#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_14
!
‘-আমি এতই অবাক হলাম যে,বলার বাইরে!ওপাশ থেকে সাদাফ ভাইয়া হ্যালো হ্যালো বলছেই!আমি বললাম,উনি কোথায়?
!
-আমার পাশে বসে আছে।
!
-তাহলে কান্না করে কেন?বুইড়া বয়সে ভীমরতি, যত্তসব!
!
-আরে বকো না।আমার জানের জিগার কান্নাকাটি করে চোখমুখ লাল করে ফেলেছে!সাদাফ ভাইয়া বলল,
!
-রাখেন,এসব ঢং।বাসায় আসতে বলুন উনাকে!
!
-ও তো বাসায় যেতেই চাচ্ছে।ইনফেক্ট নতুন অসুস্থ ওয়াইফ বাসায় রেখে ওর মন এখানে টিকছে না।
!
-তাহলে আসছে না কেন?
!
-আরে আন্টি নাকি ওকে তোমার অসুস্থতার জন্য বকাঝকা করেছে।এখন আন্টি যতক্ষণ ওকে বাসায় যেতে না বলবে ততক্ষণ ও যাবে না।ওর এতটাই আত্নসম্মান!আন্টি স্রেফ ওকে বাসায় যেতে মানা করে দিয়েছে!
!
-ওহ…এতই সেলফ -রেসপেক্ট যখন তখন আবার কান্নাকাটি করে কেন?লজ্জা করে না?
!
-আহ!তুমি বাচ্চা নাকি?বুঝো না?সাদাফ ভাইয়া বলল,
!
-আমি অবাক হয়ে বললাম,কী বুঝি না?
!
-উনি আমতাআমতা করে বললেন,কিছুনা।আচ্ছা রাখি!গুড নাইট বলেই ফোন কেটে দিলেন সাদাফ ভাইয়া।
!
আমিও ফোন রেখে দিয়ে ব্যলকুনিতে গেলাম।বুঝলাম না,গুন্ডা আবরারের প্রবলেম কী?আজব মানুষ। এতবড় গুন্ডামী দেখায় সে নাকি এখন মায়ের ভয়ে বাসায় আসতে পারছেনা।গিরগিটি একটা,জ্বালিয়ে খেলো।আমার এখন খুব ইচ্ছে করছে ওনার কান্নামাখা লাল ফেইস দেখতে!হাউ কিউট…….
!
পরিষ্কার আকাশ বিকেলের দিকে ছিলো। কিন্তু এই গভীর রাতে এখন সেটা বর্ষার মেঘলা আকাশ হয়ে গিয়েছে।আকাশে চাঁদ থাকলেও সেটা মেঘের ফাঁকে উকিঝুকি দিচ্ছে।চাঁদের আলো ছড়াচ্ছে খুব অল্প অল্প।শীতল বাতাসে গাছের পাতার শনশন শব্দ বেশ জোরালো। ব্যলকুনিতে বসে আছি।হাজারো ভাবনা মনে উঁকি দিচ্ছে।হাহ,,,পৃথিবী কত সুন্দর! এই ঠান্ডা হাওয়া শরীরে এক ধরণের পবিত্র শিহরণ বইয়ে দেয়।আমার কাছে মনে হয়,বেহেশতের বাতাস এমন অনুভূতি জাগানো!
!
মনে খালি রোমান্টিক ভাবনা আসছে।ভাবলাম একটা গান গাই,দরজাও তো ভেতর থেকে লাগানো। আর আমি ব্যলকুনিতে সো কেউ শুনবে না।যদিও মোটামুটি মধুর সুরেলা গলা আমার তাও আড়ালে গান গাইতেই ভালোবাসি!তো শুরু করি,,,,
!
‘কে আবার বাজায় বাঁশি,এ ভাঙ্গা কুঞ্জবনে?
হৃদি মোর উঠলো কাঁপি,চরণের সেই রণনে!
কোয়েলা ডাকলো আবার,যমুনায় লাগলো জোয়ার!
