#হলুদ_খামে
#পর্ব_৮
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
সিট থেকে উঠে বাসের সামনের দিকে গিয়ে দেখছিলাম কি হয়েছে তখনই বাসের ভেতরে তিনজন বন্দুকধারীকে প্রবেশ করতে দেখলাম। দৌড়ে আমি আমার সিটে এসে তানহাকে ডাকতে যাবো ঠিক তখনই পেছন থেকে আমাকে কেউ একজন থামতে বললো।
বাসে চাপা উত্তেজনা চলছে। সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। বাসের দরজার সামনে একে একে সবাইকে বন্দুকধারী দু’জন লোক লাইন করে নামিয়ে সবার শরীরে হাত দিয়ে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে। আরেকজন বন্দুক দেখিয়ে সকলের কাছ থেকে মানিব্যাগ, ফোন সহ দামি জিনিসপত্র সব ছিনিয়ে নিচ্ছে।
সকলের পিছনে আমি একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি বাসের দরজার দিকে, আমার সামনে তানহা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কানের কাছে মুখ এনে তাকে বললাম–
ম্যাডাম বাঁচতে হলে পালতে হবে’
আমার কথা শুনে তানহা পেছন ফিরে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে আমি কে! তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি তাকে জানালার দিকে ইশারায় তাকাতে বললাম।
ভাবনা চিন্তার কিছু নেই, জানালা দিয়ে পালাতে হবে।
— কিন্তু…
ঠিকাছে আপনি থাকুন আমি চললাম…
বলেই তানহার কাছ থেকে সরে এসে জানালার কাছে আসতেই তানহা আমাকে বললো–
— শুনুন আমিও যাবো আপনার সাথে, কিন্তু…
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যা করার এখনই করতে হবে’।
— ঠিকাছে কিন্তু যদি ধরা পরে যাই?
সেটা পরে দেখা যাবে, আগে নামুন।
বাসের পেছনের সিট দিয়ে তানহাকে খুব সতর্কতার সাথে নামিয়ে আমিও বাস থেকে নেমে পড়লাম। বাস থেকে নেমে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে দু’জন যেই না পালাতে যাবো তখনই একজন বন্দুকধারী লোক আমাদেরকে দেখে পেছন থেকে ডাকতে থাকে।
তানহার বাম হাতটা শক্ত করে ধরে তার দিকে একবার তাকাতেই দেখলাম তানহার চোখে ভয় আর আমার প্রতি একটু বিশ্বাস। বাম হাতে মাফলারটা ঠিক করে একবার পেছনে তাকিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে, হাতে নকল বন্দুক নিয়ে থাকা রেহানকে চোখের ইশারায় ধন্যবাদ দিলাম।
🍁
🍁
🍁
শরীরের সব শক্তি কাজে লাগিয়ে আমি আর তানহা ছুটছি জঙ্গলের অচেনা পথে। আমাদের পেছনে রেহান সহ আরো দু’জন মুখে মাস্ক লাগিয়ে দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে জঙ্গলের প্রায় অনেকটা ভেতরে এসে পড়েছি আমি আর তানহা। দু’জনের নিঃশ্বাসই ভারি হয়ে এসেছে। পেটের নিচের অংশ আমার ব্যাথা করছে খুব। তানহার দিকে তাকিয়ে দেখি সেও জোড়ে জোড়ে হাপাচ্ছে। বুঝতে পারলাম তারও শক্তি ফুরিয়ে এসেছে।
পেছন থেকে কারো দৌড়ে আসার শব্দও আর শুনতে পাচ্ছি না, বোধহয় রেহানরা চলে গেছে। পেট চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি, আর তানহা হাঁটুতে হাত রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। প্রায় তিরিশ মিনিট দৌড়ানোর ফলে খুব গরম লাগছিলো আমার। মুখের মাফলারটা সরাতেই তানহা আমাকে বললো–
🍁
🍁
🍁
মাকে যখন আমি বললাম ‘মা আমি এ বিয়েটা করবো না’ তখন মা নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে আমাকে থাপ্পড় মারলো আর বললো–
— বিয়ে করবি না মানে কি? এই বিয়ে না করলে তোকে কে বিয়ে করবে শুনি? রাতের পর রাত ওই ছেলের সাথে কাঁটিয়েছিস এই কথা জানার পরও কোন রাজপুত্র তোকে বিয়ে করবে? তোর তো উচিত ছিলে তামিম ছেলেটার পা ধরে বসে থাকা। আর তুই কিনা বিয়ে ভাঙার জন্য উঠে পরে লেগেছিস?
মা ওনাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না, কেনো বুঝতে পারছো না?
— কেনো পারবি না? কাকে বিয়ে করবি তুই? কোন আশিককে বিয়ে করবি তুই?
দেখ তানহা আমরা তোর ভালোই চাই। তুই সুখে থাক সেটাই চাই। তামিম খুব ভালো ছেলে , তার কাছে তুই সুখেই থাকবি। একবারও কি ভেবে দেখেছিস? নিজ ইচ্ছায় ছেলেটা তোকে বিয়ের প্রস্থাব দিয়েছে। ছেলেটা কি পারতো না এতটা দিন তোর সাথে থাকার পর তোকে ভুলে যেতে? তোকে অস্বীকার করতে? কিন্তু তা না করে নিজে এসে তোকে বিয়ে করবে বলে গেছে। তাছাড়া কোন দিক দিয়ে খারাপ ছেলেটা? চেহারায় ভালো, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো, নিজের বাবার এতবড় ব্যবসা সামলাচ্ছে। কোন দিক থেকে তোর চোখে খারাপ লাগছে?
