হৃদয়ে_রেখো #মেঘলা_আহমেদ পর্বসংখ্যা -০৩

0
441

#হৃদয়ে_রেখো
#মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা -০৩

মিলিয়া বাসে বসে সময় গুনছে। তবে তা বাস ছাড়ার নয় নিজের মৃত্যুর। মানূষ কতো পাষান তাইনা। আজ ভালোবাসি বলে পাগল করে দেবে। কাল স্বার্থ না পেলেই পালাবে। নাহ আজ সে ফিরে যাবে চিরচেনা সেই শহরে। যেখানে প্রিয় মানুষদের রেখে এসেছে। প্রিয় বন্ধু মা সবাই ওখানে। দূরে থেকেও কিছু পেলোনা সে। সব মিথ্যা লাগছে

কিছুক্ষণ আগে..

মিলিয়ার ফোনে রিং হচ্ছিল। মিলিয়া দেখলো আনাফের নাম্বার‌ অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিসিভ করে-

-“হ্যালো মিলিয়া। আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন।
দেখো তোমার কান্ডিশন বেশি ভালো নাই। তোমার জীবনের ও কোন নিশ্চয়তা নেই। তাহলে আমি কি করে তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়িত করি। কি করে আমার জীবনটা নিজের হাতে শেষ করি। আমারো একটা ব্রাইট ফিউচার আছে। কিন্তু তুমি রোগাক্রান্ত তোমার সাথে আমি কি করে থাকবো? তুমিও কি চাও আমার জীবনটা ধ্বংস হোক। আমাকে আজ তোমার সাথে পাষাণের মতো আচরন করতে হচ্ছে। জানিনা তোমার কি হবে। এমনও হতে পারে তুমি আজ আছ কাল নেই! বলো তখন আমার কি হবে? তাই আমি চাইনা তোমার সাথে থাকতে। আমি তোমায় মুক্তি দিলাম। তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো থাকবো আজ থেকে। আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। সব এখানেই শেষ। নিজেকে গুছিয়ে নিও। নিজের যত্ন নিও। ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ।

নিজের কথা শেষ করেই আনাফ খট করে কলটা কেটে দেয়। মিলি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্ক্রিনে। আশ্চর্য তার কান্না পাচ্ছে কিন্তু চোখ থেকে পানি পড়ছে না। সে নিজেও থাকতো না আনাফের জীবনে। কিন্তু এতদিন যে ছেলেটা বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো আজ সে এভাবে বলতে পারলো। একটা অসুখ জীবনটাকে এভাবে শেষ করে দিল? আফসোস আজ খুব আফসোস লাগছে কেন এই সুন্দর পৃথিবীতে সে কয়েকদিনের অতিথি। আচ্ছা জন্ম হলে তো মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। এটা একটা অপ্রিয় সত্য। তাও কেন মানুষ এতটা বিবেকহীন হয়। সব কিছুর কাছে হেরে যায় ভালোবাসা। সমাপ্তি ঘটে কিছু অলিখিত কাব্যের। মিলি মোবাইলটা ব্যাগে রেখে দিলো। আস্তে আস্তে চোখদুটো বন্ধ করে মাথাটা এলিয়ে দিল ট্রেনের সিটে।

বিচ্ছেদ এর কথা ভাবতেই বুকটা আবার অসহনীয় ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে গেল। মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে কেউ ছু”ড়ি দিয়ে আঘাত করছে বারবার। আহ এই কি প্রেম এতো সহজে শেষ। তার ও তো সুন্দর একটা গল্প হতে পারতো। তাদের গল্পের কি সাজানো গোছানো একটা পরিসমাপ্তি হতে পারতো না? হয়তো তকদিরে নেই। যাইহোক এতো ভেবে কি হবে? সে তো ভাবলো না। ক্যান্সারের বাহানায় ছুঁড়ে ফেলে দিল। আচ্ছা চিঠির মানুষটাও কি আমার অসুখ জানার পর এভাবেই হারিয়ে যাবে? কিছু ভাবা যাচ্ছে না একটু ঘুমানো দরকার। বাসের সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলো সে।

কাঙ্খিত জায়গায় বাস এসে থামলো। সময় তখন বিকাল পাঁচটা। মিলিয়া বাস থেকে নেমে একটা রিকশা নিলো। বাড়ির সামনে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভিতরে গেল। ঘরে ঢুকেই ডাক দিলো-

-” মা মা ও মা।

মিলিয়া আসবে এটা কেউই জানতো না। কাউরে না জানিয়েই চলে এসেছে। মিনু মা ডাক শুনে থমকালো। সে কি ভূল শুনলো। আবারো মিলিয়া জোড়ে জোড়ে ডাক দিলো-

-” মা ও মা রাগ করেছো?

তারাতাড়ি করে সামনের রুমে গেলেন। ভাবতেও পারেনি‌ আজ সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখবে। মিলিয়া ব্যাগ ফেলে দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। বাঁধ ছাড়া কান্নায় ভেঙে পড়লো দুজনেই। একজনের কান্না মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আনন্দের। আরেক জনের মা আর সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্টের। নিজেকে ধাতস্থ করে মিনু‌ মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে-

-” আমার মা টা আর কাঁদে না। আজ না তোর জন্মদিন। এইদিনে কেউ এভাবে কাঁদে? যা ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি তোর বন্ধুদের খবর দিচ্ছি।

-” আচ্ছা মা।

মিলিয়া নিজের ঘরে গিয়ে জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে যায়। মিনু জুবায়ের আর রিনি কে কল করে আসতে বলে। কিন্তু আদ্রিদের নাম্বার তার কাছে নেই। মিনু কেক অর্ডার করে আর মেয়ের পছন্দের খাবার গুলো রান্না করে।

-” আম্মু কি করো?

-” এই তো মা রান্না করি‌রে।

হঠাৎই কলিংবেলের আওয়াজ হয়। মিলিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়-

-” মা এই সময়ে কে এলো?

-” যা গিয়ে দরজা খুলে দে।

-” আচ্ছা।

মিলিয়া গাল ফুলিয়ে চলে যায়। কোথায় একটু মায়ের সাথে আড্ডা দেবে কথা বলবে তা নয় আবার কে এলো। মিলিয়া দরজা খুলতেই রিনি আর জুবায়ের ওকে জড়িয়ে ধরে। মিলিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

-” মিলিয়াআআআআআ। তুই কেমন আছোস দোস্ত

-” আরে ভাই তোরা ছাড় না আমার সব হাড় ভেঙে গেল। ওমা গো।

দুজনেই ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মিলিয়া কে জুবায়ের বলে-

-” কিরে কিপ্টানি বাহিরে দাড় করাই রাখবি?

মিলিয়া‌ হেসে দরজা ছেড়ে দাড়ায়। রিনি আর জুবায়ের গিয়ে সোফায় বসে। মিলিয়া সোফায় বসতে বসতে বলে-

-” তারপর কি খবর? তোদের প্রেম কেমন চলে?

রিনি আর জুবায়ের দুজনেই দুজনার দিকে তাকায়। একসাথে বলে উঠে-

-” প্রেএএএএএমমম!

এমনভাবে বলল যেন এই শব্দটা জীবনে প্রথম শুনেছে –

-” আরে হ্যা তোদের প্রেএম।

রিনি হতাশ হয়ে বলে-

-” প্রেম আমাদের কপালে নাই রে।

-” মানে! ব্রেকাপ করে দিছোস। এতো ভালোবাসা গেল কই।

জুবায়ের মিলিকে থামিয়ে বলে-

-” আরে ওয়েট ওয়েট হাইপার হচ্ছিস কেন। আমাদের ব্রেকাপ হয়নি। এই যে এই রিনি আমার গলায় ঝুলে গেছে।

-” কি আমি তোমার গলায় ঝুলছি? নাকী নিজেই আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিছো?

-” মানে বিয়া করলি আমায় জানালিনা। অভিশাপ দিচ্ছি তোদের জমজ বাচ্চা হবে।

মিলিয়া চেহারায় একটু দুঃখ কষ্ট ভাব আনার চেষ্টা করলো। মিলিয়ার চেহারা দেখে দুজনেই হেসে দিলো। মিলিয়া একটু রাগি ভাব করে নিজেও হাসিতে তাল মেলালো। মিলিয়ার মা কেক নিয়ে এসে পড়লেন-

মিলিয়া মোমবাতি নিভিয়ে কেক কাটে। আগে তার মা কে খাওয়ায় তারপর জুবায়ের আর রিনি কে। কেক খাওয়া শেষ করে শুরু হয় আড্ডা‌।

-” আচ্ছা তোরা তো হ্যাপি ম্যারিড কাপল। কিন্তু আমাদের ঘাড়ত্যাড়া আদ্রিদের কি খবর?

মিলিয়ার প্রশ্নের জবাব দেয় জুবায়ের-

-” হুম ভালোই সে এখন বিরাট বেকারি শপ দিয়েছে। অনলাইনে অফলাইনে চুটিয়ে ব্যবসা করছে।

মিলিয়ার মনে খচখচানি হয়। আচ্ছা কেকটা আদ্রিদ পাঠায়নি তো?

টুকটাক কথা বলে আজকের মতো আড্ডা শেষ করে সবাই। আজ জুবায়ের আর রিনি থাকবে মিলিয়া দের বাসায়। সবাই রাতে ডিনারের সময় অনেক মজা করেছে। মিলিয়ার মা জুবায়েরের প্লেটে খাবার দিয়েছে তা মিলিয়া আর রিনি মিলে ছিনিয়ে নিয়েছে বারবার। বেচারা জূবায়ের মিনুর দিকে ইনোসেন্ট চাহনি দিলেও কাজ হয়নি। তিনিও ছেলে মেয়েদের মজা উপভোগ করেছে খুব। খাওয়া শেষে সবাই ছাদে যায়। মিলিয়ার মা যায়না শুধু। জুবায়ের মিলিয়া কে বলে-

-” আচ্ছা বিয়া সাদি করবি না আমাদের কি মামা মামি ডাক শোনাবিনা?

রিনি লাফিয়ে বলে-

-” এই এই কি বললা। মামা মামি কেন আমি খালা হবো তুমি খালু।

আবার দুজনের তর্ক- বিতর্ক শুরু হয়।

-” থামমমমবিইইইইই তোরা।

দুজনেই চুপ হয়।

-” শোন আমি বিয়া করবো না। ফাও বলে লাভ নাইগা। তা চেয়ে তোরা একটা বাচ্চা আমদানি কর।

-” কি কস মিলিয়া বাচ্চা আমদানি করবো তাও রিনি। হেই নিজেই একটা বাচ্চা। বাচ্চাদের মতো করে করে আমার মাথা খায়। আবার আইছে আরেক বাচ্চা। নোওও

রিনি রেগে যায়-

-” এই এই বেশি বুঝো তুমি। দেইখো সামনের মাসেই বেবি আসবে।

-” কেমনে রিনি ? দশমাস তো লাগবেই!

জুবায়ের আর মিলির প্রশ্নে রিনি লজ্জা পায়।

-” ধ্যাত।

সবাই সুখ দুঃখের আলাপ করে অনেকক্ষন আড্ডা দিয়ে চলে যায়। যে যে যার ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। মিলিয়ার ঘুম আসছেনা। বারবার মনে মনে চিঠির মালিককে খুঁজছে। এপাশ ওপাশ করতে করতে অবশেষে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে।

#চলবে

(দুঃখিত অসুস্থতার জন্য দেরি হলো।‌ আপনাদের মতামত জানাবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

গত পর্বের লিংক –

https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/607255024329607/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here