কে তুমি আনিলে জল ভরি,মোর দুই নয়নে?’
!
এটুকু গেয়ে নিজেই নিজেকে বললাম,বাহ!খুব সুন্দর গলা তোর।চাইলেই বিশ্বের নামকরা গায়িকা হতে পারবি।বাহ!বাহ!সবাই আসবে অটোগ্রাফ নিতে।আমি গাড়ি থেকে সিনেমাটিক স্টাইলে নামবো।আর আমার ভক্তরা লাইন করে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েট করবে।ওয়াও সো নাইস!বাট সবাইকে অটোগ্রাফ দিলেও এই গুন্ডা,ছিঁচকাদুনে আবরার আগুন চৌধুরীকে কখনোই অটোগ্রাফ দেব না।যত্তসব….উনার কথা মনে হতেই মুড অফ হয়ে গেলো।
!
বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার মুখের দিকে উনার সেই ক্রাশমার্কা বড় পিকচারটা যেন তাকিয়ে আছে।আমিও ভেংচি কেটে শুয়ে পড়লাম।তাও ছবিটা যেন বলছে,সোনাপোকা বউ আমার!এতরাতে কেউ ঘুমায়?দাঁড়াও ভুল যখন করেছ তখন নো অপশন। তোমাকে এর পানিশমেন্ট পেতেই হবে।আর এর শাস্তি হলো,আমি তোমার পেটের উপর ঘুমাবো!বলেই ডাঁটিয়াল হাসি হাসলেন উনি।আমার মনে এলো,
!
‘প্রাণ দিতে চাই,মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান, সারাক্ষণ দিতে চাই,তোমাকে
—— ——–
স্বপ্ন সাজাই,নিজেকে হারাই
দুটি নয়নের ও…….. ‘
!
সকালবেলা।ঘুম থেকে উঠে উনাকে পাশে দেখতে না পেয়ে খুশিই হলাম।যা বন্ধুর বাসায় গিয়ে থাক।আমি এতদিন শান্তিতে কাটাই।এসব ভাবতেই মন ভালো হয়ে গেলো।যাইহোক,ফ্রেশ হয়ে ব্যলকুনিতে গেলাম।ফুলের গাছগুলোতে পানি দিলাম।টবে লাগানো বিভিন্নরকম ঘাসফুল, ক্যাকটাস, এ্যালোভেরা,গোলাপ আর অজানা নানা ফুল।ওগুলো বিদেশী ফুলগাছ।আবরার মিয়ার ফেভারিট ফুল, যত্ন না নিলে আস্ত কাচা খাবে আমায়,সাথে চিলি সস লাগিয়ে।কিন্তু এইভয়ে কাজ করছিনা আমি।গাছগাছালি আমি খুব ভালোবাসি,তাই করছি।
!
আজ ও সারাদিন সানাচাচী,মামানি,ভাইয়া, মামু ওদের সাথে কাটালাম।খুব মজা করে।আবরার মিয়াকে মামানি বাসায় আসতে না করায় উনি ওখানেই রইলেন।
!
তিনিদিন পর।রাতে রুমে সাউন্ডবক্সে গান লাগিয়ে একটু ড্যান্স করছিলাম।এমন সময় কে যেন পেছন থেকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো। আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকাতেই………’
!
কে যেন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।কিছুক্ষণ কেটে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম কেউ নয়,স্বয়ং আবরার আগুন চৌধুরী! হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হলো? ভাববার বিষয়!
