#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ১০
.
ছেলেটি এক নজরে বিদ্যার দিকে চেয়ে বলল,” থাকনা মিসেস, শ্যামল। অন্য সময় আলাপ হবে।”
“অভি” আর একটু থাকোনা বাবা। আমার তোমাকে বড্ড চেনা চেনা লাগে। কিন্তু বার্ধক্য এমন ভাবে আমায় আষ্টে-পৃষ্টে ধরেছে যে, সেখানে তোমার মূখটা মনে করতেই পারিনা। তুমিও একই পরিচয় দাও। যেটা আমার কাছে বিশ্বাস যোগ্য লাগেনা। বিদ্যা উঠুক, ও চিনতে পারে কিনা একটু পরখ করতে চাই।
মিসেস. শ্যামল আপনি অযথাই আমাকে সন্দেহ করেন। আমার সাথে আপনাদের কোনো দিনই দেখা হয়নি। উনি ঘুমাক আমি অন্য সময় আসবো। ভালো থাকেন বলে অভি চলে গেল।
বিদ্যাকে রেখে সাধনা অভির পিছনে চলে গেল অভিকে এগিয়ে দিতে। কিন্তু কি আশ্চর্য! সাধনা চলে যেতেই বিদ্যার সমস্ত চুল সাদাতে পরিণত হল আর সেগুলো শূন্যর উপর ভাঁসতে লাগল। একটা লম্বা কালো ঘোমটা দেওয়া অবয়ক এসে বিদ্যার পায়ের নিচে বসে বিনয়ের সাথে কাঁদতে লাগলো।
কারো কান্নার শব্দে বিদ্যার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিন্তু ও চোখ মেলে কাউকে আর দেখতে পায়না। সব কিছু স্বাভাবিক। বিদ্যা বিছানা ছেড়ে ফ্রেস হতেই সাধনা এসে বিদ্যাকে ডাইনিংরুমে নিয়ে এল। বিদ্যাকে দেখে সর্বোপ্রথম সাজিত ধাক্কা খেল। বিদ্যার চেহারা অনেকটা বৃন্দার মত। বৃন্দার মতই ঠিক নিচের ঠোটের ডান পাশে ছোট্ট একটা তিল। যা বৃন্দা আর বিদ্যা দু’জনেরই চেহারার সৌন্দর্যতা দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে দেয়।
সবাই একসাথে খেতে বসেছে। সাধনা সবার সাথে পরিচয় করে দিচ্ছে বিদ্যাকে। বিশাল ডাইনিং টেবিলে সবাই একসাথে খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা। শ্যামল বাবু মিষ্টি নিয়ে বাসায় ঢুকেই দেখল সবাই খেতে শুরু করে দিয়েছে। শ্যামল কোন কথা না বলেই দুটা বড় বড় রসগোল্লা বিদ্যার পাতে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” খেয়ে নে মা। তুই যেদিন থেকে চলে গিয়েছিস সেদিন থেকে আমি এই মিষ্টিটা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আজ পেট পুড়ে খাবো।
বিদ্যা বাম হাতে ওর বাবার হাত ধরে আছে আর অন্য হাতে মুখে মিষ্টি পুড়ে দিয়ে চোখটা বন্ধ করলো। এলাচের সেই মিষ্টি গন্ধ রসগোল্লার সাধ দ্বিগুন ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সাধের জন্যই বিদ্যার কাছে মিষ্টিটা এত ভালো লাগে।
বিদ্যার মেজ বৌদি বলে উঠল,” বিদ্যা, তুই আগের মতই আছিস।”
বৌদি, আমি যদি পাল্টে যাই তাহলে কি তোমাদের ভালো লাগবে! বিদ্যা কথাগুলো বলতেই বিদ্যার বড় বৌদি মাছের মাথাটা এনে বিদ্যার পাতে দিতেই বিদ্যা বলল,” বৌদি, আমিতো এগুলো আর খাইনা। আর মুখেও তুলতে পারবোনা।”
-“তোর তো এটা খুব প্রিয় ছিল। তাই তোকে দিলাম। আমি নিজে রান্না করেছি।”
বৌদি সময়ের সাথে অনেক কিছু পাল্টে যায়। এই ২৫ বছর সময়টা কম না। কিছু মনে করোনা বৌদি, আমি এই খাবার খেতে পারবোনা। বিদ্যা উঠে গিয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে ওর রুমে চলে গেল।
রুমে এসে আগে নিখিলকে ফোন দিয়ে ওর সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলে ফোনটা রেখে সুয়ে পড়ল বিদ্যা। চোখের সামনে সেই ছেলের মুখটা বার বার ভেঁসে উঠছে। নীল চোখের জন্য চেহারাটা একটু ভিন্ন লাগে। কিন্তু সে দেখতে অবিকল তার মত। আচ্ছা, অপু দাদার প্রতি কি আমার ভালোবাসা দিনদিন কমে যাচ্ছে? নিশ্চয় কমে গেছে না হলে পরপুরুষ কে নিয়ে আমি কেন ভাবতে যাব?
