#তবু_সুর_ফিরে_আসে
৪০ পর্ব
হেরার খুব ইচ্ছে ছিল নওশাদকে এয়ার পোর্টে রিসিভ করতে যেতে। হঠাৎ ই ইচ্ছে হলো গিয়ে মানুষটাকে অবাক করে দিতে। কিন্তু ভার্সিটি থেকে আসার পর শরীর এত ক্লান্ত লাগছে যেতে ইচ্ছে করলো না আর। আজ পরপর ক্লাস ছিল কোন গ্যাপ ছিল না। এখন মাথা ধরেছে । বাসায় ফিরেই অনেক সময় নিয়ে শাওয়ার নিলো । তারপর সুতির একটা লাল সাদা রঙের বাটিকের শাড়ি পড়লো। ক্লাস করে শরীরে এত ক্লান্তি এসে গেছে লাঞ্চ করে বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে গেল হেরা।
বিকেলে এলিন এসে কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলো , বৌমনি চলো পিংক সিটি যাই ? ফুচকা খাবে ?
না কিছু খাব না ।
গলা ব্যথা ঠিক হয়নি ?
ব্যথা নাই তো লিকুইড কিছু খেলে মনে হচ্ছে গলায় আটকে যাচ্ছে। তার থেকেও বড় কথা আজ এত গুলো ক্লাস করে শরীরে এক বিন্দু শক্তি নাই ।কিছু মনে করো না প্লিজ এলিন, অন্য একদিন যাব।
ব্যাপার না ভাইয়া আসছে কখন ?
হেরা ঘুমের ঘোরেই বলল, দেরি আছে । রাত হবে হয়তো।
ঠিক আছে ঘুমাও তুমি আমি গেলাম ।
এলিন বের হয়ে যেতেই হেরা ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।
ওর ঘুম ভাঙালো নওশাদ এসে।
এয়ারপোর্টে এসে দুইবার ফোন দিলো হেরাকে ও ফোন রিসিভ করেননি । বাসায় এসে দেখে হেরা গভীর ঘুমে।
পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরতেই ধড়মড় করে উঠলো হেরা, আপনি ! আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। কখন এসেছেন?
দশ মিনিট হবে , তুমি এত গভীর ঘুমে ছিলে রুমে ঢুকেছি টের পাওনি।
খুব টায়ার্ড ছিলাম আজ ।
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব পরিশ্রম যাচ্ছে তোমার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে !
সেরকম কিছু না কয়দিন দেখেন নাই তাই আপনার কাছে এমন লাগছে হেরা নওশাদের হাতের উপর মাথা রাখতে রাখতে বলল।
আপনার জার্নি কেমন ছিল ?
অসহ্য টাইপ কয়টা চায়নিজ পাশে ছিল কিচকিচ করে কান ঝালাপালা করে দিয়েছে। বিজনেস ক্লাসে আসলে কি হবে ওদের স্বভাব তিন চারটা এক হয়ে গেলেই কিচিরমিচির শুরু করে ।
সবাই তো আপনার মত পুরো জার্নি ঘুমিয়ে পার করে না ।
একা জার্নি করলে না ঘুমিয়ে কি করব, তুমি সঙ্গে থাকলে নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেই না ?
ঐ কিছুক্ষণ তারপর তো ঠিকই ঘুমিয়ে যান।
আচ্ছা নেক্সট টাইম থেকে আর ঘুমাব না হেরা তোমার হাত ধরে বসে থাকব খুশি ।
হ্যাঁ খুশি।
তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছিলাম দাড়াও এক সেকেন্ড । নওশাদ তার কেবিন লাগেজ খুলে একটা ছোট্ট বক্স বের করলো ।
কি এটা ?
বক্স খুললো নওশাদ ভেতরে ছোট্ট একটা আকাশি রঙের পাথর। আলো পড়তেই অনেক রঙের আলোতে ঝিকমিক করে উঠলো।
সুন্দর তো , হেরা হাতে নিয়ে বলল !
এটার নাম একোয়ামেরিন তুমি এটা দিয়ে আংটি বানিয়ে পড়তে পারো । পছন্দ হয়েছে ?
হুঁ খুব। হেরা পাথরটা হাতে নিয়ে দেখছে নেড়েচেড়ে।
এটা তোমার ভালো রেজাল্টের জন্য হেরা।
থ্যাংকস থ্যাংকস অনেক গুলো থ্যাংকস।
হঠাৎ নওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে বলল , তোমাকে দেখে অনেক রোগা লাগছে ! খাওয়া-দাওয়া ঠিক ভাবে করোনি এবং রাত জেগে বই পড়েছে নয়তো তিনজন মিলে আড্ডা দিয়েছো ?
হেরা চোখ বড় বড় করে বলল,না সেরকম কিছু না , আমার মনে হয় জন্ডিস হয়েছে ?
হ্যাঁ কি বলো, আঁতকে উঠলো নওশাদ ! দেখি তাকাও আমার দিকে শরীর হলুদ হয়ে গেছে দেখি । অবশ্য আমি এসব বুঝবো না কিন্তু তোমার কেন মনে হচ্ছে জন্ডিস ?