।
-উনি যে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুজে দাঁড়িয়ে আছেন,তো আছেনই। নড়াচড়া বন্ধ করে আমাকেও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।আমি তো সেই রাগে কাঁপছি।আসলে এজন্য রাগ করেছি না অন্য কারণে সেটা নিজের কাছেই আমি পরিষ্কার না।
।
-অবশ্য তিনদিন উনাকে না দেখে কেমন যেন লাগলো আমার।খুব মিস করেছি উনাকে।ক্রাশ বলে কথা।ক্রাশ খেলে যে বাঁশ খাওয়া বাধ্যতামূলক সেটা নতুন আবিষ্কার করলাম।উনাকে বরের চেয়ে ক্রাশই বেশী ভাবি আমি।
।
বেশ খানিকক্ষণ পর,
।
-কী করছেনটা কী?ছাড়ুন আমায়।একঘন্টা ধরে দাঁড়িয়েই আছেন আর আমার পা ব্যথা করছে।যত্তসব…বলেই উনার দিকে ফিরলাম।
!
-ওহহহ….নড়ো না।
।
-কেমন জড়ানো গলা উনার।আমার সন্দেহ হতেই ভালো করে উনার দিকে তাকালাম।কেমন উস্কুখুস্ক চুল,গায়ের শার্ট কুচকে আছে।হাফ প্যান্টের সাথে সু’ জুতো। চোখমুখের অবস্থা বেহাল।খোচাখোচা দাঁড়ি, লাল চোখ।গায়ে কড়া পারফিউমের গন্ধ!
!
-আমি সন্দেহী চোখে তাকিয়ে বললাম,কী?কিছু খেয়ে এসেছেন,মনে হয়?
।
-উনি বাচ্চাদের মতো হেসে বললেন,খেয়েছি তো!
।
-কী?
।
-মজার জিনিস।
।
-আমি রাগী চোখে বললাম,বলুন কী?
।
-জুসি জুসি ড্রিংক করেছি বলে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রইলো।
।
-বুঝো কান্ড!ব্যাটা ড্রিংক করে মাতাল হয়ে এসে আমায় বলছে জুসি জুসি ড্রিংক করেছে!আজব। মতিগতি ঠিক নেই….
।
– তোমার ঠোঁট এত গোলাপি কেন?তুমি কি গোলাপ ফুল?এই গোলাপ ফুল বলো তো খুশবু আমার গাছগুলোতে পানি দিয়েছে কিনা ঠিকমতো? নইলে ওকে আছাড় মারবো…… না না আছাড় দিলে আম্মু আবার আমায় বকবে,ওর কাছ থেকে দূরে থাকতে বলবে… না আমি যাবো না।ও তো ছোট, তাই না?আমি ওর থেকে দূরে যাবো না…..বলে বিছানার একপাশে বসে কান্না করতে লাগলো।
।
-এই ঘটনায় আমি যতটা না অবাক হলাম তার চেয়েও বেশী কষ্ট পেলাম।উনাকে কেমন বিধস্ত দেখাচ্ছিলো।
।
-তিনদিনে অবশ্য উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।লাভ এট ফার্স্ট সাইট।ক্রাশ এখন আমার জামাই হয়ে গেলো। ব্যাটার মতিগতি দেখে তো মনে হয় আমাকে ভালোই বাসে!!
।
-ভাবনাতে ডুবে আছি,ঘোর কাটলো উনাকে উঠতে দেখে।অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি,উনি এলোমেলো পা ফেলছেন আর আমার দিকে এগুচ্ছেন।
।
-উনার চোখ আমার ঠোঁটের দিকে!এই মুহূর্তে তো আমার বুকে টর্নেডো বয়ে যাচ্ছে।কি করি, কি করি ভাবতে ভাবতেই উনি আমার কাছে চলে আসলেন।আমিও পিছাতে পিছাতে দেয়ালের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলাম।।
।
-উনি আমার ঠোঁটে কিস করতে যাবেন আর আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।উনার ঠোঁটের ছোয়া আমার চুলে লাগলো। উনি দুহাত দিয়ে দেয়াল আড়াল করে রেখেছেন।আর আমি উনাকে এক ধাক্কা দিয়ে চলে এলাম।
।
-খুব বাঁচা বেঁচে গিয়েছি।কি কপাল,ক্রাশ জামাই মাতাল হয়ে বাংলা সিনেমার সিন শুরু করেছে।….
।
-উনি আমার কাছে এসে জড়ানো গলায় বললেন,কী?গোলাপ ফুল, তুমি পচা।
।
-পচা না তোর কেল্লা।মনে মনে গালি দিলাম।বললাম,আপনি বাসায় কখন আসলেন?মামানিকে ডাকব?
।
-উনার নিজের প্রতি খেয়ালেই নেই।আমি কি বললাম শুনলই না।হাত দিয়ে আমার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললো,তুমি অনেক ভালো। আম্মু আমার উপর শুধু শুধু রাগ করে…
।
-আমি বললাম,ঘুমাবেন? ঘুমিয়ে পড়ুন!
।
-উনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের মনে বকবক করছেন।বুঝলাম উনাকে পাত্তা দিয়ে লাভ নেই।নিজেকেই সব করতে হবে।
।
-যেই ভাবা সেই কাজ।আমি উনাকে বিছানার উপর বসালাম ধীরেধীরে।উনি তখনো আবোলতাবোল বকেই যাচ্ছে।উনার পায়ের দিকে তাকিয়েই আমার হাসি পেল।এতবড় ছেলে, হাফপ্যান্ট এর সাথে সু’জুতো পরে ড্রিংক করতে গিয়েছেন।হাসি পাচ্ছে প্রচুর।
।
-কুল খুশবু কুল।ইউ আর সো লাকি।শেষমেশ ক্রাশকে ভালোবেসে ফেললি।যা এখন পর্যন্ত তোর বান্ধুপি আনিকা ইবনাত পারেনি।নিজেই নিজেকে বাহবা দিলাম।প্রাউড ফিল করলাম।আনমনে হাসলাম।
।
উনি ততক্ষণে বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।আমি উনার পা থেকে জুতো খুলে দিলাম।উনি বিছানায় শোয়াতে আমি সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।চোখগুলো লেগে গেল আর হঠাৎ করেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম কারও কোলে।
।
-আবরার মিয়া ঘুম থেকে উঠে আমাকে কোলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে? কিছু বলতে যাবো দেখি উনি বিছানার একপাশে আমাকে নামিয়ে দিয়ে নিজে এসে আমার কোলে শুয়ে পড়লো। জড়ানো গলায় বলল,আমার চুলে বিলি কেটে দাও।
।
-আমি রেগে বললাম, দেব না।
।
-দাও না।
।
-বললাম না,দেব না।আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে নিজের চুলে বিলি কাটাতে চাচ্ছেন কেন?আমি কি আপনার বাসার কাজের মেয়ে সখিনা?
।
একঝুড়ি বকবক করে তাকিয়ে দেখি ব্যাটা কুম্ভকর্ণ ঘুমুচ্ছে।কি জানি কি হলো,আমিও মুচকি হেসে উনার চুলে বিলি কাটতে লাগলাম।
!
পরেরদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই একসাথে বসে নাস্তা করলেও উনি ছিলেন অনুপস্থিত। মিয়া এখনো ঘুমুচ্ছে।মামানি দু-তিনবার ডাকতে বললেও আমি মানা করলাম।ঘুমুচ্ছে যখন ঘুমুক।উনি তো আর জানেনা, উনার গুণধর ছোট ছেলে কাল রাতে ড্রিংক করে বাড়ি এসেছেন।যাইহোক…….
।
উনার ঘুম ভাঙ্গলো দুপুর তিনটায়।তখন আমি মামানির সাথে শপিংমলে।ইচ্ছেমতো শপিং করছি দুজন।
!
‘হঠাৎ করে ধাক্কা খেলাম একটা ছেলের সাথে।আমি পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে মামানির জন্য ওয়েট করছি আর এই ছেলের সাথে খেলাম এক ধাক্কা! যত্তসব বলেই নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার দিকে তাকাতেই ওই ব্যাটা ফাজিল বললো, ওয়াও!ফ্যান্টাস্টিক! এই কিউট গার্ল,হোয়াট ইজ ইউর নেইম?