আজ বাদে কাল তোর গাঁয়ে হলুদ, দোহাই লাগে তুই কোনো ঝামেলা করিস না। এমনিতেও দু’বছর আগে যা করেছিস তারপরও… এ বিয়েটা না হলে তোর বাবা সমাজের সামনে মুখ দেখাতে পারবে না। আমাদের সম্মানের কথা চিন্তা করে হলেও তুই রাজি হয়ে যা, এতেই তোর জন্য মঙ্গল।
মায়ের এ কথার কোনো উত্তর আমি দিতে পারিনি। তাই দৌড়ে চলে এলাম আমার রুমে। মুখে বালিশ চাপা দিয়ে চোখের জল ফেলছি। আলমারি থেকে খুব যত্নে হলুদ খামের সেই চিঠিটা বুকে শক্ত করে ধরে কাঁদছি।
তবে কি মানাফকে দেয়া আমার শেষ কথা আমি রাখতে পারবো না? কেনো হচ্ছে আমার সাথে এমন?
এক হাতে চিঠিটা রেখে অপর হাতে ফোন তুলে তামিমের নাম্বারে ডায়াল করলাম। রিং হওয়ার সাথে সাথেই তামিম রিসিভ করে বললো–
— আমার কথা বুঝি তোমার খুব মনে পড়ছে জান?
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে ঠান্ডা গলায় তামিমকে বললাম–
বিয়েটা না করলে হয় না? দোহাই লাগে আপনার বিয়েটা ভেঙ্গে দিন। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনা। আমি…
আমার কথা শেষ না হতেই তামিম ফোন কেটে দিলো। আমি তখনও কানে ফোন ধরে আছি। কিইবা বলতাম তাকে আমি? আমার কৈশরের প্রেমিক আমার জন্য বসে আছে? ফিরে আসবে আমার জন্য?
মানাফ তুমি কোথায়?
🍁
🍁
প্রাইভেট শেষে আমি আর মানাফ দু’জন একসাথে হেঁটে বাড়ি আসছি তখনই রাস্তার পাশে ফুচকা দেখে মানাফকে ইশারায় থামতে বললাম। মানাফ একবার আমার দিকে তাকিয়ে কান ধরে বললো–
— তুই না বলেছিলি আর কখনও ফুচকা খাবি না, এখন কি হলো?
আরে ধ্যাৎ মাঝে মধ্যে খেলে কিছুই হবে না, প্লিজ মানাফ ভাইয়া না করো না।
আমার আকুতি ভরা চাহনি দেখে বোধহয় মানাফের মায়া হলো। শক্ত হাতে আমাকে রাস্তা পার করিয়ে ফুচকার দোকানের সামনে এনে ফুচকা দিতে বলে আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। ইশ কি রাগ রে বাবা, এখনই এত রাগ ভবিষ্যতে কি হবে কে জানে? ফুচকা হাতে নিতেই বললো–
— এই যে ফুচকা, এরপর একদম পরীক্ষা শেষ হলে তবেই আবার খেতে পারবি। এর আগে যদি তোকে ফুচকার নামও নিতে দেখি তবে চুলগুলো আর একটাও মাথায় থাকবে না।
ভয়ে ভয়ে ফুচকা মুখে দিতেই গলায় আটকে গেলো। কাশতে কাশতে নুইয়ে পড়ছিলাম ঠিক তখনই মানাফ ভাইয়া ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো। পানি খেয়ে মানাফ ভাইয়ার দিকে অপরাধির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি। আরেক দফা বকা খাবো এখন, এই জিরাফটা শুধু আমাকে বকতেই পারে।
— যেটা হজম হয়না সেটা গিলে খাওয়ার দরকার কি? ভালো জিনিসের অভাব আছে? তুই.. তুই থাক এখানে আমি গেলাম।
আমাকে একা রেখে মানাফ ভাইয়া হন হন করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। একবার পেছনে ফিরে দেখলোও না আমাকে, হুহ আমিও আর কথা বলবো না। একা একা হেঁটে বাড়ি আসছি তখনই কোথা থেকে তিন চারটা বখাটে ছেলে আমার পথ আটকে দাঁড়ালো।
সবুজ কালরের শার্ট পড়া ছেলেটা আমার চুল টেনে বললো “মালটা জোস না?” ইশ নিজের চুলে কি ছিড়ি আবার আমার চুল টানে। নেহাত আমার থেকে বড় নাহয় আমিও এই বখাটের কালার করা চুল টেনে দিতাম।
— এই পিচ্ছি কোন ক্লাসে পড় তুমি?
পাশের ছেলের কথায় আমি ঢোক গিলে বললাম, ক্লাস টেন-এ।
— বাহ্ ভালোই তো বড় হয়েছো দেখি।
আমার এদের কথায় কেমন কেমন লাগছে। তিন চারজন মিলে কিসব কানাকানি করছে। তখনই কোথা থেকে মানাফ ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বললো…
চলবে…
(রিচেক দেয়া হয়নি, বানানে ভুল থাকলে নিজ দায়িত্বে বুঝে নেবেন)