#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২১
…….
সকালের নাস্তা বানানো থেকে সাজিত সাধনার পিছে পিছে ঘুরছে। ও শুধু একটা কথাই জানতে চায়। তা হল, বিদ্যার চেহারা কোন মতে শ্যামল দাদার সাথে মিলে না। কারন শ্যামল দাদা একটু কালো বর্নের মানুষ। সাধনা বৌদিও খানিকটা ঐ ধাঁচের। তাদের দু’জনার সাথে বিদ্যা কিছুতেই মিলেনা। আর বিদ্যাকে যেদিন এই বাসায় নিয়ে আসা হয় তার প্রায় এক বছর আগে দাদা আর বৌদি নাকি তীর্থে গিয়েছিল। তখন মা বেঁচে ছিল বলে দাদার ৫ ছেলেকেই তিনি আগলে রেখেছিলেন। আর আমি তখন শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে নেপালে এক জবে কর্মরত ছিলাম।
হঠাৎ করেই নাকি সেইদিন দাদা-বৌদি বিদ্যাকে নিয়ে হাজির। সবাইকে বলল, ও নাকি তাদের মেয়ে। এমন ফুটফুটে বোন দেখে দাদার ৫ ছেলেই খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু আমার মন বলছে বিদ্যা তাদের মেয়ে নয়। সাজিত কথাগুলো মনে মনে ভেবেই লুচি ভাজার প্যানটা সাধনা দেবীকে এগিয়ে দিল।
-” কিরে কিছু বলবি?”
তুমি তো জানোই আমি কি বলতে চাই। প্লিজ বৌদি, আমাকে সত্যটা বল।
সাধনা দেবী চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
-” বিদ্যা শুধু আমার মেয়ে বুঝলি! আমার আর আমার মেয়ের মধ্য যদি তুই এমন বেফাঁস কথা বলতে আসিস তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। নিজের বৌ বাচ্চার দিকে নজর দে।”
তুমি বলবেনা তো! ওকে আমি নিজেই আজ সবার সামনে এই কথাটা বলব। প্রয়োজন হলে বিদ্যার ডিএনএ টেষ্ট করাব। তখন দেখব কথাটা কিভাবে লুকিয়ে থাকে।
সাধনা দেবী এবার সাজিদের গালে একটা ঠাস্ করে থাপ্পড় মেরে বলল,
-” আর কত পাপ করবি! আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখ, তুই জিবনে কত বড় পাপ করেছিস। ভগবানও বিচার করেছে শর্মিষ্ঠার মত একটা বৌ দিয়ে। কত অত্যাচার সইবি। একজনকে বিনা দোষে অত্যার করেছিস সেটার তো শুধরানো দরকার।”
এবার সাজিত ধপ করে নিচে বসে পড়লো। তারপর কাঁদো গলায় মুখে একটু হাঁসি এনে বলল,
-” বিদ্যা আমার মেয়ে বৌদি। তুমি যতই অস্বীকার করোনা কেন এবার আমি সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছি ও আমার আর বিন্দার মেয়ে। কিন্তু বিন্দা কোথায় বৌদি? ওকে আমি এত বছর ধরে পাগলের মত খুঁজেছি কিন্তু ও আমার ডাকে সাড়া দেয়নি। অপর দিকে দেখ, ঠিকি আমার মেয়েকে তোমার কাছে দিয়ে গেছে।”
-” চুপপপ, আর একটা কথাও বলবিনা। যা বলেছিস ওখানেই ইতি টান। ও শুধু আমার মেয়ে। আর এটাই শেষ কথা।”
-” আমিতো জানি বিদ্যা কি জিনিস! ও মানব আর পিশাচ কন্যার সন্তান। তাই আমাকে বলতে আসোনা ও কে?”
