“দিয়ার সাথে তুই ছিঃ ছিঃ আমার বলতেও লজ্জা করছে।তুই দিয়ার সাথে এইটা কিভাবে করতে পারলি।দিয়া না তোর বোন হয়।”
মামির কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।তখনি হিয়া এসে বলল
“আম্মু কি হয়েছে?নেহাল দিয়ার সাথে কি করেছে?”
দিয়া কাঁদোকাঁদো ভাব নিয়ে বলল “আপু নেহাল ভাইয়া আমার সাথে..”
বলেই কান্না করে দিলো।দিয়ার কথা শুনে আমি কিছু বলল তার আগেই হিয়া আমাকে থাপ্পড় দিয়ে দেয়।
ফোনের রিংটোনে ঘুমটা ভেঙে গেল।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নিলয় ভাইয়া কল দিয়েছে।কলটা রিসিভ করতেই ভাইয়া বলল
“নেহাল তুই কখন আসবি।বাসে উঠেছিস?”
“না ভাইয়া।আজ রাতের বাস।আসতে আসতে আগামীকাল ভোর হবে মনে হয়।”
“আচ্ছা শুন বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু তোর।”
“আমার মনে আছে সেটা।”
“আচ্ছা তাহলে ঠিকভাবে দেখে শুনে আছিস।”
আমি ফোনটা রেখে দিয়ে উঠে বসলাম।আর দশদিন পরেই ভাইয়ার বিয়ে।সে জন্যই বাসায় যাবো।না হলে বাসায় যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না।
ভাবছি সেই দিন যদি দিয়া আমার সাথে ওমন না করতো তাহলে আমি আজ হিয়ার সাথে থাকতাম।কিন্তু ওই দিনের সেই ঘটনার পর থেকে জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেছে।
সব কিছু গুছিয়ে রাতে বাসে বসলাম ঢাকাতে যাওয়ার জন্য মানে আমাদের বাসায় যাওয়ার জন্য।প্রায় দুই বছর পর বাসায় যাচ্ছি।
সেই দিন হিয়া থাপ্পড় দিয়ে বলেছিল
“তুই এখনি আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে যা।আমি যেনো তোকে আর আমাদের বাসায় না দেখি।”
হিয়ার কথায় সেই দিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।যার জন্য আমি মামার বাসায় যেতাম সে আমাকে আর সেই বাসায় যেতে না বলছে।মামি বা হিয়া কেউ আমার কথাটা শুনার প্রয়োজন মনে করে নি।মামার বাসা থেকে বেরিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসলাম।বাসায় আসতেই আম্মু ঠাস করে গালে থাপ্পড় মেরে বলল
“তোর মত অমানুষকে কেনো যে জন্ম দিয়ে ছিলাম।জন্ম হওয়ার সাথেসাথেই মেরে ফেলা দরকার ছিল।ছিঃ কেউ ছোট বোনের সাথে..”
আম্মু আর কিছু না বলে রেগে রুমে চলে গেল।আমার কথাটা শুনার প্রয়োজন বোধ করলো না।যেই আম্মু আমাকে মাথায় তুলে রাখতো সেই আজ আমাকে দেখতে পারছে না।আব্বু বাসায় আসার পর আম্মু আব্বুকে বলে আমাকে যেনো হোস্টেলে পাঠিয়ে পড়াশুনো করাতে।আব্বু সেই দিন রাতে আমার কাছে এসে বলেছিল
“দেখ নেহাল আমি জানি তুই ওমন একটা কাজ কখনোই করতে পারিস না।তুই তোর আম্মু কথায় রাগ বা অভিমান করে থাকিস না।সত্যিটা যখন জানতে পারবে দেখবি তোর আম্মুই তোকে আবার নিয়ে আসবে।”
আব্বুর কথাতে সে দিন আমি কিছুই বলেনি।আব্বুর কথাটা ঠিক মনে হয়েছিল।আম্মু সত্যিটা জানলে আমাকে ঠিকই তার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।কিন্তু দুই বছর হয়ে গেল।আম্মু আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলে নি।বাস কন্ট্রাক্টরের ডাকে ভাবনার থেকে ফিরে আসলাম।আমরা নাকি ঢাকায় এসে পরেছি।বাইয়ে তাকিয়ে দেখলাম আসলেই আমরা ঢাকায় এসে পরেছি।
