হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_১১

0
524

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_১১

অভ্র বুঝতে পারছে ফুলেরও ওর মতোই আন ইজি প্লাস নার্ভাস ফিল হচ্ছে। জড়তা কাটানোর জন্য কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর অভ্র ফুলের দিকে মাথা ঝুঁকে কথা বলা শুরু করলো সব সময়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে।

-তোমাকে কাল বিকেল থেকে দেখতে একদম ই অন্য রকম লাগছিলো।
-কেমন লাগছিলো?
-অনেকটা বড় বড় লাগছিলো।
-কেনো আমি তো বড়ই।বড় হলে তো বড় লাগবেই।
-বয়স কত তোমার?
-মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে হয় না।
-ওরি বাবা এটাও জানো তুমি!ওকে।

-তোমার বার্থডে ডেট কবে?
-১৭ই আগস্ট।
-কি বারে জন্ম হয়েছে?
-শুক্রবার।
-কত সালে জন্ম নিয়েছো?
-দুই হাজার….

পুরোটা বলতে যেয়েও থেমে গেলো,অভ্রর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো,
-এই মিয়াঁ আমি বললাম না,মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে হয় না।আপনি আমার জম্ম সাল জিজ্ঞেস করলেন কেনো?

-খান নট মিঁয়া!
ফুল তুচ্ছ ভাবে বললো,
-একটা হলেই হলো,
-যে যেটা তাকে সেটা বলতে শেখো।তোমাকে যদি কেউ শিকদারের জায়গায় শেখ বলে অভ্যর্থনা দেয় কেমন লাগবে?
-খুবই বাজে লাগবে।
-আমারো তেমন ই লাগে।
-আচ্ছা আপনার পুরো নাম যেনো কি।
-আবরার খান অভ্র।
-এতো কঠিন কেন?
-আবরার অর্থ মহান, খান অর্থ রাজপুত্র বা নেতা , অভ্র মানে মেঘ।নাম কঠিন হলেও নামের মিনিং সহজ।

অভ্রর নামের মধ্যে আনফরচুনেটলি রাজপুত্র নামটা শুনে ফুলের ভেতর ধক করে উঠে।
-আরে বাহ আমার দেয়া নামটা রাজপুত্রের নামের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে!বেশ তো (মনে মনে)
-তোমাকে দেখতে যতোটা বোকা বোকা, তুমি কিন্তু তেমন না হেভবি চালাক আছো।কেউ ধরতে না পারলেও আমি কিন্তু ধরে ফেলেছি।

ফুল কিছু না বলে অভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ পিটপিট করে হেসে দিলো।
-একটা প্রবাদ শুনেছেন?
-কি?
-বাইট্টা মাইন্সের নাটা বুদ্ধি!
-হা হা হা এতো কথা কোথা থেকে শেখো!
-পেটে বানাই।
অভ্র হেসেই যাচ্ছে।

-আচ্ছা তোমাদের কলেজের ছেলেরা তোমার পিছু লাগে না কখনো?
কলেজের ছেলেরা কথাটা শুনে ফুল হাসির বাঁধ আটকে রাখতে পারলো না,
-হাসছো কেনো?
-আমি গার্লস কলেজে পড়ি,ছেলে আসবে কোথা থেকে?
-ও হ্যাঁ সরি ভুলে গিয়েছিলাম।স্কুলও কি গার্লস স্কুল ছিলো?
-নাহ,তবে স্কুলে ছেলে মেয়েদের আলাদা আলাদা শিফটে ক্লাস হতো।ধরতে গেলে গার্লস স্কুলের মতোই নিয়মকানুন ছিল।
-রাস্তা ঘাটে ছেলেরা পিছু লাগে নি?
-কি জানি জানি না তো।আমি স্কুল কলেজে কখনো একা যাই নি,বাড়ির কেউ না কেউ সাথে যায়।
-টাংগাইলের ছেলেদের ভাগ্য কতোটা খারাপ!
-কেনো খারাপ কেনো?
-এই শহরে যে একটা হুর থাকে সেটা তাদের জানার সীমার বাইরে রয়ে গেছে!
ফুল হেসে দিয়ে বললো,
-ধেত ভাইয়া সব সময় এক ইয়ার্কি! এটা একখানা বস্তা পচা জোকস!আমি মোটেও হুরের মতো না।
-এই কথাটা কখনো আয়নার সামনে গিয়ে বলো না ,নাহলে দেখবে বেচারা আয়নার অই প্রতিচ্ছবিটা এ অপবাদ নিতে না পেরে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে আর না হয় তোমার গালে একটা চটাস করে মেরে বলবে “কি বললি তুই?আবার বল দেখি সাহস কতো তোর !”
-হি হি হি….ঠিক আছে ট্রাই করে দেখবো।
-না না না…! একদম এই কাজ করো না।
-কেনো?
-তাহলে তো তোমার গালে দাগ হয়ে থাকবে,তখন দেখতে ভালো লাগবে না।
-আপনি খুব পয়েন্টে কথা জানেন।চালাক আছেন প্রচ্চুর চালাক কিন্তু আমার থেকে বেশি চালাক না!

