#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব-২৯
Writer তানিয়া শেখ
বনের মধ্যে আঁধার লুটিয়ে পড়ে। অপরাহ্ণের পর থেকে আকাশে বজ্রনির্ঘোষ শোনা যাচ্ছে। বেলা শেষ হওয়ার পূর্বে ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেল আকাশটা। আজ যেন বেশ আগেই সন্ধ্যা নামল। ঘন বনের মধ্যে আঁধারটা আরেকটু যেন গাঢ় মনে হয়। ইহুদি রিফিউজিদের আশ্রমে খাবার নেই। ভুখা পেটে অধীর আগ্রহে বসে আছে সকলে। দৃষ্টি পথের দিকে স্থির। আকাশে কালো মেঘ দেখে ওরা যেন আরো বিচলিত হয়ে পড়ল। এই যৎসামান্য ছাউনি ঘেরা মাথার গোঁজার ঠাঁই প্রবল বৃষ্টির দাপট সইতে কি পারবে? এমনিতে নিত্যদিন জোঁক, মশা মাছি সহ নানান বন্য প্রাণীর উপদ্রবে অতিষ্ঠ জীবন। তার ওপর এই বৃষ্টি আরও একদফা উপদ্রব বৈ আর কী! আশ্রমের সকলের একটাই প্রার্থনা, যিহোভাহ আসন্ন সকল সংকট থেকে তাদের নিরাপদ রাখুক। বৃষ্টি বোধকরি সংকট নয় তাইতো সকল প্রার্থনা উপেক্ষা করে সে পৃথিবীতে নামল। সুচের ন্যায় জমিনের ওপর পড়ল ওর এক একটা ফোঁটা। দেখতে দেখতে বৃষ্টির দাপট আরও বেড়ে গেল। কাঠের আগুন ছিল এদের রাতের আঁধার দূরীকরণের একমাত্র সম্বল। আজ সেটাও বার বার বৃষ্টির সাথে বয়ে আসা বাতাসে নিভে যাচ্ছে। একটা ছাউনির নিচে কয়েকজনের সাথে বসে আছে ইসাবেলা। ওর সাথের সকলে হা হুতাশ করছে এই অনিরাপদ জীবন নিয়ে। এতবড়ো পৃথিবী অথচ তাদের ঠাঁই হলো কেবল এই জঙ্গলে! খাবার নেই, পানি নেই। কী জীবন! তবুও এই জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। বাঁচার সাধ বুঝি এমনই!
“তুমি ঠিক আছো?”
ইশারায় জানতে চাইল ইসাবেলার পাশে বসা মেয়েটি। ওর বয়সও ইসাবেলার মতো। সতেরো কী আঠারো হবে। ওর নাম তালিয়া। ভাষা কখনও বন্ধুত্বের মাঝে দেয়াল হয় না। বন্ধুত্বের নিজস্ব এক ভাষা থাকে। চোখের ভাষা, মনের ভাষা। ইসাবেলা ম্লান হেসে মাথা নাড়ায়। তালিয়া ওর কম্পিত বাহুতে হাত রেখে বলল,
“না, তুমি ঠিক নেই। রীতিমতো কাঁপছ ঠকঠক করে। কোর্ট টা পরে নিচ্ছো না কেন বলোতো?”
কোলে রাখা নিকোলাসের কোর্টটার দিকে তাকাল। ধরে রাখা মুঠিটা শক্ত হয়। তালিয়া ওকে নতুন কাপড় দিয়েছে পরতে। সেই থেকে নিকোলাসের কোর্টটা ও এমনই করে কোলে রেখেছে। তালিয়ার কথাতে কোর্টটা পরে নিলো। কোর্টে এখনও নিকোলাসের গায়ের সেই সোঁদা মাটির গন্ধ রয়ে গেছে। হাতাটা মুখের কাছে এনে ও খুব করে শ্বাস টানল। মাটির গন্ধ এত চমৎকার হয়! তালিয়া হাসছে ওর দিকে চেয়ে। ইসাবেলা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। চট করে মুখের সামনে থেকে হাতটা সরিয়ে কোলের ওপর রাখে। তালিয়া এবার সামান্য শব্দ করে হাসে। ভারি রাগ হলো ইসাবেলার। এত হাসার কী আছে?
“তুমি খুব ভালোবাসো তাকে তাই না?” কোর্টটা আলতো ছুঁয়ে ইশারায় জানতে চাইল তালিয়া। ইসাবেলা সজোরে মাথা ঝাঁকাল। তালিয়া ফের হাসে।
“বলতে চাইছ স্বামীকে তুমি ভালোবাসো না?”
ইসাবেলার মনে পড়ল নিকোলাস এদের বলেছে ওরা স্বামী স্ত্রী। গাল ফুলিয়ে এমন একটা ভাব করল যে তালিয়া বুঝল পূর্বের কথাটা নিছক অভিমান ছিল। রাত যত বাড়ছে বৃষ্টিও বাড়ছে। ইসাবেলার দৃষ্টি বার বার যায় ওই পথে যে পথে নিকোলাস সহ বাকিরা খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছে। ওই মিশমিশে কালো আঁধারেও ওর দুইজোড়া চোখ কাওকে অস্থিরভাবে খুঁজে যায়। ভ্রমের ঘোরে আঁধারের ক্যানভাসে একটা মুখ ও বার বার দেখে। মনটা কেমন যেন করে। তখন বলেছিল নিকোলাসকে ও বিশ্বাস করে। এখন কথাটা ওকে বেশ ভাবাচ্ছে। এমনটা কেন বলেছিল? পরিস্থিতি মানুষকে ওই উপলব্ধি করিয়ে দেয় যা সে বার বার অবহেলা করে এড়িয়ে যেত। মন গহিনের সুপ্ত চেতনা তখন হঠাৎই জাগ্রত হয়। নির্ভয়ে প্রকাশিত হয় দিনের আলোর ন্যায়। সেই প্রকাশিত আলো নিয়ে ওর মনের মধ্যে একচোট দোনোমোনো চলে। দিনান্তে এসে বুঝিয়ে দেয় ঘৃণিত ব্যক্তিকে মানুষ বিশ্বাস করে না। হয় ওর বিশ্বাস মিথ্যা নয়তো ওর ঘৃণা। ঘৃণায় যদি করবে তবে এভাবে পথে চেয়ে থাকা কেন? বিদায়কালে নিকোলাস ওর কপালে চুমো খেয়েছিল। নিকোলাস রক্তচোষা পিশাচ। সে রক্তখাবে, চুমু কেন খেল? মাথাটা বড্ড ধরল এবার ওর। একে না খাওয়া তার ওপর এই ভাবনা বেশ নাজেহাল করছে। গা থেকে কোর্টটা খুলে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে হিম বাতাস ধা করে এসে লাগল গায়ে। কাঁপুনি দিয়ে ওঠে শরীর।
“ও কী! কোর্ট খুললে কেন?”
তালিয়ার প্রশ্নে ইসাবেলা প্রত্যুত্তর করল না। দৃষ্টি সামনে স্থির। সে তাকাবে না ও পথপানে। যখন আসার আসবে নিকোলাস। এত কেন ভাববে ওকে নিয়ে? তালিয়া ওর পরিবর্তন লক্ষ্য করল। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসল ও। ইসাবেলা খেয়াল করতে হাসিটা নিভে যায়। মুখখানা কেমন গম্ভীর হয়ে আছে ইসাবেলার। ওর এই গম্ভীরতার জন্য দায়ী মনের এই গোলযোগ। সারারাত এভাবেই বসে রইল। ভোরের দিকে বৃষ্টিটা কমল খানিকটা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে এই মুহূর্তে। চোখটা লেগে এসেছিল। শোরগোল শুনে চমকে উঠে বসল।
“স্যামুয়েলরা এসে গেছে।”
তালিয়া বলল। স্যামুয়েল লিডারের ভাই। তালিয়ার সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক। কথাটা আশ্রমের সকলে কমবেশি জানে। স্যামুয়েল ভেজা শরীরে ঘোড়া থেকে নামতে ছুটে গিয়ে ওকে নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল তালিয়া। ঠোঁট বাড়িয়ে চুমু খেল। আগামি কয়েকদিনের জন্য যথেষ্ট খাবার আনা হয়েছে। সকলে পেট ভরে আহার করছে। এই পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রেখেছে নিকোলাস। লিডার সেটাই সকলকে বলছে। খেতে খেতে সকলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল নিকোলাসের প্রতি। ইসাবেলার জন্য খাবার নিয়ে এলো তালিয়া। সবটা সে ইশারায় বলল ওকে।ইসাবেলা হাসিমুখে খাবার গ্রহণ করলেও খায় না। এদের সাথে নিকোলাস নেই। তালিয়াকে ও বলে স্যামুয়েলকে প্রশ্ন করতে। একটু পর সেখানে স্যামুয়েল নিজেই চলে এলো। সে বলে, বৃষ্টির জন্য ওদের ফিরতে বিলম্ব হয়েছে। ভোরের কিছু আগ দিয়ে বৃষ্টি কমলে রওনা হয়, কিন্তু নিকোলাস সাথে ছিল না। কোথায় গেছে দলের কারো জানা নেই। ইসাবেলার তখন খেয়াল হলো ভোরের আগে নিকোলাস অন্ধকারে আশ্রয় নেয়। তখন সে কেবল মৃত। স্যামুয়েল ওকে আশ্বস্ত করে নিকোলাস ফিরে আসবে। ইসাবেলার মন যেন কী এক চিন্তায় ছটফট করতে লাগল। তালিয়া ওকে অনেকবার বুঝিয়ে সামান্য কিছু খাওয়াতে সক্ষম হয়। তারপর স্যামুয়েলকে সাথে করে চলে গেল ও। বেলা বাড়তে সূর্য উঁকি দেয় মেঘের ফাঁকে ফাঁকে। নিকোলাস এখন ফিরবে না জেনেও ইসাবেলা পথ চেয়ে বসে আছে। স্যামুয়েল দূর থেকে ওকেই দেখছিল। ওদের দৃষ্টি এক হতেই একটুখানি ম্লান হাসল স্যামুয়েল। জোরপূর্বক হাসে ইসাবেলা। স্যামুয়েলের দৃষ্টি ওকে অস্বস্তি দেয়। উঠে দাঁড়ালো ও। হাঁটতে হাঁটতে আশ্রম থেকে একটু দূরের একটা গাছের নিচে বসল। জায়গাটা গতরাতের বৃষ্টিতে ভেজা, কর্দমাক্ত। নিকোলাসের কোর্টটা খুব সাবধানে যত্ন করে কোলের মধ্যে রেখেছে।
“এখানে একা কী করছ?”
চকিতে ঘুরে তাকাল ইসাবেলা। স্যামুয়েল গাছের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো। জবাব না পেয়ে এগিয়ে এসে পাশে বসল। গায়ে গা লাগতে পারত কিন্তু ইসাবেলা সরে বসেছে। স্যামুয়েল এমন ভাব করল যেন খেয়ালই করেনি।
“বললে না কী করছ একা? ”
“কিছু না।” মাথা নাড়িয়ে বুঝাল ও। স্যামুয়েল ওকে দেখছে। ইসাবেলার খুব অস্বস্তি হচ্ছে এবার। উঠে দাঁড়াবে ভাবতে স্যামুয়েল ওর কোলের কোর্টটা ছুঁয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“স্বামীকে খুব ভালোবাসো দেখছি।”
ইসাবেলা বুঝল না ওর কথা। কপাল কুঁচকে গেল স্যামুয়েলের ম্লান হাসি দেখে। ইসাবেলার চোখে চোখ রেখে বলল,
“চলো উঠি। এই স্থান নিরাপদ নয়।”
ইসাবেলা ওর কথাতে উঠে দাঁড়ায়। ওরা আশ্রমের কাছাকাছি যেতে একটা হট্টগোল শোনা গেল। তালিয়া চিৎকার করে স্যামুয়েলকে ডাকতে ডাকতে এদিকেই এলো।
“সৈন্যরা এদিকে আসছে। আমাদের পালাতে হবে স্যামুয়েল।”
অশ্বরব আর মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া যুদ্ধ বিমান দেখে স্যামুয়েল আতঙ্কিত হলো। ইসাবেলার হাতটা ও শক্ত করে ধরেছে।
“এসো।”
“কোথায়?”
“এখান থেকে পালাতে হবে আমাদের। খুব তাড়াতাড়ি।”
ইসাবেলা হাতটা টেনে ছাড়িয়ে নেয়। স্যামুয়েল ওর দিকে অসন্তোষে তাকাল। ইসাবেলার প্রতি ও আকর্ষণ অনুভব করে। বিবাহিতা জেনেও তা কিছুমাত্র কমে না। এমন নয় যে তালিয়াকে ও ভালোবাসে না। ভালোবাসা আর আকর্ষণে প্রভেদ তো আছে। অদূরে নাৎসি সৈন্যদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছে ওরা। তালিয়া স্যামুয়েলের হাত ধরে টানল,
“চলো স্যামুয়েল।”
স্যামুয়েল অন্যহাতে আবার ইসাবেলার হাত ধরতে যায়। তালিয়া সন্দিগ্ধ চোখে তাকাল সেদিকে। স্যামুয়েলের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায় ইসাবেলা।
“তোমরা যাও। আমি নিকোলাসের জন্য অপেক্ষা করব। ওকে দেওয়া ওয়াদা ভাঙতে পারব না আমি।”
“পাগলামি করো না। নাৎসিদের হাতে পড়লে ওয়াদাও ভাঙবে সাথে তুমিও মরবে।”
তালিয়া এবার টেনে নিয়ে চলো ওকে। একপলক স্যামুয়েলের দিকে তাকাল সে। এখনও ইসাবেলার দিকেই তাকিয়ে আছে। ঈর্ষার কাঁটা খুব করে বিঁধল বুকে। চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আশ্রমে সকলে বনের দক্ষিণ দিকে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। তালিয়া ইসাবেলাকে টানতে টানতে সেদিকে ছোটে। স্যামুয়েল ওদের পেছনে।
“ওই যে পালাচ্ছে ওরা। ধরো ওদের।”
পেছনে নাৎসি সৈন্যদের চিৎকার। একটু পর গুলির শব্দ কানে এলো। চোখের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল কয়েকজনের দেহ। কিছুক্ষণ মৃত্যুযন্ত্রনা সয়ে নিভে গেল ওদের প্রাণ প্রদীপ। আতঙ্কে এলোমেলো ছুটছে সবাই। তালিয়া ছুটতে ছুটতে তাকাল ইসাবেলার আতঙ্কিত মুখের দিকে। স্যামুয়েল সামনে লিডারদের সাথে। একটু পর পর সে ওদের দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত হচ্ছে। তালিয়া হঠাৎ ইসাবেলার হাত ছেড়ে দিলো। সরে গেল ওর কাছ থেকে। একা দিশাহীন এদিক ওদিক ছুটতে লাগল ইসাবেলা। গুলির শব্দ ওকে ভীতসন্ত্রস্ত করে। কোনদিকে যাবে ঠিক করতে পারে না। ওর সামনের দুজন ইহুদি মহিলা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। ঠিক তার পরেই একটা গুলি এসে লাগে ওর ডান পায়ে। আর্তনাদ করে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে ও। স্যামুয়েল ওর নাম ধরে চিৎকার করে ওঠে। ও এদিকেই আসছিল কিন্তু হঠাৎ থেমে গেল ওর পা। লিডার এবং কয়েকজন ওকে টেনে নিয়ে চলে গেল দৃষ্টি সীমার বাইরে। তালিয়াকে দেখল শেষবার। কাঁদছিল সে। ইসাবেলা রক্তাক্ত পা টেনে টেনে এগোতে লাগল সামনে। ঘোড়ার খুরের শব্দ ধীরে ধীরে ওর নিকটে আসছে। সাথে নাৎসি সৈন্যদের পৈশাচিক উল্লাস। আহত ইসাবেলাকে ওরা ঘিরে ধরে। এক একজনের চোখে পৈশাচিকতা। যেন নরক থেকে এইমাত্র পৃথিবীতে নেমে এসেছে। ওদের মধ্যে থেকে একজন হেঁটে এলো ইসাবেলার দিকে। ঠোঁটের হাসি জানান দেয় ওর কুপ্রবৃত্তি মনোভাবের। লোকটা ইসাবেলার চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলল। চোয়াল চেপে ধরে লোলুপ চোখে চেয়ে বলল,
“বেশ খাসা মাল জুটেছে আজ।”
জিহ্বা দিয়ে ইসাবেলার গালটা চেটে পৈশাচিক হাসি হাসল মধ্যবয়সী সৈন্যটা। বাকিও মেতে উঠল অট্টহাসিতে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে ইসাবেলা। অস্পষ্ট হয়ে এলো চোখের সামনেটা। লোকটা ওর বুকের এক স্তন খুব জোরে চেপে ধরেছে। চেয়েও তার হাতটা সরাতে পারছে না ইসাবেলা। চোখ দুটো ভিজে আরো ঝাপসা লাগছে দৃষ্টি। লোকটার মুখ ঝুঁকে এলো ওর ঠোঁটের দিকে। চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে মাথাটা এগিয়ে আনল। ইসাবেলা শক্তি সঞ্চয় করে মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।
“সুন্দরী দেখি চুমু খাবে না।”
হাসতে হাসতে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো ইসাবেলাকে। ব্যথায় ককিয়ে উঠল ও। কিছু বুঝার আগেই শয়তানটা ঝাপিয়ে পড়ল ওর দুর্বল দেহের ওপর। সম্ভ্রম বাঁচাতে চিৎকার করে সাহায্য চায়। কিন্তু কেউ আসে না। লোকটার অপবিত্র স্পর্শ ওর পবিত্র শরীরে বিচরণ করে। সেটা সরিয়ে দিতে গিয়েও পারে না। চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে ধীরে ধীরে। এই দুঃসময়ে একটা নামই মনে এলো। ডাকল,
“নিকোলাস।”
এবং তখনই পরিচিত সেই সুবাস পেল। সেই সোঁদা মাটির গন্ধ। বিশ্রী অপবিত্র স্পর্শটা থেমে গেল। বিকট একটা গর্জন শুনতে পায়। আর অনেক মানুষের আর্তনাদ। মানুষ! না, ওরা মানুষ নয়। ওর ওপর থেকে অসহ্য ভারটা সরে যায়। বড্ড হালকা লাগে। আহত তনুমন কাতর হয়ে অপেক্ষা করে একটা উষ্ণ স্পর্শের। নিরাপদ একজোড়া বাহুবন্ধনের। অপেক্ষার অবসান হয়। নিরাপদ বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয় ও। দুর্বল হাতে নিকোলাসের গলা জড়িয়ে ধরে মুখ লুকায় ওর ঘাড়ে। ফুঁপিয়ে কাঁদে।
“নিকোলাস, নিকোলাস।”
“এই তো আমি এসেছি বেলা। আর কেউ ছোঁবে না তোমায়। আর কোনো ভয় নেই তোমার।”
স্বস্তিতে চোখ বন্ধ করল ইসাবেলা।
চলবে,,