (আরহাম)

-তোকে কল করেছিলো তুই ধরিসনি তাই তার বন্ধুর বাবার গাড়ি দিয়ে এসেছে। তুই ঔষধ এনেছিস আর কোথায় লেগেছে তোর? (মা)

-আর কোথাও লাগেনি শুধু নাকেই একটু। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি মা খাবার দাও খিদে পেয়েছে খুব।(আরহাম)

-আচ্ছা আয় আমি দিচ্ছি আহনাফ উঠ তুই ও খাবি এখন। (মা)

-ওক্কে মাম আসছি (আহনাফ)

মিরহাদ বাড়ি ফিরেই কারো দিকে তাকায় না। সোজা নিজের রুমে দৌড়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। জিনিয়ার এনগেজমেন্ট এর কথা শোনার পর থেকে সে যেন নিজের মধ্যে নেই। মৃত্তিকে নিয়ে বাড়ি এসেছে তার মা বাবা এখন হাজারটা প্রশ্ন করবে আর মৃত্তি যদি কিছু না ভেবেই সবটা বলে দেয় তাহলে বাবা মায়ের কি অবস্থা হবে সেটা তার মাথা থেকেই বেড়িয়ে গেছে।

মৃত্তি বাড়ি এসেই আগে বাবার রুমে গেল।তার বাবা খাটের কর্ণারে একটা বালিশে হেলে আধশোয়া অবস্থায় আছে চোখ দুটো বুজে।
মাও বিছানার পাশেই একটা চেয়ারে হেলে বসে আছে। মৃত্তি ঘরে ঢুকতেই তার মা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তার বাবা তখনও চোখ বুজে আছে।

-“কোথায় ছিলি সারাদিন কার সাথে গিয়েছিলি না বলে?” অগ্নিচোখে তাকিয়ে মৃত্তির মা কথা গুলো বলছিলেন।মৃত্তির মায়ের রাগী কন্ঠ শুনে তার বাবা চোখ খোলেন।

মৃত্তি মায়ের চোখ রাগানিতে ভয় পায় না কখনোই। তবে আজ বাবাকে বিছানায় অসুস্থ পরে থাকতে দেখে তার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। সে বাবার পাশে বসে কাঁদো কাঁদো গলায় জিজ্ঞেস করতে লাগলো “কি হইছে আব্বা এমন অসুস্থ লাগতাছে ক্যান।” বাবা এবার কপট রাগের সুরে বললেন “তার আগে আফনে কন সারাদিন কই ছিলেন? আমি যে পাগল হিয়া যাইতাছিলাম আফনেরে না দেইখা। কেন করলেন এমনডা।”

-“আব্বাজান আমি তো জিন….” আর কিছু বলার আগেই মির রুমে ঢুকলো আচমকা। তার এমন করে সামনে আসাতে কিছুটা অবাক হয় তার বাবা আর মা।মৃত্তি সব বলার আগেই মিরহাদ বলল “বাবা মৃত্তিদের আজ পিকনিক ছিলো তাই কোন কিছু না জানিয়েই গিয়েছিলো। আমি এখন সেখান থেকেই নিয়ে এসেছি তাকে।” (মিরহাদ)

-“তাই বইলা আজকার দিনে!! রোহানের আব্বা মায় আইছিলো ওরা কি ভাবছে জানেন আফনেরে লইয়া?” মৃত্তির দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল তার বাবা।

-আব্বা আমারে মাফ কইরা দেন আমি আর এমন করুম না বুল হইয়া গেছে। (মৃত্তি)

-“কিসের মাফ হ্যা, তোর জন্য কি অবস্থা হয়েছিলো তোর বাবার।যদি কোন অঘটন ঘটে যেত তোর সাথে তোর বাবা মরে যেত” খুব রাগী স্বরেই বললেন তার মা।

মৃত্তি, মিরহাদ দুজনেই মায়ের কথায় আৎকে উঠলো সত্যিই তো বলছে মা। দু’জনের চোখেই পানি। তার বাবা বুঝতে পেরে সবইকে স্বাভাবিক করতে বলে উঠলেন “আমার খিদা লাগছে আল্লাহ জানে আজকা মিরের মায় আমাগো খাওয়াইব কিনা?”

