হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_৩

0
758

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৩
রাস্তার অপজিটে কানে ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আশিকের হবু স্ত্রী সাথে তাঁর বড় দুই বোন । আশিক এতোক্ষণ হবু স্ত্রীকেই কল দিচ্ছিলো।ওর নাম অবন্তী। ফুল অবন্তীর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।ওরা রোড ক্রস করে এপাশে আসতে যাবে এমন সময় আশিক হাত দিয়ে ইশারা করলো ওখানেই থাকতে তারপর ফুলের হাত ধরে দুজনে অপর পাশে গেলো। অবন্তী ফুলকে দেখে জড়িয়ে ধরলো,
অবন্তী বোনদের সাথে এসেছিলো কিছু বাকি থাকা শপিং করতে।অবন্তীদের বাড়ি টাংগাইল থেকে কিছুটা দূরে এলাঙ্গার দিকে।সেই দুপুরে এসেছে টাংগাইল আর আশিককে জানানোর পর আশিক দেখা করতে আসে ফুলকে সাথে নিয়ে। ফুলকে সাথে আনার কারণ আশিক একা একা লজ্জা পায় সেই জন্য।আকাশকে বলেছিলো কিন্তু আকাশ ব্যস্ত অন্য কাজে।পলাশকে বলেছে সেও ব্যস্ততা দেখালো, তাই নিরুপায় হয়ে ফুলকে আনতে হলো।

আশিক প্রচন্ড রকম লাজুক আর অবন্তীও জুটেছে,সেও আশিকের মতোই লাজুক স্বভাবের। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার পর কেউ আর বাড়তি কথা বলতে পারছেনা। লজ্জায় দুজনেই একে অপরের দিকে তাকাতাকি করছে কিন্তু কথা বলতে পারছে না । ফুলের সাথে টুকটাক কথা বলছে অবন্তী।
ওদের শপিং শেষে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো সবাই।সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর
সন্ধ্যার আগে দিয়ে চলে গেলো অবন্তীরা।

আশিক ফুলকে নিয়ে বাইরে দিয়ে ঘুরে ফিরে ফুচকা আইস্ক্রিম খেয়ে ফুলকে অনেক গুলো চকলেট কিনে দিয়ে বাড়িতে চলে গেলো।শপিং করে দিতে চাইলেও ফুল কিছু নিতে চাইলো না।

বাড়িতে ফিরতেই জানতে পারলো সালমা বানু আবার বিচার নিয়ে এসেছিলো।তার বাড়ির দেয়ালে গোবর দিয়ে লেপে দেয়ার ওরকম অকাজ করার জন্য তিনি ফুলকেই সন্দেহ করছে।কিন্তু ফুল তো প্ল্যানিংয়ের সাথে সব করেছে যার জন্য কোনো প্রমাণ নেই তাঁর কাছে।আজ ভাইয়েরা বাড়িতে থাকায় সালমা বানুকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে ঝেড়ে দিয়েছে।

রাতে বাড়িতে খুব হৈচৈ চলছে। সবাই একসাথে বসে মেহেদী দিচ্ছে। আনন্দের শেষ নেই!সোফা রেখে সবাই ফ্লোরে গোল করে বসেছে।আকাশ সাউন্ড বক্সে গান বাজাচ্ছে ফুল নিয়াজের সাথে খেলা করছে আবার আশিক আর আকাশের সাথে খুনসুটি করছে প্রচুর ।
ফুল একটা মেহেদী হাতে নিয়ে সব ভাইয়ের হাতে একটু একটু করে লতা পাতা আঁকিয়ে দিচ্ছে, যা তাকিয়ে দেখার মতো না!উল্টা পাল্টা যা মন চাইছে তাই আঁকাচ্ছে।ওর দুষ্টুমি শেষ হতেই,
ঐশী আর সুলতানা ফুলকে বসিয়ে দুই হাত ভরে সুন্দর করে মেহেদী লাগিয়ে দিলো। মেহেদী দেয়া শেষ করে ফুল সোফায় গিয়ে বসলো এমন সময় আশিক ফুলের পাশে বসে বললো,
-বোনু
-বলো।
-তোর হাতের মেহেদী কত্ত সুন্দর আর তুই আমাদের হাতে কি সব হাতি ঘোড়া অ্যামাজনের জংগল আঁকিয়ে দিয়েছিস।আমার আরেক হাত খালি আছে আয় তোর হাতের সাথে ছাপ্পা লাগাই।