বিদ্যা চট করে উঠে ব্যাগের চেন খুলে ছবির অ্যালবামটা বের করে অপুর ছবিতে হাত বুলিয়ে চোখ বন্ধ করতেই চোখ দিয়ে কয়েকফোটা জল ঝরে পড়লো। খুব মিস করছি তোমায় অপু দাদা। কি এমন হল যে তুমি আমার কাছ থেকে সারা জিবনের জন্য চলে গেলে? আমি তোমায় ভূলতে পারছিনা দাদা। এত বছর হয়ে গেল তবুও মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। আমি সঠিকভাবে জানতেও পারিনি তোমার সাথে সেদিন কি ঘটেছিল!
এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো। বিদ্যা জলদি অ্যালবাম টি ব্যাগে পুরে রেখে চেন আটকে পিছন ফিরে দেখল, সাজিত কাকু দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে ।
-” কাকু, ভিতরে আসেন?”
সাজিত ভিতরে ঢুকে খাটে এসে বসে বলল,” কেমন আছো মা?”
-” ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?”
সাজিত বিদ্যার কথার জবাব দিবে এমন সময় সাধনা রুমে এসে বলল,” একি সাজিত, তুই এখানে?”
-” বিদ্যার সাথে কথা বলতে এলাম।”
সাধনা একটু রেগে গিয়ে বলল,” শর্মিষ্ঠা তোকে ডাকছে।”
-” যাচ্ছি বলে সাজিত আবার বিদ্যার দিকে চাইলো।”
বিদ্যাকে দেখে সাজিতের মন অন্যরকম হয়ে গেছে। বৃন্দা সাজিতের পা ধরেছিল একটু ওর সাথে সংসার করবে বলে, তবুও সাজিতের দয়া হয়নি। কিন্তু সেই সময়টা আজও সাজিতকে বড্ড পোড়ায়। সাজিত মাথা নিচু করে চলে গেল।
সাধনা বিদ্যার পাশে এসে বসে বিদ্যার হাত ধরে বলল,” মা তোর কি কোন সমস্যা হয়?”
বিদ্যা ওর মায়ের কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে জিঙ্গাসা করলো, কিসের সমস্যা মা?”
সাধনা বড়সড় ঢোক চিপে বলল,” এই ধর রক্তের পিপাসা?”
-“মা কি বল! আমার জলের পিপাসা লাগতে পারে, কিন্তু রক্তের পিপাসা কেন লাগবে বলতো? আমি কি পিশাচ নাকি?”
-” না কিছু সমস্যা হলে আমাকে বলিস মা। কোন কিছু গোপন রাখবিনা আমার কাছে।”
আমার গোপন করার মত কিছু নেই মা। আমি খুব ক্লান্ত মা। ঘুমাবো আমি বলেই বিদ্যা চোখ বন্ধ করল।
সাধনা আর কিছু না বলে বিদ্যার গায়ে কম্বোল চেঁপে দিয়ে লাইট অফ করে চলে গেল।
বিদ্যা ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে। এমন সময় সেই লম্বাটে অবয়ক এসে বিদ্যার পায়ের কাছে বসে বলল,” বিদ্যা মা আপনাকে আমাদের বড্ড প্রয়োজন। আমি এতকাল এখানে শুধু আপনারই অপেক্ষায় ছিলাম। কবে আপনি আপনার নিজের সত্ত্বায় ফিরবেন। আমাদের যে বড় বিপদ বিদ্যা মা।”
অবয়কটি ওর মায়া শক্তি দিয়ে বার বার চেষ্টা করে বিদ্যার মধ্য পিশাচ শক্তিকে জাগ্রত করার, কিন্তু বার বারই সে ব্যর্থ হয়ে শেষে কেঁদেই ফেলল। না জানি আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে যাবে তবুও আমরা আপনার সেই শক্তিকে জাগ্রত করতে পারবোনা। আমাদের ডাকে, আমাদের বিপদে জাগ্রত হও মা।
কোন কথায় বিদ্যার কানে পৌছায় না। গালীব জ্বীন সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে। কোন পিশাচ শক্তি বিদ্যার মধ্য আর প্রবেশ করতে পারবেনা। যদি না বিদ্যা নিজে চেষ্টা করে। বিদ্যার নিজ চেষ্টায় শুধু তার পিশাচ শক্তি জাগাতে পারবে। কিন্তু বিদ্যা নিজেও জানেনা সে কত বড় শক্তিশালী মায়াবিদ্যার অধিকারী।
♥♥
সকালে নাস্তা সেরে সবাইকে বাই বলে নিখিলদের সাথে দেখা করতে গেল বিদ্যা। বাসার যত গাড়ী ছিল সবাই সেগুলো নিয়ে বের হয়ে গেছে। তাই বাসা হতে বের হয়ে রাস্তায় দাড়ালো বিদ্যা। এমন সময় অঞ্জনার কল আসলো। বিদ্যা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দে ভেঁসে আসলো। একদিন না যেতেই ভূলে গেলি আমাদের?
