হলুদ_খামে #পর্ব_২

0
770

#হলুদ_খামে
#পর্ব_২
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

কামড়া কামড়ির অভ্যেসটা তোমার আদৌ গেলো না জান! চিন্তা করো না, বিয়ের পর যেখানে ইচ্ছে সেখানে কামড়াতে দেবো তোমায় হা হা হা। তবে কামড়ে হোক কিংবা দাঁত বসিয়ে আমার হাতে তোমার ভালোবাসার চিহ্ন দু’বছর পর আবার বসে গেলো।

বার বার সে কথা মনে না করিয়ে দিলে হয় না? আমি দু’বছর আগের কোনো কথা কিংবা স্মৃতিই আর মনে করতে চাই না।

— তুমি না চাইলেও তোমাকে বার বার দু’বছর আগেই ফিরে যেতে হবে জান। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো, বার বার নিয়ে যাবো। ভুলতে দেবো না তোমাকে সেই দিনগুলির কথা। আমাদের প্রথম ভালোবাসার কথা, প্রথম অনুভূতির কথা তোমাকে আমি কিছুতেই ভুলতে দেবো না।

ভালোবাসাটা শুধু একতরফাই ছিলো তামিম। কেনো বোঝার চেষ্টা করছেন না? আমি আপনাকে সেই দিনগুলিতেও ভালোবাসি নি এখনও ভালোবাসি না। একতরফা ভালোবাসা কখনই পূর্ণতা পায়না তামিম, প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।

— অপেক্ষায় থাকবো আমি, আমাকে ভালো তুমি বাসবেই। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবেই, সেদিনটার অপেক্ষায় দিনের পর দিন বসে থাকবো আমি। আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে ভালোবাসবেই, প্রয়োজন পড়লে বাধ্য করবো তবুও তোমাকে ছাড়া থাকা অসম্ভব। সো প্লিজ, আমাকে কনভেন্স করে তুমি এ বিয়েটা আটকাতে পারবে সে আশা বাদ দিয়ে দাও জান। বিয়েতে ফোকাস করো, ভাবছি তুমিই যদি সব থেকে বেশি হাই লাইট হয়ে থাকো তখন তো আমাকে আর কেউ পাত্তাই দেবে না। শত শত মানুষ আর ক্যামেরার ভিড়ে আমি এক কোণে পড়ে থাকবো। এত বড় কোম্পানির এক মাত্র মালিক কিনা কারো কাছে পাত্তাই পাবে না, ভাবো একবার জান!

আমি কি করে বোঝাবো তামিম, আপনাকে আমি ভালোবাসতে পারবো না। আমার সবটুকু ভালোবাসা জুড়ে যে অন্য কেউ আছে। খুব যত্নে, খুব গোপনে। সে ফিরে আসবে, তাকে ফিরে আসতেই হবে। আমাকে দেয়া তার প্রতিশ্রুতী সে পুরোন করবেই, সে আমাকে কথা দিয়েছে সে ফিরে আসবে।
🍁
🍁
🍁

বাড়ি ফিরে তামিমকে নিয়ে শপিংয়ে কি কি কিনলাম তার বর্ণনা মায়ের কাছে দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। একে তো এ বিয়ে নিয়ে শুরু থেকেই আমার মন খারাপ তার উপর বার বার তামিমের কথা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত। কি করে মাকে বোঝাই আমি এ বিয়েতে খুশি নই, কি করে মাকে বোঝাই আমি কারো কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ? কি করে বোঝাই সবাইকে আমি তামিম কে চাই না অন্য কাউকে চাই?
🍁

রুমে এসে আমি সোজা ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম। এখন শরীর মন সব কিছুই ঠান্ডা রাখতে হবে’; তবেই মাথা কাজ করবে আমার। তামিমের হাত থেকে যে করেই হোক আমাকে বাঁচতেই হবে। এ বিয়েটা কোনো ভাবেই হতে দেয়া যাবে না।

ইচ্ছে হয় এই হলুদ খামের চিঠিটা হাজার বছর ধরে আমার বুকে আগলে রাখি। মানাফ কবে তুমি আসবে? আমার যে তোমাকে খুব প্রয়োজন। দ্রুত এসো, তোমার অপেক্ষায় আমি ক্লান্ত মানাফ। এই হলুদ খামের একটা চিঠিই তোমার শেষ স্মৃতি, এই চিঠি নিয়েই বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছি আমি। আর ধৈর্য্য রাখতে পারছি না মানাফ। তোমাকে দেখার তিব্র অসুখ আমাকে পেয়ে বসেছে। খুব ইচ্ছে করে তোমাকে একটু ছুঁয়ে দিতে। তুমি দেখতে কেমন খুব জানতে ইচ্ছে করে। তুমি আমার সেই পুরোনো মানাফই আছো কিনা খুব দেখতে ইচ্ছে করে। জানো মানাফ এই চিঠি আমি হাজার বার পড়েছি, এই চিঠির ঘ্রাণ সেই আগের মতোই আছে। কলমের কালিগুলো কাগজের সাথে মিশে যাচ্ছে তবুও সেই পুরোনো অনুভূতি, তোমার পুরোনো স্পর্শ। আমি কিছুতেই এ বিয়ে করতে পারবো না মানাফ, তোমাকে আমি কথা দিয়েছি আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। তোমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতী গুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে মানাফ… আমার দেয়া হলুদ খামের চিঠিটাও কি তুমি আমার মতো আগলে রেখেছো? নাকি ভুলে গেছো সেই চিঠির কথা? ভুলে গেছো আমাকে?
🍁
🍁

