শ্রেয়সী #লেখাঃKhyrun Nesa Ripa #পর্বঃ৯

0
426

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ৯

আজ এক সপ্তাহ বিছানায় জ্বর নিয়ে কাটাচ্ছে বিন্দু। আর প্রতিটা মুহূর্তে শিহাবকে মিস করছে। সেইদিন শিহাবের ওপর রাগ দেখিয়ে আসলেও নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল বিন্দু। শিহাব তো ওকে কোনোরকম জোরজবরদস্তি করেনি। দু’জনের সম্পূর্ণ মতামতেই তো যা হওয়ার হয়েছে। তাহলে অযথা শিহাবের সাথে রাগ দেখিয়ে কী লাভ। একটা পাপ তো অলরেডি করেই ফেলেছে দ্বিতীয়বার যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটাই হলো দেখার বিষয়। একে তো প্রচণ্ড মন খারাপ তার ওপর পাল্লা দিয়ে জ্বরের সাথে লড়তে লড়তে পুরাই নাজেহাল অবস্থা। জ্বরের মধ্যে শিহাবকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল বিন্দু। প্রতিবারই রিং বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেছে শিহাব ফোনটাও তুলেনি। এরপর এখন যত ফোনকল করছে ততবারই ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে একদম ভালো নেই বিন্দু। প্রচণ্ড কষ্টে আছে। প্রচণ্ড!

বিধু রুমে ঢুকলো সুজির হালুয়া নিয়ে। কোনো কিছুই মুখে তুলতে চাইছে না। সব তেতো লাগছে। বারবার একটু একটু পানি খেয়ে খেয়ে গলাটা ভিজাচ্ছে কারণ গলটা শুকিয়ে যায় কিছুক্ষণ পরপরই। বিন্দু শুয়েই ছিল। বিধু এসে ডাকতে লাগলো,
–আপু তাড়াতাড়ি ওঠ। হালুয়াটুকু খেয়ে নে। তুই নাকি খেতে চেয়েছিলি তাই মা বানিয়েছে।”
কখন যে কী একটু মুখে ভালো লাগবে তাও জানে না বিন্দু। যা আবদার করে তাই সাজেদা বেগম যত্ন করে বানিয়ে দেয়। কিন্তু মুখে দিলে সবই বিষাদের মতো লাগে। বিন্দু আস্তে আস্তে উঠে বসলো। সুজির পেয়ালাটা হাতে নিয়ে মুখে দিতেই কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। একদম খেতে ইচ্ছে করছে না। জ্বরটা যদিও এখন অনেকটা কম কিন্তু জ্বর শেষে আরও দুর্বল হয়ে পরেছে। একদম বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না।
–নিয়ে যা আর খাব না।”
বিধু ধমকের সুরে বললো,
–খাবি না মানে কী? জ্বর হলে তো খেতে মন চাইবেই না। তাই বলে না খেয়ে মরতে হবে নাকি।”
কথা শেষ করেই বিধু বিন্দুর হাত থেকে পেয়ালাটা নিয়ে কয়েক চামচ জোর করে বিন্দুকে খাইয়ে দিলো। তারপর সকালের ঔষুধগুলোও খাইয়ে দিলো। ঔষধ খাওয়ানো শেষে বোনের চুলগুলো বেঁধে দিতে বসলো।
–বিধু ভালো লাগছে নারে। এখন চুল বাঁধবো না। ব্যথা পাচ্ছি। ”
–বেশি ব্যথা লাগবে না। আমি আস্তে জট ছাড়িয়ে তেল দিয়ে দিচ্ছি।”
বিধু পরম যত্নে বিন্দুর চুলে তেল দিয়ে বিনুনি করে দিলো।
–আপু এক কাজ কর এই ড্রেসটা চেঞ্জ কর। আমি হালকা গরম পানি নিয়ে আসছি গোসলটা এবার সেরে নে। চুল ভেজানো দরকার নেই। আমি পানি দিয়ে দেব মাথায়।”
–বিধু আমার ভালো লাগছে না। একটু শুতে দে।”
–দেব আগে গোসল তারপর শুতে দেব।”
বিন্দু গোসল সেরে টাওয়াল পেঁচিয়ে রুমে আসতেই দেখে একটা নতুন ড্রেস খাটের ওপর। বিধুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বিধু বলে উঠলো,
–আমার এক গেষ্ট আসবে আর তুই এমন ফকিন্নির মতো থাকবি নাকি। তাই এটা পরে নে।”
–গেষ্ট আসবে তোর আমি গিয়ে কী করবো?”
–নাচবি।”
বলেই হনহনিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল বিধু। বিন্দু ড্রেস পরে আবারও শিহাবের ফোনে কল করলো এবারেও নিরাশ হয়ে ফোনটা বালিশের পাশে রাখলো বিন্দু।

বিধু দ্রুত হাতে সব কিছু রেডি করতে লাগলো। আজ স্পেশাল গেষ্ট আসবে বলে কথা। সাজেদা বেগমও বিধুকে হাতে হাতে সাহায্য করছেন। ইদানিং সাজেদা বেগমের শরীরটাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কোমরের ব্যথাটা আগের চেয়েও বেড়েছে। বিন্দুকেও কয়েবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলেন। রিক্সার ঝাকুনিতে ব্যথাটা দ্বিগুণ বেড়েছে।

অনেক্ষণ সময় পর বিধুর দেওয়া ঠিকানায় এসে পৌঁছলো শিশির। প্রথম কোনো একজন বন্ধুর বাড়ি আসবে খালি হাতে তো আর আসা যায় না। সাথে মিষ্টি, ফল নিয়ে আসলো। কলিংবেল বাজাতেই বিধু দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলো। শিশিরকে সামনের বারান্দায় বসিয়ে রেখে সাজেদা বেগমের কাছে এলো।
–মা তুমি গিয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলো। আমি সব গুছিয়ে নিয়ে আসছি।”
শিশিরের চোখজোড়া হন্যে হয়ে একজনকে খুঁজে চলেছে। হঠাৎ সাজেদা বেগমকে বারান্দায় ঢুকতে দেখেই দাঁড়িয়ে সালাম জানালো শিশির।
–আসসালামু আলাইকুম।”
–ওয়ালাইকুম আসসালামু। কেমন আছো?”
–আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?”
–বেশি ভালো নেই বাবা। কোমরের ব্যথাটা প্রচুর বাড়ছে। বড় মেয়ের জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে আরও সমস্যা বাড়ছে। তোমার মায়ের কী অবস্থা? ”
–আলহামদুলিল্লাহ মা ভালোই আছেন? আন্টি আপনি ডাক্তার দেখাননি?”
–দেখিয়েছি তাই তো কোনোরকম চলতে পারছি নয়তো এতদিনে বিছানা নিয়ে নিতাম।”

শিশির আর সাজেদা বেগমের কথার মাঝখানেই বিধু ট্রে সাজিয়ে অনেকগুলো নাস্তা এনে সেন্টার টেবিলের ওপর রাখলো।
–বাবা খাও পরে কথা বলবো। খাবার সামনে নিয়ে বেসি কথা বলার দরকার নেই।”
–আরেহ আন্টি আপনিও আমাদের সাথে খাবেন।”
–নাহ্ বাবা আমি কিছু খাব না তোমরা খাও আর কথা বলো।”
সাজেদা বেগম সেখান থেকে রান্নাঘরে চলে এলেন। দুপুরের রান্না বসাতে হবে ঘড়িতে প্রায় এগারোটা বাজে।

–ভাইয়া খাওয়া শুরু করেন।”
শিশির আমতা আমতা করে বললো,
–বিন্দুর নাকি জ্বর?”
–হ্যাঁ। ”
শিশিরের মুখটা মুহূর্তেই কালো হয়ে গেল। যেটা বিধুর চোখ এড়ালো না।
–ওহ্। এখন কী অবস্থা? ”
–মোটামুটি জ্বরটা কমেছে। তবে এখনো শরীর প্রচুর দুর্বল। আপনি খাওয়া শুরু করুন আমি আসছি।”
শিশির কী খাবে কিছুই ভালো লাগছে না। একটা বার প্রিয় মানুষটাকে দেখার জন্য ভেতরটা ভিষণভাবে ছটফট করছে। একটু যদি চোখের দেখা দেখতে পারতো। হঠাৎই পর্দার অপর পাশে চোখ গেল শিশিরের। মুহূর্তেই বুকের ভেতরটায় মোচর দিয়ে উঠলো। এ কাকে দেখছে সে। বিন্দু হাসি হাসি মুখ করে শিশিরকে জিজ্ঞেস করলো,
–শিশির ভাই কেমন আছেন?”
শিশিরের গলা দিয়ে কোনো কথাই বেরুচ্ছে না। গলাটা ভিষণভাবে ধরে আসছে শিশিরের। কোনোরকমে বললো,
–ভালো। তুমি?”
বিন্দুর ঠোঁটের প্রাণহীন হাসি যেন শিশিরের ভেতরটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। কত আশা নিয়ে এসেছিল আজ সেই প্রথম দেখা চঞ্চল,হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখবে। কিন্তু এটা যে তার দেখা সেই দিনের প্রথম মানুষটা নয়। যার চোখগুলো অনেকটা নিচের দিকে দেবে গেছে, চোখের নিচে গাঢ় কালির ছাপ পরেছে,ঠোঁটজোড়া শুষ্ক হয়ে মোটা হয়ে রয়েছে আর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটাও বড্ড অচেনা। মানুষ যখন না চাইতেও জোর করে হাসে ঠিক সেইরকম প্রাণহীন হাসি। এই মুহূর্তে যে শিশির মুখোমুখি বিপরীত পাশের সোফাতে বসে আছে সে যেন অন্য কেউ। বারবার না চাইতেই শিশিরের চোখাচোখি হচ্ছে বিন্দুর সাথে। বিন্দু যেন দেখলো শিশিরের চোখে জল টলমল করছে। বিধু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজে থেকেই সরে গেল। বিন্দু পূর্বের ন্যায় হেসে শিশিরের উদ্দেশ্যে বললো,
–ভাইয়া কিছু নেন।”
শিশির উঠে এসে বিন্দুর দিকে একটা নুডলসের পিরিচ এগিয়ে দিলো। সৌজন্যের খাতিরে বিন্দু অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাতে তুলে নিলো। বিন্দু কোনোরকম এক চামচ নুডলস মুখে তুলে দিতে দিতে বললো,
–শিশির ভাই একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। যদি কিছু না মনে করেন তো।”
শিশির উৎকণ্ঠিত হয়ে বললো,
–আরেহ না না। কী মনে করবো? যা বলার বলো?”
বিন্দু বেশ ইতস্তত করে বললো,
–আপনার সাথে কী শিহাবের কথা হয়?”
শিশির স্বাভাবিকভাবেই বললো,
–গত দুই সপ্তাহ আগে আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল। ওকে দাওয়াত করে ছিলাম। তারপর আর কথা হয়নি। তোমার সাথে কি ওর কথা হয় না?”
শিশিরের করা প্রশ্নে বিন্দুর বুক ফেটে কান্না আসছে। কোনোরকম নিজেকে আটকে রেখে কম্পিত গলায় বললো,
–নাহ্। আজ এক সপ্তাহ আমার ফোন রিসিভ করছে না। এখন আবার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। ”
বিন্দুর কথা শুনেই শিশির প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে শিহাবের নাম্বারে ডায়াল করলো। কিন্তু এখনো সেই বন্ধই বলছে।
–বন্ধ তাই না? জানতাম বন্ধই হবে। ও ইচ্ছে করে আমার সাথে এমনটা করতেছে। ”
বলতে বলতেই বিন্দু শিশিরের সামনে কেঁদে ফেললো। বিন্দুকে সান্ত্বনা দিবে কী শিশির বিন্দুর কান্না দেখে শিশিরের ভেতরে এক ভয়ংকর রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে দিয়েছে। নিজের অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করে শিশির মৃদু গলায় বললো,
–বন্দু প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। শিহাব হয়তো রেগে গিয়ে এমনটা করেছে। আমি আজই ওদের বাসায় গিয়ে তোমার সাথে কথা বলিয়ে দেব। দেখবে আবার সব আগের মতো হয়ে গেছে। একদম কাঁদবে না তুমি।”

শিশিরের কথাগুলো বলেই বিধুকে ডাকলো। বিধু শিশিরের ডাক শুনেই দ্রুত সামনের বারান্দায় আসলো। বিধুকে দেখে শিশির বলে উঠলো,
–আন্টিকে ডাকো। এখনি আমাকে বেড়ুতে হবে।”
–সে কী কেন? আমাকে তো এখনো ইংরেজি পড়ানোই হয়নি। আর কিছু তো খাওয়াও হয়নি আপনার। আজ দুপুরে খেয়ে তবেই যাবেন। তার আগে এক পাও বাড়ির বাহিরে পা দেবেন না।”
বিন্দুও পাশ থেকে বললো,
–হ্যাঁ ঠিকই তো বলছে। না খেয়ে যাবেন কেন?
খেয়ে-দেয়ে তবেই যাবেন।”

সাজেদা বেগন আর দুই বোনের জোড়াজুড়িতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও দুপুরে বিন্দুদের বাড়িতে খেতে হলো শিশিরকে। কিন্তু যতটা সময় সে বাড়িতে ছিল শুধু বিন্দুকেই দেখছিল শিশির। কী করে মানুষ এতটা বদলে যায় জানা নেই শিশিরের। তবুও একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে নিজেকে দিয়ে। সেও তো কতটা পাল্টে গেছে। বিন্দুদের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে সোজা শিহাবদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বারবার না চাইতেও বিন্দুর কান্নাভেজা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল আর হৃদয়টা আরও বেশি ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছিলো শিশিরের। কাঙ্খিত সময় পর গিয়ে পৌঁছলো শিহাবদের বাড়িতে। সাউন্ড বক্সে মিউজিক বাজিয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে একটা হাত কপালের ওপর রেখে মৃদুভাবে পা নাড়াচ্ছে শিহাব। শিশির গিয়ে মিউজিক প্লেয়ার বন্ধ করে দিলো। শিহাব কপালের হাত সরাতেই শিশিরকে দেখে উঠে বসলো। শিশির শিহাবের দিকে অগ্নি দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বললো,
–সমস্যা কী তোর?”
–কই কী সমস্যা? ”
–আমি তো সেটাই জানতে চাইছি। উল্টা প্রশ্ন করছিস কেন? কী হয়েছে তোর আর বিন্দুর মাঝে?”
এ পর্যায়ে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে শিহাব বলে উঠলো,
–কই, কী হবে?”
–কিছু না হলে তুই বিন্দুর ফোন রিসিভ করছিস না কেন? মেয়েটার জ্বর হয়ে কী অবস্থা হয়েছে চোখ-মুখের। এই সময় তুই ওর সাথে এমন করলেই কী নয়?”
–বিন্দুর জ্বর?”
–হ্যাঁ চেহারা পুরো খারাপ হয়ে গেছে। মেয়েটা তোর কথা বলতে গিয়ে আজ কেঁদেই ফেলেছে।”
–তোর সাথে ওর দেখা হয়েছে কীভাবে?”
–সেটা বাদ দিয়ে আগে এখনই ওকে ফোন দে। ও অস্থির হয়ে আছে তোর সাথে কথা বলার জন্য। ”

শিহাব ফোন দিতেই বিন্দু ফোন রিসিভ করে কেঁদে ফেললো,
–বিন্দু কেঁদো না প্লিজ।”
–তুমি কী করে এত সহজে আমাকে ভুলে যেতে পারলে? সেদিন রাগ দেখিয়েছি বলে এতটা শাস্তি দিবে আমাকে? কত কষ্ট হয়েছে আমার একবারও ভেবে দেখেছো। কতবার কল করলাম, ম্যাসেজ দিলাম অথচ একবারও কোনো সাড়া দিলে না। এতটা পাষাণ কেন তুমি?”
–স্যরি ভুল হয়ে গেছে।”
–আগে কান ধরো তবেই মাফ পাবে।”
–ওকে বাবা ধরলাম কান। এবার হ্যাপী?”
–হু। প্লীজ শিহাব আমার সাথে কখনো এমনটা করো না। এই অল্প সময়ে নিজের থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি যদি হারিয়ে যাও আমি মরেই যাব।”
–কখনো হারাবো না।”

শিহাব বিন্দুর সাথে লাউড স্পিকার বাড়িয়েই কথা বলছিল। ওদের কথোপকথন সবটাই শিশিরের কানে এলো। সব শুনে শিশিরের ঠোঁটের কোণে সুক্ষ্ম হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু চোখের কোণে পানি চিকচিক করছিল। তবুও শান্তি লাগছে বিন্দুতো ভালো আছে। এটাই না হয় হবে শিশিরের ভালো থাকার প্রথম ধাপ।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here