হলুদ_খামে #পর্ব_৩ #Adharer_Musafir

0
558

#হলুদ_খামে
#পর্ব_৩
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

একটু কাছে যেতেই ঝর্ণার পাশের একটা ছোট্ট ঝোপের ভেতর একটা মেয়েকে দেখতে পেলাম। আরো একটু কাছে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে পেছন থেকে জামার চেইন লাগানোর চেষ্টা করছে।

ভেজা চুল গুলি সামনে এনে হাত দিয়ে চেইন ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। আমি যেনো এক ঘোরে চলে গেলাম। কাছে গিয়ে পেছন থেকেই তাকে বললাম, আমি কি হেল্প করবো?

আমার কথা শোনার সাথে সাথে মেয়েটা পেছন ফিরে তাকালো। পেছনে ফেরার সাথে সাথেই আমার মুখ হা হয়ে গেলো। যেনো কোনো জল পরি মাটিতে উঠে এসেছে। ভেজা চুলে দু’চোখের কাজল লেপ্টে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো, সম্পূর্ন মুখেই পানির ছিঁটে ফোঁটা। কাঁপা কাঁপা ভেজা ঠোঁট জোড়া কাঁপছিলো।

আমি তাকিয়েই ছিলাম মেয়েটার দিকে। ঐ একবাক্য বলার পর আমার আর কথা বলার মতো কোনো ভাষা ছিলো না। মস্তিষ্ক বলছিলো ছিঃ তামিম কি করছিস তুই চোখ নিচে নামা। কোনো ভাবেই এই অবাধ্য চোখ আমার মস্তিষ্কের কথা শুনছিলো না।

আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটির চোখে মুখে একটা আতঙ্ক দেখতে পেলাম। আমাকে বোধহয় মেয়েটা ভয় পাচ্ছে, হয়তো ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমাকে বখাটে ছেলে ভাবছিলো, কিংবা আমি তার ক্ষতি করে দেবো সেটাই ভাবছিলো। সে যাই হোক, মুখ বন্ধ করে তাকে পুনরায় কিছু বলতে যাবো তার আগেই তাড়াহুড়ো করে পাশের ডাল থেকে ওড়না হাতে নিয়ে গায়ে-মুখে পেঁচিয়ে নিজেকে ঢেকে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

তার এমন দ্রুত প্রস্থানে আমার হুস ফেরে, বেহায়ার মতো একটা কাজ করে ফেলেছি সেটা তখন বুঝতে পেরে নিজের মাথায় নিজেই গাট্টি দিলাম।

ঝোপের কাছ থেকে বের হয়ে আশ পাশে চোখ বুলাচ্ছিলাম, যদি আবার মেয়েটির দেখা পাই সেই আশায়। এর মধ্যে আমার বন্ধুরাও চলে আসে। তাদের সাথে ঝর্ণার কাছে এসে সেই মেয়েগুলোর মধ্যে আমার দেখা জলপরিটাকেও খুঁজতে লাগলাম।
🍁
🍁

সেদিনের পর আরো দু’দিন কেটে যায়। প্রতিদিনই বান্দরবানের এলাকাগুলো চষে বেড়াচ্ছিলাম। মনে মনে আমার জলপরিটাকেও খুঁজে যাচ্ছি, কে জানে কোথায় আছে। তবে এবার তাকে খুঁজে পেলে খুব করে বকে দেবো। সেদিন আমার সাথে কথা না বলেই চলে গেলো কেনো?

প্রথম দেখাতেই মেয়েটির সাথে কেনো যেনো একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছিলাম। বার বার চোখে সেই ভেজা চুল আর ঠোঁটের শীতল কাঁপুনি ভেসে আসছিলো। কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছিলাম না। এই দু’দিনে বান্দরবানের অনেক যায়গায় তাকে খুঁজেছি কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ, কোথাও তাকে পেলাম না।

সেদিন ক্যাম্প থেকে আমরা সাতজন হোটেলে উঠেছিলাম। ভালো লাগছিলো না কিছুই, কি যেনো নেই নেই মনে হচ্ছিলো। ভেতর থেকে খুব অস্থিরতা কাজ করছিলো।