দু ভাই বোন এবার বাবার সাথে তাল মিলিয়ে টিপ্পনী কাটলো “হুম, না খাওয়াইয়া মারবো আজকে।”

তার মা এবার মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে যেতে ” খাবার টেবিলে রাখা আছে খেয়ে আমায় উদ্ধার করে আসুন সবাই।”

রোহান বাড়ি এসে প্রায় আধ ঘন্টা যাবৎ বাথরুমে ভিজছে। চোখ দু’টো আর বুকের ভেতরটা খুব জ্বলছে। কাপড় গুলোও খোলেনি শুধু মোবাইল আর ওয়ালেটটা বেডে রেখে এসেছে। চোখ বন্ধ করে ভিজছে হয়তো কান্না আসছে কিন্তু কি করবে সে তো ছেলে। অত সহজে কান্না করাটা তার শোভা পায় না। বার বার কানে বাজছে কনস্টেবল এর কথা তাদের লিগ্যালি বিয়ে হয়ে গেছে। তার নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড আর তার হবু বাগদত্তার না হবু বাগদত্তা আর রইলো কই।সে তো এখন বন্ধুর বউ ভাবতেই খুব জোরে আঘাত করে দেয়ালে। কাকে দোষারোপ করবে বন্ধুকে, মৃত্তিকে নাকি ভাগ্যকে। হ্যা, দোষ একমাত্র তার ভাগ্যের নয়তো মৃত্তি, আরহাম তো দু’জনকে ভালো করে চিনেই না। সেখানে বিয়ে কেন করবে? আরহাম তো মিরহাদকে সহ্যই করতে পারে না তার বোন মৃত্তি জানলে নিশ্চয়ই কোন পরিস্থিতিতেই বিয়ে করতো না। সব দোষ আমার ভাগ্যের” বলেই নিচে বসে পড়লো রোহান। আরও কিছু সময় ভিজে তারপর বের হয়ে এলো বাথরুম থেকে।

আরহাম রুমে এসে শার্ট খুলে নিচে ফেলে দেয় রাগে তার শরীর কাঁপছে। মায়ের সামনে বহু কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেও এখন আর পারছে না। শুধু সারাদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা চোখে ভাসছে তার। আর সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে তার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষটিকে। কেন আজ দুইটা বছর পর মিরহাদ তার সামনে এলো আর মৃত্তিই বা কেন তার বোন হলো।

হঠাৎই আবার মাথায় এলো মিরের তো একটাই বোন তাহলে মৃত্তি কি করে তার বোন? আমি যে কয়বার ওদের বাড়ি গিয়েছি কখনোই এই মেয়েকে দেখিনি। তবে যাকে দেখেছিলাম দু বার সেই মেয়েটা দেখতে মৃত্তির সাথে যে থাকে তার মত লাগতো। ড্যাম ইট, কি ভাবছি আমি জাহান্নামে যাক তারা। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে মা আর ভাইয়ের সাথে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোতে চলে গেল আরহাম। কিন্তু ঘুম তো চোখেই নেই যেন কোথায় উড়ে গেছে। ঘুম আসছেনা মৃত্তিরও।

ঘুম নেই মিরের চোখে না আছে জিনিয়ার। শুধু ঘুমিয়ে আছে রোহান তবে এমনি এমনি না কড়া ডোজের দুইটা ঘুমের ট্যাবলেটের সাহায্যে। কারণ সে জানে আজ আর ঘুম এমনি এমনি আসবে না। আর না ঘুমাতে পারলে বুকের কষ্টটাও কমবে না।

মৃত্তি বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটালো কিছু সময়। কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। একবার মনে হচ্ছে জিনিয়াকে কল করবে আরেকবার ভাবছে কল করে কি বলবো? জিনিয়া তো আমার আশায় বইসা ছিলো আমি এনগেজমেন্ট ভাঙবো বইলা কথা দিছি। হেলাইগ্যা তো ও ভাইয়ারে ও কিছু জানাইতে পারে নাই।

মৃত্তি জিনিয়া আর মিরকে নিয়ে হাজারো কথা ভাবছে কিন্তু তার মাথায় একটিবারও আসছে না আজ তার জীবনে কি ঘটেছে। বিয়ে একটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় একটা চাওয়া। তারও ছিলো কিন্তু তার চাওয়াটা এভাবে পূরন হয়ে গেল আর সে টেরই পেল না। হয়তো এই সম্পর্কটা তার অজান্তে গড়েছে আবার অজান্তেই শেষ হয়ে যাবে।

একটা দিনে পাঁচটা জীবনে একসাথে বিপর্যয় নেমে এসেছে আর সবটাই তাদের অন্তরালে। পাঁচটা জীবনই যেন একসাথে থেমে গেছে।

সকালে,