#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪০
আফনান লারা
.
মৃদুল বাসা থেকে বের হবার পর অর্ণবকে ফোন দিয়েছে।ওর থেকে বাসা ভাঁড়ার কথাশুনে বললো এত ইজি হবেনা তারপরও খুঁজে দেখবে।তবে একদিনে পাওয়া একেবারেই সম্ভব না।আপাতত হোটেলে দু তিনদিন থাকতে হবে।
অর্ণব মানিব্যাগ বের করে টাকা গুনছে।কুসুম একটু কাছে এসে বললো,”আমি না কাল রাত থেকে কিছু খাইনি।এখন
খিধে পেয়েছে।’
অর্ণব মাথা তুলে অবাক হয়ে তাকালো।তারপর মানিব্যাগ পকেটে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’দুপুর আড়াইটা বাজে, তুমি এখন পর্যন্ত কিছুই খাওনি?’
-‘না’
অর্ণব চোখ রাঙিয়ে যেতে যেতে বললো,’দরজা আটকাও।আমি খাবার নিয়ে আসি ‘
কুসুম ছুটে এসে বললো,’আমি সহ যাবো।কখন আসবেন?’
-“হোটেলের নিচ তলায় যাচ্ছি।তোমায় যেতে হবেনা।বসে থাকো’
—
দরজা লাগিয়ে কুসুম নিজের আঁচলটা ধরে দেখলো।মা বলতেন স্বামীরা যখন স্ত্রীর আঁচলে মুখ মোছে সেটা একজন স্ত্রীর কাছে দারণ অনুভূতি হয়ে ফুটে ওঠে।মায়ের কথাটা আজ সে বাস্তবে দেখে বুঝতে পারলো,অনুভব করে নিতে পারলো।আঁচলটাকে মুঠো করে ধরে হাসছে সে।
অর্ণব হোটেলের নিচে এসে পড়লো বিপাকে।এই মেয়ে কি খাবে?জিজ্ঞেস করে আসা উচিত ছিল।এত বড় হোটেল অথচ একটা লিফট নেই।এখন আবার সেখানে যেতে হবে।একেবারে পাঁচ তলা!
আচ্ছা ও কি ফোন এনেছে?
বুদ্ধি করে কুসুমের নাম্বারে কল করে দেখলো সে।
রিং হচ্ছে।অনেকক্ষণ যাবত রিং হবার পর কুসুম রিসিভ করেছে।
-‘এতক্ষণ কই ছিলে?যাই হোক ভাল করেছো ফোন এনে, এবার বলো কি খাবে?আমি তো জানিনা তুমি কি খাও’
-“আপনি যেটা খাবেন’
-“আমি যদি কাঁচা মাছ খাই সেটাও তুমি খাবে?বোকার মতন কথা।মাছ খাবে নাকি মুরগী?যেটা বলবে সেটা কিনে আনবো ‘
-‘ইলিশ মাছ খাবো আর সাদা ভাত।’
—
খাবারের প্যাকেট নিয়ে অর্ণব আবারও হাঁটা ধরেছে।হাঁটতে তার কোনো সমস্যা হয়না কোনোদিনও।বরং হাঁটতে ভালোই লাগে।কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠতে এত বেশি খারাপ লাগা কাজ করে য়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার নাম শুনলে ওর অন্য উপায়ের পেছনে দৌড়াতে ইচ্ছে হয়।
রুমে ফিরে কুসুমের হাতে খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে সে।শুয়ে শুয়ে বললো,’সিঁড়ি দিয়ে ওঠার কষ্টের অনুভবতা আমার বৃদ্ধকালে আসার আগে জোয়ানকালেই এসে পড়েছে।পা শেষ!প্রচণ্ড ব্যাথা!! ‘
কথাটা শেষ করার দু মিনিটের মাথায় সে টের পেলো দুটো নরম হাতের ছোঁয়া পায়ের উপর।
মাথা তুলে চেয়ে দেখলো কুসুম ওর পা টিপছে।
এক ঝটকায় পিছিয়ে গেলো অর্ণব।চোখ বড় করে বললো,’এ্যাই তোমায় কে বলেছে পায়ে হাত দিতে?’
-“ব্যাথা করে যে বললেন, তাই’
-“না না।লাগবেনা, আমার পা ঠিক আছে এমনিতেই’
-“সমস্যা নেই।দিন আমি সুন্দর করে মালিশ করে দিলে ব্যাথা চলে যাবে’
-“তোমার না খিধে পেয়েছে?যাও খেতে বসো।পায়ে হাত দিবেনা একদম ‘
অর্ণব সোজা হয়ে বসে পড়লো।কুসুম হঠাৎ এমনটা করবে সে কল্পনাও করতে পারেনি।একটুর জন্য দম আটকে ছিল ওর।কুসুম খাবারের একটা প্যাকেট খুলে গোল হয়ে বসে বললো,’আপনি আমার সাথে খাবেননা?’
-“পরে।তুমি খাও’
সে খাওয়া শেষ করে যখন অর্ণবের দিকে আরও একবার তাকালো দেখতে পেলো সে হাতের উল্টো পিঠ কপালের উপর রেখে ঘুমায়।
বিছানা ছেড়ে নেমে হাত ধুয়ে এসে ওর পায়ের কাছে বসে আস্তে করে পা টিপতে লাগলো সে।
সাধারণত যার পা টিপা হয় তার তৃপ্তি পাবার কথা অথচ তৃপ্তি পাচ্ছিল কুসুম।মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বড়ই স্নেহের সাথে পা টিপে যাচ্ছে সে।
অর্ণব ঘুমের ঘোরে টের পেয়েছিল তার পায়ে কেউ হাত লাগিয়েছে।বিকেলে চোখ খোলার পর পায়ের আশেপাশেও কুসুমকে সে পেলোনা।কুসুম জানালার গ্রিল ধরে নিচে তাকিয়ে দেখছিল।চোখ ডলে উঠে দাঁড়িয়ে সে জিজ্ঞেস করলো কুসুম কি পা টিপেছিল?