রাতে হোটেলের ছাদে উঠে রেলিংয়ের কাছটায় দাড়াবো, তার আগেই কারো সাথে সজোড়ে ধাক্কা খেলাম। খুব রাগ হচ্ছিলো আমার। একে তো মন খারাপ; তার উপর এভাবে ধাক্কা খেয়ে মেজাজটাই বিগড়ে গেলো। যদিও দোষটা আমার তবুও নিজের দোষ সামনের মানুষটার দিকে ছুড়ে তার মুখ বরাবর খুব জোড়ে একটা থাপ্পড় দিলাম।

হাইটে আমার থেকে তিন থেকে চার ইঞ্চি খাটো হবে। প্রথমে না বুঝলেও থাপ্পড় দেয়ার পর বুঝলাম আমি যাকে থাপ্পড় দিয়েছি সে একটা মেয়ে। রাতের অন্ধকারে এপাশের ছাদে কোনো লাইট নেই। খুব বেশি আলো না হলেও চাঁদের আলো আর আবছা লাইটের আলোয় বুঝেছি সে মেয়ে। চেহারা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না, তবে গায়ের রংটা যে ফর্সা তা ঢের বোঝা যাচ্ছে। খুব সম্ভবত মেয়েটি শাড়ি পড়েছে। এক হাতে শাড়ির আচল শক্ত করে ধরে আছে আরেক হাত গালে।

তবে সে যেই হোক, রাগ আমার এতটুকুও কমেনি উল্টো আরো বেড়ে গেছে। রাগ মিশ্রিত কন্ঠে মেয়েটিকে বললাম- “রাত কানা নাকি আপনি? দেখতে পান না চোখে?” বলেই ফোনের আলো তার মুখের উপর ধরলাম।

ফোনের আলো মেয়েটির মুখের উপর ফেলতেই আমার ছোয়াল খুলে গেলো। এখন মনে হচ্ছে জীবনের সব থেকে বোকা কাজটা আমি করে ফেলেছি মেয়েটিকে থাপ্পড় দিয়ে। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে বড় গর্ধব উপাধি দিয়ে দিলাম।

গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেদিনের মেয়েটা; সেই জলপরিটা। চোখ ছল ছল করছে, মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেললেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়বে। ওফফ্ কি করলাম আমি এটা! নিজের গালেই এখন ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে আমার।

খুব কষ্টে ঠোঁট নেড়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আমাকে বললো- “দেখতে পাইনি, ক্ষমা করবেন” বলেই সেদিনের মতো দ্রুতগতিতে মুহূর্তের মধ্যেই দৌড়ে নিচে চলে গেলো।

আমি তখনও বোকার মতো মুখ হা করে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি, খুব রাগ হচ্ছে নিজের প্রতি। রেলিংয়ের কাছে গিয়ে থাপ্পড় দেয়া হাতে জোড়ে জোড়ে ঘুষি দিতে থাকলাম। তবুও যেনো রাগ মিটছেনা আমার। ইশ একটাবার কথা বলতে পারলে খুব ভালো হতো। কোন মুখে তার সামনে যাবো আমি এখন? তবে যাই হোক, তাকে যে খুঁজে পেয়েছি এই বেশ। বাঁকা হেসে ছাদের কার্নিশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নিচে চলে এলাম।
🍁
🍁

সকালের খাবার খেয়ে বন্ধুদের নিয়ে বাহিরে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই জলপরির দেখা পেলাম। এই যাহ্ তাকে বার বার জলপরি কেনো বলছি? নাহ্ আজ যে করেই হোক তার নাম জানতে হবে। আর যাই হোক ক্ষমা তো চাইতেই হবে।

বন্ধুদেরকে চলে যেতে বলে আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছি তার দিকে। হোটেলের সামনের কদম গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আনমনে কি যেনো ভাবছে আমার জলপরি। তাকে দেখে একদম কবি কবি মনে হচ্ছে। অথচ তাকে এক পলক দেখে যে কোনো কবিই হাজার লাইনের কবিতা লিখে ফেলতে পারবে তা আমি দলীল দিয়ে লিখে দিতে পারি। কাছে গিয়ে তাকে বললাম- “এই যে শুনছেন” আমার তিন শব্দের স্পষ্ট ডাকেও তার কোনো হেলদোল নেই।

এবার আমি তার কাঁধে আলতো ছুঁয়ে দিতেই সে পেছন ফিরে আবার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো। তার ঐ চাহনি আমাকে প্রতি নেনো সেকেন্ডেই লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। আমি তাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমাকে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here