অভ্র কোনো রিয়্যাকশন না দিতে চাইলেও হাসি আটকে রাখতে পারলো না।ফুল কথাটা এমন ভাবে বললো,হাসি আটকে রাখার মতো না।

বাড়ি ফিরে আসতেই বাড়ির সামনে একটা বড় কাঠের পিঁড়ি রাখা হয়েছে, ঐশী আর সুলতানা জামাই বউ সেজে সেটার উপর বসে আছে একটা ছাতা ফুটিয়ে।আশিক বউ নিয়ে এই পিঁড়িতে দাঁড়াবে আর আয়েশা বেগম তার ছেলে আর ছেলের বউকে বরণ করে ঘরে তোলবে।এখানে ঐশী আর সুলতানাকে টাকা দিয়ে পিঁড়ি থেকে নামাতে হবে আগে।

সবাই সামনে আসতে না আসতেই পারভেজ আর নিয়ম বুঝে গেলো এরা ওদের দুজনের বউ।নিয়ম ছাতার ভেতর দিয়ে দিয়ে মোবাইলে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে দেখে ঐশী বউ সেজেছে,
-ভাই আমার বউয়ের পরকিয়া ছিলো কবে থেকে?হায় হায় আমার বউ আমারই বাড়ির সামনে অন্য কাউরে বিয়ে কইরা দাঁড়াইয়া আছে।দেড় বছরের সংসারটাই ফালানি! ছলনাময়ী নারী রূপধারী নারী,কি কমতি ছিলো আমার?আমার বুকে মাথা রাইখা তুমি তাঁরে নিয়া স্বপ্ন দেখতা!কেন এমন করলা?

ভেতর থেকে ঐশী আস্তে করে উত্তর দিলো,
-কারণ তুমি টিউব লাইট জ্বলে না ।
-ছিহঃ ছিহঃ ছিহঃ এইভাবে মানসম্মানের মাঠে মলন দিলা।

নিয়ম ঐশী একের পর এক তাতলামো চালিয়েই যাচ্ছে। পারভেজ এসে নিয়মের সাথে জোট বেঁধে ঝগড়া করতে লাগলো,বাকিরা সবাই ওদের কান্ড কারখানা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।বিয়ে বাড়িতে সব থেকে বেশি রম্য হাসি ঠাট্টা এই খানটাতেই হয়। সুলতানা কন্ঠটা একটু উঁচু করে ছাতার ভেতর থেকেই বললো,
-ভাই অমন করেন ক্যান,বড়লোক মানুষ আফনেরা চাইলে একটার জায়গায় বারোটা করতে পারবেন।না হয় আপনার একটা বউ নিছি, মনে করেন আপনার বারোটা বউয়ের মধ্যে এই একটা বউ যাকাত দিছেন আমারে।তাইলেই কষ্ট কম লাগবো। নতুন বিয়া করছি কয়টা টাকা দিয়া বিদায় করেন।
– চুরি তো চুরি তার উপর সিনাজুড়ি! অই পারভেজ ভাই দুইটারে গাছের সাথে দড়ি দিয়া বান্দো,বিয়ার ঝামেলা মিটলে এই দুইটার বিচার হবো।

ঐশী নিয়মকে শীতল কন্ঠে বললো,
-হে আমার প্রাক্তন স্বামী,দেখুন পৃথিবীটা কতো সুন্দর একটু সহৃদয়তা দেখান। এতো ভেজাল না কইরা ব্যাটা আমাগো সংসারের খরচটি দিয়া দাও ভাইজ্ঞা যাই।
দেরি করলে তোমাগোই লস।

কথা কাটাকাটি চলছেই,এদের থামানোর জন্য আয়মান এসে পারভেজের হাতে পাঁচহাজার টাকা দিলো ওদের পিঁড়ি থেকে উঠানোর জন্য,কিন্তু নিয়ম একটু চালাকি খাটিয়ে পারভেজের হাত থেকে চারটা পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে ভাঁজ করে এমন ভাবে দিলো যেনো বোঝা যায় ওখানে অনেক টাকা আছে। বউ দুটোকে বোকা বানিয়ে পিঁড়ি থেকে উঠিয়ে দিলো,মাঝখান থেকে তিনহাজার টাকা বাঁচিয়ে নিলো ছেলেরা।

ঐশী সুলতানা চলে যেতে নিবে এমন সময় নিয়ম আটকে ধরলো,
-ওমহু হবে নাতো, বর সব সময় বউকে কোলে তোলে ঘরে উঠে,আমিও উঠেছিলাম।তোমাদের ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙাবে কেনো,বউ কোলে তুলো না হলে যেতে দেবো না।

এইবার তো সুলতানার ষোলটা বাজবে ঐশীকে কোলে নিলে তো ওকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। কিন্তু নিয়ম তো ধরেছে সেই রকম করেই ছাড়বে না কোনো মতেই।
বাধ্য হয়ে বেচারী কোলে তুলে পড়ে যায় যায়। কোনো মতে নিয়মকে পাশ কাটিয়ে ঐশীকে নামিয়ে দিয়ে দুজনেই দৌড়ে ভেতরে চলে যায়।

এদিকে আশিক আর অবন্তীকে বরণ করে ঘরে তোলা হলো।
বিয়ে বাড়ির সব রিচুয়ালই মেইনটেইন করা হচ্ছে।

ফুল বাড়িতে ঢুকে সোজা রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো,ফুলের সাথেও অনুও আছে।

আকাশরা সবাই অবন্তী আশিকের পাশে বসে বসে গল্প করছে শুধু অভ্র বাদে।বাড়ির ভেতরে ঢুকতে নিলেই হাতে থাকা ফোনটা জ্বলে উঠে, রিসিভ করে উল্টো ঘুরে বাইরে চলে যায় কথা বলতে বলতে।
-এখন বলেন হঠাৎ কি মনে করে কল দিলেন ম্যাডাম?
-তুমিও না অভ্র কেমন যেনো থেকে থেকে টিজ মেরে কথা বলো এটা মোটেও পছন্দ না আমার।
-এখানে টিজ মারলাম কোথায়?আমি তো জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম এতো ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি আমাকে কল দিয়েছেন তাই বললাম।ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার জন্য কল দেয়ার লোক আপনি না।
-কি করবো দেবরের কথা খুব মনে পড়ছিলো তো তাই দিলাম কল।আর শুনো আমি তো তাও দিয়েছি তুমি কখনো আমায় ভুল করেও কল দাও?
-আমি তো কল দেই না একটা কারণে, হয়তো ব্যস্ত আছো, আবার ডিস্টার্ব ফিল করতে পারো।
-একটু বিরক্ত করো না দেখি তুমি বিরক্ত করলে কেমন লাগে, তোমার ভাই তো বিরক্ত করার টাইম ই পায় না। বিরক্ত করলে কেমন লাগে আমার জানা নেই,আমি যখন চেম্বারে থাকি তোমার ভাই দু বার কল দেয়। কি করছো, খেয়েছো,ঠিক আছে রাখি তাহলে।ভাই এই তিনটা কথা ছাড়া তাঁর স্টকে আর কোনো কথায় নেই।আমি চাই জিয়াদ আমাকে সারাদিন কল করে বিরক্ত করুক।কিন্তু দেখো আমার কপাল।