কুসুম মাথা নাড়িয়ে বললো,’না তো’
-‘ওহ!আচ্ছা তুমি থাকো।আমি আমার মেস থেকে ঘুরে আসি’
-‘কখন আসবেন?আপনি তো দুপুরের খাবারও খাননি’
-“ওটা থাকুক।আমি ঢাকায় আসলে দুপুরে চেয়েও খেতে পারিনা।অনেক সময় ইচ্ছেই করেনা।এগুলো থাকুক।’
-“কখন আসবেন?’
অর্ণব কিছু না বলেই বেরিয়ে গেছে।সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অনেক ভেবে দেখলো।
এটা তো বাসা নয়,এটা হোটেল।কুসুমকে একা রাখা কি ঠিক হবে?
যখন সে সিদ্ধান্তে আসলো এটা ঠিক হবেনা তখব চেয়ে দেখলো সে নিচ তলায়।আবার উপরে কে যাবে?কোমড়ে হাত রেখে সিঁড়ি বাইতে গিয়ে ফোন বের করে কল করলো কুসুমকে।
-‘হ্যালো কুুসুম।দরজা লক করে জলদি নিচে চলে আসো, আমি অপেক্ষা করছি’
-“কি?কেন?’
-‘যেটা বললাম করো’
-“আমি তো তৈরি না’
-“যে শাড়ীটা পরা আছে ওটাই যথেষ্ট। নিচে আসো আমার পক্ষে পাঁচ তলায় এখন উঠা পসিবল না।মরে যাব আর একবার উঠতে গেলে’
কুসুম দরজাটা বাহিরে দিয়ে আটকে চাবি ঘুরিয়ে লক করে ছুটলো।অর্ণবের কার্যকলাপে আজ সে বারবার অবাক হচ্ছে।সে তাকে একা ছাড়তে চায়না বলে এখন বুঝি ডেকে পাঠালো?
এই মানুষটা প্রথমে না না করলেও পরে ঠিক মেনে যায়।
কয়েকটা সিঁড়ি নামার পর কুসুম হঠাৎ থেমে গেলো।
“মেনে যায় মানে সব বাধ্য হয়ে করছেন আর আমি খুশি হয়ে তাল মেলাই?ছিঃ!এতদিন কেন ভাবলাম না!’
—
অর্ণব দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কুসুমের।বারবার হাতের ঘড়ি দেখছে আর বিল্ডিংয়ের দিকে তাকাচ্ছে।
ওর সামনে বিশাল ব্যস্ত রাস্তা,প্রাইভেট কার,ট্যাক্সি,রিকশাতে জট বেঁধে আছে।তার ভেতর জ্যামে থেকেও যানবাহন গুলো ক্যাঁচপ্যাঁচ করে শব্দদূষণ করতে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সেসময়ে কুসুমের কল দেখে সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে বললো,’কই তুমি?কল করলে কেন?’
-‘আমি আসছিনা।আপনি যান।আমি একা থাকতে পারবো’
-‘মানেহ!একা থাকতে পারবে নাকি পারবেনা সেটা আমি বুঝবো,তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি।জলদি নামো।সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর তুমি এত সময় পর এসে বলছো আসবেনা?’
“আপনি যান।আমি ঘুমাবো”
“না আমি যাবোনা।আচ্ছা তুমি কি চাইছো আমি পায়ের ব্যাথা নিয়ে পাঁচ তলায় উঠতাম?’
“ঠিক আছে আসছি”
কুসুম রুম অবধি চলে গিয়েছিল।অর্ণবের কথা শুনে আবারও ছুটলো।নিচে নেমে মাথা নিচু করে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো সে।
অর্ণব কোমড়ে হাত রেখে দেখছিল ওকে তারপর এক ধমক দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে।কুসুম আঁচল মাথায় টেনেটুনে বললো,’আমরা কোথায় যাই?’
-‘ঘুরতে’
—-
মৃদুল আজ বিকেলে চায়ের আড্ডাতে ছিল।চা খেতে খেতে রেসাল্ট কবে আসবে, কেমন আসবে তা নিয়ে আলোচনা করছিল সবাই মিলে।চায়ে সবেমাত্র এক চুমুক দিয়েছিল তখনই কল আসলো জুথির ভাই ফরহাদের।সে জানালো জুথি নাকি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেছে।যাবার সময় নিজের জমানো সব টাকাও নিয়ে গেছে।
মৃদুল বললো,’আমার নাম্বার কই পেলে?’
-‘মৃদুল সোহিব কোচিং সেন্টার”নামের একটা কার্ড থেকে।এই কার্ডটা জুথি বুবুর রুমে পেয়ে নাম দেখে চিনেছি আমি’
কল কেটে ফরহাদের কথায় মৃদুল প্রথমে হাসলো তারপর জুথিকে কল করতে করতে চায়ের কাপ রেখে হাঁটা ধরেছে যেখানে জুথিকে পাওয়া যাবে সেই গন্তব্যের দিকে।
চলবে♥