আমার ছোট মামার এমন হয়েছিল পানি খেতে পারতো না আর অল্পতেই শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে যেতো ।পরে দেখা গেল জন্ডিস !
তাহলে চলো এক্ষুনি তোমার বিলুরুবিন টেস্ট করাতে হবে ।
এত তাড়াহুড়োর কিছু নেই । জন্ডিসের তো ওষুধ নেই রেস্ট নিলেই হবে আর লিকুইড টাইপ খাবার খাই তাহলেই ভালো হয়ে যাব ।
তুমি তো দেখি বিরাট ডাক্তারী ও জানো হেরা নওশাদ বলল।
জন্ডিসে আমাদের গ্রামে একটা মালা পড়ায় এতেই ভালো হয়ে যায় রোগী। ওসব তো এখানে পাওয়া যাবে না ।
পাওয়া গেলেও ওসব স্টুপিড জিনিস আমি তোমাকে পড়তেও দিব না হেরা।
আচ্ছা ঠিক আছে ডাক্তারের কাছে যাব । ফারহান ভাইয়াকে ফোন দিয়ে কথা বলে নেই উনি কি বলে দেখি।
আমি এক্ষুনি ফোন দিচ্ছি ওকে ।
এক্ষুনি দিতে হবে না পরে সময় করে কথা বললেই হবে । এখন ফ্রেশ হয়ে আসেন ডিনার করতে যাই।
নওশাদ তখনই ফারহানের সঙ্গে কথা বলল ।
দুই দিন হেরা বাসায় শুয়ে বসে থেকেই দিন টাকালো ক্লাসে যায়নি ডাক্তারের কাছেও না। দুপুরে হেরা নিজের ঘরে শুয়ে টিভি দেখছে পারুল দরজার নক করলো।
কে ?
আম্মা আমি পারুল।
ভেতরে এসো ।
পারুল ঘরে ঢুকলো সঙ্গে এগারো বারো বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে।
এই মেয়ে কে পারুল ?
আম্মা আমার ছোট ভাইয়ের মাইয়া ঐ আম্মারে সালাম কর। পারুল ধাক্কা দিলো মেয়েটাকে।
আরে না না পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হবে না। কার সঙ্গে এসেছে বেড়াতে?
আম্মা আমার ভাই নিয়া আসছে তয় বেড়ানির জন্য না বাসায় কাম কাজের জন্য ।
হেরা অবাক হয়ে বলল,কি বলো এত ছোট মেয়ে কাজ করবে কেন স্কুলে যাবে না ?
আম্মা পড়তে চায় না মাথায় লেখাপড়া ঢুকে না । সারাদিন শুধু পাড়া বেড়ায় । তাই হের বাপ নিয়া আইছে আম্মা আপনি কইলে রাখি আমার সঙ্গে ?
এই বাসায় কি কাজ করবে ও । ওর এখন পড়াশোনার বয়স । এই নাম কি তোমার?
নাম ক আম্মারে ?
পুতুল ।
নামটা তো সুন্দর তোমার। কিন্তু পড়াশোনা না করে কাজ করবে কেন তুমি ?
মেয়েটি মুখে কিছু বলল না হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে হেরার দিকে।
আম্মা রিয়াজ ভাই কইছে আপনি কইলে রাখব না হইলে রাখতো না । আম্মা ফরমাইসের কাম করবো আমার সাথে।
আচ্ছা ঠিক আছে যাও ভারী কোন কাজ দিও না । রিয়াজ ভাইকে কে গিয়ে বলো আমি রাখতে বলেছি।
হেরা মনে মনে ভাবছে এত কাজেরমানুষ এই বাসায় তারপরেও কারো দরকার ছিল না কিন্তু মেয়েটাকে দেখে মায়া হলো ওর তাই রেখে দিলো।
হেরা তিনদিন পর ফারহানের চেম্বারে গেল। তাও নওশাদ তাগাদার পর তাগাদা দেয়ায়। আজ না গেলে নওশাদ অনেক রাগ হয়ে যেতো।
গাড়িতে বসে ছিল যখন তখনও নওশাদ ফোন দিলো আবার।
বের হয়েছো তুমি ?
জ্বি বের হয়েছি । আপনি আসবেন ?
অফকোর্স আসব তুমি যাও আমি সময় মত পৌঁছে যাব।
ঠিক আছে ।
গীতির আচমকা মৃত্যুর পর নওশাদ আপনজন কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে খুব অস্থির হয়ে পড়ে। তার কাছে সব সময় মনে হয় সেদিন যদি সে গীতির পাশে থাকতে পারতো তাহলে হয়তো গীতির খারাপ লাগছে শুনে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসতে পারতো। জীবন অন্য রকম হলেও হতে পারতো।
হেরার সঙ্গে কথা শেষ করে নওশাদ বের হতে নিলো যেই হঠাৎ জীনাত এসে ঢুকলো ।
স্যার কি বের হচ্ছিলেন ?
হ্যাঁ কিন্তু কিছু বলবে তুমি ?
স্যার এড এজেন্সি ওদের একটা রেকর্ড পাঠিয়েছে যদি একটু দেখে দিতেন।
ঠিক আছে নিয়ে আসো ।
জীনাতের সেই রেকর্ড দেখতে গিয়ে নওশাদ বেমালুম ভুলে গেল হেরা ডাক্তারের চেম্বারে ওর জন্য অপেক্ষা করছে ।
হঠাৎ ছোট ভাইয়ের বউ মিলা ফোন দিয়ে বলল, ভাইয়া আপনি কোথায় এখন ?
অফিসে কেন আমার কি কোথাও আসার কথা ছিল কোন প্রোগ্রাম আছে আজ?
ভাইয়া ভাবি আমার চেম্বারে বসে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ।
সরি একদম ভুলে গেছি ।আসছি আমি । নওশাদ লাফ দিয়ে উঠলো।
সরি ভাবিকে এসে বলেন অনেক্ষণ অপেক্ষা করছে।
হেরা চাইল্ড স্পেশালিস্টের কাছে কি করে ওকে না ফারহানের কাছে পাঠালাম?
আপনি আসেন আগে তারপর দেখেন কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই ভাবিকে হাসতে হাসতে বলল মিলা।
নওশাদ ঘন্টা খানেক লাগিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে হাজির হলো ।
মিলার চেম্বারে বসে গল্প করছে হেরা । নওশাদকে ঢুকতে দেখে চুপ করে গেল দুজন।
সরি হেরা আমি বের হচ্ছি আর তখনই একটা কাজ এসে গেল ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
ভাইয়া ভাবিকে আরো কিছুক্ষণ সরি বলেন আমি ফারহানকে নিয়ে আর রিপোর্ট গুলো নিয়ে আসি বলে মিলা বের হয়ে গেল রুম থেকে।
নওশাদ হেরার কাঁধে হাত রাখলো , সরি বলছি তো চোখ মুখ ঠিক করো প্লিজ ।
চোখ মুখ ঠিক আছে , হেরা শুকনো মুখে বলল।
তাহলে চেহারার এই হাল কেন , নওশাদ হেরার গালে স্পর্শ করলো।
টেনশন হচ্ছে মিলা ভাবি ব্লাড দেয়াতে নিলো, ইউরিন নিলো টেস্ট করাতে, এখন এই যে দেখেন চার বোতল পানি খেয়েছি ।
কেন , নওশাদ অবাক হয়ে তাকালো !
জানি না ভাবি কিছু বলছে না , আমাকে বলল শুধু রিপোর্ট আসুক তুমি পানি খেতে থাকো আল্ট্রাসাউন্ড করাব !
এসব কেন ?
জানি না, শুধু বলল আসুক রিপোর্ট গুলো । আপনি ফারহান ভাইকে জিজ্ঞেস করেন তো আমার কেমন গা হাত পা কাঁপছে !
আরে বোকা মেয়ে সামান্য টেস্টেই গা হাত পা কাঁপছে !
নওশাদ হেরার মাথায় হাত রাখলো।
একজন আয়া রুমে এসে হেরাকে বলল, ম্যাডাম আমার সঙ্গে আপনাকে যেতে বলেছে।
হেরা নওশাদের দিকে তাকালো ভীত চোখে।
নওশাদ হেরার হাত ধরে বলল,চলো হেরা দেখি মিলা কোথায় ?
আয়ার সঙ্গে হেরা রেডিওলজিস্ট এর রুমে ঢুকে যেতেই নওশাদ ফারহানকে কল করলো ।
হ্যালো বলার আগেই ফারহান বলে উঠলো, ভাইয়া পাঁচ মিনিট বসো আমি আসছি জাস্ট ফাইভ মিনিটস।
অগত্যা নওশাদ আলট্রাসাউন্ড রুমের সামনে বসে আছে। মনে মনে ভাবছে, জন্ডিসে আল্ট্রাসাউন্ড এর কি কাজ? লিভার ফাংশন টেস্ট কি আলট্রাসাউন্ড দিয়ে করে ? আমি আর্কিটেক মানুষ বিল্ডিং এর স্ট্রাকচার এর ভিতর বাহিরের হিসাব বলতে পারবো কিন্তু মানবদেহের সব কিছু কি আর জানি নাকি কিন্তু টেনশন হচ্ছে খুব। ওর পাশে একটা কম বয়সী দম্পতি বসে আছে। মেয়েটা প্রেগন্যান্ট, মনে হয় আল্ট্রাসাউন্ড করাবে খুব টেনশানে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কি সমস্যা নিয়ে টেনশন আল্লাহই জানে। ওর হঠাৎ মনে পড়লো নিশাল পেটে থাকতে আল্ট্রাসাউন্ড করাতে আসলে গীতি নার্ভাস হয়ে যেতো এভাবেই। এমনও হয়েছে রুমে ঢুকবে নওশাদকে হাত ধরে ধরে গিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতে হতো গীতিকে।
ফারহান ছুটতে ছুটতে এসে পাশে দাঁড়ালো । সরি ভাইয়া আমার ফ্রেন্ডের বাবাকে নিয়ে এসেছিল আংকেল খুব অসুস্থ রেখে আসতে পারিনি।
ব্যাপার না মিলা নিয়ে গেছে আল্ট্রাসাউন্ড করাতে । ফারহান বুঝলাম না জন্ডিস হলে আলট্রাসাউন্ড করাতে হয় বুঝি ?
কার জন্ডিস হয়েছে ভাইয়া ?
তোর ভাবির কথা বলছিলাম , তোর সঙ্গে ফোনে কথা হলো না আমার ।
ভাবি বলেছে ওর জন্ডিস হয়েছে কিন্তু রিপোর্ট তো অন্য কথা বলছে ভাইয়া ! ফারহান অবাক হয়ে বলল!
রিপোর্টে কি আছে , নওশাদ চিন্তিত চোখে তাকালো ফারহানের দিকে?
ঠিক তখনই মিলা রুম থেকে বের হয়ে এলো হাসতে হাসতে, ভাইয়া আসেন আমার রুমে ।
হেরা কোথায় ?
ভাবিকে নিয়ে আসছে আয়া । আমরা যাই অসুবিধা নেই আসেন আপনি।
নওশাদ বুঝতে পারছে না মিলার হাবভাব , যদিও ওর মধ্যে নাটুকেপনাটা একটু বেশিই। হঠাৎ মোবাইলে রিং হতেই তাকিয়ে দেখে নিশালের কলেজের নাম্বার ।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিশাল বলল, পাপা কেমন আছো ?
নিশাল আমি মামনিকে নিয়ে ছোট চাচা চাচীর ওখানে ডাক্তারের কাছে এসেছি তোমাকে একটু পরে ফোন দেই বাচ্চা ।
কি হয়েছে পাপা মামনির ?
সেরকম কিছু না আমি ফোন দিচ্ছি তোমাকে।
ঠিক আছে তোমাকে দিতে হবে না আমিই দিব পাপা তুমি মামনির খেয়াল রেখো।
নওশাদ ফোনে কথা শেষ করে মিলার চেম্বারে ঢুকলো ।
ওকে দেখেই মিলা বলে উঠলো ভাইয়া মিষ্টি খাওয়াবেন নাকি ঝাল কিছু ?
কি ব্যাপার মিলা ? নওশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
ভাইয়া নিশালের তো ভাইবোন আসছে , আপনি এনআদার টাইম পাপা হচ্ছেন ইনশাআল্লাহ।
কনগ্রাচুলেশন ভাইয়া , ফারহান এসে জড়িয়ে ধরলো নওশাদকে।
তখনই দরজা ঠেলে হেরা ঢুকলো রুমে । ও নওশাদের দিকে তাকাচ্ছে না। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
নওশাদ খুশি হবে নাকি চিন্তিত হবে বুঝতে পারছে না । মিলার কথা শুনে হেরা আরো লজ্জা পাচ্ছে।
মিলা এখন কি করনীয় সেটা বলো গাইনীর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে কি ?
ভাইয়া আপনি ফারহানের সঙ্গে বসেন আমি ভাবিকে দেখিয়ে নিয়ে আসছি।
মিলা আর হেরা বের হয়ে যেতেই নওশাদ ফারহান কে প্রশ্ন করলো, প্রেগন্যান্সির জন্য তেইশ বছর কি ঠিক আছে রে ?
একদম পার্ফেক্ট ভাইয়া তুমি টেনশন করো না ।
বাসায় আসার সময় গাড়িতে কোন কথা বললো না হেরা চুপচাপ বসে রইলো। নওশাদ ওর হাত ধরে আছে। নওশাদ বুঝতে পারছেনা কি বলবে সে ?
বেড রুমে ঢুকেই নওশাদ হেরাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আই এম সরি হেরা । আমি খুব খুব খুবই লজ্জিত । আমি ভেবেছিলাম তোমার গ্রেজুয়েশন শেষ হওয়ার আগে কোন বেবি নিব না কিন্তু এখন তো কি একটা ব্যাপার হয়ে গেল ! আই এম সরি !
হেরা নওশাদের দিকে তাকিয়ে , হাসতে হাসতে বলল কি একটা ব্যাপার হয়ে গেল মানে দারুন একটা ব্যাপার হয়ে গেল । বাসায় একটা ছোট্ট বাবু আসবে দারুন একটা ব্যাপার না?
কিন্তু তোমার পড়াশোনা হেরা ?
ও দেখা যাবে বাচ্চা নিয়ে পড়াশোনা করছে না মেয়েরা । আমার তো রান্নাবান্না, ঘর গোছগাছ করতে হয়না আমার কিসের চিন্তা পড়া আর বাচ্চা রাখা এই তো।
তারপরেও আমার খুব অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে , নওশাদ বলল।
আপনার সত্যিই আনন্দ হচ্ছে না ? হেরা অবাক হয়ে তাকালো ।
না সে কথা বলিনি মনে হচ্ছে তোমার পড়াশোনায় আবার না গ্যাপ পড়ে যায় ?
কিছু হবে না ।
নওশাদ হেরাকে বুকে টেনে নিল হেরা আমি বুবুকে আসতে বলি , তোমার যত্ন নেয়ার তো কেউ নেই এখানে ।
এখন আসার দরকার নেই আরো কয়েক মাস যাক তারপর আসুক বুবু । এখনও অনেক দেরি আছে মাত্র দশ সপ্তাহ ।
আচ্ছা মিলার চেম্বারে যখন ঢুকলে তখন অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন ? আমি তো ভাবলাম তোমার মন খারাপ খবরটা শুনে।
আমার খুব লজ্জা লাগছিল আপনার দিকে তাকাতে , হেরা নওশাদের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল।
বিশ্বাস করবে হেরা আমারও খুব লজ্জা লাগছিল যখন মিলা প্রথম বলল নিশালের ভাইবোন আসছে ।
তাই ?
হুম।
হেরার ফোনে রিং হচ্ছে ।
তোমার ফোনে রিং হচ্ছে হেরা ধরো ।
থাক এখন ধরতে ইচ্ছে করছে না।
দেখো কে করেছে ?
ফোন হাতে নিয়ে নওশাদ বলল, নিশাল । মিলার ওখানে যখন ছিলাম নিশাল ফোন দিয়েছিল আমি ভুলেই গিয়েছিলাম টেনশন করছে ও।
হ্যালো নিশাল ।
পাপা মামনির কি অবস্থা কি হয়েছে ?
কি যে হয়েছে, তোমার মামনিকে জিজ্ঞেস করো ?
নওশাদ হেরার দিকে মোবাইল এগিয়ে দিলো , আপনি বলেন আমি কিভাবে বলব আশ্চর্য!
নিশাল বাবা তোমার তো প্রমোশন হয়ে যাচ্ছে , তুমি বড় ভাইয়া হয়ে যাচ্ছো ।
মানে ?
মানে তোমার একটা ভাই কিংবা বোন আসছে ইনশাআল্লাহ।
সত্যি পাপা ! কবে ?
কবে তো জানি না আমরা আজই জানলাম।
পাপা তুমি তাহলে প্রিন্সিপাল স্যার কে বলে আমাকে নিয়ে যাও প্লিজ প্লিজ ।আমি বেবি যখন আসবে তখন ওখানে থাকতে চাই পাপা।
এখনো দেরি আছে অনেক বাবা ।
কবে ?
আরো থার্টি উইকস পরে ।
তখন যদি আমার ছুটি না থাকে ?
তখন না হয় প্রিন্সিপাল কে বলা যাবে বাবা।
পাপা কি হবে ভাই নাকি বোন ?
জানিনা এখনো !
তুমি ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করতে আজকাল আগেই জানা যায় ।
তুমি কি চাও নিশাল ?
পাপা আমার মনে হয় বোন হলেই ভালো হবে, বুঝতে পারছি না ।
দেখা যাক তোমার ভাই নাকি বোন হয় ।
পাপা তুমি মামনির টেককেয়ার করো । ফোন এখন রাখতে হবে আমি কালকে মামনির সঙ্গে কথা বলব এখন রাখছি।
সাবধানে থেকো নিশাল।
ওকে পাপা।
ছেলে খুব এক্সাইটেড । এখনি তাকে আনতে বলছে। নওশাদ হাসছে।
নওশাদ এই খবর দেয়ার আগেই মিলা বুবুকে দিয়ে দিয়েছে। আত্মীয়-স্বজন ঘন্টা দেড়েক এর ভেতরে জেনে গেছে। সবার আগে ফোন টা বুবুই দিলো।
প্রথমে কিছুক্ষণ কাদলো যথারীতি তারপর নওশাদকে এবং হেরাকে অনেক উপদেশ দিলো। হেরাকে মোটামুটি বিশদ এক উপদেশ মালা শুনিয়ে দিলো। কি করা যাবে কি করবে না। কি খাবে কি খাবে না ।
নাদিয়া ফোন দিয়ে হেরাকে শুভেচ্ছা জানালো । সবার সঙ্গে কথা বলতে হেরার লজ্জা লাগছে যদিও। পরদিন থেকে নওশাদ অফিসে গিয়ে একটু পর পর ফোন দিচ্ছে আবার ইনবক্স করছে।
ক্লাসের ফাঁকে হেরাকে নিজের আপডেট দিতে হয় নওশাদকে।
সবচেয়ে বেশি হেরার যত্ন নেয়া শুরু করলো আনারের মা। সারাক্ষণ হেরা কি খাবে , কোথায় খাবে এই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। হেরা এলিন,নাহিনকে রিকোয়েস্ট করলো ভার্সিটির কাউকে এই কথা এক্ষুনি বলো না প্লিজ।
ঠিক আছে বৌমনি আমরা কাউকে বলবো না, এলিন বলল ।
বুঝতেই তো পারছো আমার লজ্জা লাগছে।
ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না বৌমনি।
হেরার ক্লান্ত লাগে খুব এছাড়া আর কোন সমস্যা নেই। প্রতিদিন মিলা ফোন দিয়ে খোঁজ নেয় ওর। সুমনা এসে দেখে গেছে আবার প্রতিদিন ফোনও করে। পারুলের ভাইয়ের মেয়েটা হেরার কাছাকাছি ঘুরঘুর করে।
মেয়েটাকে তার পছন্দ হয়েছে। যদিও আনারের মা এসে সতর্ক করে দিয়ে গেছে আম্মা আমি এই মাইয়ারে চোখে চোখে রাখতাছি চুরি রোগ আছে কিনা দেখতে হইব আগে ।
কি বলো বাচ্চা মেয়ে একটা !
আম্মা এই কথা কয়েন না একবার বীথি খালাম্মার বাসার কাজের মাইয়া স্যারের ঘড়ি লুকায়া ফেলছিলো । ছোট্ট মাইয়া কিন্তু পাজির শেষ।বীথি খালাম্মা তো গলায় পারা দেয় ঐ মাইয়ার। স্যারের ঘড়ির দাম নাকি সাড়ে তিন লাখ টাকা খালাম্মা কইলো। স্যার ছিল তখন বিদেশে খালাম্মার সঙ্গে আসছে ঐ মাইয়া তারপর কোন ফাঁকে স্যারের রুমে ঢুকে ঘড়ি নিয়া নিসে কি কান্ড চিন্তা করেন।
তারপর ?
পারুল দেখছে স্যারের ঘর থেকে বাইর হইতে । আমি ঘরে ঢুকে দেখি স্যারের ঘড়ির বক্সে একটা ঘড়ি নাই বক্স খালি কি সর্বনাশ!
খালাম্মার মাইর খাইয়া ঘড়ি বাইর করছে ঐ মাইয়া । তাই কই কারো বিশ্বাস নাই আম্মা । সাবধানের মাইর নাই।
আনারের মায়ের এই কথার এক সপ্তাহ পরেই পুতুল নাহিনের নেলপলিশ, দামী কানের দুল চুরি করে ধরা পড়লো আনারের মায়ের কাছে। পারুল সবার সামনে খুব মারলো মেয়েটাকে। হেরা চিল্লাচিল্লি শুনে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে পারুল কে ধমকে আটকালো।
তোমার তো সাহস কম না পারুল বাচ্চা একটা মেয়ে কে এভাবে মারছো !
কি কন আম্মা হারামজাদি আমার মান ইজ্জত ডুবায় দিসে। ওরে তো গলা টিইপা খুন করা উচিত ! পারুল আবার মারতে তেড়ে গেল।
একদম চুপ, হেরা চিৎকার দিয়ে উঠলো। হেরা মনে হয় একটু জোরেই চিৎকার দিয়ে ফেলল চিৎকার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তলপেটে কেমন চিনচিন করে উঠলো ওর। জোরে একটা নিঃশ্বাস নিল হেরা।
পারুল এসব মারামারি বন্ধ করো । যা হয়েছে হয়েছে এখন ওকে বুঝিয়ে বলো । এই পুতুল, চুরি করা কিন্তু অনেক বড় গুনাহর কাজ কেউ না দেখুক আল্লাহ কিন্তু সব দেখে মনে রাখবি, হেরা বলল।
মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে দাঁড়িয়ে।
পারুল তার ভাস্তির গলা ধাক্কা দিয়ে বলল, যা আম্মার পা ধইরা মাফ চা ।
আমার পা ধরে মাফ চাইতে হবে কেন বেশি কথা বলো পারুল , হেরা ধমকে উঠলো।
আর অনেক হয়েছে এখন নিজেদের ঘরে যাও আমার অসহ্য লাগছে এই চিৎকার চেঁচামেচি । তোমাদের স্যারের আসার সময় হয়ে গেছে এসব এখন বন্ধ করো বলে হেরা নিজের ঘরে চলে এলো।
ওর শরীর টা খারাপ লাগছে । তলপেট কেমন চিনচিন করছে । মনে মনে ভাবছে ওভাবে চিৎকার দেয়াটা ঠিক হয়নি তার।
সন্ধ্যা হতেই নওশাদ চলে এলো ।
হেরার কাছে এসে বলল,কি ব্যাপার শুয়ে আছো যে তোমার শরীর খারাপ নাকি ? নওশাদ চিন্তিত চোখে তাকালো ।
কিছু না একটু খারাপ লাগছে পেটে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে নওশাদ অস্থির হয়ে মিলাকে ফোন দিলো । মিলা যখন বলল, এরকম হয় কখনো কখনো তারপর গিয়ে নওশাদের অস্থিরতা কমলো।
ভেবেছিলাম একটা বিয়ের দাওয়াত আছে তোমাকে নিয়ে যাব এখন আমার নিজেরই যেতে ইচ্ছে করছে না।
আপনি যান ।
তোমার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করছে হেরা । ইদানিং তোমার সঙ্গে একটুও সময় কাটানো হচ্ছে না এত ব্যস্ত থাকি।
ঠিক আছে আজ আপনার সঙ্গে গল্প করে রাত পার করব । তার আগে আপনাকে একটা জিনিস দেখাই ।
হেরা উঠে গিয়ে তার আলমারির ড্রয়ার খুলে নওশাদের কোলে ছোট্ট নিশালের ছবিটা বের করে আনলো । দেখুন।
আরে এই ছবি তুমি কোথায় পেলে হেরা ?
স্টোর রুমে ।
নিশাল তখন ছয় মাসের ও কম হবে গীতি তুলে দিয়েছিল ছবিটা, নওশাদ বলল।
যে বাবু আসবে তাকে নিয়েও এরকম একটা ছবি তুলবেন আপনি, তারপর পাশাপাশি ছবি দুটো বাঁধিয়ে টাঙ্গিয়ে রাখব ।
আচ্ছা ঠিক আছে রেখো।
আপনার ছোটবেলার ছবি আছে , নিশালের পাপা ?
অনেক ছবি আছে , আব্বা খুব সৌখিন মানুষ ছিল একবার ঈদের আগে হঠাৎ একটা ইউসুকা ক্যামেরা কিনে নিয়ে হাজির বাসায় । আব্বার কলিগের ভাই জাপান থেকে আসছে তিনটা ক্যামেরা নিয়ে সে বিক্রি করবে। আব্বা ঐ লোকের কাছ থেকে ক্যামেরা কিনে ফেলল। তারপর ফীল্ম ভরে ছবি তোলা হতো আমাদের ভাইবোনদের। কত আলতু ফালতু ছবিও যে আছে আমাদের।
হেরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, আলতু ফালতু ছবি মানে ?
এই যেমন ধরো পুকুরে সাঁতার কাটছি আমরা কিংবা বাসার সামনে ফুটবল খেলছি কাঁদার মধ্যে। এসব আরকি।
বাহ দারুন তো ! কোথায় এসব ছবি ?
আছে হয়তো তিন তলার স্টোর রুমের আলমারিতে । আম্মার কিছু বক্স আছে আব্বার ঘরের আলমারিতে সেখানেও থাকতে পারে ।
কি করবে ছবি দিয়ে ?
আমি আপনার ছোটবেলার ছবি দেখব কেমন ছিলেন আপনি ?
নওশাদ হাসতে হাসতে বলল , আমি ছোট বেলায় অনেক মোটা আর ফর্সা ছিলাম দুই তিন বছর পর্যন্ত । আশেপাশের বাসার আন্টিরা খুব আদর করতো। বুবু আমাকে নিয়ে প্রতিবেশীদের বাসায় ঘুরে বেড়াতো।
আপনি তো এখনও অনেক সুন্দর! আমাদের বাবুটা আপনার মত হোক আমি খুব করে চাইছি।
আমি চাইছি চোখ গুলো যেন তোমার মত হয় হেরা।
হেরা বলল, আজ নিশাল ফোন দিয়েছিল দুপুরে সে নাকি তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখবে আর তাকে যেন অবশ্যই হসপিটালে যাওয়ার আগে কলেজ থেকে আনা হয় । আমি বললাম অনেক দেরি আছে তুমি এখনই এত অস্থির হচ্ছো কেন ? আমাকে বলল, মামনি তুমি আমার অনুভূতি টা বুঝতে পারছো না !
হ্যাঁ খুব এক্সাইটেড হয়ে গেছে নিশাল। আমার সঙ্গে গতকাল কথা হয়েছে । আমাকে বড়দের মতো উপদেশ দিচ্ছে আমার ছেলে বুঝলে হেরা । আমি তখন গলফ খেলছি। আমাকে বলে পাপা এখন কিছুদিন গলফ না খেললে হয় না ?
আমি বললাম কেন আমার গলফ খেলার সঙ্গে কি সম্পর্ক তোমার মামনির? বলে সেই সময় টুকু তুমি মামনির পাশে থাকলে । আমি বললাম বাবা আমি যখন গলফ খেলি সেই সময় তোমার মামনি বাসায় ঘুমিয়ে থাকে ! আমি তখন বাসায় থাকলে পাশে শুয়ে ঘুমিয়েই থাকতাম । তখন বলে তবুও পাপা ।
দেখো আমাকে উপদেশ দিচ্ছে ছেলে। মনে মনে বলি আমি, তুই কয় বাচ্চার বাবা হয়েছিস নিশাল ?
নওশাদ হেরার হাত ধরে হাসতে থাকে।
দুপুরের পর হেরার খুব ঘুম পায় । আজ ক্লাস ছিল দুইটা। এখন আর ক্লাসের পর গল্প করতে বসে না। সঙ্গে সঙ্গে বাসায় চলে আসে। আজকে বাসায় এসে দেখে তুলকালাম কাণ্ড হচ্ছে। পারুল আবার তার ভাস্তির উপর চড়াও হয়েছে। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেল হেরা। বাসার ভেতরে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে আনারের মা কাছে এসে বলল আম্মা ভালো ঝামেলা হাজির হইছে বাসায় !
কি শুরু করেছে এরা দুই জন বলোতো আনারের মা ?
আম্মা পারুলের ভাস্তি থাকবো না, কালকে রাইত থেইকা কানতাছে । পারুল একটুপর পর মারতাছে।
তাহলে বলো পারুল কে পাঠিয়ে দিতে বাড়িতে । এই বয়সী কারো তো দরকার নেই বাসায়, পারুলের অনুরোধেই রেখেছিলাম।
এইটাই ভালো হয় আম্মা প্রত্যেক দিন এই কান্নাকাটি, মারামারি দেখতে অসহ্য লাগতাছে। আপনার শরীর ভালা না স্যার শুনলে কি অবস্থা হইব চিন্তা করেন।
যাও ডেকে নিয়ে আসো পারুল কে।
দু মিনিট পর পারুল হেরার কাছে ছুটে এলো।
পারুল মেয়েটা থাকতে চাইছে না তুমি জোর জবরদস্তি করো না । তোমার অনুরোধেই রেখেছিলাম। ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দাও।
আম্মা কারে দিয়া পাঠাই কন । একা তো পাঠানো যাইতো না।
একা পাঠাতে যাবে কেন মাথা নষ্ট নাকি তোমার !
আম্মা আপনে কইলে আমি দিয়া আসি আর কয়টা দিন বাড়িত থাইকা আসব পারুল অনুরোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হেরার দিকে ।
ঠিক আছে যাও । আর মেয়েটাকে বলো পড়াশোনা টা করতে। এযুগে গ্রামের মেয়েরাও কিন্তু শিক্ষিত। আমি কিন্তু একদম গ্রামের একটা মেয়ে।
কি যে কন আম্মা কই আপনে আর কই এরা পারুল বলল।
হেরা উপরে উঠে এলো ।
পারুল আর তার ভাইয়ের মেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রেডি দুপুরে খেয়েই বাড়ি চলে যাবে।
হেরা লাঞ্চের পর না ঘুমিয়ে তিন তলার স্টোর রুমের দিকে যাচ্ছে যখন পারুল আর ওর ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে দেখা রুমের বাহিরে।
আম্মা আমরা গেলাম ।
ঠিক আছে সাবধানে যেও আর পুতুল শোন পড়াশোনা টা করিস । প্রতিটা মানুষের জন্য পড়াশোনা টা খুব জরুরি মনে রাখবি ।
ঠিক কইছেন আম্মা কত বুঝাই কিন্তু কে শোনে কার কথা ।
একটু দাঁড়াও পারুল, বলে হেরা নিজের ঘরে এসে ঢুকলো এক হাজার টাকার একটা নোট পারুলের হাতে দিয়ে বলল, বাড়ি যাচ্ছো বাড়ির সবার জন্য কিছু নিয়ে যেও। আর এই টাকাটা তোর জন্য পুতুল বলে পুতুলের হাতে আরো এক হাজার টাকার একটা নোট দিলো।
আম্মা রিয়াজ ভাই বেতন যাওয়ার ভাড়া সব দিসে তো !
তা দিক আমি এটা তোমাকে দিলাম বাড়ি যাচ্ছো দেখে ।
আমি তাড়াতাড়ি চইলা আসব আম্মা ।
ঠিক আছে সাবধানে যেও। আনারের মা কে বলো আমি তিন তলার স্টোর রুমে যাচ্ছি ও যেন আসে ।
জ্বি আম্মা এক্ষুনি বলতাছি বলে পারুল আর পুতুল নিচে নেমে গেল হেরা তিন তলায় উঠলো।
তিন তলা এই মুহূর্তে খালি। এলিন, নাহিন দুই বোন তাদের আব্বুর জন্মদিনের গিফট কিনতে গেছে সন্ধ্যার আগে আসবে না। শোয়েব অফিসে।
হেরা স্টোর রুমে ঢুকে লাইট জ্বালালো এখানে শুধু বড়, ছোট বিভিন্ন ধরনের সুটকেস। তারপর ভেতরের স্টোর রুমের দরজা টা খুলে ঢুকলো। এই স্টোর রুমে চারটা আলমারি রাখা। একটাতে নিশালের মায়ের কাপড় রাখা । তালা দেয়া । আর একটা আলমারিতে ফটো এলবাম, অনেক গুলো ছবি বাঁধানো সেগুলো গুছিয়ে রাখা। হেরা সেই আলমারি থেকে পুরোনো ছবি বের করে দেখছে । নওশাদের কলেজ লাইফের ছবি। তাজমহলের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি। কত আগের ছবি ।হেরা দেখছে আর মজা পাচ্ছে। সে নওশাদের সিঙ্গেল ছবি গুলো এক জায়গায় রাখছে এগুলো সে সঙ্গে নিয়ে যাবে।
হেরা ছবি দেখায় , ছবি বাছাবাছি করাতে এত মগ্ন হয়ে ছিল সে খেয়ালই করেনি পারুলের ভাইয়ের মেয়ে যাকে সে আদর করে কিছুক্ষণ আগে টাকা দিয়ে এলো সে স্টোর রুম দুটোর দরজা গুলো বাহির থেকে লক করে দিলো। নিজের ভাস্তিকে দিয়ে এই কাজটা করালো পারুল। আর পারুলকে কাজটা যে করতে বলেছে সে অনেক ভেবে চিন্তেই কাজটা করিয়েছে। সে জানে হেরার তীব্র ক্লাস্টোফোবিয়া আছে। প্রেগন্যান্সির এই সময় টাতে একটা বন্ধ ঘরে পরে থাকলে হেরার শরীরের অবস্থা কি হতে পারে সে ভালো করেই জানে।
( চলবে )