ফুল আশিকের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে বললো,
-ছাপ দিলে কি আমার টা তোমার কাছে চলে যাবে?
-না না তা হবে না, তোর কাছেও থাকবে আমার হাতেও লাগবে।
-বাহ ভাল আইডিয়া তো আসো লাগিয়ে দেই।

ফুল বোকাটা না বুঝেই আশিকের কথা মতো হাতের সাথে হাত লাগিয়ে ছাপ লাগালো, আর ফুলের হাতের মেহেদীর ডিজাইন শহীদি আকার ধারণ করেছে।আশিক মিটিমিটি হাসছে আর ফুল চিৎকার দিয়ে কান্না করে দেবে নাকি ফাটবে কনফিউজড! কথায় আছে হার্টে খুব বেশি ধাক্কা লাগলে মানুষ নির্বাক হয়ে যায়, ফুলের এখন সেই অবস্থায় হয়েছে। আশিকের মুখের দিকে অসহায় দুর্বল দৃষ্টিতে তাকালো, যেনো ফুল যেটা দেখছে সেটা কেবলি কল্পনা বা স্বপ্ন।এতো সুন্দর করে দেয়া মেহেদী এভাবে…..!

পরিবেশ তাৎক্ষণিক ঠান্ডা করার উদ্দ্যেশে আশিক শুরু করলো এক রম্য অভিনয়।
-সরি বোন আমি বুঝতে পারি নি ব্যাপার টা এমন হবে।দেখ আমারও এক হাত নষ্ট হয়ে গেছে।দুদিন পর আমার বিয়ে আর এই হাত নিয়ে আমি বিয়ে করবো! ছিহঃ শ্বশুর বাড়ি গিয়ে এই হাত দেখাবো কি করে! শালা শালীরা যখন আমার হাত ধোয়াতে যাবে তখন তো ওরা আমার হাতের মেহেদী নিয়ে খিল্লি করবে!

আশিকের এই ফেক অভিনয়ে ফুল পুরোটাই বোকা বনে গেলো,যেরকম ভাবে রিয়্যাকশন দেয়ার কথা ছিলো সেটা না করে ফুল উল্টো বললো,
-দাদা মন খারাপ করো না, দেখো আমার হাতের মেহেদীটাও নষ্ট হয়ে গেছে।চলো হাত ধুয়ে ফেলি না হলে মেহেদীটা হাতে লেগে যাবে। তুমি চিন্তা করো না দাদা দুদিনে উঠে যাবে তোমার মেহেদী।

আশিকের দুষ্টুমি ফুল ধরতে না পারলেও আকাশ ধরে ফেলে। ফুলের মন খারাপ হয়ে যাবে বলে হাসিটা চাপা দিয়ে রাখলো। সব ভাইদের মধ্যে আশিক আর আকাশ এই দুইজন প্রায় ই ফুলের সাথে লাগে। বিশেষ করে আশিক প্রায় ই ফুলের পিছু লাগে ওকে রাগানোর জন্য।নিজেই রাগ উঠাবে আবার নিজেই রাগ ভাঙাবে।ফুলকে আদরের পাশাপাশি রাগাতেও ভালোবাসে।

মজা মাস্তি করে অনেক রাত হয়ে গেলো , সবাই ঘুমাতে গেলো।কিন্তু আজ ফুলের ঘুম পাচ্ছে না মোটেও। ঈদের খুশিতেই ঘুমটা উধাও হয়ে গেছে।রাতে ফুপি এসে ফুলের সাথে শুয়েছে, সারা রাত ভরে ফুলকে রূপকথার গল্প শোনাচ্ছে।