বাসার সামনে এসে ভাইয়াকে কল দিয়ে বললাম দরজাটা খুলতে।আমি চাইনা আমার কারনে কারো ঘুমের সমস্যা হোক।নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম।সকালে চেঁচামেচির কারনে ঘুম আর হল না।তাই ফ্রেশ হয়ে রুমে বাইরে এসে দেখি অনেক মানুষ বাসাতে।ভাইয়ার বিয়ে বলে সব আত্মীয়স্বজন আগেই চলে এসেছে।বসার রুমে দেখলাম আম্মুর সাথে হিয়া দিয়া আর মামি বসে আছে তাই আর ওইদিকে না গিয়ে বাইরে চলে আসলাম।বাইরে আসতেই মামার সাথে দেখা।মামাকে দেখে কিছু না বলে চলে যেতেই মামা বলল
“কিরে নেহাল আমার সাথে কথা বলবি না।”
মামার কথা শুনে দারিয়ে গেলাম।চাচ্ছিলাম না মামার সাথে কথা বলতে তাও মামা যখন নিজে থেকে কথা বলতে যাচ্ছে তাহলে তার সাথে কথা না বলাটা বেয়াদবি হবে।
“না মামা তেমন কিছু না।বাইরে একটু কাজ ছিল তো তাই হয়তো খেয়াল করা হয় নি।”
“তুই কি এখনো সবার উপর রাগ করে আছিস।”
“রাগ করবো কেনো মামা।আর কার সাথেই বা রাগ করতে যাবো।”
“নিলয় আমাকে সব বলেছে।আর আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিস কেনো?”
মামার কথাতে কিছু বলতে পারলাম না।হয়তো মামার কথাই সত্যি।মামা আবার বলল
“নেহাল দিয়ার হয়ে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।”
“না মামা এমন করার কোনো দরকার নেই।”
মামা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বাসার ভিতরে চলে গেল।আমিও আর কিছু না ভেবে বাইরে চলে আসলাম।তখনি ভাইয়া ডাক দিল।ভাইয়া বলল
“নেহাল একটু নাফিজাদের বাসায় যা তো।”
“এইটা আবার কে ভাইয়া?”
“আরে নাফিজা মানে তোর ভাবি।তোর ভাবি তোকে একটু যেতে বলেছে।যা না ভাই।”
আমি ভাবলাম আমাকে আবার যেতে বলছে কেনো?আচ্ছা বাইরে যেহেতু যাচ্ছি তাহলে ভাবির সাথেও একটু দেখা করে আসি।
“আচ্ছা ভাইয়া তাহলে তোমার বাইকের চাবিটা দেও।”
ভাইয়া থেকে ভাবির বাসার ঠিকানা আর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।প্রায় আধাঘণ্টা সময় লাগলো।বাসার বাইরে দারিয়ে আছি।কাউকে দেখছি না যে জিজ্ঞাস করবো এই কি ভাবিদের বাসা নাকি।
“এই নেহাল নিচে না দারিয়ে উপরে এসে পড়ো।”
উপরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে কথাটা বলছে।মনে হয় এটাই নাফিজা ভাবি।বেল বাজাতেই একজন মহিলা দরজা খুলে দিলো।আমাকে বসতে দিয়ে ভিতরে চলে গেল।হয়তো এই বাসায় কাজ করে।কিছুসময় পর সেই মেয়েটা আসলো।আমার সামনের চেয়ারে বসে বলল
“কেমন আছো নেহাল?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও ভালো আছি।আচ্ছা তোমার ভাই হয়তো বলেছে আমি তোমাকে ডেকেছি তাই না।”
“হ্যা ভাবি ভাইয়া তো তাই বলেছে।”
ভাবি কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল
“আসলে আমি তোমাকে ডেকে আনাই নি।আমার এক কাজিন বলল তোমাকে ডাকিয়ে আনতে।তাই তোমার ভাইকে কল দিয়ে আমার নাম করে ডাকিয়ে এনেছি।”
“আপনার কাজিন মানে?নাম কি তার?”
“একটু অপেক্ষা করো ও আসছে।আর আমাকে আপনি করে বলতে হবে না।তুমি করে বলো ঠিক আছে।”
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।ভাবি ভিতরে চলে গেল।আমি ভাবতে থাকলাম ভাবির কাজিন কেনোই বা আমাকে ডাকবে?সে কি আমাকে চিনে নাকি?এই সব ভাবছি তখনি কেউ পিছন থেকে আমার চোখের উপর হাত দিয়ে বলল
“বলো তো আমি কে?”
কন্ঠটা শুনেই হেসে বললাম “ফারু!”
#চলবে…
#সুপ্ত_অনুভূতি
#সূচনা_পর্ব
#মেহরাজ_হোসেন_রনি