#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_০২
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।ভাবি ভিতরে চলে গেল।আমি ভাবতে থাকলাম ভাবির কাজিন কেনোই বা আমাকে ডাকবে?সে কি আমাকে চিনে নাকি?এই সব ভাবছি তখনি কেউ পিছন থেকে আমার চোখের উপর হাত দিয়ে বলল
“বলো তো আমি কে?”
কন্ঠটা শুনেই হেসে বললাম “ফারু!”
ফারিয়া সামনে এসে বলল
“তুমি কিভাবে বুঝলে আমি ছিলাম পিছনে?”
“এটা তুমি বুঝবে না।আচ্ছা তুমি ভাবিদের বাসায় কি করছো?”
“আরে এইটা আমার বড় আব্বুর বাসা।নাফিজা আপু আমার কাজিন।”
“তাহলে তুমি আমাকে আগে বলো নি কেনো তুমি ভাবির কাজিন?”
“আমি কি জানতাম তোমার ভাইয়ের সাথে আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে।আমি গতকাল রাতেই জানলাম তুমি নাফিজা আপুর দেবর।
আচ্ছা তোমার সেমিস্টার ফাইনানের এক্সাম কেমন হল?”
“ভালোই হয়েছে।তুমি কবে এসেছো এইখানে?”
“আজ নিয়ে তিনদিন।”
“তা আমাকে এইখানে আসতে বললে কেনো?”
“ফাইনাল ইয়ার এক্সামের পর ভেবেছিলাম এইখানে এসে মজা করবো।কিন্তু আপু তো শুধু তোমার ভাইয়ের সাথে প্রেমালাপ নিয়ে বিজি।গতকাল রাতে যখন জানতে পারলাম তুমি নিলয় ভাইয়ের ছোট ভাই তাই ভাবলাম তোমার সাথে আড্ডা দেয়া যাবে।সেজন্যই তোমাকে এইখানে নিয়ে এসেছি।”
“হুম ভালো করেছো।”
আমরা কথা বলেছিলাম তখনি একজন মহিলা আমাদের সামনে আসলো।ফারিয়া তাকে দেখে বলল
“বড় আম্মু ও হচ্ছে নিলয় ভাইয়ার ছোট ভাই নেহাল।”
“কেমন আছো বাবা?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও ভালো আছি।”
“বড় আম্মু নেহাল কিন্তু আমার ফ্রেন্ড হয়।সিলেটে আমরা এক ভার্সিটিতে পড়ছি।”
“তাহলে তো তোরা দুজন দুজনকে আগে থেকেই চিনিস।তোরা কথা বল আমি ওর জন্য নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
ভাবির আম্মু ভিতরে চলে যেতেই ফারিয়া বলল
“এই নেহাল আমাকে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে?সারাদিন বাসায় থাকতে কেমন জানি বোড় হয়ে যাচ্ছি।”
“ভাবি বা তার আম্মু কি তোমাকে যেতে দিবে?”
“আরে বুদ্ধু যেতে দিবে বলেই তো তোমাকে এইখানে আনিয়েছি।”
দরজা খুলে দেয়া মহিলাটি আমাদের নাস্তা দিয়ে চলে গেল।সকালে নাস্তা না করে আসাতে কিছু না ভেবেই নাস্তা গুলো খেয়ে নিলাম।খাওয়া শেষে ফারিয়াকে বললাম
“তাহলে বিকালে রেডি থেকো ঠিক আছে।”
তখনি নাফিজা ভাবি এসে বলল
“কাকে রেডি থাকতে বলছো নেহাল?”
“আসলে ভাবি ফারিয়া নাকি ঘুরতে যাবে তাই ওকে বলেছি বিকালে রেডি থাকতে।”
“তাহলে আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে যেও।আমিও যাবো তোমাদের সাথে।”
আমি কিছু বলল তার আগেই ফারিয়া বলল
“আপু আমাদের সাথে তোমার যাওয়া লাগবে না।তুমি তোমার হবু বরকে আসতে বলে তার সাথে যেও।”
“আমার তো খেয়েদেয়ে কাজ নাই তাই না।তোদের দুজনের সাথে আমি যেয়ে কি করবো হু।”
কথাটা বলে ভাবি হাসতে হাসতে ভিতরে চলে গেল।কিন্তু আমি ভাবির হাসির কারনটা ঠিক বুঝলাম না।এখন বাসায় যাওয়া দরকার তাই ফারিয়াকে বললাম
“আচ্ছা এখন তাহলে আমি আসি।বিকালে দেখা হচ্ছে।”
“এখনি চলে যাবে?”
“বাসায় কিছু কাজ আছে তো এখন আসি।বিকালে তো আবার দেখা হবেই।”
ফারিয়া আর কিছু না বলে আমাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল।আমি সিড়ি দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় ফারিয়া বলল
“নেহাল একটু দারাও তো।”
ফারিয়ার কথা শুনে আমি দারিয়ে গেলাম।হুট করেই ফারিয়া এসে গালে চুমু দিয়ে দৌড় দিয়ে বাসার ভিতরে চলে গেল।আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে আসলাম।মাঝেমধ্যে হুট করেই ফারিয়া এমন করে।এইটা আমার কাছে নতুন না।কিন্তু এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
বাইরে এসে আবিরকে কল দিলাম।অনেকদিন হল ওদের কারো সাথে দেখা হয় না।কল রিসিভ করতেই আবির বলল
“হ্যা নেহাল বল।”
“কি করছিস তুই?”
“তেমন কিছু না।রানার সাথে বসে আছি।
তুই কি এবারও আসবি না ঢাকাতে?”
“না এবার না পরের বার।আচ্ছা তোরা কি নদীর পাড়ে নাকি?”
“হ্যা কেনো?”
“না এমনেই।আচ্ছা পরে আবার কথা হবে।এখন রাখছি।”
ফোনটা রেখে বাইক নিয়ে নদীর পাড়ে যেতে লাগলাম।আমি জানি ওরা আমাকে এখন দেখলে কিছুটা শক হবে।দশ মিনিটের মধ্যেই চলে আসলাম।দেখলাম আবির আর রানা আমাদের আগের জায়গাতে বসে আছে।আগে আমরা এইখানেই আড্ডা দিতাম।
আমি ওদের দুজনের মধ্যে গিয়ে বসে পরলাম।আচমকায় ওদের মধ্যে বসায় ওরা দুজন আমার দিকে ভূত দেখার মত তাকিয়ে আছে।ভাবতে পারে নি আমি এখন এইখানে আসবো।হঠাৎ করেই আবির আর রানা আমাকে মারতে শুরু করলো।আমি জানতাম এমন কিছু হবে তাই কিছু বলছি না।মারা শেষে রানা বলল
“কবে আসলি এইখানে?”
“আজ ভোরে।”
“ভালো করেছিস।”
আবির বলল
“ফাইনাল ইয়ার তো শেষ হল এখন কি আবার চলে যাবি?নাকি এখানেই থাকবি?”
“এখনো তেমন কিছু ঠিক করি নি।কিন্তু মনে হয় না আবার যাবো।”
“হুম সেটাই ভালো হবে।শুনলাম নিলয় ভাইয়ের নাকি সামনের সপ্তাহে বিয়ে?”
“হ্যা।তোরা কিন্তু দুদিন আগেই চলে আসিস।”
রানা বলল
“আমরা কি তোর আত্মীয়স্বজন লাগি নাকি দুইদিন আগে আসবো।আমি কালকেই আসছি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।তোদের যখন মন চায় চলে আসিস।”
ওদের সাথে আরো কিছুসময় কথা বলে বাসায় চলে আসলাম।এর মধ্যে আব্বু কল দিয়েছে দুবার।বাসায় এসে দেখলাম আরো অনেক মেহমান এসেছে।আমি কোনো রকমভাবে আমার রুমে চলে আসলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য।রুমে আগেই থেকেই কেউ একজন রুমে বসে আছে।মনে করলাম কোনো রিলেটিভ হবে তাই ভাইয়ার রুমে চলে যাচ্ছিলাম তখনি বলল
“নেহাল ভাইয়া!”
পিছনে তাকিয়ে দেখি দিয়া।কেনো জানি কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল না।তাই চলে আসতে যাচ্ছিলাম কিন্তু দিয়া আবার বলল
“ভাইয়া তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল।”
#চলবে…