।
-আমার মেজাজে সপ্তমে চড়ে গেলো। ইচ্ছে হলো জুতো পেটা করতে। কিছু বলতে যাবো তার আগেই মামানি হাজির….মামানি বললো, ধর মা! আবরারের জন্য কিছু কিনতে গিয়েছিলাম,তুই গেলি না কেন?তাই আমিও ওর জন্য কিছুই নিইনি!
।
-আমার শপিং শেষ। তোমার গুণধর ছেলের জন্য তুমিই নিয়ে যাও, আমি এখন বাসায় যেতে চাই!
।
-তাহলে আমার ছেলের জন্য কিছু নেবো না?থাক তাহলে অন্যদিন আসলেই নিয়ে যাবো।
।
-মামানি, তোমার এতবড় ছেলে কী নিজের জিনিস টাও নিজে কিনতে পারেনা?তোমাকে নিতে হবে?
।
-তুই যে কি বলিস!আমার ছেলের পছন্দ দেখলে তুই সারাদিন তাকে নিয়েই শপিং করবি।এতই ভালো চয়েজ তার।কিন্তু আমি শপিং করতে এলে ওর জন্যও কিনি আরকি!
।
-ওকে, আরেকদিন কেনাকাটা করো।এখন চলো।
।
-চল।
।
-পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই হাঁদারাম বদ ছেলে এখনো তাকিয়েই আছে।যেন গভীর ভাবনায় মত্ত সে…..
।
মামানি আর আমি প্রচুর শপিং করে রাত আটটায় বাসায় চলে এলাম।সবার জন্যেই কিছু না কিছু এনেছি, কিন্ত মিস্টার ফায়ারের জন্য কিছু আনিনি।ইনফেক্ট মামানি উনার জন্য কিছু নিতে পারেনি।সেটা অবশ্য আমার জন্যই, আমি তাড়াহুড়ো করাতে!যাইহোক, সবাই গিফট পেয়ে মহাখুশি,আর ফায়ার মিয়া রাগে চুপসে আছে।
।
রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর মিস্টার ফায়ারের সাথে কাইণ্ডলি আমার মুখোমুখি দেখা হলো রুমে!চোখমুখ ফুলে আছে,সেটা অবশ্য অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে।
।
।
-ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই কে যেন পেছন থেকে আমার ওড়না টেনে ধরলো।
।
-আমি পেছন ফিরে তাকাতেই উনি ফট করে আমার ঠোঁটে গাঢ় চুমু এঁকে দিলেন।আমি লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছি।তাও ব্যাটার সামনে তো আর এমন ভাব দেখালে চলবে না।তাই লজ্জা নামক বস্তুটা সাইডে সরিয়ে রেখে হালকা কেশে রাগী গলায় কোনোমতে বললাম,এমন করলেন কেন?
।
-উনি আমার ওড়নার একপাশ ছেড়ে দিয়ে হাত দুটো পকেটের ভেতর ঢুকিয়ে ব্রাশমার্কা হাসি দিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
।
-উনার হাসি দেখে আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিলো। উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলেন।আমিতো রীতিমতো হতবিহ্বল হয়ে পড়েছি উনার কান্ডকারখানা দেখে।উনি চোখ মারা কোথা থেকে শিখলেন?হাউ?
।
-ছেলেদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে এলে,তো কেমন লাগলো?
।
-কীহ?আমি ছেলেদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে এসেছি?রাগী গলায়!লাইক সিরিয়াসলি?
।
-ইয়েস,অভিয়াসলি!ভুলে গেলে?পার্কিং লটে?
।
-ওহহ….এই ফায়ার মিয়া এটা জানলো কীভাবে? হাউ ইজ পসিবল?
।
-কী?কথা নেই মুখে?
।
-দেখুন, আমি ধাক্কাধাক্কি করিনি।হঠাৎ করে না দেখতে পেয়ে একটা ধাক্কা লেগে গিয়েছে। এখানে ওই হাঁদারাম ছেলে বা আমার,কারোরই দোষ ছিল না।সো,,এক্সিডেন্ট বলা যায়।
।
-তাই নাকি?
।
-জ্বি!হ্যাঁ!
।
-বলেই ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলাম।কিন্তু চুলে এতোই জট লেগেছে যে, কিছুক্ষণ পর রেগেমেগে সব ছেড়েছুড়ে মুখ ফুলিয়ে সোফায় বসে রইলাম।
।
-আর উনি সেই ঠেস দেওয়া দেওয়ালে দাঁড়িয়ে আমার কান্ডকারখানা দেখছিলেন।এই সিচুয়েশন দেখে উনি হু হা করে হেসে উঠলেন।আমি প্রচন্ড রেগে বললাম,চুল থাকলে বুঝতেন,কত কষ্ট করতে হয়!তখন এই বেকুবের মতো বেক্কলিমার্কা হাসি থাকতো না।
।
-আমি শুনেছি যে,বাঙ্গালী রমণীদের সৌন্দর্যের প্রধান বস্তু হচ্ছে তাদের চুল।তারা নাকি চুলের যত্ন নেয়।চুল বলতে অজ্ঞান,দিনে তিনবার চুল আঁচড়ানো বাধ্যতামূলক!আর আমি তো দেখছি তুমি যে সেইদিন চুল বেঁধেছিলে আজ সেই চুল ছাড়া পেয়েছে,তাহলে চুলগুলো ভালো থাকবে কীভাবে?
।
-মোটেও না।আমি প্রতিদিন চুল আঁচড়াই!
।
-তাই বুঝি চুলের এ অবস্থা?
।
-আমি কিছু বললাম না। সেভাবেই গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম।
।
কিছুক্ষণ পর!উনি এসে ঠাস করে আমার চুলগুলো আঁচড়াতে লাগলেন।আমি বাধা দিতে গেলেই এক ধমকে চুপ করিয়ে দিলেন।সুন্দর করে জট খুলে বিনুনি নামক অসম্ভব কাজ করতে লেগে গেলেন।বাট ফলাফল জিরো। এই মহান কার্য উনি সাধন করিতে পারিলেন না।রেগে মেগে বিনুনি ট্রাই করতে গিয়ে চুলগুলোতে দড়ি পাকিয়ে ফেললো। অবশ্য এটা দড়ি নাকি অন্যকিছু সেটা উপরওয়ালাই জানেন।
।
আমি যতোটা না রেগেছি তার চেয়েও বেশী অবাক হয়েছি।লোকটাকে এই মূহুর্তে কী বলবো মাথায় আসছে না। উনি এখন আমার ওড়না দিয়ে কপালে লেপ্টে থাকা লাল সিল্কি চুলগুলো সরিয়ে ঘাম মুছলেন।কপালের কোণে থাকা তিলটা বেশ দেখা যাচ্ছে।আমি আরো একবার ক্রাশ খেলাম।কিন্তু তার পরেই যে বাঁশ খেতে হবে সেটা ভাবিনি।উনি ফট করে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন,কপালে চুমু খেলে নাকি ভালোবাসা গভীর হয়?সো আমার কপালেও চুমু দাও।
।
-আমি চিৎকার করে বললাম,না!নো, নেভার!
।
-না, মানে?
।
-না মানে না।নো মিনস নো।
।
-দিতেই হবে।
।
-বললেই হলো,মগের মুল্লুক নাকি!
।
-দিবে না?
।
-না,আমি এত লুতুপুতু মেয়ে না যে ফটাফট চুমু খাই!খাইতে গেলে,বসতে গেলে,ঘুমাতে গেলে,সুযোগ পেলে,সুযোগ না পেলে এবং আরো বিভিন্ন কারণে চুমু খাওয়া মেয়ে আমি নই!
।
-উনি কিছুক্ষণ ভেবে আমাকে বললেন,তাহলে ছাদে চলো।
।
আমি সন্দেহ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম। বললাম, কেন?
।
-এমনি!
।
-চুমু খেতে চান জোর করে, তাই না?সব মতলব বুঝি।
।
-সবকিছু বেশিই বুঝো।বয়স দেখলে মনে হয় সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু, কথা শুনলে মনে হয় আশি বছরের দাদীমা আমার!
।
-এই মিয়া ফায়ার!একদম বয়স নিয়ে খোটা দেবেন না।নিজে কী?
।
-এখন ছাদে চলো।
।
-যেতে পারি একশর্তে!
।
-উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,কী?
।
-আজ বড় চাঁদ উঠেছে।জোৎস্নাবিলাস করবো।
।
-ওকে,চলো।
।
রাত বারোটা। আমি আর উনি ছাদে মাদুর পেতে বসে আছি।অবশ্য বালিশ,কাঁথা, ছাতা নিয়ে এসে এসেছি।সারারাত জোৎস্নাবিলাস করবো। আর ছাতা এনেছি যদি হঠাৎ করে বৃষ্টি আসে তার জন্য।আকাশে অল্প অল্প মেঘ দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।চাঁদের আলোতে সবকিছু দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ করে বৃষ্টি এলে জোৎস্নাবিলাস আর বৃষ্টিবিলাস দুটো একসাথেই হয়ে যাবে।
।
-উনি একটা বালিশ নিয়ে মাদুরের উপর শুয়ে পড়লেন।
।
-কেমন লাগছে,আপনার?
।
-ভালো।
।
-উনার কন্ঠ শুনে কেমন যেন লাগলো আমার।জিজ্ঞেস করলাম,আপনার মন খারাপ?
।
-উনি কিছু না বলে উনার মাথাটা আমার কোলের উপর রেখে বললেন,ছোটবেলা কেন ফিরে আসে না,বলতো খুশবু!আমার আর এসব ভালো লাগে না।
।
-চকিতে চমকে উঠলাম উনার এমন বিষণ্ণ কথায়।কেমন যেন খারাপ লাগলো। উনি আবারো ধরা গলায় বললেন,আমি ছোটবেলাটাকে খুব মিস করি!
।
-আমি কিছু বললাম না।উনি কথা বলেই চলেছেন নিজের মতো।আমার কাছে উনি যেন এক অচেনা মানুষ, এমন আবরার আগুনকে আজ নতুন আবিষ্কার করেছি আমি।
।
-উনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলে চলেছেন…..
।
‘আজকাল প্রায়ই আমি স্বপ্ন দেখি।স্বপ্নের মাঝে আমি কেমন উন্মাদের মতো হারিয়ে যাই।তখন চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই সোনালী দিনগুলো,যেগুলো হয়তো এই পৃথিবীর বুকে আর কোনোদিনও ফিরে আসবেনা। আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে রুপোলী দিনের সোনালী দুপুরে রোদের আলোয় ঝিকঝিক করা একটি মূহুর্ত!আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকা বর্ষার মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে।দূরের রেললাইন, ছোট্ট পাহাড়ি নদী এবং তেপান্তরের মাঠ!ভাঙা দো’তলা লাল টালির ছাদ থেকে ঝপঝপিয়ে নামা বৃষ্টির ফোঁটা আর বাড়ির পেছনের ঘন বুনো গাছ-গাছালির ঝোপ! আমি হারিয়ে যাই সেই নিঃস্তব্ধ অতীতে! যে অতীত আমাকে বহুদূর থেকে হাতছানি দিয়ে আজও ডাকে!ছোটকাল সব সময়ই রঙিন হয়,বড়বেলা তাহলে কেন এমন হয় না খুশবু?
-স্বপ্নালু চোখে খুশবু তাকালো আবরারের দিকে।
লোকটা যে এভাবেও চিন্তা করতে পারে তা খুশবু মোটেও ভাবেনি!’
!
চলবে…..