-তোমার দুঃখটা আমি ফিল করার চেষ্টায় আছি বউমণি,কিন্তু পারছি না।
যাই হোক কল দিয়ে ভালোই করেছো,আমিই তোমাকে কল দিবো বলে মনস্থির করেছিলাম।তোমাকেই প্রয়োজন আমার ।
-কি কারণে প্রয়োজন সেটা পরে শুনবো যেহেতু আমি আগে কল দিয়েছি সো আগে আমার দরকারি কথাটা বলে নেই।
-ওকে বলেন ম্যাডাম নিশাত ওপস সরি ডক্টর নিশাত ম্যাম।
-ইয়ার্কি ছাড়ো,এখন সত্যি করে বলো তো নিয়ানা কিসের বিগ ডল বিগ ডল বলে মাথা খাচ্ছে?সারা দিন শুধু এক কথা বলছে ছোটো বাবা আমার জন্য একটা বিগ ডল আনবে ডলটা অনেক সুন্দর অনেক কিউট।ছোটো বাবা আমাকে অই ডল টা দেখিয়ে বলেছে আমার জন্য নিয়ে আসবে, কিন্তু অই ডলটা নাকি দুষ্টু আসতে চায় না।আমি অই ডলটাকে আনতে বলেছি, অই ডলটাকে আমি ছোটোমা বলে ডাকবো।সব ই বুঝলাম কিন্তু আমার মেয়ে কেনো অই ডলটাকে ছোটো মা বলে ডাকবে বলে মনস্থির করেছে?কাজের প্রেশারে তো ব্যাপারটা মাথায় নেই নি তবে আজ না নিয়ে পারলাম না,আচ্ছা অভ্র এটা বলো ডলটা কি স্ট্যাচু নাকি জীবন্ত?আমার কিন্তু খটকা লাগছে।সত্যি করে বলো,

অভ্র হেসে দিয়ে উত্তর দিলো,
-শুরুতে যদি আমার দরকারি কথাটা শুনতে তাহলে এতো প্রশ্ন আসতোই না।
-ওকে এখন বলো,
-তুমি কথা বলার সময় আমি তোমার ফোনে কিছু ছবি দিয়েছি দেখো আর বলো কেমন লেগেছে।তারপর বলছি ব্যাপারটা।

নিশাত ফোন কানে থেকে সরিয়ে ফোন স্ক্রিনে লক খুলতেই দেখে কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছে অভ্র, তার নোটিফিকেশন। সাথে সাথে ছবিগুলো দেখতে লাগলো,কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ছবি দেখতে দেখতে নিশাত উত্তর দিলো,
-ওয়াও! কে এই মেয়ে? এটা কি মানুষ নাকি পরী?কত্ত সুইট!
-তোমার পছন্দ হয়েছে?
-মাশ-আল্লাহ!
-ওটা আমার হুর।
-পুরোটা খুলে বলো,
-খুলে বলার কিছু নেই,যা বলছি তাই শুনো আগে। বাপের বাড়ি খাওয়া হয়ে গেলে, বাড়ি গিয়ে ব্যাপারটা জানাও।আমার ধারণা বাবা মা কেউ ই না করতে পারবে না,তবুও ব্রেইন ওয়াশের জন্য তুমি আছো আমার বিশ্বাস।প্রথমে ভাইয়াকে বলবে তারপর দুজন মিলে বাবা মাকে।বৌমণি আমার যেভাবেই হোক এই হুরটাকে চাই।

-কথার ভাবেই বোঝা যাচ্ছে, বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো।মারাত্মকভাবে মেয়েটার মায়ায় আটকে গেছো।আটকে যাওয়ার ই কথা এটা আসলেই একটা হুর। তুমি কোনো টেনশন করো না,যা বলবে তাই ই হবে।
-থ্যাংকস বৌমণি! যদিও তুমি আমাদের বংশের না, তবুও তুমিই আমার কদরটা করো।
-অই যে আবার টিজ মারলে।
-টিজ না তো এই বার আমি সত্যি মন থেকে প্রশংসা করলাম।
-আচ্ছা এখন লাভ স্টোরি বলো,শুনবো।আজকে আমি ফ্রি আছি, তোমার ভাইও ফিরে নি এখনো। বলো বলো
-ওকে বলছি।

