লীলাবালি🌺 #পর্ব_১৩

0
758

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_১৩
আফনান লারা
.
এই গ্রামের নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে যে জায়গাটা একেবারেই নির্জন ঠিক সেই যায়গায় আস্তানা পেতেছে এক বিশাল জলদস্যুর দল।
পঞ্চাশ জনের দলটা এখানের স্থায়ী বাসিন্দা।তবে মাঝে মাঝে কাজের কারণে অন্য স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ালেও ঘুরেফিরে এই জায়গাতেই চলে আসে তারা।দলের প্রধান আমির তিয়াজি।তার বংশদর মিলেই পঞ্চাশ জন হয়েছে।আমির তিয়াজির একমাত্র নাতি রাখাল তিয়াজি।কুসুমের যখন পাঁচ বছর বয়স তখন আমির তিয়াজি প্রস্তাব রাখে কুসুমের সাথে রাখালের বিয়ের ব্যাপারে।তাদের রীতিতে মেয়েদের এমন বয়সেই বিয়ে হয়।কুসুম বাচ্চা বলে একমাত্র এই বাহানা দিয়ে কুসুমের বাবা প্রস্তাব প্রত্যাখান করে দিয়েছিলেন।আসল কারণ হলো জলদস্যুদের সাথে সম্পর্ক গড়তে চাননা তিনি।
কিন্তু এটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো।শুরু হলো তাদের অত্যাচার।আমির তিয়াজির মেয়ে সারাদিন কুসুমদের বাড়িতে আসতো ওকে দেখার জন্য।শুধু তাই নয়।তাদের দশ বছর বয়সী রাখালও আসতো সঙ্গে সঙ্গে।বিষয়টা কেউই ভালো চোখে দেখেনি।গুরুজনেরা বুদ্ধি দিলো কুসুমকে যেন দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়।কারণ আমির তিয়াজি অনেক মারাত্নক লোক।তার থেকে রেহায় পাওয়া মুখের কথা না।
এই বুদ্ধিটা মানতে চাইলোনা কুসুমের বাবা।যার কারণে তিনি চুপ রয়ে গেলেন।কিন্তু রাখাল একদিন কুসুমকে একা পেয়ে ওর হাত ধরে ওদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া ধরেছিলো জোর করে টেনে হিঁচড়ে।কুসুমের দাদি ছুটে এসে ওকে আটকালেন।ঘটনাটা কুসুমের বাবার কানে আসতেই তিনি সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলেন কুসুমকে ভারতে পাঠিয়ে দেবেন ওর নানির কাছে।সেবার কুসুম চলে গিয়েছিল রাতের অন্ধকারে।সবার চোখের আড়ালে।
এরপর রাখালের পরিবার তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওকে কোথাও পায়নি।তবে তারা হাল ছাড়েনি।কয়েক বছর পর অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিল অন্য কাজে।সেসময়ে কুসুমের ১৩বছর হয়েছিল।তাই ওর পরিবার ওকে দেশে ফিরিয়ে আনে আমির তিয়াজির পরিবারের অনুপস্থিতিতে।
যে কোনে সময় তারা আবার ফিরে আসতে পারে সেই ভয়ে কুসুমের বাবা এখনও রাতে ভাল ঘুমাতে পারেননা।
কুসুমের বিয়ের কথা শুনে মনে শান্তি লাগলেও বিয়েটা যখন ভেঙ্গে গেলো তখন ভয় করলো।অনেকেই বলেছে আমির তিয়াজি এত পুরনো কথা মনে রাখবেনা।কিন্তু তাদের ধারণা সম্পূর্নটাই ভুল।সেদিন বাজারে মাফলার পরিহিত রাখালকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাওতে দেখে কুসুমের বাবার বুকে ব্যাথাটা খুব বেড়ে গেছে।কিছুই জানতে দেননি কাউকে।শুধু কুসুমের মাকে বিষয়টা জানিয়েছেন।স্বামীর অসুস্থতা তার নজরে সবার আগে পড়েছে।বাধ্য হয়ে তিনি কারণ বললেন।
ওদের মধ্যে যে আগুন জ্বলছে তা নেভানোর জন্য তারা একদিন না একদিন বিপদ ডেকে আনবেই।
যে করেই হোক কুসুমের জীবন বাঁচাতে হবে।তাই দ্রুত তিনি ওকে ভারতে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন।
কুসুম যে তার বাড়িতে এটা মনে হয় রাখালের পরিবার এখনও জানেনা।জানলে মহা সর্বনাশ!!আর ধরে রাখা যাবেনা কুসুমকে।
এমন বয়সে,এমন রুপে ওকে দেখলে ওদের হাত থেকে বাঁচানো যাবেনা কিছুতেই।
এসব ভেবে কুসুমের বাবার শরীর খারাপ হয়ে গেছে কদিন ধরে।রাখালের ওমন তীক্ষ্ণ নজর দেখে তার বুকের ভেতর কাঁপছে।এমন একটা হিংস্র মানুষের সাথে তিনি মরে গেলেও তার ওমন ফুটফুটে মেয়েটাকে তুলে দেবেননা।

কুসুম এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা।তাকে বলা হয়েছে বিশেষ একটা কারণে ভারতে পাঠানো হয়েছিল।এই কারণটা হিসেবে ওরে মা বলেছিলেন তাদের আর্থিক সমস্যা। কিন্তু রাখালের ব্যাপারে তারা ওকে কিছুই জানায়নি।জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না।কি দরকার মেয়ের মনে ভয় ঢুকানোর??
কুসুম মাঝে মাঝে ভাবে মা বাবা কেমন রক্ষণশীল ব্যবহার করে সবসময়।
কলির জন্য তো এমন করেনা যতটা তার জন্য করে।দাদি মাঝে মাঝে বেড়াতে আসলে তার কাছ এই প্রশ্ন সে করে। তিনি বলেন কুসুম দেখতে সুন্দর এটাই আসল কারণ।দেখতে সুন্দর মেয়েদের নিয়ে তাদের পরিবারের চিন্তা বেশি থাকে।
কুসুম আর জিজ্ঞেস করেনা এ ব্যাপারে।।
—–
পড়ার টেবিলে বই সব ব্যাগ থেকে বের করে রেখে একটা বই খুললো জুথি।কবিতার বই।নাম অগ্নিবীণা।কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টানোর পর দেখলো সেখানে শুকনো গোলাপ একটা।
হা করে চেয়ে থেকে গোলাপটা হাতে নিলো সে।এটা এখানে আসলো কি করে??গোলাপের নিচে একটা চিরকুট। তাতে লেখা-‘আমার কথা আমি রাখলাম।গোলাপ আপনাকে দিয়েই ছাড়লাম।আর কোনো অভিযোগ করতে পারবেননা আপনি’

এই কান্ড কখন ঘটাইলো?
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ফোন হাতে নিলো জুথি।অর্ণবকে মেসেজ করে বললো,’মরা ফুল দিয়ে কি করবো আমি?’

অর্ণব নেটে ছিলনা।কয়েক মিনিট পর নেটে এসে ওর মেসেজ দেখে লিখলো,’অর্নব কাউকে ফুল দেয়না।তাও নিজের পকেট খরচে।ঐ ফুল ভার্সিটি কর্তৃক ‘

-“তাই নাকি?তো আজ ফটোকপির টাকা নিলেননা কেন?’

অর্ণব থতমত খেয়ে চুপ করে থাকলো।কোনো মেসেজ করলোনা।জুথি মিটমিট করে হাসছে শুধু।সেসময়ে মায়ের ফোন আসায় রিসিভ করে বিছানায় এসে বসলো সে।মা ওর খোঁজখবর নিলেন।বললেন তিনি আসতে পারেন খুব শীঘ্রই।হয়ত ঈদের পরে হবে হয়তবা ঈদের আগে।ঠিক করে বলতে পারছেননা।

অর্ণব ব্যাগ থেকে সব শার্ট বের করে আলমারিতে রাখছিল।হঠাৎ একটা শার্টের ভেতর থেকে ঝুনঝুন আওয়াজ করে সেই ঝিনুকের মালাটা নিচে পড়ে গেলো।অর্ণব নিচে বসে সেটা হাতে তুলে দেখলো একটা ঝিনুক ভেঙ্গে গেছে।যার কারণে অটোমেটিক পুরো মালাটা ছিন্ন হয়ে গেলো।অর্ণব ফ্লোরে গোল হয়ে বসে সবগুলো ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে একটা বক্সে রেখে সুই সুতা খোঁজা শুরু করে দিয়েছে।কিন্তু কোথাও সে পেলোনা সুই সুতা।পরে ভাবলো কাল আসার সময় সুই সুতা কিনে আনবে।
—–
কুসুম অর্ণব লেখার চেষ্টা করছিল নদীর ধারের সেই বটগাছটার নিচে বসে।ঠিক সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা করে সে সফল হলো কলির মতন করে অর্ণব লিখতে।তার খুশি আর ধরেনা।
হঠাৎ পায়ে কিসের যেন কামড় লেগেছে বলে কাগজ ফেলে পা খাঁমছে ধরলো কুসুম।চিকন করে একটা পোকা।কামড় বসিয়ে দিয়েছে ।কুসুম পোকাটাকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলো।সেই জায়গা থেকে উঠে সামনে না তাকিয়ে ছুটতে গিয়ে একটা ছেলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে গেলো সে।হাঁপাতে হাঁপাতে মাথা তুলে তাকালো উপরে।তার সামনে মাফলার পরা একটা ছেলে।পরনে লুঙ্গি। গায়ে মোটা শালের কালো চাদর।আর চিকন মাফলার দিয়ে অর্ধেক মুখ ঢাকা।কুসুম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।ছেলেটা নিচে বসে খপ করে কুসুমের পা ধরে দেখতে লাগতেই কুসুম চেঁচিয়ে পা সরিয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করতে করতে বললো,’আপনি কে?আমার পা ধরছেন কেন?কেউ আছে বাঁচাও!’

ছেলেটা কুসুমের পায়ে নিজের কোমড়ে থাকা একটা তীর নিয়ে ঢুকিয়ে দিলো হুট করে।কুসুম আরও জোরে চিৎকার করলো।কিন্তু কেউই শুনলোনা।এদিকটায় এ সময়ে কেউ আসেনা।ছেলেটা ওর পা টিপে ধরে কিছু রক্ত বের করে তার থেকে তীরটা ছুটিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।কুসুম নিজের পা ধরে দেখে আবার ছেলেটার দিকে তাকালো।ছেলেটা কুসুমকে দেখতে দেখতে চলে গেছে।কুসুমের সারা শরীর কাঁপছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো তাই বুঝে উঠতে পারলোনা সে।১০সেকেন্ডের ব্যবধানে আর কোথাও ছেলেটাকে দেখতে পেলোনা কুসুম।
কুসুম ভেবেছিল ছেলেটা হয়ত ওর উপকার করেছে।কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ ওর ভুল ধারণা।পোকার দংশন থেকে বাঁচাতে সে তীর ঢোকায়নি ওর পায়ে।বরং তীর ঢুকিয়েছিল বিষ ওর শরীরে দেওয়ার জন্য।পায়ের অসহ্যকর যন্ত্রনায় ছটফট করছে কুসুম। চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে।
কলি এদিকে আসতেছিল কুসুমকে বাড়ি নিয়ে যেতে।মা বলোছিলেন ওকে যেন একা না ছাড়ে।কুসুমকে এখানে বসে কাঁদতে দেখে সে দ্রুত হেঁটে আসলো ওর কাছে।কুসুমের পা কালো হয়ে যেতে দেখে সেও গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলো।কেউ ওর আওয়াজ শুনলোনা।শেষে কুসুমকে রেখে সে বাড়ির দিকে ছুটলো বাবাকে ডেকে আনতে।
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here