তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব-২৭

0
652

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব-২৭
Writer তানিয়া শেখ

গত দুদিন টানা বর্ষণের শেষে আজ একটুখানি রোদ উঠেছিল। সেটাও কোথায় যেন মিলিয়ে গেল বেলা বাড়তে। ধোঁয়াটে মেঘলা আকাশ জানান দিচ্ছে যে কোনো সময় আকাশে ধুম্বল তুলে আবার শুরু হবে বৃষ্টি। একে বুঝি শীত আগমনী বৃষ্টি বলে। কেমন ঠাণ্ডা ভেজা বাতাস বইছে। পাতলা ফ্রকে শীতটা বেশ লাগছে ইসাবেলার। গত দুদিন একই কাপড় পরে আছে সে। নিকোলাস জাগার পূর্বে ফ্রক ছেড়ে গুহার মুখের কাছে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছে। তারপর আবার ওই ছেঁড়া ফাটা ফ্রক পরেছে। ঠাণ্ডা বসে সর্দি লেগে গেছে তাতে। একটু পরপরই নাক টানছে। হাতে হাত ঘষে একটু উঞ্চতা জন্য। নিকোলাস চুপচাপ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। পেছন ফিরে এক নজর দেখছেও না ইসাবেলাকে। ইসাবেলা যদি টুপ করে কোথাও লুকিয়ে পড়ে ও কি টের পাবে? একটুখানি দাঁড়িয়ে গেল এই ভেবে। সর্দি লাগলে ভেতরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসে। অল্পতেই কাহিল মনে হয়। এতক্ষণ হেঁটে খুব ক্লান্ত লাগছে। কাঁচা রাস্তার পাশে দু’হাটু তুলে বসে পড়ল। গতদিনের বৃষ্টিতে জায়গাটা স্যাঁতসেঁতে। শরীর ছেড়ে বসা গেল না। হাঁটু জড়িয়ে মাথাটা রাখল। কদিন ভালো ঘুম হয়নি ইসাবেলার। ক্লান্তিতে চোখটা লেগে এসেছিল। হঠাৎ গান ফায়ারিং-এর শব্দে চমকে ওঠে। নিকোলাস ওকে বলেছে গরলিটজ থেকে অনেক দূর চলে এসেছে ওরা। তাছাড়া এখন যে বনে আছে সেটাও খুব গহীন। জার্মান সৈন্যদের এই পর্যন্ত আসার সম্ভবনা তেমন নেই। তাহলে গান ফায়ারিং এর শব্দ কোথা থেকে এলো?

“বেলা!”

সামনে উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে নিকোলাস। ফিরে এসেছে ও। ইসাবেলা উঠে ওর কাছাকাছি গিয়ে আর্ত কণ্ঠে বলল,

“গান ফায়ারিং শুনেছেন?”

নিকোলাস সে কথার জবাব না দিয়ে এগিয়ে এলো। রাগত গলায় বলল,

“এখানে কী করছিলে? বলেছিলাম না অনুসরণ করতে? সব সময় আমার কথা অমান্য করতে হবে তোমার? মন তো চাচ্ছে ফেলে চলে যাই এক্ষুনি।”

নিকোলাসের ধমকে ইসাবেলার চোখ ছলছল করে। সে ভয় পেয়েছিল। নিকোলাস সেটা বুঝেও তাকে ধমকাচ্ছে। রাগ হলো খুব। আবার আগের স্থানে গিয়ে বসে পড়ে।

“আবার বসলে যে?”

“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। চলে যান।”

“বেলা!”

“ধমকাবেন না আমাকে আপনি।”

নিকোলাসের চাইতে দ্বিগুণ জোরে চেঁচিয়ে ওঠে ইসাবেলা।

“আমি আপনাকে বলেছি সাহায্য করতে? আপনি স্বেচ্ছায় করছেন। কেন করছেন? বলেন কেন করছেন? আমাকে সাহায্য করার পেছনে কী স্বার্থ লুকিয়ে আছে আপনার? এমনিতে তো আপনার মতো পিশাচ কাওকে সাহায্য করে না। তাহলে?”

নিকোলাসের চোখে চোখ স্থির ইসাবেলার। রাগে কাঁপছে শরীর। ওর জীবনের এই দশার কারণ হিসেবে পরোক্ষভাবে নিকোলাসকেই দায়ি করে। কত সয়েছে সে ওর জন্য। সেদিন ওই পোকামাকড়ের বসতিস্থল, দুর্গন্ধময় গুহায় থাকতে বাধ্য করেছে। কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অতিক্রম করেছে পদব্রজে। পায়ের তলা অসাড়। শীতে কাঁপছে। নিকোলাস দেখেও যেন দেখে না। তার উচিত ছিল একজন জেন্টেলম্যানের মতো নিজের কোর্টটা অফার করা। এত কিছুর পরও এমন কিছু আশা করাতে ক্ষোভ জন্মেছে নিজের ওপর। চেপেই রাখত সেটা। কিন্তু নিকোলাসের রুক্ষ ব্যবহারে প্রকাশ পেয়ে গেল। নিকোলাস ইসাবেলার অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে একদমই রাগ করতে পারল না। কান্নার জলে টইটম্বুর চোখের কার্নিশ। অভিমানি সেই টলমল জল নিকোলাসকে রাগ করতে দেয় না। সে একদৃষ্টে চেয়ে আছে ওর চোখে। কতটা ঘৃণ্য, বর্বর সে! ইসাবেলার চোখে জল এনে দিয়েছে। নিজের দুরন্ত মনটাকে বশে আনতে মেয়েটাকে একপ্রকার উপেক্ষা করেছে, রুক্ষ ব্যবহার করেছে কথায় কথায়। একবারো ভাবেনি এতে ওর মনে কী প্রভাব পড়বে! যথার্থই বলেছে ও স্বার্থপর। কিন্তু ওর মুখে বারংবার ঘৃণা মেশানো পিশাচ শব্দটা নিকোলাসকে বড়ো আঘাত দেয়। দারুন কষ্ট হয় মনে। অল্প ক্ষণের জন্য ওর চোখে-মুখে স্পষ্ট ফুটে ওঠে সেই কষ্ট। ইসাবেলা টের পাবার আগেই ঘুরে দাঁড়ায়।

“তুমি সামনে হাঁটবে এবার। চলো।”

ইসাবেলা তাচ্ছিল্যের সাথে হাসে। নাক টেনে বলে,

“দেবেন না আমার প্রশ্নের জবাব? ঠিক আছে দিয়েন না। আমিও যাব না আপনার সাথে।”

“পাগলামি করো না বেলা। এই স্থান নিরাপদ মনে হচ্ছে না। চলো।” নিকোলাস আবার ঘুরে ওর হাত ধরতে গেলে হাত ওপরে তোলে।

“নাহ! এবার জোর করতে এলে চিৎকার করব আমি। বলেছি চলে যান। যান।”

চেঁচিয়ে ওঠে ইসাবেলা। তারপর উলটো দিকে ভোঁ দৌড় দেয়। দুহাত মুঠ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে নিকোলাস।

“বেলা, থামো বলেছি, বেলা!”

ইসাবেলা দৌড়াতে দৌড়াতে বনের ভেতর ঢুকে পড়েছে। লম্বা গাছ আর বুনো লতায় ভরা বন। গা থমথমে নীরবতা। কোনদিকে যাবে বুঝতে না পেরে হাঁটতে লাগল বনের মধ্যে দিশাহীন। ওর রাগটা বড়ো বাজে। হুশ হারিয়ে ফেলে রাগলে। নচেৎ, চতুর্দিকে বিপদ জেনেও এভাবে একা বনে দৌড়ে আসে? ভয় ভয় করছে ইসাবেলার। কোথায় যাবে এখন? আগাথাকেও দিনের বেলা পাবে না।

“বেলা” নিকোলাসের গলা শুনে স্বস্তিতে হাঁফ ছাড়লেও নত হলো না।

“আমার পিছু নেবেন না নিকোলাস। চলে যান।”

নিকোলাস নিজের নাম ওর মুখে শুনে মুচকি হাসল। রাগ উবে যায়। হাওয়ায় মিশে ওর সামনে দাঁড়ায়। ইসাবেলা পাশ কাটতে নিকোলাস আবারও সামনে থামে। ইসাবেলার পথ রুদ্ধ করে দাঁড়ায়। কটমট করে ইসাবেলা বলে,

“আমি কিন্তু চিৎকার করব এবার।”

“রিয়েলি?” এগিয়ে আসে নিকোলাস। ইসাবেলা পিছিয়ে যায়।

“সত্যি বলছি আমি চিৎকার করব।”

“আমি শুনছি।”

ইসাবেলা চিৎকার করবে বলে মুখ খুলতে নিকোলাস ওর মুখটা হাতে চেপে ধরে। ইসাবেলার পিঠ লেগে আছে পেছনের গাছে। নিকোলাসের শরীরের ভরে খানিকটা আরো চেপে যায় গাছের সাথে। স্যাঁতসেঁতে ভেজা গাছের গা। পিঠে ভেজা ঠাণ্ডা অনুভব করল। মুখের ওপর নিকোলাসের ভারী নিঃশ্বাসের উষ্ণতা পড়ে। হৃৎস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক হতে লাগল। নিকোলাস এত নিকটে এলেই এমন হয়। দু’হাতে ঠেলছে নিকোলাসের বুক। নিকোলাসের হাতের নিচ থেকে গোঙানি বের করছে। নিকোলাস জানে ওই গোঙানির অর্থ। এত সহজে ছাড়বে না এই মেয়েকে। অবাধ্য হওয়ার শাস্তি পেতে হবে ওকে।

“সেদিন গুহার ভেতর দাঁড়িয়ে কি বলেছিলাম ভুলে গেছ?”

ইসাবেলার নড়াচড়া থেমে যায়। বিস্ফোরিত চোখে শুকনো ঢোক গিললো। ভারি মজা পাচ্ছে নিকোলাস ওকে নার্ভাস হতে দেখে। মজা আরেকটু বাড়ালে মন্দ হয় না। ইসাবেলার ঠোঁটের ওপর থেকে হাত সরিয়ে মুহূর্তে ওর দুহাত মাথার ওপর গাছের সাথের চেপে ধরে। ঝুঁকে বলে,

“তুমি ইচ্ছে করে এমন করছ তাই না?”

ইসাবেলা ভয়ে ভয়ে সজোরে মাথা ঝাকায়। নিকোলাস যে সে কথা বিশ্বাস করল না বেশ বুঝতে পারছে ও। আরো ঝুঁকে আসছে নিকোলাসের মুখ। চাপা গলায় বলল,

“ইচ্ছে করে ঠোঁট দ্বারা প্রলুব্ধ করছ আমায়, হুম? আমার ভেতরের স্বৈরাচারীকে জাগিয়ে তুলছ যেন সে তোমার ঠোঁটকে শাস্তি দেয়, দখল করে নেয়? তবে শোনো, তোমার ঠোঁটের শাস্তির ফরমান জারি করলাম। আমার ঠোঁট এবার চুমুর শাস্তি দেবে তোমার ঠোঁটকে।”

নিকোলাসের স্বৈরাচারী ঠোঁট শাস্তি দিতে নেমে আসার আগে নিজের ঠোঁট দুটোকে চেপে ধরে মাথা নামিয়ে ফেলে ইসাবেলা। এতদ্রুত করে যে নিকোলাসের নাকে প্রচন্ড জোরে বাড়ি খায় ওর কপাল। জীবন্মৃত শরীরে রক্ত বেরোয় না। ব্যথাও লাগল না। কিন্তু এই মজা এমন ভাবে নষ্ট হওয়ায় বিরক্ত হলো নিকোলাস। দু কদম পিছিয়ে নাকে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

“বেকুব একটা!”

ইসাবেলা ততক্ষণে গাছের আড়ালে লুকিয়েছে। বুকের বা’পাশ দুহাতে ধরে গভীরভাবে শ্বাস নিলো। এখনও বুক কাঁপছে।

“ড্রেস সেন্সও নেই তোমার। নীল ফ্রকের নিচে সাদা অন্তর্বাস কে পরে?”

তড়াক করে ঘুরে দাঁড়ায় ইসাবেলা। নিকোলাস বিরক্তি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ইসাবেলা এখন নিশ্চিত এই লোকের মাথায় সমস্যা আছে, গুরুতর সমস্যা। একেক সময় একেক মুডে থাকে। আর নয়তো ইসাবেলাকে জ্বালাতে এমন করে। একটু আগে ঠোঁট নিয়ে পড়েছিল। এখন আবার অন্তর্বাস নিয়ে! ধরিত্রী দু’ভাগ হয় না কেন? এক্ষুনি মাটির তলে লুকিয়ে পড়ত সে।

“অসভ্য, নির্লজ্জ!” বিড়বিড় করে বলল সে। নিকোলাস শুনল কিন্তু এমন ভাব করল সে শোনেনি। ইসাবেলা এক হাতে ঠোঁট ঢেকে রেগে বলল,

“আমি যা ইচ্ছে পরব তাতে আপনার কী? নির্লজ্জ, অসভ্য।”

ইসাবেলা পাশ কেটে হাঁটতে শুরু করে। আচমকা নিকোলাস ওকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে। একহাতে ইসাবেলার কোমর জড়িয়ে আছে শক্ত করে।

“ভালো হচ্ছে না নিকোলাস। ছাড়ুন আমাকে।”

নিকোলাসের অন্য হাত ওর কাঁধে নেমে এসেছে। ইসাবেলার চুলগুলো ডান কাঁধে সরিয়ে ঝুঁকে পড়ল আরো। ইসাবেলা এবার কেঁদে দেয়। নিকোলাসের হাত ওর পিঠের জামার ভেতর প্রবেশ করেছে।

“প্লিজ! ছাড়ুন আমাকে।”

“দুই মিনিট শান্ত হবে।” মৃদু ধমক দেয় নিকোলাস। ইসাবেলা ফুঁপাতে লাগল। নিকোলাস সরে দাঁড়ায়।

“ড্রেস খোলো।

” প্লিজ! আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর অবাধ্য হব না।”

“তোমাকে কিছু বলায় বৃথা।”

নিকোলাস এগিয়ে এসে ওর ফ্রক নিচ থেকে তুলতে ইসাবেলা হাত চেপে ধরে।

” প্লিজ! আমার সতিত্ব নষ্ট করবেন না। প্লিজ নিকোলাস।”

ইসাবেলা কেঁদে মুখ ভিজিয়ে ফেলেছে। নিকোলাস কাপড় ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ইসাবেলা বুকে দুহাত জড়িয়ে অসহায় মুখে বলল,

“আপনাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম। শেষমেশ আপনিও আর সব পুরুষের মতো__” কান্নার তোড়ে ওর কণ্ঠরোধ হয়ে এলো। নিকোলাস ওর মাথায় গাট্টা মারতে চকিতে তাকায়। ব্যথা লেগেছে মাথায়। হাতটা মাথায় বুলাতে বুলাতে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে। মহাবিরক্ত নিকোলাস হাত মেলে ধরে ওর সামনে। কালো কুচকুচে জোঁক। ইসাবেলার রক্ত খেয়ে মোটাতাজা হয়ে গেছে।

“এটা কী?” চোখ মুছে আর্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে ইসাবেলা।

“জোঁক।”

“এ-এ_”

ইসাবেলা কাঁধে হাত রেখে কথাটা শেষ করার আগে নিকোলাস বলল,

“জি, এটাই ওখানে বসে আরামসে রক্ত চুষছিল। এই মহাশয়কে তুলতে আপনাকে জড়িয়ে ধরতে হয়েছে, এবং_”

“এবং?”

“এবং এই জোঁক মহাশয় একা আপনার রক্ত পান করছে না। তার জ্ঞাতি গুষ্টি সকলেই বোধহয় এসেছে। এই মুহূর্তে তারা আপনার পিঠে আরামসে বসে রক্ত মহাভোজ সারছে।”

আর্তচিৎকার করে লাফিয়ে ওঠে ইসাবেলা। পিঠে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু হাত পিঠ পর্যন্ত পৌঁছে না। ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগল। মাথা ঘুরে ওঠে আতঙ্কে। নিকোলাসের বড্ড খারাপ লাগল। ওর তখনকার মজার মাশুল ইসাবেলাকে দিতে হচ্ছে। যেই গাছটাতে ঠেসে ও দাঁড়িয়েছিল ওটাতে ছিল জোঁকের বসতি। প্রথমে খেয়াল করেনি নিকোলাস। ইসাবেলার হাতটা ধরে কোমল গলায় বলল,

“শান্ত হও।”

“আমি আজ মরে যাব।”

“যদি আমার কথা শোনো কিছু হবে না তোমার। শুনবে আমার কথা?”

এ ছাড়া আর উপায় কী? হ্যাঁ সূচক মাথায় নাড়ায় ইসাবেলা। নিকোলাস শব্দ করে দম ফেলে ওর মুখটা আঁজলা ভরে তোলে,

“তুমি আমার কাছে পবিত্র, বেলা। তোমাকে কিছুতেই অপবিত্র করব না আমি।”

ইসাবেলা ওর চোখে চেয়ে সে কথা বিশ্বাস করে। আজ আবিষ্কার করল নিকোলাসকে ও বিশ্বাস করে। চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিয়ে সরে দাঁড়ায়। পরনের ফ্রক একটু একটু করে ওপরে তোলে। ভীষণ লজ্জা করছে। কোনো পরপুরুষ দেখেনি এভাবে। নিকোলাস ওর অস্বস্তি বুঝে বলল,

“ঘুরে দাঁড়াও।”

নিকোলাসের কথামতো ঘুরে দাঁড়ায় ইসাবেলা। আস্তে আস্তে মাথার ওপর দিয়ে খুলে ফেলে ফ্রক। অর্ধ নগ্ন শরীরে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বহু নারীর নগ্ন শরীর নিকোলাস দেখেছে, কিন্তু ইসাবেলার দেহ দেখে যেমন অনুভব করছে তেমনটা আগে করেনি। নিখুঁত গড়ন, মাখনের মতো কায়া। এতটা আকৃষ্ট কোনো নারীর দেহই করেনি। সর্ব শরীরে উষ্ণ স্রোত বয়ে যায়। নিকোলাস নিজেকে সামলে নিলো। ইসাবেলার পিঠ থেকে তাড়াতাড়ি জোঁকগুলো ছাড়ায়। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সেখান থেকে। নিকোলাসের শ্বদন্ত বেরিয়ে এলো তাজা রক্ত দেখে। রক্তের নেশা চেপে যায় মাথায়। কিন্তু নিজের পিশাচসত্ত্বাকে বড়ো কষ্টে দমালো। ইসাবেলার রক্ত আর পান করবে না সে।

“বাকি কাপড় খুলে এটা পরে নাও।”

নিজের পরনের লম্বা কোর্ট খুলে ওর হাতে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় নিকোলাস।

নিকোলাস কম করে হলেও ইসাবেলার চেয়ে এক ফুট বেশি লম্বা। ওর গায়ের কোর্ট ইসাবেলার পায়ের গোড়ালি ছাড়িয়ে নেমে গেছে। হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে তাতে। নিকোলাস ওর সাথে তাল মিলিয়ে এবার ধীরে ধীরে হাঁটছে। কয়েকবার পেছন ফিরে জিজ্ঞেসও করেছে,

“ঠিক আছো?”

ইসাবেলা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলেছে। নিকোলাস মনে মনে আশা করছে ইসাবেলা বলুক তার সমস্যার কথা। কিন্তু এই জেদি নির্বোধ মেয়ে সাহায্য চাইলে তো? সেধে সাহায্য করতে গেলে দোষ ধরবে। নিকোলাস ওর চেয়ে ঢের জেদি। যতক্ষণ সাহায্য না চাইবে করবে না সাহায্য। হাঁটুক ওভাবে। ওরা আবার সেই কাঁচা রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ায়। নিকোলাসের লম্বা কোর্টের খানিকটা তুলে ধরে রেখেছে ইসাবেলা। বাকি পথ ও ওভাবেই হাঁটতে প্রস্তুত তবু সাহায্য চাইবে না। নিকোলাস হার নামল। শুধাল,

“চাইলে পিঠে উঠতে পারো।”

“না, আমি হেঁটে যেতে পারব।”

ইসাবেলা নিচু গলায় মাথা নুয়ে জবাব দিলো। ওর লজ্জা করছে নিকোলাসের চোখে চোখ রাখতে। নিকোলাস আরো কিছু বলবে তার পূর্বে রব তুলে ছুটে এলো দুটো ঘোড়া। তাতে বসা সওয়ারি দুজন বন্দুক তাক করে আছে ওদের দিকে। নিকোলাস কিছু করবে তখনই একজন বলে উঠল,

“খবরদার যদি একচুল নড়েছ। যা আছে সব বের করে দাও।”

মুহূর্তে ওদের ঘিরে ধরে একদল ইহুদি রিফিউজিরা।

চলবে,,,,

গত কয়েকদিন একটা এক্সামের কারণে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। আমার বইয়ের একটা ব্যাপারেও চিন্তাভাবনায় কেটেছে। এত প্রেশারে মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছিল। লিখতে পারিনি, লেখালেখির অবস্থাতে ছিলামই না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here