ভোর হতেই সুন্দর পরিপূর্ণ আর আনন্দময় লাগছে আজকের সকালের প্রকৃতিটাকে।
ঢাকা শহরে এরকম নিরব শান্ত সকালের দর্শন পাওয়া খুব দুঃসাধ্য! রোজ ঘুম ভাঙে গাড়ীর হর্ণ, সাইকেল, রিকশার টিংটিং আওয়াজ, আরো নানান রকম গাড়ির প্রকট বিকৃত আওয়াজে।আজ সেসব আওয়াজ নেই হয়তো ঈদ বলেই এমন সকালের দেখা মিলেছে।

এলাকার মসজিদের মাইক থেকে এনাউন্স করে দেয়া হচ্ছে ঈদের জামায়েত কয়টায় শুরু হবে আর গরু কুরবানি কখন থেকে শুরু হবে।

সকাল সকাল গোসল দিয়ে পাঞ্জাবী পড়ে রেডি হচ্ছে অভ্র। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় চিরুনি লাগাতেই রুমে প্রবেশ করলো বড় ভাইয়ের বউ নিশাত আর ছোটো বোন অনু।অনুর হাতে একটা পায়েশের বাটি।অভ্র বড় ভাইয়ের বউয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বললো,
-আরে রে গরীবের ঘরে হাতির পা!

নিশাত ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে বললো,
-এমন করে বললে যেনো তোমার রুমে আসিই না।
-সেরকম ই তো।তুমি লাস্ট কবে আমার রুমে এসেছিলে আমার মনে নেই।
-এই কথা বলছো লেখাপড়া শেষ করে ক্যারিয়ারে পা রাখো তখন বুঝবে বৌমনির কত জ্বালা! ঘর সামলানো, বর সামলানো, বাচ্চা সামলানো আবার নিজের ক্যারিয়ার সব মিলিয়ে দেবর সামলানোটা হচ্ছে না । এখন আমার কথা অতি তুচ্ছ মনে হলেও ফিউচারে বুঝবে ডক্টর হলে জীবন বলে কিছু থাকে না।

কথা বলতে বলতে অভ্রর সামনে বরাবর ড্রেসিংটেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো নিশাত।

-ঠিক আছে এখন বলো তো কি উদ্দ্যেশে আসা?
-দেবর তো আর হাত পেতে সালামি নেবে না, তাই নিজ দায়িত্বে দিতে এলাম।সালাম তো কোনো দিন করলেই না দুঃখ টা রয়েই গেলো।
-ওরকম দুঃখ আমারো অনেক আছে,বালিচাপা দিয়ে রেখেছি।

অভ্রর কথায় ফিক করে হেসে দিলো নিশাত।এবার অভ্র পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অনুকে আয়নার দিকে তাকিয়েই বললো,
– শাহজাদী আপনি কি উদ্দ্যেশে এসেছেন?পায়েশ বিক্রি করতে?
-ভাইয়া আবার!
-প্রতি ঈদে তো তুই এই পায়েশ ফেরি করে অনেক টাকা পাস তা আজকে কত পেলি?
-এখনো পাই নি।তোমার কাছেই প্রথম এলাম।

অভ্র হাত থেকে চিরুনি রেখে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে তুচ্ছ একটা হাসি দিয়ে সরে গিয়ে বললো,
-অই যে ঈদের দিন সাত সকালে মিথ্যে দিয়ে শুরু করলি। এই কমন ডায়লগ তোর প্রতি ঈদে শুনতে শুনতে আমি ফেড আপ।নিচে গিয়ে শুনতে পাবো সবার পরে তুই আমার রুমেই এসেছিস।বৌমনি আমি কি কথাটা ঠিক বলেছি?
নিশাত আবারো হেসে দিলো।অনু অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বললো।
-থামোতো বাদ দাও ভাইয়া, এখন পায়েশটা মুখে দাও আর বিনিময়ে আমার পাওনা মিটিয়ে দাও।

অভ্র হেসে দিয়ে অনুর নাক টেনে দিলো।অনু অভ্রকে পায়েশ খাইয়ে দিতেই অভ্র ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে অনুকে দিলো।

অভ্র আবার নিশাতের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই নিশাত অভ্রর মাথার চুল গুলো আদরের ছুতোয় এলোমেলো করে দিলো।
-কি করলে এটা বৌমনি!
-এটাও এক ধরনের হেয়ার স্টাইল।ভালো লাগছে কিন্তু দেখতে!
-ঠিক আছে ঈদ স্পেশাল এটাই চালিয়ে দেই, বড় ভাবী করে দিয়েছে বলে কথা । আচ্ছা নিয়ানা কোথায় সকালে একবারও দেখলাম না, আমার ছোটো মা টাকে।
-দেখবে কি করে।তোমাদের সাথে ঈদের নামাজ পড়তে যাবে। গাল ফুলিয়ে বসে আছে,কোনো বার নিয়ে নামাজ পড়তে নিয়ে যাও না তাই জেদ ধরে আছে ।বাবার সাথে কথা বলছে না, খাচ্ছেও না কিছু।তাই তো তোমার কাছে আসা।
-আচ্ছা চলো দেখছি ব্যাপারটা।তুমি কি শুধু নামে সাইকোলজিস্ট নাকি?সামান্য একটা কাজ নিজের মেয়ের মান ভাঙাতে পারো না!
-ও হ্যালো সমস্যা আমার মধ্যে না ঠিক আছে? সমস্যা তোমাদের মেয়ের মধ্যে,তোমাদের বংশগত গুণ!ঘাড়ত্যাড়া।
-ঠিক ই আছে, খান বংশের মেয়ে ও। এটিটিউড সেরকম ই থাকতে হবে,তাই না অনু?
– ঘাড় ত্যাড়া বংশ তোমাদের খান বংশ !কথা সরল লাইনে বললে তোমরা সেটাকে বাঁকিয়ে পেঁচিয়ে কোথায় নিয়েও যাও।কোনো ওষুধ নেই এই বংশের মানুষদের জন্য!

-স্ট্যান্ডার্ড একটা বংশ বুঝলে! এটা আমাদের গর্ব।তুমি বুঝবে নাহ এটা।বাই দি ওয়ে, তারমানে কি তুমি খান বংশের কোনো রোগী দেখো না?তোমার কাছে যখন সিরিয়াল দেয়ার জন্য কল দেয় রোগীরা তখন তোমার অ্যাসিস্ট্যান্ট কি বলে দেয়?”আপনি কি খান বংশ? দুঃখিত আমাদের ম্যাডামের কাছে কোনো খান বংশের ট্রিটমেন্ট নেই!”
-ও ভাই অভ্র থামো ভাই।তোমার সাথে লজিকের যুক্তিতে কোনোদিন পেরে উঠতে পারি নি আর পারবোও না।এটা নিয়ে আমরা পরে লড়াই করবো।ঈদের একটা শুভ দিনে আমি এটা নিয়ে লড়তে চাচ্ছি না। চলো আমার সাথে আর মেয়ে শান্ত করো।এই অসাধ্য সাধন করার জন্য তুমিই একমাত্র সম্বল!

অভ্র নিশাতের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে নিশাতের সাথে তাদের রুমে গেলো।গিয়ে দেখে খাটের মাঝখানে অভ্রর একমাত্র ভাতিজী নিয়ানা গাল ফুলিয়ে দুই হাত দিয়ে গাল ধরে বসে মুখ ভার করে আছে।
অভ্র নিয়ানার কাছে গিয়ে বললো,
-ঈদ মোবারক আম্মু!
-……………!
-আমার আম্মুটা এভাবে চুপচাপ বসে কেনো?মন খারাপ?
-ছোতো বাবা কথা বইয়ো না, আমি রেগে আছি খুওওব!

