#প্রেমরোগ-৩২
#তাসনিম_তামান্না
নব্য স্নিগ্ধ সুন্দর একটি দিন। কুয়াশা ঘুমের মধ্যে টের পেলো। গায়ে তার প্রচন্ড ব্যথা। পিট পিট করে চোখ খুলে দেখলো। সারারাত ঘুমায় নি শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে। সকালে নরম মিষ্টি রোদ ফ্লোরে এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। কুয়াশার আস্তে আস্তে কাল রাতের সব কথা মনে পড়ে গেলো লজ্জায় মুখমন্ডল রক্তিম হয়ে উঠলো। তুষার কে খুঁজলো তুষার রুমে নেই। দরজা খোলার শব্দে কুয়াশা চোখ বন্ধ করে ব্ল্যাকেটে দিয়ে মাথা ঢেকে ফেললো। এমন ভাব ধরলো যেনো ঘুমিয়ে আছে। তুষার ব্ল্যাকেট সরিয়ে কুয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম স্বরে ডাকলো
” জান, উঠো, জান। ঔষধটা খেয়ে আবার ঘুমিয়ে ও জান ”
তুষার আরো কয়েকবার ডাকলো কুয়াশা ব্ল্যাকেট টেনে মাথা আবার ডুকিয়ে ফেললো বলল ” আপনি যান আমার লজ্জা লাগছে ”
তুষার হেসে বলল ” কতক্ষণ আমার থেকে লুকিয়ে থাকবে?? ”
” আপনি যান তো ”
” উহুম। তুমি উঠবে না-কি রোমান্টিক ডোজ দিবো?
” অ স ভ্য ”
” আচ্ছা উঠো জান। ঔষধটা খেয়ে আবার ঘুমিয়ে ও ”
কুয়াশা চোখ খুলে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো বলল
” কিসের ঔষধ? ”
” পেইনের ”
কুয়াশা উঠে বসে ঔষধটা খেয়ে ব্রেকফাস্ট ও খেয়ে নিলো। কুয়াশা আবার শুতে নিলেই তুষার বলল
” শুয়ো না দাঁড়াও। তোমার চুল এখনো ভিজে হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে শুকিয়ে দি না হলে ঠান্ডা লাগবে”
তুষার কুয়াশার চুল শুকিয়ে দিচ্ছে। কুয়াশা ভালোলাগা আকাশ ছুঁয়ে গেছে। ভাগ্য করে কত জনই বা এমন স্বামী পাই? কুয়াশা আনমনে বলল
” জানেন আমি কত লাকি? ”
” হুম কি ভাবে? ”
” এই যে আপনার মতো একজন লাইফপার্টনার পেয়ে ”
” হঠাৎ এমন মনে হলো কেনো? আমি আবার কি করলাম? ”
” এই যে আপনি আমার কত কেয়ার করেন। কত ভালোবাসেন ”
” তাই না-কি? ”
” হ্যাঁ এখন আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে বলতো ‘এখনি আমার জন্য গিয়ে নাস্তা রেডি করো কোনো বাহানা চলবে না’ আর আপনি কি সুন্দর আমার জন্য খাবার রেডি করে এনে খাইয়ে দিলেন এখন আবার চুল শুকিয়ে দিচ্ছেন ”
” তো এটা প্রতিটা হাসবেন্ডর করা উচিত। শোনো স্ত্রী অসুস্থ থাকলে স্বামী তার সেবা করবে আর স্বামী অসুস্থ থাকলে স্ত্রী সেবা করবে এটাই নিয়ম। ”
” হুম ”
” আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমার কাজ আছে ”
” অফিসে যাবেন না-কি? ”
” না ল্যাপটপেই কাজ সারলেই হবে ”
” ঘুমাবেন না? ”
” হুম আসছি কাজ শেষ করে ”
কুয়াশা শুয়ে পড়লো ঘুমিয়ে ও পড়লো মিনিট খানেকের মধ্যে তুষার ও কাজ শেষ করে এসে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো। ভালোই চলছে খুনসুটি, রাগ, অভিমান, ভালোবাসাময় দিন গুলো। কুয়াশা তুষারের পছন্দ অপছন্দ খেয়াল করে চলে। প্রতিদিন শাড়ি পড়ে তুষারে অপেক্ষায় থাকে। তুষার বাসায় ফেরার সময় কুয়াশার জন্য ফুল, চকলেট আনে এই টুকুতেই কুয়াশা আকাশ সমান খুশি যেনো আর ধরে না। সুখেই চলছে দুজনের টোনাটুনির সংসার। কুয়াশা তুষারকে আজকাল তুমি বলে সম্ভদন করে। এই তো সে তুষার হুট করে রেগে গিয়ে বলল
” আপনি আপনি কি হ্যাঁ? আপনি আজ্ঞে করে কি বোঝাতে চাইছ আমি তোমার কেউ না? ”
কুয়াশা বোকাবোকা চাহনি দিয়ে বলল
” সেটা কখন বললাম? আপনি তো আমার বর। কেউ না হতে যাবেন কেনো? ”
তুষার গম্ভীর কন্ঠে বলল
” বর কে কেউ আপনি বলে ডাকে? ”
” ও আপনাকে আপনি বলার জন্য রেগে যাচ্ছেন? আগে বলবেন না? ”
তুষার দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” তো আপনি বুঝেন না? আপনাকে সব বলে দিতে হবে? ”
কুয়াশা লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বলল
” আপনি আজ্ঞে ভাবে না একটা নতুন বিয়ে নতুন বিয়ে ভাব আসে। ওটা আপনি বুজবেন না ”
তুষার ধমকে উঠে বলল
” এক চ ড়ে সব কইটা দাঁত ফে লে দিবো। বিয়ের সাত বছর হতে যাচ্ছে আর ওনি নতুন ভাব পাচ্ছে ”
কুয়াশা মুখ ভেংচি কেটে বলল
” বিয়ে হয়ে ৭ বছর হতে চলল তাই বলে কি আমি ৭ বছর ই সংসার করছি? আর আমি আপনাকে আপনি বলে ডাকলে আপনার সমস্যা কোথায় বলুন তো? ”
তুষার তেড়ে এসে বলল ” আর একবার আপনি আপনি করলে সত্যি চ ড় মে রে বসবো বলে দিলাম”
কুয়াশা ভয় পেয়ে বলল ” ওকে ওকে তুমি তুমি দূরেই থাকো ”
তুষার বাঁকা হেসে বলল ” কেনো আমি কাছে আসলে কি হয়? ”
কথাটা বলতে বলতে তুষার একপা দুপা করে এগিয়ে আসতে লাগলো। কুয়াশা চোখ বড়বড় করে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে দৌড়ে ওপাশে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তুষার শব্দ করে হেসে দিলো। এমন দুষ্টমিষ্টি ময় সময় কাটছিলো দুজনের। দেখতে দেখতে শীতের প্রকোপ বাড়লো, তুষারপাত শুরু হলো। জানালার গ্লাসের সামনে দাড়িয়ে দুজনে এককাপে কফি খাচ্ছে আর তুষারপাত দেখছে। তুষার বলল
” যনো তোমার তোমার আর আবার মধ্যে একটা গভীর মিল আছে ”
” কি রকম? ”
” তুমি ও যখন আসো আমি তোমার পিছনে পিছনে চলে আসি তোমার মধ্যে হারিয়ে যায় ”
” মানে বুঝলাম না ”
” এই দেখো চারিদিকে শীততে কুয়াশা পড়েছে তার মধ্যে তুষারপাত হচ্ছে ”
কুয়াশা চোখ কপালে তুলে বলল
” তাই তো আগে তো কখনো ভেবে দেখি নি ”
তুষার ঘোর কণ্ঠে বলল
” তুষারের একলা মনে কুয়াশা লাগে অন্তরে,
এ প্রেম শীতল হয়েও উষ্ণতা দেয় সিক্ত অভ্যন্তরে। ”
” বাবাহ! কবি হয়ে গেলে তো ”
তুষার ভাবুক কণ্ঠে বলল
” শোনো আমি এখনি একটা ইনপটেন কথা ভেবে ফেলেছি ”
কুয়াশা ভ্রু কুঁচকে বলল ” কি? ”
” আমাদের বেবি হলে তার নাম রাখবো ‘শিশির’ সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সুন্দর না? ”
কুয়াশা লজ্জা পেয়ে বলল ” সুন্দর ”
” কেনো এমন নাম রাখবো জিজ্ঞাসা করলা না তো ”
” সুন্দর নাম তাই রাখবেন ”
” উহুম। তুষার কুয়াশার চলে গেলেও কিন্তু শিশির থেকে যায় ”
কুয়াশা হেসে উঠলো বলল ” তোমার মাথা পুরাই পা গ ল হয়ে গেছে। কিসব আজগুবি চিন্তাভাবনা তোমার ”
তুষার চোখ ছোট ছোট করে বলল ” আমি পা গ ল তাই না? ”
কথাটা বলে তুষার কুয়াশাকে কাতুকুতু দিতে লাগলো। কুয়াশা সহ্য করতে না পেরে হেসে উঠলো।
___________________
আজ তুষারপাত তেমন নেই তুষার অফিসে গিয়েছে। কুয়াশার আজকাল শরীরটা কেমন খারাপ লাগে। মনে মনে কিছু একটা সন্দেহ হয়ে ছিল। আর পরিক্ষা করে দেখে তার সন্দেহ ই ঠিক। খুশির অশ্রুতে চোখ টইটম্বুর হয়ে আছে। অতিরিক্ত খুশিতে হাত কাঁপছে। তুষারকে ফোন দিবে বলে ফোন হাতে নিলো। কুয়াশা পরক্ষণে মনে মনে ভাবলো ” উহুম এভাবে নিউজটা দেওয়া যাবে না। কিছুতো স্পেশাল থাকতে হবে। তুষারের খুশি মুখটাও দেখবো ”
কুয়াশা অনেক ভেবে তুষারের জন্য রসমালাই বানালো নিজের হাতে দুপুরের লান্সে নিজে যাবে। দুজনে একসাথে আজ লান্স করবে বলে। খুশি মনে খুশির খবর টা দিবে বলে বের হলো৷ কিন্তু তুষারের কেবিনে গিয়ে পুরো পৃথিবী যেনো উল্টে গেলো। তুষার একটা মেয়েকে চু! মু খাচ্ছে?…..
চলবে ইনশাআল্লাহ