#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_১৭
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
তার পরে ফারু আমাকে কিছু কথা বুঝিয়ে বলল।সব শুনে আমার কাছে ফারুর কথা গুলো ভালোই লাগলো।দুই দিন পর থেকে হিয়ার বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেল।আম্মু আর মামা ঠিক করেছে হিয়ার বিয়ে আমাদের এইখান থেকেই হবে।যার কারনে সবাই এই বাসায় আসবে।তাই আত্মীয়স্বজন আসার আগেই শপিং এর সব ঝামেলা শেষ করতে হবে।
বিকালে ভাবি কল দিয়ে বলল
“ভাই তুমি অফিস শেষ করে আমাদের ওই বাসায় গিয়ে ফারিয়াকে নিয়ে এসো।আজ নাকি হিয়া শপিং করবে।”
“আচ্ছা ভাবি।”
ফোন রেখে অফিসের কাজে মন দিলাম।আসলে ফারু বলেছিল যে, যেহেতু একই বাসায় দুইটা বিয়ে তাহলে আমরা হিয়ার বিয়ের মধ্যে আমাদের বিয়ের সব কাজ শেষ করে নিবো।যাতে পরে আমাদের বিয়ের সময় আমরা যেনো যথেষ্ট সময় পাই।যেমন শপিং এর বিষয়টা।তাহলে পরে আর এই গুলো নিয়ে ঝামেলা হবে না।
অফিস শেষ করে আমি ওই বাসায় গিয়ে ফারুকে নিয়ে মলে গেলাম শপিং এর জন্য।আমি আর ফারু আমাদের বিয়ের সব শপিং রাতের মধ্যেই শেষ করে নিলাম।ফারু আগের রাতেই সব ঠিক করে রেখেছিল কি কি কিনতে হবে আমাদের জন্য।
আজ হিয়ার গায়ে হলুদ।বাসায় সেই আগের মত আত্মীয়স্বজন এসেছে।বলতে গেলে এখন আগের থেকে একটু বেশি।এখন ভাবির পরিবারও এসেছে।এক এক করে সবাই হিয়াকে হলুদ দিচ্ছে।মামি বলল আমাকে গিয়ে হলুদ দিতে।হিয়াকে হলুদ দেয়ার শেষে বলল
“নেহাল একটু শুন।”
হিয়ার কাছে গেলাম।ও আমাকে আস্তে করে বলল
“এখনো সময় আছে।আমাকে বিয়ে করে নে।পরে নাহলে আমার জন্য আপসোস করবি।”
ওর কথা শুনে আমার অনেক হাসি পেলো।কিন্তু হাসলাম না।ফোনটা বের করে আমার আর ফারুর কয়েকটা ফটো দেখালাম।ফটোতে ফারিয়া আমাকে বা আমি ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরিয়ে ধরে আছি।আর একটা ফটোতে তো ফারু আমাকে চুমু দিয়ে আছে সেটাও দেখিয়েছি।দেখলাম হিয়ার মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে রেখেছে।ওকে বললাম
“কিরে এখন মুখটা ওমন করে রেখেছিস কেনো?”
“তোরে আমি ভালো ছেলে মনে করেছিলাম কিন্তু সেটা আমার ভুল ছিল।তুই বিয়ের আগেই এই সব করেছিস।”
“তো কি করবো তোর মত প্রেম করে ঘুরবো নাকি।আর একটু আগে না তুই বলেছিস তোর জন্য নাকি আপসোস করতে হবে।আসলেই তোর জন্য আমার আপসোস হচ্ছে।তুই প্রেম করলি কিন্তু এখনো কাপল ফটো তুলতে পারলি না।”
“আমি তোর মত না বুঝছিস।বিয়ের আগে এই সব ফটো তুলবো।আগামীকাল শুধু বিয়েটা হতে দে।তার পরে আমিও এই রকম কাপল পিক তুলবো।তখন আবার কষ্ট পাস না।”
পাশ থেকে আম্মু বলল
“কিরে নেহাল তুই কি ওইখানেই দারিয়ে থাকবি?এখনো অনেক মানুষ বাকি আছে হলুদ দেয়ার।তুই ওর সাথে পরে কথা বলিস।”
চলে আসলাম হিয়ার কাছ থেকে।নাচের স্টেজে গেলাম।দিয়া নাচের জন্য রেডি হচ্ছে।হয়তো এখন ওর পালা।সাথে দেখলাম তানহা আর লিজাও।তিনজন একসাথে স্টেজে উঠলো।ওদের নাচ দেখছিলাম তখন কেউ পাশে এসে দারালো।তাকিয়ে দেখলাম ফারু।হলুদ শাড়িতে ফারুকে বেশ মানিয়েছে।আমার তাকিয়ে থাকা দেখে ফারু বলল
“আমার দিকে না তাকিয়ে সামনে তাকাও।নাচ সামনে হচ্ছে।আমার দিকে না।”
“তুমি দেখো নাচ।আমি তোমাকে দেখি তাহলেই হবে।”
“আচ্ছা দেখো।না তো কেউ করেনি।”
“তোমাকে দেখে না আজ খুব সুন্দর লাগছে।”
“তোমার কাছে ভালো লাগবে তাই আজ শাড়ি পরেছি।এখন একটু ওই দিকে আসো তো।”
“আরে এই ভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছো কেনো?”
এইদিকে তেমন কেউ নেই এখন।সবাই হলুদের অনুষ্ঠান নিয়ে আছে।ফারু দুই হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে আছে।ওর ঘ্রাণটা কিছুটা নেশাগ্রস্থ করে দিচ্ছে আমাকে।কিছুটা অন্ধকারেও ফারুর কোমরটা সুন্দরভাবে দেখা যাচ্ছে।মন চাচ্ছে একটু হাত বুলিয়ে দেই কোমরটাতে কিন্তু ফারুর কাছে যদি বিষয়টা খারাপ লাগে।তাই চুপ করে দারিয়ে আছি। ফারু বলল
“আমার কোমরে হাত রাখো।আর কিছু করতে মন চাইলে করো।কিছু বলবো না।”
ফারুর কোমরে ধরে কাছে নিয়ে আসলাম আমার।বললাম
“করতে তো অনেক কিছুই মন চায় কিন্তু বিয়ের আগে কিছুই করবো না।”
ফারু আমাকে আরেকটু কাছে এসে বলল
“তুমি না করলে কি হবে আমি তো এখন তোমাকে ছাড়ছি না।”
কথাটা বলেই কানে হাল্কা করে কামড় দিলো।ফারু আজ মনে হয় রোমান্স করার মুডে আছে কিন্তু এখন এই সব করা ঠিক হবে না।ফারুকে ছেড়ে দিলাম।কিন্তু ফারু আমাকে ছাড়ছে না।আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
“ইচ্ছে করছে আজকেই বিয়ে করে ফেলি।”
“হঠাৎ বিয়ে করার ইচ্ছে করছে কেনো?”
“তোমাকে খেয়ে ফেলতে মন চাচ্ছে।আজকের দিনটা কত রোমান্টিক।কিন্তু তুমি তো বুদ্ধুর মত দারিয়ে আছো।”
“নাহ কিছু করা লাগবে না।আর বেশি যদি কিছু ইচ্ছে করে তাহলে চলো বিয়ের আগেই বাসর করে ফেলি।”
ফারু হেসে বলল
“তুমি এখনো ঠিক করে আমাকে একটা চুমুই দিতে পারলে না।আর সেই তুমি বলছো বিয়ের আগে বাসর করবে।নেহাল তুমিও না।”
ফারুর কথা শুনে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম।ফারু আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।হয়তো ভাবে নি আমি ওকে চুমু দিবো।আমি বললাম
“এখন বিশ্বাস হয়েছে।”
“হুম তোমার ভাবসাব সুবিধার মনে হচ্ছে না।”
“আচ্ছা বাকি সব বিয়ের পরে দেখিয়ে দিবো এখন ভিতরে চলো।নাহলে সবাই অন্য কিছু ভাববে।”
“তার আগে তোমার চোখ বন্ধ করো।”
“কেনো?”
“আরে করো না প্লিজ।”
চোখ বন্ধ করলাম।ভাবলাম চুমু দিবে হয়তো কিন্তু না।ঘাড়ে একটা কামড় দিলো মানে লাভবাইট।
“ইস।এমন কেউ করে।”
“মন মানছিল না বাবুর আব্বু।তাই দিয়ে দিলাম।পারলে তুমিও দিতে পারো কিন্তু তার আগে আমার কাছে আসতে হবে।”
মন চাচ্ছিল আমিও একটা দিয়ে দেই।কিন্তু তার আগেই ফারিয়া ফুড়ুত হয়ে গেল।ইস এখনো ব্যথা করছে।মনে হয় দাগ পড়ে গেছে।পরে আর সবার সামনে গেলাম না।নাহলে ঘাড়ে দাগ দেখে কি না কি ভাববে।
পরের দিন সকালে সবাই বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত।আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মেয়েদেরকে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার আবার নিয়ে আসার।সকাল নয়টা দিকে হিয়া দিয়া আর বাকি মেয়ে কাজিনদের পার্লারে নিয়ে গেলাম।অনেক সময় লাগবে তাই ভাবলাম একটু ফারুর সাথে কথা বলি।
“হ্যালো ফারু।”
“হ্যা নেহাল বলো।”
“কি করছো এখন?”
“আমরা সবাই রেডি হচ্ছি।”
“আমরা বলতে?”
“আমি তানহা আর লিজা।”
“আজ পার্লারে যাও নি?”
“নাহ আমার এই সব পার্লারে যেতে ভালো লাগে না।”
“হুম সেটাই ভালো।তা কখন আসবে?”
“আমরা একটু পরেই তোমাদের বাসায় যাবো।ওইখান থেকে বিয়েতে।তুমি কই এখন?”
“আমি পার্লারের বাইরে আছি।”
“ওমা তুমি ওইখানে কি করছো?”
“বাসার সব কাজিনদের পার্লারে নিয়ে আসা যাওয়ার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে।”
“ওহ তাহলে তো ভালোই।রেডি হতে হবে আমাদের।আচ্ছা নেহাল এখন রাখছি।”
“আচ্ছা।”
প্রায় একটার দিকে সব কাজিনরা পার্লার থেকে বের হল।ওদেরকে কমিউনিটি সেন্টারে দিয়ে আমি বাসায় গেলাম রেডি হতে।বর নাকি এখনো আসে নাই।তাই বেশি তাড়াহুড়ো করি নি।
বিয়েতে এসে দেখি রাসেল ভাই এসে পরেছে।আমি আর সেই দিকে না গিয়ে ফারুর কাছে গেলাম।ফারুর সাথে তানহা লিজা দিয়া ছিল কিন্তু সামনে গিয়ে দেখি আবির আর রানাও আছে ওইখানে।আবিরকে দেখলাম লিজার সাথে কথা বলতে।আর রানা আমাকে দেখে কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে।
#চলবে…