-ইশসসস! আমার মা রেগে আছে!ঠিক আছে তাহলে কথা বলবো না আর।

অভ্র থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ পর রহস্যময়ভাবে বললো,
– তবে একটা কথা না বললেই নয়।বলবো কি?

অভ্রর কথাটা একটু রহস্য মাখিয়ে বললো বলে নিয়ানা অভ্রর দিকে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়ে বললো।
-কি বইবে?
-আজকে তো ঈদের দিন। ঈদ মানে খুশি।যদি ঈদের দিন আমরা খুশি না হয়ে
মন খারাপ করে থাকি তাহলে আল্লাহ কষ্ট পায়।আর যদি আমরা খুশি থাকি আল্লাহও খুশি হয়।
তুমি কি আল্লাহকে কষ্ট দিতে চাও?

দুর্বল জায়গায় ঢিল ছুড়তেই নিয়ানা গলে গেলো।
-নাহ আমি আল্লাহ..কে কত্ত দেবো না।আমি তো আল্লাহ…কে ভায়োবাতি
-তাহলে তোমার এখন কি করতে হবে?
নিয়ানা মুখ শুকনো করে বললো,
-খুছি হতে হবে।
-হুম গুড গার্ল। আমার লক্ষ্মী মা এটা।

অভ্র নিয়ানার গালে চুমু খেয়ে কোলে নিলো।নিয়ানাও অভ্রর গালে চুমু খেলো।
-ছোতো বাবা আমায় নিয়ে দাবে ঈদের মাথে?আমিও তোমাদেই ছাথে নামাত পইবো।
-নেবো তো মা।কিন্তু এখন না।আমরা নামাজ পড়ে আসি তারপর তোমায় নিয়ে যাবো।গরু কুরবানি দিবে তখন তুমি আর আমি দেখবো।আমরা নামাজ পড়ে আসতে আসতে তুমি বসে বসে চকলেট গুলো খাও।

এই বলেই অভ্র পকেট থেকে অনেক গুলো চকলেট বের করে নিয়ানার হাতে দিলো নিয়ানার এখন রাগ নেই বললেই চলে।
নিয়ানাকে ঠান্ডা করে অভ্র নিচে গেলো।
আর বাবা, বড় ভাই , বাড়ির পুরুষ সার্ভেন্টদের নিয়ে নামাজের জন্য বেরিয়ে পড়লো।

অভ্রর পুরো নাম আবরার খান অভ্র।ঢাকা মেডিকেলে ৪র্থ বর্ষে পড়ে। একটা বিত্তশালী ধনী পরিবারের ছেলে। বাবা(জায়েদ খান) বড় ব্যবসায়ী, খান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক।জায়েদ খান একজনই আর কোনো ভাই বোন নেই উনার। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি সকল সম্পত্তির একচ্ছত্র মালিক হয়েছে। মা(নুসরাত জাহান) গায়নোকলোজিস্ট, সরকারি ডাক্তার। অভ্রর বড় ভাই(জিয়াদ খান) বাবার সাথে বিজনেস দেখে। বড় ভাইয়ের বউ (নিশাত) একজন সাইকোলোজিস্ট । তাদের একমাত্র মেয়ে(নিয়ানা)বয়স ৪ বছর প্রায়।
আর একমাত্র ছোট বোন(অনু) এবার এসএসসি দিয়ে ইন্টারে ভর্তি হয়েছে।

অভ্র দেখতে উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের।উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। খুবই ভালো গান গায়, নিয়মিত জিম করে, ফিট বডি, শখের বশে মার্শাল আর্ট শিখেছে। শান্ত স্বভাবের তবে, রাগলে কন্ট্রোল থাকেনা। কথায় আছে শান্ত মানুষের রাগ বেশি অভ্রর ক্ষেত্রেও তেমন। কখনো অন্যায় সহ্য করতে পারে না। তবে পরিবেশ বুঝে সবার সাথে সেকেন্ডেই মিশেও যায়।
স্বপ্ন অনেক বড় ডাক্তার হবে। নিজস্ব হাসপাতাল ওপেন করবে সেখানে বিনামূল্যে অসহায় গরীব দুঃখীদের সেবা করবে। অভ্রর এই ইচ্ছায় ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই যুক্ত হয় ।

সকাল সকাল গোসল দিয়ে সেজেগুজে সব ভাই আর বাবা -চাচা- মামা- ফুপা সবার থেকে সালামির টাকা নিয়ে গণনা করতে বসেছে ফুল। পাশে ফুপি বসে বসে ফুলকে খাইয়ে দিচ্ছে ফুল খাচ্ছে আর টাকা গণনা করছে।বাড়ির ছেলেরা সব নামাজের জন্য চলে গেছে।

ঈদের দিন ফুলদের বাড়িতে একত্রে থাকা হয় সবার। যেহেতু সবার বাড়ি একই বাউন্ডারির পাশাপাশি ফ্ল্যাট তাই যাতায়াতে সময় কাটা পড়ে না।গত রাতে থেকে সবাই ফুলদের বাড়িতেই শুধু রাতে ঘুমানোর সময় যার যার বাড়িতে যায়।আজও সবাই ফুলদের বাড়িতে।রান্নাবান্না সব এখানেই আয়োজন করা হচ্ছে।

দুপুরের একটু পর কুরবানির গোশত সমাজের জন্য ভাগ করে দিয়ে বাড়িতে আনতেই রান্না বসিয়ে দিলো।আর এদিকে ফুল একটু পর পর জামা জুতো চেঞ্জ করে করে বাড়ির ভেতরে ঘুরছে আর দুষ্টুমি করছে সাথে ওর সাহায্যকারী গ্যাং তো আছেই।

ভাইয়েরা বাড়িতে আসার পর দুষ্টুমি থামিয়ে চুপচাপ বসে বসে ভাইদের সাথে গল্প করছে।
রান্না শেষ হতেই বড় চাচী গোশত এনে দিলো সবার সামনে, একটা বড় গামলাতে মুড়ি নিয়ে তাতে মাংস মাখিয়ে সবাই মিলে একসাথে খেতে লাগলো।এভাবে খাওয়ার মজাটাই অন্যরকম।
বিকেলের দিকে সব ভাই আর ভাই বউ একসাথে ঘুরতে বের হবে বলে ঠিক করেছে। যেহেতু নিজামের স্ত্রী সুমাইয়া প্রেগন্যান্ট তাই দূরে কোথাও না গিয়ে কাছে পিঠে কোথাও যাবে।

স্থান ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,
বিকেল পাঁচটা।
একটা বন্ধু সমাবেশ বসেছে। সাত সদস্যের এই সমাবেশে উপস্থিত সমুদ্র ও বৃষ্টি দুজনেই ঢাকা মেডিকেলে পড়াশুনা করে।
আবির ও মীরা এরা দুজন ছলিমুল্ল্যাহ মেডিকেলে পড়ে।আর কাব্য যে টাংগাইল মেডিকেলে পড়াশুনা করে।
অয়ন ও অয়নী দুই যমজ ভাই বোন,তবে অয়নী ঢাকা মেডিকেলে পড়লেও অয়ন ঢাকার এক প্রাইভেট মেডিকেলে পড়াশুনা করে।

সবাই গল্প করছে এমন সময় সমুদ্র কাব্যর উদ্দ্যেশে বললো,
-কিরে কাব্য কখন শুরু করবি মেইন টপিক?

কাব্য বাদাম খেতে খেতে উত্তর দিলো,
-আরে এখনি কিভাবে শুরু করি, আমাদের অভ্র বাবুর তো কোনো খোঁজ ই নেই ও আসুক আগে।এখন বলা শুরু করবো তারপর ও মিস করবে আবার বলতে হবে।
-আব্বে অভ্র তোর ভাই ওকে যখন তখন বলতে পারবি।
-ভাই তো অয়ন অয়ানীরও আমার একার নাকি? আর তা ছাড়া আমরা তো আর এক বাড়িতে থাকি না। সামনা সামনি আর ফোনের কথা যদি এক রকম হতো তাহলে তো গ্রুপেই বলতাম।
-আচ্ছা ঠিক আছে তা না হয় বুঝলাম কিন্তু অভ্র এখনো আসছে না কেনো?ওতো লেট করার ছেলে না।
-হয়তো জ্যামে আটকা পড়েছে।কল দিচ্ছি রিসিভও করছে না। এটলিস্ট লোকেশনটা জানাবে তো!

-হতে পারে জ্যামেই পড়েছে, মাথা গরম করে বসে আছে ফোনের দিকে নজর নেই।আর ওর তো ফোনই সাইলেন্ট থাকে।

অয়নী এমন সময় বললো,
-কিন্তু একটা কথা আজকে তো রাস্তায় জ্যামও নেই তেমন একটা।খিলখেত থেকে এলাম রাস্তা তো অনেকটাই ফ্রি ছিলো আজ।
কাব্য একটু চিন্তিতো ভাবে বললো,
-তাও কথা..……ঠিক আছে আসুক তারপর দেখা যাক।

এমন সময় আবির কাব্যর দিকে তাকিয়ে আগ্রহ ভাব নিয়ে বললো,
-ঠিক আছে অভ্র আসতে থাক।এতো তাড়া কিসের!কাব্য শোন অভ্র আসার আগ পর্যন্ত তুই আমাদের ফুলের গল্প শোনা।

আবিরের সাথে সমুদ্র, অয়ন, অয়নী, মীরা, বৃষ্টি সহমত হয়ে কাব্যকে ফোর্স করতে লাগলো।
-ঠিক আছে বলছি বলছি।শোন তোরা তাহলে।

কাব্য বসে বসে ফুলের কথা বলতে লাগলো ওদের। ফুলের বর্ণনা বন্ধু বান্ধুবীদের কাছে এমন ভাবে দিয়েছে সবার মধ্যে ফুলের প্রতি একটা মোহ আকর্ষণ কাজ করে প্রতিনিয়ত। ফুলের ছবি দেখার পর থেকে ওকে বাস্তবে দেখার জন্য আরো বেশি আগ্রহ জাগে সবার মাঝে।কাব্য ফুলের ব্যাপারে সব বলে। ফুল কতোটা দুষ্টুমি করে, বন্ধুদের নিয়ে অন্যের বাড়ির আম, লিচু, পেয়ারা এসব চুরি করে খাওয়ার গল্পটাও বাদ রাখেনি। ফুলের নামে বিচার নিয়ে আসলে ভাইয়েরা তোয়াক্কাও করে না ফুলের জন্য সাত খুন মাপ।ও বাড়িতে ফুলের মূল্য পুরো বাগানে একটা মাত্র ফোটা ফুলের মতো।

কাব্যর সাথে ফুলদের সম্পর্ক হয়েছে আকাশের মাধ্যমে।কাব্য টাংগাইল মেডিকেলে পড়তে যেয়ে আকাশের সাথে পরিচয় আর সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। টাংগাইল গিয়ে প্রথম প্রথম অনেক প্রবলেম ফেস করতে হয় কাব্যর। কেনোনা এতো বড়লোক ঘরের ছেলে হয়ে ওখানে ব্যাচেলর বাসায় থাকা খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো তা ছাড়া আরো নানান রকম সমস্যা তো আছেই।তারপর ফুলের ভাইয়েরা বিশেষ করে আশিক কাব্যর অনেক হেল্প করে।সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর থেকে কাব্য আকাশের সাথে ওদের বাড়ি থাকতে শুরু করে।আস্তে আস্তে আকাশদের আর কাব্যদের দুই ফ্যামিলির মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে । দেখা না হলেও ফোনে যোগাযোগ হয় দুই পরিবারের।আকাশ প্রায় ই ঢাকা আসে কাব্যর সাথে সেখান থেকে ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের একজন হয়ে উঠে আকাশ।আর ওপাশে কাব্য হয়ে উঠে রোজ প্যাটেলের একজন সদস্য।

এদিকে কাব্য অভ্রর মামাতো ভাই।আর অয়ন অয়নী অভ্রর খালাতো ভাই বোন।

সবাই গল্প করছে এমন সময় আবির ঘাড় ঘুরিয়ে ডান দিকে তাকাতেই দেখলো অভ্র ওদের দিকে আসছে।
-ওওইতো আমাদের অভ্র বাবাজীবন আসছে এইদিকে।

আবিরের কথা শুনে সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো অভ্রর দিকে।

অভ্র একটা রিকশা থেকে নেমে পাওনা মিটিয়ে দিয়ে ওদের দিকে এলো।
এসেই কাব্যর পাশে বসলো,কাব্য অভ্রর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে একা কেনো?অনু কোথায়?আর রিকশায় এলি যে?
-বান্ধুবীদের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে অনু।গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে মাঝ রাস্তায়।
-ঠিক আছে চল তাহলে আজকের টপিক শুরু করা যাক।

-কোনটা তোর রূপকথার গল্পের টপিক?

ফুলের গল্প শুনে সবাই ইম্প্রেস হলেও অভ্রর একদম উল্টো রিয়্যাকশন টা হয়।প্রচুর বিরক্ত হয়!ফুলের গল্প তো দূরে থাক ফুলের নাম শুনলেই রেগে যায়।সবাই ফুলের ছবি দেখলেও অভ্র দেখেনি।কারণ কোনো ইন্টারেস্ট নেই ওর প্রতি অভ্রর।আর এদিকে কাব্য প্রতি কথায় ই ফুলের গল্প শুরু করে দেয় যার কারণে মাঝে মাঝে কাব্যর উপর ও রেগে যায় অভ্র।

কাব্য হেসে দিয়ে অভ্রকে রাগানোর উদ্দ্যেশে বললো,
-একদম ঠিক ধরেছিস।এখন ফুলের গল্পটাই বলবো।কয়েকটা গল্প আছে তোকে শুনানো হয় নি।
-প্লিজ ভাই ঈদের একটা দিন ভাই । আজকে অন্ততো এই ব্রেইন টর্চার থেকে মাফ কর ভাই প্লিজ!
-ঠিক আছে হাল্কার উপর পাতলা একটু বলি?
-একদম ই না।যেটা প্ল্যানিংয়ের জন্য এসেছি সেটা বল।
-আরে ভাই বলবো তো। এতো উত্তেজিত হচ্ছিস কেনো বলতো?
-ভাই আমার, বকবক না করে মেইন টপিক শুরু কর দেখি।বড্ড কথা বাড়াস তুই।
-বাদাম চাবা ভাই। তোর একটুতেই বিরক্তি ধরার সমস্যাটা গেলো না। টাংগাইল গেলে এই স্বভাব টা পারলে চাপা রাখিস।বিশেষ করে ফুলের সামনে! তোকে দিয়ে বিশ্বাস নেই ফুল একটু দুষ্টুমি করলে তুই ধমক দিয়ে বসবি আর ফুল কিন্তু তোর বারোটা বাজিয়ে দেবে বলে দিলাম ।তাই ভাই আগে থেকেই…..

কাব্যর কথা শেষ হতে না হতেই অভ্র আবিরের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে কাব্যর মাথায় ঢেলে দিলো।কাব্য ছিটকে গেলো।

চলবে…………
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন শুধরে নেবো।গল্পকে গল্প হিসেবে দেখুন, ভালো না লাগলে ইগনোর করুন।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here