ভুলিনি জান, আমি কিছুই ভুলিনি। তোমাকে দেয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতীর কথা আমার মনে আছে। তোমার দেয়া হলুদ খামের শেষ চিঠির প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে আমি আজও তোমার ঘ্রাণ পাই। আমি ফিরে এসেছি জান, তোমার সেই মানাফ ফিরে এসেছে। কিন্তু আফসোস এতো কাছে থেকেও তুমি আমাকে চিনতে পারলে না। আমি বলব না আমি ফিরে এসেছি, তোমাকে চিনে নিতে হবে জান। আমার সেই ছোট্ট তানহা আমাকে কি করে চিনতে পারে আমিও দেখতে চাই। তোমাকে আমি আমার করেই নেবো, এবার তুমি আমাকে চিনতে পারো কিনা সেটাই দেখার বাকি। একবার পালিয়েছো তুমি আমার হাত থেকে আর পালাতে দেবো না জান।
🍁
🍁

— এটা ঠিক না ভাইয়া, তুই বলেছিলি তুই আজকেই বলবি। তোর কথা মতো আমি তোর জন্য রং চা বানিয়ে ছাদে নিয়ে এলাম। চা খেয়ে এখন বলছিস আজ না অন্যদিন বলবি! এই অবিচার আমি সহ্য করবো না! আমার চা ফিরিয়ে দে, না হয় আমাকে এখনই বল তোর সেই কাহিনী।

অপেক্ষা কর, বেশি না এক ঘন্টা পরই ওয়াশরুমে যাবো। আমি বের হয়ে গেলেই তুই তোর চা ওয়াশরুম থেকে নিয়ে নিস।

— ছিঃ ভাইয়া তুই কি খাটাস, এটা আমাকে বলতে পারলি? আমি তো ভেবেই পাইনা তানহা আপু তোর কি দেখে বিয়ে করছে ছিঃ।

কানের নিচে দেবো একটা, সে তোর কোন সম্পর্কের বড় বোন লাগে? ওকে আপু বলছিস কেনো, ভাবি বল ভাবি। দু’দিন পর তানহা আমার বউ হয়ে এ বাড়িতে আসবে তখন আপু ডাকলে তোর কান ছিড়ে ফেলবো।

— তুই বলবি না তাহলে?

না বলবো না, কি করবি শুনি?

— পরে চিল্লাবি না কিন্তু…..

মালিহা দাড়া, চিঠিটা দে বলছি। ভালো হবে না কিন্তু মালিহা, কান টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি তোর। ওফফো, ওয়েট ওয়েট বলছি বোন বলছি ; সব তোকে বলছি, এবার আমার চিঠিটা দে প্লিজ।

— হুহ আগেই বলেছিলাম, এটা নিশ্চয়ই তানহা আপু… ওপস ভাবি তানহা ভাবির চিঠি? লুকিয়ে লুকিয়ে তোরা চিঠিও আদান প্রদান করিস? বাহ্ ভালোই উন্নতি হচ্ছে তোদের। তা বলছি যে, এ যুগে চিঠি.. মানে হলুদ খামে পুরোনো কাগজের চিঠি; একটু কেমন কেমন না?

তোকে এতো চিন্তা করতে হবে না, আমার জিনিস আমাকে দে…
🍁
🍁

দু’বছর আগের সেই একটা মাসের কথা তোর মনে আছে? আমার বান্দরবান ট্যুরের কথা?

— তা আর বলতে, ওফফ্ সবাই কি ভয়টাই না পেয়েছিলো তোর জন্য। মা তো প্রতিটাদিনই তোর কথা মনে করে কাঁদতো। সেখানকার এমন একটা থানা বাদ পরেনি যে বাবা তোর মিসিং ডায়েরী করেনি।
🍁
🍁

আমরা সাত বন্ধু সেখানে যাওয়ার প্লেন করেছিলাম। আমি নাঈম রেহান আরিফ নিলা সুবর্ণা আর মিথিলা। এক সপ্তাহের ট্যুরের প্লেন করে রওনা দিয়েছিলাম বান্দরবান। টানা আট ঘন্টার জার্নি করে দুপুরে পৌছে লাঞ্চ করে সবাই বিকেল পর্যন্ত ঘুমিয়েছিলাম। প্লেন মতো বিকেলে সবাই ঘুরতে বের হয়েছি, ক্যাম্পের কাছের এক ঝর্ণার পাশেই সবাই হাঁটছিলাম। ওরা সবাই দু’জন দু’জন করে হাঁটছিলো, কাপল হলে যা হয় আরকি। ওদেরকে স্পেস দিতেই আমি সবার থেকে একটু পেছনে, আলাদা হাঁটছিলাম। ঝর্ণার কাছটায় আসতেই দেখি দুই থেকে তিনটা মেয়ে পানিতে নেমে খেলছে, ওমম না না খেলছে বললে ভুল হবে দেখে মনে হচ্ছিলো গোসল করছে। আমার কি হয়েছিলো জানিনা, আমি এক পা দু পা করে ঝর্ণার কাছেই চলে যাচ্ছিলাম।

একটু কাছে যেতেই ঝর্ণার পাশের একটা ছোট্ট ঝোপের ভেতর একটা মেয়েকে দেখতে পেলাম। আরো একটু কাছে গিয়ে দেখি…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here