অভ্র আস্তে আস্তে করে ফুলের সম্পর্কীয় সব কিছু খুলে বললো,ওর ফ্যামিলি কেমন, ও কেমন ওকে কতোটা আদরে রাখে আর ও কতোটা দুষ্টু। নিশাত সবটা শুনছে মন দিয়ে।শুনার পর অভ্রকে আশ্বাস দিলো,কোনো টেনশন না করতে।ওবাড়ির বিয়ে মিটে গেলেই যা করার করবে। নিশাতের সাথে কথা বলে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে ফোনটা পকেটে রাখলো।
অভ্র একটা চেয়ারে বসে বসে কথা বলছিলো,আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা বড় নিশ্বাস ছাড়তে যাবে তখন বুঝতে পারলো আকাশটা দেখা যাচ্ছে না মাথার উপর আকাশ নেই, আকাশের নিচে কাব্যর মাথা,যে অভ্রর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে, অভ্র কাব্যকে দেখে ছিটকে গেলো না অবাকও হলো না যেনো কাব্যর প্রত্যাশায় ছিলো অভ্র।কাব্যর চোখের সাথে চোখ পড়তেই অভ্র একটু আসামী আসামী ভাব নিয়ে ঠোঁটে হাসি লাগালো।আর কাব্য গোয়েন্দার মতো তাকিয়ে যাছে,যেনো অনেক কষ্টে ইনিভেস্টিগেশন করার পর সে সফল ভাবে রহস্য উদঘাটন করে ফেলেছে।কাব্য সরে গিয়ে অভ্রর সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসলো,
-তুই যে একটা মিচকা সেইটার প্রমাণ আজকে পেলাম।
-আমি আবার কি করলাম?
-কি করেছিস সেটা তো তুই ই ভালো জানিস।
-একটা কথা জানিস? মানুষ আর আকাশ এক ক্যাটাগরির।
-হ্যাঁ জানি সেটা, কিন্তু তুই তো ভাই গিরগিটি।
-গিরগিটি কেনো?
-ব্যাপারটা এমন হলো না যে, ছিলো বেড়াল হলো রুমাল?দুই একদিনের কথাও না মাসের পর মাস বছরের পর বছর তুই যে নামটা শুনলে এতো এতো বিদ্রূপ করতি,ডিস্টার্ব ফিল করতি, সেই শুরু থেকে অসহ্যকর ফিল করতি একটা নামকে। এই ফুলটার জন্য তুই আসল ফুল দেখলেও রেগে যেতিস অপছন্দ করতিস। সেখানে কি হলো?মাই গড! মাত্র দুই রাত দুই দিন এক বিকেলে তোর এতো বছরের জমাট ধরানো ইগো ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো! হাও ইজ ইট পসিবল! এখন তুই বউমণিকে ওর সম্পর্কে এতো কিছু বলছিস,ঠিক যেরকম এতোদিন আমি তোদের বলতাম।আবার অন্যকিছুও শুনলাম।
-তো প্রবলেম টা কোথায়?একটা ক্যারেকটার ভালো লাগতেই পারে।আগে বুঝি নি বুঝার চেষ্টা করিনি তাই ওরকম করতাম।এখন ধারণা উল্টে গেছে,দ্যাটস ইট।
-ভাই প্রবলেম কোথাও না, শুধু দুঃখ হচ্ছে।এতো কিছু হয়ে গেলো এই ভাইটাকে জানালি না?এভাবে লুকিয়ে গেলি আমার থেকে।
-সরি ভাই আ’ম এক্সট্রিমলি সরি। জানি তোকে শুরু থেকে বলা উচিৎ ছিলো,বলি নি কারণ যদি তোরা সবাই আমাকে নিয়ে মজা উড়াস সেটা ভেবেই বলা হয় নি।
-ঠিক আছে বাদ, মাইন্ড করি নি।দোষ স্বীকার করেছিস তাতেই খুশি আমি।এখন বল কতদূর কি হলো?
-এখনো যাত্রা শুরু হয় নি ব্রো, তুমি চাইলেই শুরু হবে।
-মানে?
-এবাড়ির লোকদের রাজি করানোর দায়িত্ব তোমার।আর আমার বাড়ির লোকদের তো আমি দেখে নিবো।বাট ভাই প্লিজ দেখো ব্যাপার টা।
-আচ্ছা বিয়ে বাড়ির ঝামেলা মিটুক তারপর দেখছি তোর ব্যাপার টা।
-থ্যাংকস ভাই।

কাব্য একটু চিন্তিতোমুখে বললো,
-কিন্তু আমার না কেমন জানি মনে হচ্ছে ফুলের ব্যাপারে ওরা কেউ কিছু ভাবে নি।জানি সবাই জানাজানির পর কি রিয়্যাকশন দেবে।
-আরে কিচ্ছু হবে না, আল্লাহ ভরসা।রাজি না হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
-ঠিক আছে দেখা যাক কি হয়।এখন ভেতরে চল সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর তুই বাইরে।

কাব্যর সাথে ভেতরে যেতেই দেখলো সবাই বেশ আড্ডায় মেতে উঠেছে। আশিকের পাশে ফুল বসে আছে অবন্তীর পাশে ওর ভাবীরা বসে বসে গল্প করছে।অবন্তীর বাপের বাড়ি থেকে ওর দুই বোনের জামাই আর বড় বোনের ছেলে এসেছে সাথে।

অভ্র ফুলের মুখোমুখি বসে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ফুল সবার সাথে গল্প করায় মগ্ন আছে অভ্রর যে এসেছে সে দিকে খেয়াল ই নেই।

রাত এগারোটা বাজে।
আশিক বাসর ঘরে ঢুকার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ঘরের সামনে।

ভাবীরা অবন্তীকে বাসর ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে হাতে চাবি রেখেছে,এখানেও চাঁদা দিয়ে ঘরে ঢুকতে হবে।চাঁদার পরিমাণ ২০ হাজার ধরা হয়েছে।
-আরে ভাই খাজনার থেকে বাজনাই বেশি,জায়গায় মেয়েরা ঘাট ধরবে আর চাঁদা নিবে।বিয়ের শখ মিটে গেছে ভাই

আশিকের এই কথায় কবিতা উত্তর দিলো,
-দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বিয়ে আর তো এই দিন আসবে না, সব কিছু সহজ ভাবে হলে তো দিনটা ভুলে যাবে, যাতে মনে থাকে সব সেই কারণেই আমাদের ক্ষুদ্র চেষ্টা।
-টাকার রেট টা কি কমানো যায় না?
-কমানো যাবে না , তবে তুমি চাইলে বাড়ানো যেতে পারে।
-ভাই আমার আমার বাসর ঘর লাগবে না, বউ বাইর কইরা দাও আমি হোটেলে থাকবো।
-বউ বের করতে হলেও টাকা টা দিতে হবে।মোট কথা ঘরের তালা খুলতে টাকা লাগবে।
-আচ্ছা রকম বিপদ তো।

আশিক পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে যেয়েও ভাবীদের হাতে না দিয়ে আকাশের হাতে দেয়।আকাশের থেকে পুরো টাকাটা নিতে পারবে না।
-এটা কি করলে ওর হাতে দিলে কেনো টাকা?
– ওখানে ২০ হাজারের কম আছে আকাশ বাকি টাকাটা দিয়ে তোমাদের দিয়ে দেবে।
-এখন আমায় যেতে দাও।
-না আগে টাকা দাও।
-দিলাম ই তো, শুধু হাত আলাদা। আকাশের থেকে নিয়ে নাও।

আকাশ ভাবীদের দেখিয়ে দেখিয়ে টাকা গণনা করলো পাক্কা ২০ হাজার টাকা।
-টাকা তো ঠিকি আছে ভাইয়া,
-ওহ তাহলে আমারই গণনার ভুল ছিলো হয়তো।
টাকার হিসেব দেখে ভাবীরা রুমে ঢুকতে দিলো আশিককে।আশিক রুমে ঢুকার পর কবিতা আকাশের কাছে টাকা চাইতেই আকাশ ভদ্রভাবে টাকাটা দিয়ে সরে গেলো ওর বন্ধুদের নিয়ে।এখানে বেশিক্ষণ থাকলে ভাবীদের কিল একটাও মাটিতে পড়বে না।

ওরা চলে যাওয়ার পর ভাবীরা আবার টাকাটা গণনা করতে শুরু করলো হিসেব করে দেখে এখানে মাত্র পনেরো হাজার টাকা,পাঁচহাজার হাওয়া!

আকাশ গুঁজামিল দিয়ে হিসেব করে ওদের কাছে ১৫ হাজার টাকাকে ২০ হাজার বানিয়েছে।আশিক টাকা দিয়ে যখন বললো বিশ হাজারের কম আছে বাকিগুলো আকাশ দেবে,আকাশ তখনই চালাকী করে ওদের দেখিয়ে দেখিয়ে টাকা হিসেব করে ২০ হাজার প্রমাণ করে অনেকটা হিপনোটাইসের মতো কাজটা,কয়েকটা নোট গণনার পর এক নোট দুইবার গণনা করলে কেউ চোখের সামনে থেকে ধরতে পারে না।সব কটাকে চোখের সামনে বোকা বানিয়ে দিয়ে গেলো।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here