-” কে বলছে ভুলে গেছি? কাল তোমায় অনেকবার কল দিয়েছি কিন্তু নাম্বার বারবার বন্ধ আসছিল। নাম্বার বন্ধ করে কেন রাখছিলেন মা?”
-” মিশু ফোন নিয়ে গেম খেলে তাই হয়তো ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে।”
কথাগুলো শেষ হয়না তার আগেই কেউ একজন বিদ্যাকে ধাক্কা মেরে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েই বাইক নিয়ে তুমুল বেগে চলে গেল।
বিদ্যার হাতের কিছু অংশ কেটে গেল। আর একটু হলেই সে ট্রাকের নিচে চাপা পড়তো। কি বাঁচাটাই না বেঁচেছি। ওহ্ গড বলে উঠে পড়ল বিদ্যা। আশেপাশে সবাই ভিড় জমিয়েছে। বিদ্যার কিছুটা লজ্জা লাগলো। ফোনটা ছিটকে পড়ে অবস্থা শেষ। সব কিছু গুছিয়ে বিদ্যা একটা ট্রাক্সি নিয়ে সোজা ধানমন্ডিতে আসল। তারপর নিখিলের ফ্লাটে গেল।
ওখানে আগে থেকেই মৌপ্রিয়া আর দিপ্তী উপস্থিত ছিল। বিদ্যার কাটা জায়গা থেকে রক্ত ঝড়ছিল।
এই বিদ্যা ওখানে কিভাবে কাটল বলে মৌপ্রিয়া প্রশ্ন ছুড়লো বিদ্যাকে।
-” রাস্তায় সামান্য সমস্যা হয়েছিল। ও ঠিক হয়ে যাবে। তোমাদের কাজ কতদুর?”
-” তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু তোমার যা অবস্থা তুমি কাজ করতে পারবে তো?”
-” আরে পারবো, কি করতে হবে সেটা শুধু বলে দাও।”
নিখিল বিদ্যার হাতে কিছু পেপারর্স দিয়ে বলল,” এই নকশার থ্রী মডেল তৈরি করো।”
ওকে বলে কাজে লেগে পড়লো বিদ্যা।
বিদ্যা আর কতদিন এভাবে একা একা থাকবি বল! এবার না হয় বিয়েটা করেই নে?
দিপ্তীর এমন কথা শুনে বিদ্যা অস্পষ্ট স্বরে বলল,” তুই কি পূর্নজন্ম বিশ্বাস করিস?”
বিশ্বাস করিনা কিন্তু মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে মন চায়। ইন্ডিয়া, জার্মানি সহ ইউরোপের অনেক দেশের বড় বড় তারকাদের পূর্নজন্মের সম্পর্কে বাস্তবে প্রুভ পাওয়া গেছে। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখে নিস তাহলে বুঝতে পারবি।
হুম বলে বিদ্যা কাজে মনযোগ দিল। কিন্তু মনে মনে পূর্নজন্ম নিয়ে ভাবনা মন থেকে সরাতে পারলোনা।
সমস্ত কাজ শেষ করতে করতে পুরো দিনটাই গড়িয়ে গেল। আরোও দুটা মিটিং এ অ্যাটেন্ড করে সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরলো বিদ্যা। বাসায় ফিরা মাত্রই সাধনা বিদ্যাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। সারা দিন শেষ হয়ে গেছে তবুও তোর খবর পাওযা যায়নি। শেষে তোর বাবাকে রাস্তার দিকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
-” ফোনটা পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বাসার নাম্বার মুখস্ত নেই তাই কল দিতে পারিনি মা।”
সাধনা চোখ মুছে বলল,” আজই নাম্বার মুখস্ত করে নিবি। যা ফ্রেস হয়ে নে। আজ অভি এসেছে বাসায়। খুব ভালো ছেলে। সবাই মিলে রিতুর রুমে আড্ডা দিচ্ছে। তুই একটু ওদিকে যাবি! তোর খুব ভালো লাগবে।”
-” অভি কে মা!”
-” কাল তোকে ওর সাথেই পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছিলাম, কিন্তু তুইতো আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলি।”
এমন সময় উপর থেকে খুব চেনা পরিচিতির গিটারের টিউন ভেঁসে আসলো। বিদ্যা আস্তে আস্তে উপরে উঠে একপা দুপা করে এগিয়ে গেল সেই রুমে। দরজার সামনে দাড়িয়ে বড়সড় একটা চমক দেখতে পেল বিদ্যা। সেই ছেলেটি একটা ট্রী টেবিলে বসে আপন মনে গিটারের সুর তুলছে। কাছে আরও একটি ছেলে বসে মনযোগ দিয়ে সেই টোন শুনছে। আর চারদিকে সবাই বসে চুপ করে ছেলেটির দিকে চেয়ে আছে। ছেলেটি তার চোখ বন্ধ করে একমনে গান গাইতে শুরু করলো ,
Every night in my dreams, I see you, I feel you.
That is how I know you go on.
Far across the distance and spaces between us.
you have come to show you go on.
Near far wherever you are I believe that the heart does go on.
Once more you open the door. এখানে এসে অভি গান থেমেই অভি চোখ খুলে বিদ্যার দিকে চাইল। বিদ্যাকে দেখেই অভির চোখ দু’টি চকচক করে উঠলো।
তারপর অভি বিদ্যার দিকে চেয়েই বলল,” হেই গার্লস, My Heart will Go on happy 3 days সম্পর্কে তোমরা কি কিছু জানো?”
কেউ জবাব দিতে পারলোনা। মাঝখান থেকে জেসি বলে উঠলো,” অভিদা, তোমার মত আমরা এত ইংলিশ সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয়। হেয়ালি বাদ দিয়ে ক্লিয়ার করো।”
My Heart will Go on happy 3 day কথাটি টাইটানিক মুভি সম্পর্কে বলা হয়েছে। টাইটানিক জাহাজ যাত্রা করার পর পানিতে ৩ দিন ভেঁসে ছিল। আর এই তিনদিন সকল যাত্রীগন নিজেদেরকে আনন্দে মেতে রেখেছিল।
আর আপনি একটু আগে যেই গানটি গাইলেন সেটা টাইটানিক মুভির বিখ্যাত গান। কথাগুলো বলে বিদ্যা অভির দিকে চাইলো। সাথে সাথে অভি অন্য দিকে মুখ ফিরালো।
বিদ্যা আর দেরী না করে নিজের রুমে চলে গেল। ওর সামনে গেলে বিদ্যা নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। এত আধুনিকতায়ও বিদ্যার ওকে চিনতে ভূল হয়না। কে ও! মা বলছিল ওর নাম অভি। আসলেই কি সে অভি না অন্য কেউ? মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।
♥♥
রাতের খাবার সময় সবাই উপস্থিত আছে কিন্তু বিদ্যা নেই। তাই রিয়ার মা বিদ্যাকে ডাকতে গেল। উনি বিদ্যার রুমে এসে দেখলেন, পুরো রুম অন্ধকার। বিদ্যা, তুই রুমে আছিস?
-” বৌদি লাইট জ্বালাও। কিছু বলবে?”
-” চল খেতে যাবি।”
-“মাথাটা ধরেছে বৌদি। আমার খেতে ভালো লাগছেনা। তোমরা খেয়ে নাও।”
-” কি বলিস? বাসায় আজ অতিথী এসেছে আর বলছিস যাবিনা?”
বাসার অতিথী আসার কথা শুনে নিজের কৌতুহল থামাতে না পেরে বিদ্যা বলেই উঠলো,” বৌদি ঐ ছেলেটা কে?”
-” কোন ছেলে?”
-” যে রিতুর রুমে গিটার বাজিয়ে গান গাইছিল। অভি না কি যেন নাম?”
-“ওহ্ ও! ওতো অভি। রিয়ার হবু বর কাবিরের ফ্রেন্ড। UK তে ওরা একসাথে স্ট্যাডি শেষ করেছে। কাবির কে জানিস?
-” অভি কে বৌদি?”
বড় বৌদি অবাক হয়ে যায় বিদ্যার এমন প্রশ্নে। অভির প্রতি বিদ্যা এতটা আগ্রহী কেন?
বিদ্যা চোখ বন্ধ করেই আবার বলল,” কি হল বৌদি! বললেনা যে, অভি কে?”
বড় বৌদি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” অভির বাবা একজন বাংলাদেশী বংশদূত। UK তে মানুষ হয়েছে। আর ওর মা ব্রিটেনের অধিবাসী। পড়াশুনার খাতিরে তাদের পরিচয় তারপর বিয়ের মাধ্যমে UK তে তারা সেটেল হয়। অনেক বড়লোক ওরা। কোন এক কাজে অভি বাংলাদেশে এসেছিল। এসে কাবিরের সাথে মিট করে। এখন আপাতত কাবিরদের বাসায় আছে। ওর কিছু কাজ শেষ হলে হয়ত ও আবার UK তে পাড়ি জমাবে।”
অনেক কথা হয়েছে, চল এবার খাবার খেতে বলে বিদ্যাকে ওর বৌদি নিয়ে গেল। নিচে এসে দেখলো, সবার সাথে অভিও খেতে বসেছে।
বিদ্যা চিয়ারে বসে প্লেট নিতেই সাধনা খাবার বেড়ে দিল। বিদ্যা ভাত নাড়ছে আর চোরের মত চুপি চুপি অভিকে দেখছে। সেটা অভি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলো। অভির মন যা চায় অভি তাই করে। অভি ওর প্লেট নিয়ে উঠে সোজা বিদ্যার পাশে বসে অবিলায় খেতে লাগলো।
সবাইতো অভির কান্ড দেখে অবাক হল। বিশেষ করে কাবির কিছুটা সন্দেহ করলো। অভি এমনি এমনি যায়নি ওখানে। অভি খুব খুতখুতে মানুষ। কাউকে খুব ভালো না লাগলে সেখানে কখনো যাবেনা। তারমানে অভির বিদ্যাকে খুব পছন্দ হয়েছে।।।
এই অভিদা আপনি ওখানে গেলেন কেন বলে ঠোট ফুলালো রিতু।
অভি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল,” আমি এখানে বেটার ফিল করছি রিতু।”
বিদ্যা ভ্রু দু’টি কুচকে অভির দিকে চাইতেই অভি বলল,” চোরের মত না দেখে একবারে ওপেন ভাবে দেখতে পারোনা! আমি ভেবেছিলাম তুমি খুব বুদ্ধিমতি আর সাহসী মেয়ে, কিন্তু আমার ধারনা ভূল। তুমি খুবই বোকা আর ভীতু মেয়ে, বিদ্যা!”
নিজের থেকে ঢের ছোট বয়সী একটা ছেলের কাছে নিজের নাম শুনে বিদ্যা কিছুটা বিব্রতবোধ করলো। কি অসভ্য ছেলে। বড়দের সম্মানও করতে জানেনা। বিদ্যা অভির দিকে কটমট করে তাকালো।
আহ্ ওমন ভাবে চাইলে আমি কি আর খেতে পারি? তা ম্যাম আপনাকে আমি কি নামে ডাকবো বলেন তো! বিদ্যা নামে ডাকতে চাইনা। নতুন কোন ইউনিক নামে ডাকতে চাই। রসগোল্লা! কলকাতার রসগোল্লা না অপুর রসগোল্লা হুম?
বিদ্যা ভাত নাড়াচারা বন্ধ করে রাগী লুক নিয়ে অভির দিকে চেয়ে আছে। এইটুকু ছেলের এত সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন আচরন করার? বিদ্যা কিছু বলতে যাবে এমন সময় অভি বিদ্যার মুখের কথা কেড়ে নিল। না তুমি কলকাতার রসগোল্লা না তুমি অপুর…. এতটুকু বলে থামল অভি। তারপর বুকে বাম হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে তৃপ্তি সহকারে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,” তুমিতো শুধু অভির রসগোল্লা।”
[]চলবে…………[]
সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/09/sidur-suddhi-10/
………………………………..
লেখিকা,
নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha