সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২৩

0
910

#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২৩

….

অভি স্পষ্ট বুঝতে পারছে বিদ্যা নিঃশব্দে ওর চোখের জল ফেলছে। অভির মাজিক্যাল পাওয়ার কখনো বিদ্যার উপর খাটাতে পারেনা কিন্তু ওর আশে পাশে থাকলের ওর অনুভুতি গুলো স্পষ্ট বুঝতে পারে।
অভি দাড়িয়ে পড়ল। সাথে সাথে বিদ্যাও থেমে গেল। চটকরে এক আঙ্গুল দিয়ে দ্রুত চোখের জল মুছে অভির দিকে তাকাতেই দেখল, অভি ওকেই এতক্ষন ধরে দেখছিল।

বিদ্যা একটু হাঁসি দেওয়ার ভান করে অভিকে বলল,
-” কি হয়েছে অভি! তুমি থেমে গেলে যে?”

অভির অনুভুতিগুলো শূন্যর কোঠায় চলে গেল। সকাল থেকে যাকে ভেবেছিল সে আজ অনেক খুশি আর এখন নিজের মনই নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বলছে, অভি তুমি তার কষ্টের খোজ নাওনি। যাকে পাওয়ার জন্য এতদিন ছটপট করেছে আজ তাকে পেয়েও তুমি থাকতে সে কষ্ট পায় কিভাবে? অভি কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল। গলা ধরে আসছে।

বিদ্যা অভিকে এমন অস্থির দেখে বলল,
-” কি হয়েছে অভি! কোন সমস্যা?”

অভি ওর কণ্ঠো উন্মুক্ত করে এবার বলেই ফেলল,
-” তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন?”

বিদ্যা অভির দিকে চেয়ে অপলক চাহোনিতে একটা হাসি দিয়ে বলল,
-” কি যে বলনা অভি! আমার আবার কি হবে?”

-” মিথ্যা বলছো তুমি। কেন মিথ্যা বলছো! আমি তো তোমার সত্য-মিথ্যা কথা বলার ধরণ গুলো এখন বেশ বুঝে ফেলতে পারি।”

-” খুব ভাল। কিন্তু তোমার সমস্যা হল তুমি একটু বেশিই বোঝ। দেখ, অনেক বেলা হয়েছে তুমি কিছু খাওনি। চল কোন রেস্টুরেন্টে। তুমি খাবে।”

আমি খাবোনা বলে অভি শক্ত করে বিদ্যার হাতটা ধরে অভিযোগ স্বরে বলে উঠলো,
-” শোন, কাউকে কষ্ট দেওয়া ভাল না। I’m the happiest person When I’m with you.”

অভির লাষ্ট কথা শুনে বিদ্যার চোখের জল টপটপ করে পড়তে লাগল। তারপর কান্না কণ্ঠেই বলে উঠলো,
-“No one can Understand my Deep pain.”

-” don’t cry, I am always with you”

পরিস্থিতি অন্য দিকে চলে যাচ্ছে তাই বিদ্যা চট করে প্রসঙ্গ টা চেঞ্জ করে বলল,
-“অভি তুমি বাসায় চলে যাও। আমার কিছু কাজ আছে সেগুলো কমপ্লিট করেই আমি বাসায় চলে যাব। আর হ্যাঁ, বাসায় গিয়ে কিন্ত অবশ্যই কিছু খেয়ে নিবা। কারন সকাল থেকে তুমি কিছু খাওনি।”

অভি বিদ্যার হাতে ছাতা দিয়েই কোন কথা না বলে পিছন দিকে হাটা শুরু করলো। বিদ্যা কিছু না বলে অভির চলে যাওয়া দেখছে।

এমন সময় অভি পিছন ফিরে বলল,
-” বিদ্যা যাই কিছু হয়ে যাকনা কেন, আমি তোমার ঐ হাত ছাড়ছিনা। তোমার যা খুশি তুমি তাই করো। এই অভি কখনো পরিবর্তন হবেনা।”

অভি কথাগুলো বলে ওর গন্তব্য স্থলের দিকে পা বাড়ালো আর বিদ্যা ঠায় হয়ে দাড়িয়ে রইলো রাস্তার পাশে।

♥♥

অভি বাসায় এসে পৌছায় দুপুর একটার দিকে। এসে গোসল সেরে নিতেই কনক এসে অভির রুমে নক করে বলল,
-” অভিদা আসবো?”

অভি শার্টের হাতা ফোল্ড করে পিছন ফিরে দেখল, কনক এসেছে। অভি একটা স্মিত হাসি দিয়ে ওকে রুমে আসতে ইশারা করলো।

কনক রুমে এসেই অভিকে প্রশ্ন করলো,
-” আচ্ছা অভিদা! বিদ্যা, আই মিন বিদ্যা পিসিকে কি আপনি লাভ করেন?”

অভি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
-” বিদ্যাকে কোন আঙ্গেলের দিক থেকে তোমার পিসি মনে হচ্ছে! ও কি তোমার রক্তের সম্পর্ক কেউ, না তোমার বাবা বোন হয়? তাই ওকে পিসি পিসি বলে জাহির করছো? ও তোমার বৌদি হয়। আজ থেকে ওকে বৌদি বলে ডাকবা।”

অভির এমন ঝাড়ি দেওয়া কথায় কনক কিছুটা ভয় পেল সাথে রেগেও গেল প্রচন্ড। মনে মনে বলে উঠলো, আপনি কোন আঙ্গেলে তাকে বৌ বৌ বলছেন? তাকে কি আপনি বিয়ে করেছেন? বিয়েতো আর করেননি?

অভি এবার বিদ্যার দিকে বেশ কঠোর ভাবে তাকালো। কারন অভি কনকের মনের কথা পড়ে ফেলেছে। তাই অভি বেশ রেগে গেল কনকের উপর। অভি কিছুটা জোড় গলায় বলল,
-” Bidda, She is my wife. you understand? I know, you better understand.”

কনক অভির উপর রুষ্ঠ হয়ে বলল,
-” কই আপনিতো কোন দিনও বলেননি আপনি বিবাহিত! তাহলে আজ কেন মিথ্যা বলছেন? আমি আপনার কথা মানছিনা।”

অভি কনকের কথায় আর রাগ না করে বলল,
-” কনক, আজই আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। আন্টিকে কথাটা বলে দিও।”

অভির কথায় কনক চমকে উঠলো। আপনি কোথায় যাচ্ছে! দাদার বিয়ে হওয়ার আগে আপনি কোথাও যেতে পারছেন না। সবাই যেতে দিলেও আমি আপনাকে যেতে দিচ্ছিনা বলে কনক চলে যেতেই অভি ওকে পিছন থেকে ডাক দিল।

কনক থেমে গিয়ে পিছন ফিরে অভির দিকে চাইতেই অভি ওর বুকের একপাশে চাপড় দিয়ে বলল,
-” বিদ্যাকে এই জায়গায় রেখেছি। তাই ফার্দার ওর ব্যাপারে কোন কথা আমাকে বলতে আসবেনা। এখন যাও।”

কনক প্রচন্ড অপমানিত হল অভির কথায়। তাই মাথা নিচু করে ফুসতে ফুসতে রুম ত্যাগ করলো।

কিছুক্ষন পর অভির ডাক পড়ল নিচে খাবার খাওয়ার জন্য। অভি আগেই বুঝতে পারলো, খাবার টেবিলে ওকে কি কি প্রশ্নর সম্মুখীন হতে হবে। অভি সব কিছুর প্রস্তুতি নিয়েই নিচে চলে গেল।

পুরো টেবিল ভর্তি খাবার। সব অভির পছন্দের বাঙ্গালি খাবার। কাবিরের মা মিসেস. শায়লা খুব ভাল রাধেন। ওনার হাতের রান্না কেউ একবার খেলে তার মুখে অনেকদিন পর্যন্ত সেই স্বাধ লেগে থাকবে। অভি এসে চিয়ার টেনে বসে পড়ল।

কনক আর ওর বাবা-মা দু’জনেই রয়েছে। একটু পর কাবিরও এসে যোগ দিন খাবার টেবিলে। অভি চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। এমন সময় কনকই বলে উঠলো,
-” মামুনি জানো তুমি! অভিদা নাকি আজই চলে যাবে।”

অভি সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করলো। অভি আগেই জানত এমন কিছুই হবে। এটা যদি ওর নিজের বাসা হত তাহলে এতক্ষনে টেবিলে একটা খাবারও থাকতোনা। সব খাবার ফ্লোরে গড়াগড়ি খেত।

কাবির অবাক হয়ে বলল,
-” কিরে কোথায় যাবি? আমার বিয়ের আগে তোর কোথাও যেতে হবেনা। আগে বিয়ে হোক তারপরই অন্য কোথাও যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করিস।”

কাবিরের বাবা আর মা দু’জনেই একসাথে বলে উঠলো,
-” আমরা কি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি অভি! তোমার কি সমস্যা হচ্ছে আমাদের বল? আমরা সেটা সুধরে নিব।”

আন্টি আমার ৪টা ফ্রেন্ড আর একটা আন্টি আসছে এখানে কিছুদিন থাকার জন্য। ওরা একটা বাংলোতে উঠেছে। আমাকে তাদের সাথে থাকতে হবে। আসলে কি বলেন তো, ওরা একটু পার্টি আর ড্রিংককে অভ্যস্ত। এই বাসায় তো এগুলো করা সমস্যা। তাছাড়া কনক এখানে রয়েছে। আমি চাচ্ছিনা এখানে ঝামেলা হোক। আমি কাবিরের বিয়ে পর্যন্ত অবশ্যই থাকবো।

অভির এমন কথার উপর আর কেউ কোন কথা বলতে পারলোনা। কাবির শুধু বলল,
-” আজই যাবি?”

অভি খাওয়া থেকে মুখ তুলে বলল,
-” হুম, বিকেলে রওনা দিব।”

কনকই আগে খাওয়া থেকে উঠে ওর রুমে চলে গেল। রুমে এসেই দরজা বন্ধ করেই গায়ের রাগে বিদ্যাকে কতগুলো গালি দিয়ে বলল,
-” আমি ভাল করেই জানি, এই পরিকল্পনা কখনোই অভিদার হতে পারেনা। এগুলো সব ঐ মেয়েরই পরিকল্পনা হবে। ওকে আমি ছাড়বোনা, কখনোই ছাড়বোনা।”

♥♥

বিদ্যা বিকাল ৩টার দিকে বাসায় ফিরলো হাতে একটা মস্ত বড় ব্যাগ নিয়ে। রুমে এসেই সবগুলো ভালভাবে সাবধানে রেখে দিল। তারপর ফ্রেস হয়ে প্রথমে ওর বাবার কাছে গেল। ওর বাবা তখন ঘুমাচ্ছিল তাই বাবাকে বিরক্ত না করে চলে এল রুমে। খুব খুদা লেগেছে কিন্তু হাতে যে অনেকগুলো কাজ রয়েছে সেগুলো আগে করতে হবে।

বিদ্যা ফোনটা বের করে ওর শাশুড়ি মাকে কল দিল। কয়েকদিন যাবত তার সাথে কথা বলা হয়নি। ১ম বারে কল রিসিভ হলোনা তাই আবার কল দিতেই রিসিভ হল। অঞ্জনা দেবী অভিযোগ সুরেই প্রথমে বলে উঠলো,
-” ওখানে মাকে পেয়ে এই মাকে ভুলে গেছিস তাইনা?”

দুঃখিত মা বলে কেঁদে উঠলো বিদ্যা। আমি আপনাকে খুব মিস করি মা।

-” কবে ফিরবি বলতো! ওরা মনে হয় তোকে আর আসতে দিবেনা তাইনা?”

বিদ্যা আর কান্না থামাতে পারলোনা। মা, এরা তো আমায় মাত্র ৬ বছর মানুষ করেছে আর আপনি আমাকে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বুকে আগলে তিলে তিলে বড় করে তুলেছে। তাহলে আমি আপনাকে কেমন করে ভূলে যাব বলেন?

বিদ্যার কথা শুনে অঞ্জনা দেবী ফুপিয়ে কেদে উঠলো। মারে তুই চলে যাওয়ার পর আমার মনে হয়েছে অপু আমার কাছ থেকে সত্যি চলে গেছে। আমার বুকটা খাঁ খাঁ করো মা। কবে আসবি তুই! তোকে ছাড়া কিছু ভাল লাগেনা। কাজের মেয়েটা ভাল করে ভাত রাধতে পারেনা। তাছাড়া রনকের বউও তেমন একটা রান্না করতে পারেনা। মুখে ভাত তুলতে পারিনা। তোর হাতের রান্না খুব মিস করি মা। কবে আসবি আমার কাছে! তোকে ছাড়া আমি বড্ড অসহায়।

বিদ্যাও কাঁদে ওদিকে শাশুড়ীও ওপাশ থেকে বিনয়ের সুরে কাঁদতে থাকে। বিদ্যা বুকের ভিতরের চাপা কষ্টটা এবার বের করেই ফেলল। মা, আমার অপুদাকে চাই। আমার খুব প্রয়োজন তাকে। আচ্ছা মা, অপুদার কি পূর্নজন্ম হতে পারেনা। যদি ওনি আবার আমার কাছে পুনরায় আগের মত ফিরে আসতো!

অঞ্জনা দেবী বিদ্যার কথা শুনে একদম স্থির হয়ে গেল। তিনি ভাবলেন, হয়ত বিদ্যার আবার নতুন করে স্বামী সংসার চাই তাই বিদ্যা ওভাবে অপুর কথার মাধ্যমে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। বৌমা যে তার বদলে গেছে এবার তিনি ভাল করেই বুঝতে পেরেছেন।

মা, মা বলে বিদ্যা কয়েকবার অঞ্জনাকে ডাকতেই অঞ্জনা বলল,
-” তোর কাকি তোর জন্য হরেক রকমের আচার বানিয়ে রেখেছে। সে তো আর জানেনা তুই বাসায় ফিরবিনা।”

মা কাকিকে ফোন দাওতো বলতেই অঞ্জনা বলল,
-” আমার পাশেই অনুরাধা আছে কথা বলবি?”

অনুদি যে বিদ্যা পছন্দ করেনা সেটা বিদ্যা খুব ভাল করেই জানে। কিছু বলতে যাবে এমন সময় অনুরাধা বলে উঠলো,
-” কিরে কেমন আছিস? একটাকে তো খেয়েছিস, ওখানে তোর বাবা-মা তোকে ভোগ দেওয়ার জন্য কি এখনো কাউকে ব্যবস্থা করেনি?”

এমন কথার কি জবাব দিবে সেটা বিদ্যা ভেবে পেলোনা। পরীক্ষা আর ঝগড়ার সময় মেইন মেইন পয়েন্ট গুলা মনে পড়েনা। সে রকম অবস্থা হয়েছে বিদ্যার।

অনুর কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিল ওর মা। তারপর বলল,
-“তুই কোনদিনও শোধরাবিনা! বিদ্যা কিছু মনে করিসনা মা! তুই কেমন আছিস?”

-” ভাল আছি কাকি। আপনি কেমন আছেন।”

-” এই আছি একরকম, তোর কাকাই একটু অসুস্থ। কবে আসবি বলতো! তোর কাকাইকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে তার অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। জলদি আয়তো!”

-“সেকি কাকীমা, আমার অপেক্ষায় থাকলে চলবে! বাসায় রনক আছেনা! ওকে নিয়ে যাবে?”

ওর আর সময় আছে নাকি! ওর বউ যা, রনকের সাথে তোর বিয়ে হলে ভালয় হত বলতেই রনকের বউ এসে উচ্চ কণ্ঠে বলে উঠলো,
-” বাড়ীর মানুষ এত আস্কারা না দিলে এমনি কেউ অন্যর স্বামীর উপর চোখ ফেলে! তাই তো ভাবি, স্বামী আমার ওনার হুকুমের গোলাম হয় কিভাবে! ওনাকে সব কাজে কেন ডাকে? এতই যখন পিরিতী, তখন আমাকে কেন এই বাড়ীতে নিয়ে এল? দেখছি এই বাড়ীটা শত্রুতে ভরে গেছে। আমার থাকার আর জো রইলোনা।”

রনকের বউয়ে কথা শুনে অনুরাধা তাতে ঘি ঢালল। তেনার অভ্যাসই অন্যর জিনিসের প্রতি নজর দেওয়া। হুমহ্ বিচার বলেও তো কিছু আছে। ধর্মে সইলোনা। যে অন্যর জিনিস কেড়ে নেয় তার জিনিস সয়ং ভগবান তুলে নেয়। তেনারও তেমন বিচার হইছে। জেঠি ভাল মানুষ বলে ওকে বাসায় রেখে মানুষ করেছে। তাছাড়া কোথাকার জল কোথায় যেত।

বিদ্যা আর সহ্য করতে পারলোনা। চট করে ফোনটা কেটে দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। ২৫ টা বছর ধরে এমন কথা সে শুনে আসছে। আমি কি করেছি! কার পাতের ভাত কেড়ে নিয়েছি যে আমাকে এত কথা শুনানো হয়! আর পারছিনা প্রভু, আমাকে নিয়ে নাও।
বিদ্যা ওভাবেই পরে পরে অনেকক্ষন ধরে কাঁদল।

তারপর চোখের জল মুছে বিজয়ের মামা সুধারামকে কল দিল বিদ্যা। উনি দ্রুত ফোন রিসিভ করে বলল,
-” মা তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম। তোমার ৭লাখ টাকা আমি পেয়েছি। তুমি আমাকে যা বলবে আমি তাই করবো। ”

-“মামা আপনি টাকার বিনিময়ে কাজ করতেন তা আমি জানতামনা। বিজয় দা আপনার কাছে আছে?”

সুধারাম হেসে উঠে বলল,
-” মারে, যার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আছে তার থেকেই আমি টাকা নেই। তুমি হয়তো জানোনা আমি একটা আশ্রম চালায়। সেখানে অনেক টাকা লাগে মা। তোমার এই টাকাতো সামান্য। এর থেকেও অনেক টাকা আমি আমার কাষ্টমারদের থেকে নিয়ে ওদের কাজ করি।”

-” বিজয়দাকে ফোনটা একটু দেনতো! ওনার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।”

সুধারাম ওর ভাগিনাকে ফোন দিয়ে বলল,
-” অপুর বৌ, কথা বল।”

বিজয় ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,
-” বৌদি! এতক্ষন পর খোঁজ নিলেন। কেমন আছেন?”

-“আমি আপনার কত ছোট তবুও এই বৌদি বলা ছাড়বেননা! বিদ্যা বলে ডাকবেন। যাক সে কথা। ফোন বন্ধ কেন ছিল! আর আপনাকে যে কাজ করতে বলেছিলাম সেটা কি করেছেন?”

-” জ্বী বৌদি, সব কাজ শেষ। আপনি শুধু রাতে সবকিছু প্রস্তত করে রাখবেন। বাঁকিটা মামা সব করে দিবেন। আপনি যা চাচ্ছেন তাই হবে। শুধু মনকে শক্ত করে রাখবেন। তাহলে কোন কাজ ভুল হবেনা।”

আচ্ছা বলে বিদ্যা ফোনটা কেটে দিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বের হয়ে এসে নিচে গেল। তারপর খাবার খেয়ে অপেক্ষা করতে লাগল কখন রাতটা গভীর হবে।

♥♥

অভি সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওর সমস্ত জিনিসপত্র গোছগাছ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। কাবির ওর সাথে গেল। কাবিরের মা-বাবা সহ কনক খুব একটা খুশি হলনা অভির ডিসিশনে। কিন্তু অভির এতে যায় আসেনা। ওকে এখানে থাকা আর চলবেনা। অভি চায়না ওর জন্য রিয়ার উপর কোন প্রভাব পড়ুক।

পাক্কি আড়াই ঘন্টা পথ পেরিয়ে অভি ওর ফ্রেন্ডদের বাসায় চলে আসলো। ডাইভার সব মালপত্র নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। এমন সময় সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ৫ জন কাবিরের সামনে এল।

হাই রিক বলে অভি দৌড়ে রিকের কাছে যেয়েই ওকে জড়িয়ে ধরল। রিকও খুশি হয়ে বলল,
-” অভি কেমন আছিস? এতদিন পর আমাদের মনে পড়ল!”

তুই একটু বেশি কথা বলিস বুদ্ধ কোথাকার। অভি একটু হেসে কাবিরকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,
-“ও কাবির, আমাদের বাসায় যে ছিলনা সে। কাবির, এ হল রিক, ইনা, জশ, পারিজা আর ওটা আমাদের টুইংকেল আন্টি। ইনার মম……।”

কাবির সবাইকে নমস্কার বলল। তারপর বলল,
-” আপনাদের সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে বলবেন। এই বান্দা সবসময় হাজির হবে আপনাদের সেবায়।”

কাবির আর ভিতরে ঢুকলোনা। ওখানেই অভিকে জড়িয়ে ধরে বাই বলে গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রাস্তার মধ্য কনক ফোন দিয়ে অভির ব্যাপারে কিছু বলতেই কাবির উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
-” চুপপপ, এমন কিছু ব্যবহার দেখাইছিস বলেই অভি আজ আমাদের বাসা থেকে চলে গেল। আমি ওদের বাসায় ৮ বছর থেকেছি কিন্তু ও আমাদের বাসায় ১ মাসও টিকতে পারলোনা তোদের ব্যবহারে। তোরা মানুষ না অন্যকিছু! ফোন রাখ…..।”
কাবির কথাগুলো বলেই কল কেটে দিয়ে মন খারাপ করে ড্রাইভ করতে লাগলো।

এদিকে পারিজা দৌড়ে এসে অভিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” কেমন আছিস বলতো! তোর ওয়াইফের খবর কি?”

-“ছাড় আগে আমায়। আমার আশপাশেও ঘেষার ট্রাই করবিনা। কারন এটা আমার ওয়াইফের পছন্দ না। সব কিছু গোছাইছিস তোরা?”

সব কাজ শেষ। অভি তুমি আমার সাথে এস তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে বলে ইনার মা টুইংকেল দেবী অভিকে নিয়ে চলে গেল।

♥♥

গভীর রাত। ঘড়ির কাটা একটা ছুই ছুই। বিদ্যা ওর সামনে একটা খাঁজকাটা মাঝারি আকারের সাদা ধবধবে পাথর রেখেছে। তারপাশে ধুতরা ফুল, অপুর আর অভির ব্যবহৃত কাপড়। বিদ্যা এই জন্যই অভির কাছে গিয়েছিল। ৫টা মোমবাতি সহ আরো অনেক কিছু সামনে রেখেছে। সুধারাম বাবু যা যা বলেছে সব কিছু রেডী করেছে বিদ্যা। এখন শুধু অপুকে কল দেওয়া।

বিদ্যা আগে সুধারামকে কল দিল, আরো একবার সব কিছু ভালভাবে চর্চা করার জন্য সুধারামকে কল দেওয়া আর কি। হ্যালো মামা!

-” হ্যা মা, আমি সব কিছু রেডী করেছি। তুমি এখুনি ঐ ছেলেকে কল দাও। ও যদি আমাদের অপু হয়ে থাকে তাহলে পাথরের রং পরিবর্তন হবে। আর যদি না হয় তাহলে ওর আশা ছেড়ে দিয়ে এখানে ফিরে আসবে।”

-“ওকে মামা।”

আর শোন, মহানির্বান তন্ত্র, কামাখ্যা তন্ত্র, নায়িকা তন্ত্র ও শিব তন্ত্র ; এই চারটির মাধ্যমে কাজটা শুরু করতে হবে। মনে রাখবে, সংকল্প পুরুন করার জন্য শুধু মাত্র মনের সংযোগ করা হয় তখন সেটা হয়ে ওঠে মন্ত্র চর্চা। মন্ত্র চর্চার জন্য মন দরকার। একদম শান্ত শিষ্ট মন। বিদ্বেষন উচ্চাটন, স্তম্ভন, মারন এই ব্লাক ম্যাজিক দ্বারাই আজ আমরা পরমাত্মা ও আত্মা দুটোকেই ডাকবো। যাও কাজে লেগে পরো। তোমার সকল মনের বাসনা পূর্ন হোক এটাই আমার চাওয়া।

বিদ্যা এবার কল কেটে দিয়ে অভিকে কল দিল। অভি তখন রুমে সুয়ে ছিল। বিদ্যার কল আসতেই ও খুশি হয়ে কলটা রিসিভ করেই বলল,
-” বাহ্, ম্যাডামের আমার উপর এত দয়া হল কবে থেকে? আমি কি স্বপ্ন দেখছি! তা এত রাতে কিসের তলব হুম! আমার বিদ্যা কি করছে?”

বিদ্যা একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে অভিকে একটা কিস করে বলল,
-” অভি তোমার জন্য একটা গিফট্ রেখে আসছিলাম তোমার আলমারীর ভিতরে। সেটা কি তুমি দেখেছ?”

-” আলমারীতে?”

-” হুম, সেটা কি তুমি দেখনি?”

ওয়েট, আমি এখুনি আসছি বলেই অভি ফোনটা রেখে ভ্যানিস হয়ে গেল। তারপর কাবিরদের বাসায় উপস্থিত হয়েই সেই রুমে গিয়ে আলমারী চেক করতেই দেখল, একটা গিফট্ পেপারে মোড়ানো বক্স। অভি সেটা নিয়েই ওর রুমে ফিরে এসে ফোনটা কানে ধরে বিদ্যাকে বলল,
-” লাল বক্স?”

-” হুম, আমি জানি তুমি ওটা খোলনি। ওটা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে খুলবে। তারপর নিজের চেহারা দেখবে। তোমার অনুভুতি কেমন হচ্ছে সেটা আয়নায় দেখতে পাবে।”

-” ওকে বলে অভি আয়নার সামনে গিয়ে বক্সটা খুলতেই দেখলো, অনেক পুরনো আমলের একটা সিঁদুর দানী। দানী ভর্তি সিঁদুর।”

বিদ্যা তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও বলে সিঁদুর দানীতে হাত দিতেই অভির পুরো শরীরে ইলেকট্রিক শর্ক খেল। অভি ছিটকে গিয়ে একটা দেয়ালের সাথে আছাড় খেয়ে পড়লো। অভির হাতের ছোয়া পেয়ে সমস্ত সিঁদুর আগুনে পরিনিত হয়েছে আর ওগুলো এসে একবারে অভিকে এ্যার্টাক করে। আর এদিকে বিদ্যা ও সুধারাম ওদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। অভির শরীরে আগুন ধরে যায়। বিদ্যা অভিকে মানুষ ভেবে এই কাজটা করেছে কিন্তু বিদ্যা জানতোনা অভি কোন সাধারন মানুষ নয়। তাই এর বিরূপ প্রভাব পড়ল অভির উপর।

[] চলবে……[]

সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/%e2%80%8dsidur-suddhi-23/

………………………………..
লেখিকা, নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha

চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here