-” প্রমান করতে পারবি? যদি প্রমান করতে পারিস তাহলে বড় বড় কথা বলতে আসিস।”
-” আমি আমার নিজের সন্তানকে কষ্ট দিতে পারবোনা।”
-” আরে প্রমাণ করেইনা দেখা। তারপর এগুলো কথা বলিস।”
বাবার মন, সে কি আর মেয়েকে কষ্ট দিতে পারবে! সাজিত এবার ওর বৌদির পায়ে পরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বৌদি আমাকে আর কষ্ট দিওনা। আমি জানতাম বিন্দা সন্তান সম্ভবনা ছিল। আমি ওর উপর খুব অন্যায় করেছি। আমি মেনে নিতে পারিনি ও একটা পিশাচ। ও অনেক অনুরোধ করেছিল কিন্তু আমি শুনিনি। রাতে ঘুমাতে পারিনা বৌদি। বিন্দার মায়াবী চেহারাটা আমাকে বড্ড যন্ত্রনা দেয়। জানিনা ও কোথায় আছে? আমাকেও তো তুমি মানুষ করেছ আমার মায়ের মত। আমার উপর একটু দয়া কর বৌদি। আমি কাউকে কিছু বলবোনা। আমি কোনদিনও বাবার অধিকার খাটাবোনা। আমাকে তুমি অন্তত শাস্তি দিওনা।
সাধনা দেবী আর চুপ করে থাকতে পারলোনা। অনেকটা গর্বের সাথে বলে উঠলো,
-“ও বৃন্দা আর সাধনার সন্তান। এই দুই মায়ের সন্তান বিদ্যা। আমি ওকে পেটে ধরিনি কিন্তু ও আমার জিবন। আমার ৫ ছেলে একদিকে আর ও একদিকে। যদি কোনদিন বিদ্যা জানে ও আমার মেয়ে না তাহলে তোকে আমি খুন করে ফেলবো।”
সাজিত এবার উঠে দু’হাত জোড় করে বলল,
-“বৌদি, তোমার ঋন আমি কোনদিনও শোধ করতে পারবোনা, কোন দিনও পারবোনা। তোমার মনে কষ্ট দিলে মাফ করে দিও।”
সাজিত কথাগুলো বলে চোখের জল মুছল। তারপর কিচেন থেকে বের হতেই সাধনা ওকে ডাক দিল।
সাজিত পিছন ফিরে ওর বৌদির দিকে চাইতে সাধনা দেবী বলল,
-” তোর দাদা যেন কিছু না জানে। তোর দাদা বিদ্যাকে খুব ভালোবাসে। বিদ্যার বাবা হয়ে যেন ওর কাছে কোনদিনও দাড়াস না।”
সাজিত শুধু মাথা নেড়ে বের হয়ে গেল।
♥♥
বিদ্যা আজ সকাল সকাল রেডী হয়ে ওর বাবার রুমে গিয়ে দেখল, ওর বাবা বসে পেপার পড়ছে। বাবা….?
শ্যামল বাবু পেপার থেকে চোখ তুলে চশমাটা খুলে বলল,
-” আমার মা এত সকালে রেডী হয়ে কই যাচ্ছে?”
বিদ্যা ওর বাবার কাছে এসে ডান হাতটা বাড়িয়ে বলল,
-” বাবা, আমার ৭৫ হাজার টাকা চাই।”
পেপারটা গুছিয়ে বিছানায় রেখে শ্যামল বাবু বললেন,
-” আমার মায়ের এত টাকা দরকার? তা মা, এই টাকা দিয়ে আপনি কোন পবিত্র কাজ করবেন?”
-” উফ্ বাবা, আমি বড় হয়ে গেছিনা? আমি কি অকাজে লাগাবো নাকি! আসলে আমার হাতের টাকাটা শেষ হয়ে গেছে। শাশুড়ী মাকে বেশ কিছু টাকা পাঠিয়েছি বলে এবার হাত সট্। মাসের স্যালারি পেলে তোমায় নিয়ে সেই টাকা উড়িয়ে দিব। কারন তুমিতো আর টাকা নিবানা।”
-“অহ্ আমার মেয়ে এত বড় হয়ে গেছে? কই আমার কাছেতো আমার মেয়েকে মনে হচ্ছে এখনো সে শিশু রয়েছে। সে কবে এত বড় হল আমাকে কি বলবেন মা!”
অ বাবা, আমার তো সময় নেই। দাওনা বলেই বিদ্যা এসে ওর বাবার কপালে টুক করে একটা চুমা খেল।
শ্যামল বাবু হেঁসে কুটিকুটি হয়ে বললেন,
-” এমন আদর করলেতো নিজের জিবনটাই দিব মা। আমি এখুনি দিচ্ছি।”
শ্যামল বাবু উঠে গিয়ে লকার থেকে টাকা বের করে বিদ্যার হাতে দিয়ে বলল,
-” এখানে ৮৫ হাজার টাকা আছে। ৭৫ হাজার দিয়ে তো তুমি কাজ করবে। তাহলেতো সব শেষ হয়ে যাবে। তাই বাঁকি যে টাকা বাঁচবে সেটা আপনার হাত খরচের জন্য রেখে দিবেন।”
-” এতটা কেউ এমন মর্ডান মেয়েকে দেয় নাকি! যদি সে বিপথে ব্যয় কর! তাহলেতো এর জবাব দিহিতা তোমাকে দিতে হবে।
-” আমার মেয়ের ভরপোষনের সুযোগটাও ভগবান আমায় দিয়েছিল না। এখন যখন সুযোগ পেয়েছি তাহলে কৃপন হব কেন! আমি তো জানি আমার মা কখনো বিপথে যাবেনা।”
বিশ্বাস জিনিসটা অনেক বড় বাবা। খুব ভালবাসি তোমায় বলে বিদ্যা ওর বাবার হাতটা নিজের গালে ছোয়াল। তারপর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাবাকে বিদায় জানিয়ে কেবল পা বাড়াবে আর এমন সময় ওর বাবা ওকে ডেকে বলল,
-” মা, আজ তুই বাসায় ফিরলে তোকে এক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাব। তোর খুব ভাল লাগবে। জলদি আসবি কিন্তু!”
-” আমরা কই যাব বাবা!”
-” সারপ্রাইজ আমার মা…”
ওকে বাবা বলে বিদ্যা বের হল রুম থেকে। নিচে ডাইনিং রুমে এসে মা মা বলে কয়েকবার ডাক দিল।
সাধনা দেবী তড়িঘরি করে বের হয়ে দেখলো, বিদ্যা রেডী হয়ে কোথায়ও যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে। সাধনা দেবী খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
-” এত সকালে তুই কই যাচ্ছিস!”
বিদ্যা ওর মায়ের দিকে দৌড়ে যেতেই সাধনা দেবী চেঁচিয়ে উঠে বলল,
-” এই, এই আমাকে কিন্তু একদম ছুবিনা। আমি ঘেমে গেছি। তোর সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।”
কে কার কথা শোনে, বিদ্যা দৌড়ে গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” তোমার সাথে কথা নেই। তুমি সকালে আমার রুমে যাওনি কেন? আমি কতক্ষন অপেক্ষায় ছিলাম।”
তোর মা কি বসে থেকে খায় নাকি বিদ্যা। দেখিসনা কত বিজি মানুষ উনি বলে রিয়ার মা কিচেন থেকে নাস্তা নিয়ে বের হল।
বৌদি, তোমার এই ফরমায়েশের কথা আমি মানছিনা। মায়ের আবার বিজি কিসের? আমি যখন হুকুম করবো মাকে তখনই আমার কাছে আসতে হবে।
রিভার মা প্লেটে খাবার নিয়ে এসে বলল,
-” তোমার দাদা কি যেন তোমায় বলবে। রাতে একটু দেখা করো। দেখি হা করো তো!”
বিদ্যা ওর মাকে জড়িয়ে ধরেই হা করে ওর বৌদির তুলে দেওয়া খাবার খেল। বৌদি তুমি বানিয়েছ এগুলো?
-” নাহ্, মা বানিয়েছে। তোমার জন্য আমরা খাবার বানাবো সেই সাহস কি আমাদের আছে নাকি।”
বিদ্যা জল খেয়ে বলল,
-” মা আমি যাচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই ফেরত আসবো।”
-“আর একটু খেয়ে যা মা?”
বিদ্যা এক দৌড়েই ডাইনিং রুম পেরিয়ে বের হয়ে গেল।
দেখছিস বিদ্যা ওর মাকে কত ভালবাসে! আর তোরা তো আমার কাছেই ঘেষিসনা। শিখ ওর কাছ থেকে বলে শর্মিষ্ঠা রিতুকে ধমক দিল।
-” তুমি আমাদের ভালবাসো নাকি! জেঠি যতটা আমাদের ভালবাসে তার এক কোনাও তুমি আমাদের ভালবাসোনা।”
শর্মিষ্ঠা এমন করে রিতুর দিকে চাইলো যে রিতু ভয়ে চলে গেল।
♥♥
বিদ্যা বাহিরে এসে দেখল, একটা গাড়ী দাড়িয়ে আছে।
বিদ্যাকে দেখেই সাজিত গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে বিদ্যাকে ডাকলো। বিদ্যা এদিকে এস?
কাকাই কে দেখে বিদ্যা গাড়ীর কাছে গিয়ে বলল,
-” আপনি এখানে?”
-” কোথায় যাবে মা?”
-” ফার্মগেটে যাব। একটু কাজ আছে।”
-“চল তোমায় পৌছে দেই।”
-“না না প্রয়োজন নেই। আমি একাই যেতে পারবো।”
আসো মা বলে সাজিত ডোর খুলে দিল। কি আর করা! শেষে বিদ্যা গাড়িতে উঠে পড়লো।
সাজিত গাড়ী ড্রাইভ করছে আর বিদ্যা চুপ করে আছে। প্রথমে সাজিতই কথা বলল,
-” এখানে থাকতে কেমন লাগছে মা?”
বিদ্যা সাজিতের দিকে চেয়ে স্মিত হেসে বলল,
-” নিজের আপন জায়গা। ভাল না লেগে থাকতেই পারেনা।”
-“কোন অসুবিধা হলে আমায় বল। মাঝে মাঝে আমার সাথে গল্পের বই পড়তে আমার ছোট্ট পাঠাগারে এসো।”
ওকে বলে বিদ্যা চুপ করে গেল। সাজিত আর কিছু বললোনা। বিদ্যা এবার এখানে এসে প্রথম সাজিতকে দেখেছে। আগে চিনতোও না। তাই খুব একটা কথা বলা হয়না তাদের মধ্য।
এমন সময় বিদ্যা বলে উঠলো,
-” কাকাই আমি এখানেই নামবো।”
সাজিত ব্রেক কষেই বলল,
-“তুমিনা ফার্মগেটে নামতে চাইলে?”
আমার এখানে কাজ আছে বলে বিদ্যা নেমে গেল। তারপর বাই বলে একটা সপিং মলে ঢুকলো। সাজিত অনেকক্ষন অপেক্ষা করলো কিন্তু বিদ্যাকে বের হয়ে আসতে দেখলোনা। হয়ত কেনা কাটা করছে বলে সাজিত গাড়ী নিয়ে চলে গেল।
♥♥
বিদ্যা কিছু জিনিস কিনে সপিং মল থেকে বের হয়ে রিয়াকে ফোন দিল। রিয়া রিসিভ করতেই বিদ্যা বলল,
-” রিয়া, কাবিরদের বাসার ঠিকানা দাওতো?”
বিদ্যার কথা শুনে রিয়া ভয় পেয়ে গেল। আবার কিছু হলোনা তো! পিসি কি কাবির কিংবা অভিদাকে শায়েস্তা করতে যাচ্ছে নাকি! রিয়া ভয়ে ভয়ে বলল,
-” ঠিকানা দিয়ে কি হবে পিসি?”
-” সেটা না হয় তোমার বরের কাছ থেকেই শুনে নিও। ঠিকানা বল।”
রিয়া ভয়ে ভয়ে ঠিকানা দিয়ে বলে উঠলো,
-” পিসি আমি কাবিরকে খুব লাভ করি। ওকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। তুমি যেন উল্টা পাল্টা কিছু করোনা।”
বিদ্যা কোন কথা না বলে ফোনটা কেটে দিয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে সেখানে উঠে পড়ল।
♥♥
কাবিরেরা কেবল সকালের নাস্তার টেবিলে বসেছে এমন সময় পরপর দু’বার কলিং বেল বাজলো। কাবিরের মা মিসেস. শায়লা কেবল চিয়ার থেকে উঠতেই কাবিরের ছোট বোন ‘কনক’ উঠে বলল,
” মামুনি, আমি যাচ্ছি।”
কনক দ্রুত পায়ে এসে দরজা খুলে দেখলো, লেডি ট্রী শার্ট আর স্কার্ট পড়া খুব মিষ্টি একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। দেখলেই অদ্ভুদ একটা মায়া কাজ করে। কনক গলা ঝেড়ে বলল,
-” কাকে চান!”
-” মি. কাবির আছে!”
দাদা, তোমার খোঁজে কে যেন এসেছে বলে মেয়েটাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকল কনক।
কাবির তো তাকে দেখেই বিশ্মিত হয়ে বলল,
-” বিদ্যা তুমি! আমি কি সত্যিই তোমাকে দেখছি?”
বিদ্যা মুচকি হেঁসে বলল,
-” আমিতো তোমাকেই দেখছি। অভি কোথায়?”
-“এসেই অভির খোঁজ করছো? আমি কি খুব পর নাকি? বসো, আমাদের সাথে নাস্তা করো।”
বিদ্যা কাবিরের বাবা-মাকে দু’হাত জোড় করে বললো, ভাল আছেন আপনারা! মিঠাইগুলো ওনাদের হাতে দিয়ে কাবিরকে বলল,
-“আসলে আমার ওকে একটু দরকার ছিল। তুমি কি বলবে ও কোথায়?”
কাবিরের বাবা-মা বা কনক কেউ বিদ্যাকে চিনেনা। তাই কনক চট করে বলে উঠলো,
-” অভিদাকে আপনি চিনেন কিভাবে! ওনার কাছে আপনার কি দরকার?”
-” আসলে ওকে কিছু জিনিস দেওয়ার ছিল। ওটাই শুধু ওকে দিতে চাই।”
-” আমাকে দেন, আমি অভিদা কে দিয়ে দিব।”
এদের মধ্য কাবির ফোড়ন কেটে বলল,
-” বিদ্যা, অভি উপরে আছে।”
বিদ্যা হতাশ চোখে কাবিরের দিকে চাইতেই কাবির কাজের মেয়েটাকে ডেকে বিদ্যাকে অভির রুমে পাঠিয়ে দিল।
বিদ্যা চলে যেতেই কাবিরের মা বলল,
-” মেয়েটা কে রে? আর অভিকেই বা কেন চাচ্ছে?”
ও রিয়ার পিসি। কলকাতাতে মানুষ হয়েছে। খুব মিষ্টি দেখতে তাইনা মা! রিয়াকে যদি না দেখে বিদ্যাকে আগে দেখতাম তাহলে ওকেই তোমাদের বাসার বউ বানাতাম। প্রচন্ড রাগী একটা মেয়ে।
হুম দেখতে অনেক মিষ্টি। কিন্তু অভির কাছে ওর কি চাই বলতেই মায়ের কথা কেড়ে নিল কনক। মামুনি, বৌদির পিসির অভিদাকে কেন দরকার বলতো? অভিদাকে পটাতে আসেনিতো? এরকম মেয়েদের অনেক চেনা আছে আমার। অভিদার মত ছেলেকে দেখে হুস থাকেনা।
ভুল বলছিস! বিদ্যা এমন একটা মেয়ে যে, অভি যদি ওর পায়ে পরে তাহলে ওর মর্জি না হওয়া পর্যন্ত ও অভিকে উঠতে অবদি বলবেনা। খুব ভদ্র এবং ম্যাচুয়েট একটা মেয়ে। ওর মত মেয়েই হয়না। আর তাছাড়া বিদ্যা বিবাহিত মেয়ে ছিল। দেখ, কোন কাজে হয়ত অভির কাছে এসেছে। মা বেডটা দাওতো?
ও রকম মেয়ে আমার অনেক দেখা আছে বলে মুখ বাকালো কনক। কত অসভ্য মেয়ে একটা। অপিরিচিত বাসায় এসেই ঢ্যাং ঢ্যাং করে উপরে উঠে গেল।
কনকের কথা শুনে কাবির মনে মনে বলল,
-” বিদ্যার কথা ছাড়। অভিই এর পিছে পাগলের মত পড়ে আছে কথাটি শুনলে তুই নির্ঘাত হার্ড এ্যার্ট্যাক করবি। আমরা যা ভাবি তার উল্টাও কিছু হয় মাঝে মাঝে।”
♥♥
কাজের মেয়েটা বিদ্যাকে অভির রুমের দরজার সামনে নিয়ে এসে বলল,
-” এই ঘরেই দাদা থাকেন।”
-” ওকে তুমি যাও।”
মেয়েটি চলে যেতেই বিদ্যা অভির রুমে উকি মেরে দেখল, অভি বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
বিদ্যা এবার সরাসরি অভির রুমেই ঢুকে পড়ল। অভি শুধু একবার বিদ্যার দিকে চাইলো তারপর ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে আবার ল্যাপটপে মনযোগ দিল।
ব্যাপারটা বিদ্যার জন্য খুব অপমানজনক ছিল। তবুও নিজেকে সংযত করে বলল,
-” সবাই নিচে নাস্তা করছে আর তুমি কেন এখানে এভাবে বসে আছো?”
বিদ্যার কথায় অভি কোন জবাব দিলনা। ঐ ভাবেই কাজ কন্টিনিউ করে চলল।
বিদ্যা এবার প্রচন্ড রেগে গেল। কিন্তু কিছু না বলে পুরো রুম দেখতে লাগলো। পুরো রুমে অভির ড্রেস ছড়ানো ছিটানো আর জুতো গুলো ফ্লোরে ছড়ানো আছে।
দিনে কয়টা ড্রেস চেঞ্জ করো অভি! এগুলো ছড়ানো ছিটানো কেন বলে বিদ্যা সব ড্রেসগুলো গুছিয়ে আলমারি খুলে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলো। তারপর অভির কাছে এসে কোন কথা না বলে অভির গালে একটা দীর্ঘ কিস করলো। তারপর আবার গিয়ে জুতো গুলো জায়গা মত রেখে এসে আবার একটা কিস করলো অভির গালে। তারপর বিছানা বাদে সমস্ত রুম সুন্দর করে গুছিয়ে আবার অভির কাছে এসে কিস করলো। বিদ্যা একটা একটা করে কাজ করছে আর এসে অভিকে কিস করে যাচ্ছে। বিদ্যার প্রতিটা কিসেই প্রতি বারই অভির হাত থেমে যাচ্ছে কিবোর্ডে। কিন্তু অভি তবুও বিদ্যার সাথে কোন কথা বললোনা।
এবার বিদ্যা বিছানায় উঠে হাটুর উপর দাড়িয়ে অভির পিছনে গিয়ে অভির ঘাড়ে হাত দিল। তারপর অভির মাথাটা পিছন দিকে হেলিয়ে বিদ্যা ওর মুখের উপর কিছুটা ঝুকে কপালে কয়েকটা কিস করল।
এবার অভি প্রচন্ড রেগে গেল। অভি বিদ্যাকে সরিয়ে দিয়ে ল্যাপটপ থেকে ওর বাবাকে ভিডিও কল দিল।
সাথে সাথে বিদ্যা অভির পিছনে লুকিয়ে পড়ল।
অভির বাবা কল রিসিভ করতেই অভি বলে উঠলো,
-” ড্যাড, তুমি কি কখনো আমায় থাপ্পড় মেরেছ?”
অভির বাবা মি. আশিষ ভৌমিক কিছুটা বিশ্মিত হয়ে গেল তার ছেলের কথা শুনে।
-” আমি তোমার গায়ে কেন হাত তুলব অভি। তুমিতো আমার জান। তোমার গায়ে যদি কেউ ফুলের টোকা দেয় তাহলে তারজন্য আমার কাছে তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে সে কেন আমার জিবনের শরীরে ফুল দিয়ে আঘাত করেছে।”
-” ড্যাড, তাহলে মম কি আমায় কখনো থাপ্পড় মেরেছে?”
-“কি হয়েছে মাই সান! তুমি এমন প্রশ্ন করছো কেন? তোমার মম তো কোন দিন তোমার গায়ে হাত তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি। কি হয়েছে, আমাকে খুলে বল?”
অভি ছলছল চোখে ওর বাবার দিকে চেয়ে হঠাৎই বিদ্যার হাত ধরে এক ঝটকানে পিছন দিক থেকে একদম ওর কাছে এনেই বিদ্যাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
-” তাহলে ড্যাড, এই মেয়েটা আমাকে থাপ্পড় মারে কোন সাহসে?”
অভির এমন কাজে বিদ্যা লজ্জা আর ভয় দু’টোই পেয়ে গেল। এমন একটা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সে পড়বে সেটা ও কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। বিদ্যা অভির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু বিদ্যার চেষ্টা বার বারই ব্যর্থ হল। অভি ওকে শক্ত করে ওর বুক দিয়ে আগলে রেখেছে।
অভির বাবা উচ্চ কণ্ঠে হা হা করে হেঁসে উঠলো। তারপর অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে চুপ করে রইল। বিদ্যাকে একনজর দেখেই বলে উঠল,
-” অভি, তুমি প্রেমে পড়েছ!”
অভি চোখের পানি মুছে বলল,
-” Yes Dad, She Took My Heart Away💕.”
-” Relly my son?”
-” হুম ড্যাড, আমি তার প্রেমে পড়ে গেছি। তোমার দেশের মেয়েরা বড্ড ব্যাড গার্ল। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি ড্যাড।”
এই জুলিয়া, আমাদের অভি প্রেমে পড়েছে বলতেই অভি লাইন কেটে দিল। তারপর বিদ্যাকে ছেড়ে দিয়ে অভি চুপ করে রইল।
বিদ্যা ল্যাপটপটা সরিয়ে হাটুর উপর ভর দিয়ে অভির কোলে গিয়ে বসে ওর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেঁপে ধরে বলল,
-” I’m srry, Please forgive me Ovi.”
অভি তবুও বিদ্যার সাথে কথা বললোনা। বরং বিদ্যাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে সোজা হয়ে সুয়ে পড়ল। তারপর চোখ বন্ধ করলো।
বিদ্যাও ছাড়ার বান্দা নয়। অভির কাছে আধা সোয়া হয়ে অভিকে মুগ্ধ নয়নে দেখতে লাগলো। তারপর চট করে অভির হাতটা ওর মাথার নিচে রেখে অভির বুকে মাথা রেখে পা টা অভির শরীরের উপর তুলে দিয়ে একদম অভিকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে পড়ল। ঠিক যেমন বিদ্যা ছোট বেলায় অপুকে জড়িয়ে ধরে যে ভাবে ঘুমাতো। আজ ঠিক অভিকেও ঐ ভাবেই বিদ্যা জড়িয়ে ধরল।
অভিও দু’হাত দিয়ে বিদ্যাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল,
-” এমন ভাবে আমাকে চেওনা বিদ্যা, যে এক মুহুত্বের জন্যও তোমার কাছ থেকে নিজেকে দুরে না রাখতে পারি। তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা আমি তোমাকে কত ভালবাসি। আমার নিজের জিবনটা চাইলেও আমি ২য় বার না ভেবে তোমার হাতে নিজের জিবন সপে দিব।
[] চলবে…..[]
সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-21/
………………………………..
লেখিকা, নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha
চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom