#হলুদ_খামে
#পর্ব_১৯
𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)
তামিমের আসার শব্দ পেয়ে দ্রুত আমি ফোন কেটে দিলাম।
হাত থেকে ফোনটা বিছানার পাশে রেখে পানির গ্লাসটা হাতে নিতেই তামিম রুমে প্রবেশ করলো। আমাকে দেখে আমার পাশে এসে বসে বললো–
— তুই কো.. তুমি এখন কোথায় থাকো?
কেনো?
— যা বলছি তার উত্তর দাও।
মতিঝিল
— ওহ, কি প্রয়োজন ছিলো বাসা চেঞ্জ করার? কত খুঁজেছি তোমাকে সেটা তুমি জানো?
এই ছেলে কি বলছে? আমাকে খুঁজেছে মানে? ও বুঝেছি, এখন আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কিভাবে পাচার করবে সেই বুদ্ধিই আটছে হয়তো।
তাইতো উৎপটাং কথা বলছে।
— তুমি ঠিকাছো? এমন দেখা যাচ্ছে কেনো তোমাকে?
কে..কেমন দেখা যাচ্ছে?
ঠিকই তো আছি আমি।
কিছু বুঝে ফেলেনি তো? না না বুঝবে কি করে? আমি তো ফোন থেকে বাবার নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়েছি। বমি হয়েছে, চোখ মুখ দেখে বোধহয় অন্য কিছু ভেবে নিয়েছে।
আমায় চুপ থাকতে দেখে তামিম বললো–
— খাওয়া হয়ে গেলে একটু রেস্ট নিয়ে নাও।
আমরা দুপুরেই ঢাকা ফিরে যাবো।
বলেই তামিম বিছানা থেকে ফোন হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
আগেই বুঝে গিয়েছি তামিমের মতলব।
তাইতো বুদ্ধি করে ফোন নিয়ে যাওয়ির আগেই আমি বাবাকে ফোন করে দিয়েছি।
বাবার এখানে আসতে খুব বেশি এক ঘন্টা লাগবে।
আমার খোঁজে বাবাও বান্দরবান এসেছে।
বাবা যে আমাকে নিতে আসছে সেটা কোনো ভাবেই তামিমকে জানতে দেয়া যাবে না।
মনে মনে বিজিয়ের হাসি দিচ্ছি ঠিক তখনই তামিম আবার রুমে আসে।
ভয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার।
ফোনের ব্যপারটা কোনো ভাবে বুঝে ফেললো না তো!
গলা শুকিয়ে গেলো আমার।
পাশে থাকা পানির গ্লাস থেকে এক নিঃশ্বাসে সবটা পানি খেয়ে শেষ করে তামিমের দিকে তাকালাম।
দেখে মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে।
চোয়াল শক্ত করে মাথার চুলগুলো নাড়তে নাড়তে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো–
— বাসায় ফোন করবে?
ন..না না, একেবারে বাসায় গিয়েই সবার সাথে দেখা করবো।
ফোন করার প্রয়োজন নেই।
আমার জবাবে তামিম চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে আমার কি হলো, কেনো আমি মানা করে দিলাম।
তামিম চলে যাওয়ার পর বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়লাম আমি।
ওফ “বাসায়” কথাটা শুনে কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম আমি।
সে যাই হোক, বাবা না আসা পর্যন্ত তামিমকে আমার সহ্য করতেই হবে।
🍁
🍁
🍁
বাসে জানালার পাশের সিটে বসে তামিমের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।
মুখে আমার তৃপ্তির হাসি।
বেচারা তামিমের মুখটা এখন এইটুকু হয়ে আছে।
বাসের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে গেছে বোধহয়, তাইতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার চলে যাওয়া দেখছে।
বাবা আমার কাছে আসার একটু আগেই আমি তামিমের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসি।
তামিম হয়তো কোনো ভাবে বুঝতে পেরে গেছে আমি সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।
তাইতো আমার পেছন পেছন বাস স্টেন্ড পর্যন্ত চলে আসে।
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
বাস ছেড়ে দিয়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
বাবার কাঁধে মাথা রেখে আমি চোখ বন্ধ করে আছি।
চোখে ভেসে আসছে এতদিন তামিমের সাথে কাটানো মোমেন্ট গুলোর কথা।
পাঁচারকারি না হলে বেশ ভালোই ছিলো ছেলেটা।
খুব যত্ন করে আগলে রেখেছে আমায় এতটাদিন।
কিন্তু কথায় আছে না, শেষ ভালো যার সব ভালো তার।
তামিমের বেলাতেও তাই হলো।
আমিও সব ভুলে যেতে চাই।
বাবার বাহুতে দু’হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছি আমি।
বাবাও আমায় পরম যত্নে কপালে চুমু খেলেন।
আর কিছু ভাবার সময় কই?
ঘুম যে আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে।
প্রায় এক মাসের ক্লান্তির অবশান তবে শেষ হলো।
🍁
🍁
🍁
তানহা…
তুই যখন হলুদ খামটা খুলে চিঠিটা পড়বি তখন আমি তোর কাছ থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছি।
তোর মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার কথা?
কি ঝগড়াটাই না তুই করেছিলি আমার সাথে।
সেদিন থেকেই আমি পন করেছি, আমার এই ঝগড়ুটে মেয়েটাকেই সারাজীবনের জন্য চাই। তোকে ভালোবাসি রে পাগলি খুব ভালোবাসি, কেনো বুঝিস না আমাকে?
আমার জন্য অপেক্ষা করিস তানহা, আমি ফিরে আসবো। কবে আসবো জানিনা, তবে ঠিক ফিরে আসবোই। ফিরে এসে তোকে একেবারে নিজের করে নেবো, অপেক্ষায় থাকিস তানহা। নিজের খেয়াল রাখিস। ক্লাসে আসবি আর যাবি কোনো দিকে তাকাবি না। কোনো ছেলের দিকে ভুলেও আড় চোখে তাকাবি না। যদি উল্টা পাল্টা কিছু শুনি তবে মেরে তোর হাত পা ভেঙ্গে দেবো মনে রাখিস।
আমাকে নিয়ে যা খুশি তাই লিখতে বলেছিলাম তোকে। যা লিখেছিস সেটা পড়ার মতো না। তবুও যত্নে রেখে দিয়েছে তোর দেয়া হলুদ খামের চিঠিটা। যেখানে যাবো আমার সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।
তোর মানাফ ভাইয়া!
চোখের পানি মুছে চিঠিটা আলমারিতে যত্ন করে রেখে তালা লাগিয়ে দিলাম।
আজ আমার বিয়ে হয়ে যাবে তামিমের সাথে।
বিয়ের পর তো আর এই চিঠি পড়ার কোনো অধিকার থাকবেনা আমার।
এ বাড়ি থেকে আমি চলে যাওয়ার পর চিঠিটা বন্ধ আলমারির এক কোনায় পড়ে থাকবে।
আস্তে আস্তে পুরোনো হতে থাকবে চিঠিটা।
হলুদ খামটা আর হলুদ থাকবে না, রং পরিবর্তন হয়ে যাবে হয়তো।
চিঠিটার মতো আমার ভালোবাসাটাও এই রুমে বন্দি থাকবে।
আমি ঢাকায় চলে আসার পর লোকে মুখে কটু কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।
মেয়ে দিনের পর দিন জঙ্গলে জঙ্গলে কার সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে কে জানে’ নষ্টা মেয়ে’ এমন মেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো’ এখস বিয়ে করবে কে এই মেয়েকে’ পেটে বাচ্চা আছে নাকি?
এই দু’বছর এসব কথার সম্মুখে আমাকে প্রতিদিন পড়তে হতো।
তবুও বেঁচে ছিলাম, বাবা মার একমাত্র মেয়ে বলে এতসব কথা শোনার পরও তারা আমাকে আদর যত্নের কোনো কমতি রাখেনি।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারাও পরিবর্তন হতে থাকে।
বিয়ের জন্য তোড়জোড় করে ছেলে দেখতে শুরু করে।
তখনই কোথা থেকে তামিমের উৎপত্তি।
বাবাও এমন ছেলে হাতছাড়া করতে চায়নি, ফলাফল আজ আমার বিয়ে।
কিভাবে আমার খোঁজ পেলো তামিম!
— তুমি কি ভেবেছিলে তানহা!
তোমার দেখা আমি আর কোনোদিনও পাবো না?
দিনের পর দিন তোমার খোঁজ করেছি।
পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি তোমার দেখা পাওয়ার আশায়।
ভার্সিটির ফাংশনে গেস্ট হিসেবে সেদিন যখন আমাকে আর বাবাকে ডাকা হলো, সেদিন তোমার দেখা পেলাম।
বোকা তুমি সেদিনও আমায় দেখে চিনতে পারো নি।
আমাকে হয়তো সেখানে আশাই করো নি।
আজ বিয়েটা হোক শুধু।
সব ভুল বোঝাবুঝি ভেঙে দেবো আমি।
সেই আগের পালিটাকে ভালোবাসবো।
তোর মানাফ ভাইয়া আজ তোর হবে তানহা।
🍁
🍁
🍁
কিছুতেই পারবো না আমি এ বিয়ে করতে।
মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তামিমকে কি করে মেনে নেবো?
আমি পুরোপুরি মানাফকে ভালোবাসি, আমার মানাফকে।
হ্যাঁ পালাতে হবে আমাকে।
এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
কিন্তু বাবা মা? আজকের পর হয়তো বাবা মা আমার মুখটাও আর দেখতে চাইবে না, ঘৃণা করবে আমায়।
সকলের সামনে লজ্জায় হয়তো মুখ দেখাতে পারবে না।
ক্ষমা করে দিও আমায়।
আর দেরি করা ঠিক হবে না।
এখনই পালাতে হবে আমাকে।
রেলস্টেশনে বসে অপেক্ষা করছি কখন ট্রেন আসবে। বাসে করেই সিলেট যেতে পারতাম, কিন্তু খুব ইচ্ছে ছিলো ট্রেনে ঘুরবো।
আজ ইচ্ছেটাকেও কেমন ফিকে লাগছে।
ওদিকে সবাই হয়তো জেনে গেছে বউ পালিয়েছে।
বাবা মায়ের মনের অবস্থা কেমন কে জানে!
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে বাবা মাকে।
ইশশ একবার গিয়ে যদি জড়িয়ে ধরতে পারতাম!
সবাই হয়তো বাবাকে বাজে বাজে কথা শোনাচ্ছে।
নিজেকে খুব অপরাধি লাগছে আজ।
মানাফকে কোথায় খুঁজবো জানি না।
শুধু জানি আমার মানাফকে আমি সেখানেই পাবো।
চোখ বন্ধ করে এসব ভাববছি ঠিক তখনই…
চলবে…
(বানানে ভুল থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)