#সিঁদুর শুদ্ধি
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৪০
.
সকাল থেকেই শ্যামল বাবু নিজের শরীরের রেসপন্স পাচ্ছে। তার হাত-পা সহ সারা শরীরে জোর পাচ্ছে। নিজের শরীরের উপর থেকে কম্বলখানা ফেলে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে স্লিপারে পা গলিয়ে আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হল। এই কয়েকদিন ধরে পরিবারের উপর দিয়ে যা ঝড় গেল তাতে শ্যামল বাবুর এমন ঠিক হয়ে যাওয়াটা পরিবারের জন্য সুখের বৈ কি!
সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। কেউবা এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। শ্যামল বাবু সিড়ি দিয়ে নেমে সোজা কিচেনে চলে গেল, কারন সেখানেই সাধনাকে পাওয়া যাবে। হুম সেখানেই সাধনা দেবীকে পাওয়া গেল। শ্যামল বাবু সাধনা বলে ডাকতেই সাধনা দেবী চমকে উঠে পিছন ফিরে দেখলো, শ্যামল বাবু দাড়িয়ে আছে। নিজ স্বামীকে দেখে সব স্ত্রীই এখন তার জায়গায় থাকলে খুঁশি হত কিন্তু আজ সাধনা দেবী খুঁশি হওয়ার চেয়ে তার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
কাজের মেয়েটা শান্তি, কর্তাবাবু বলেই চিৎকার দিয়ে উঠলো। কিচেন থেকে বের হয়েই সবাইকে ডাকতে গেল। কিন্তু সাধনা দেবীর নড়াচড়ার কোন ব্যস্ততা দেখা গেলোনা। বরং অপরাধীর মত চোখে জল নিয়ে মাথা নিচু করে রইল। শ্যামল বাবু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সাধনা দেবীকে বলল,
—” ডাইনিং রুমে সবাইকে এক্ষুনি ডাকো।”
সাধনা দেবী মাথা নিচু করেই কিচেন থেকে বের হয়ে গেল। শ্যামল বাবু নিজেও জানেনা বিদ্যা কোন অবস্থায় আছে। কিন্তু অভির উপর তার পুরো আস্থা রয়েছে। সে থাকতে বিদ্যার কিছু হবেনা। তবুও বুকের ভিতর একটা চাপা উত্তেজনাময় কষ্ট রয়েই যায়। বৃন্দার মত যদি বিদ্যারও একই হাল হয় তাহলে কি হবে? শ্যামল বাবু আর কিছু ভাবতে পারেনা। চোখের কোনে জল চিকচিক করছে। তাকে আরও শক্ত হতে হবে। কোন অবস্থায় দুর্বল হওয়া যাবেনা। ঈশ্বর সহায় হও বলেই কিচেন থেকে বের হতেই দেখল, বাসার ছোট-বড় সবাই উপস্থিত হয়েছে। শ্যামল বাবু একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল তাদের কাছে।
শ্যামল বাবুকে দেখেই শর্মিষ্ঠা গিয়ে বড় দাদার পা চেঁপে ধরলো। করুন কণ্ঠে কেঁদে উঠে বলল,
—” দাদা আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে দয়া করে এই বাসা থেকে তাড়িয়ে দিবেন না। আমার দুই সন্তান ছাড়া আমি কোথায় যাব বলেন! তাদের ছাড়া আমি বাঁচতে পারবোনা।”
তোমার দুই সন্তানের কথা মনে করে তুমি কাঁদছো কিন্তু তোমার একবারও মনে হয়নি, আমার ঐ একটা আদরের মেয়েকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো? তুমি এমন কাজ কোন বিবেকে করেছ? কথাগুলো এক শ্বাসে বলে ফেলল শ্যামল বাবু।
সাজিত ওর বড় দাদার কাছে এসে বলল,
—” দাদা, আমি ডিসিশন নিয়েছি ওকে ডির্ভোস দিব। ওর মুখ দেখতেও আমার ইচ্ছা করছেনা। ও যে কাজ করেছে তার কোন ক্ষমা নেই।”
সাজিত কথাগুলো শেষ করতে পারেনা তার আগেই শ্যামল বাবু ওর গালে কষে একটা চড় মেরে বলল,
—” আজ তোর স্বার্থে লাগার জন্য তুই বৌমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছিস? হ্যারে সাজিত তুই কি এমনই! যখন তোর কাউকে ভালো লাগবেনা তখনই তাকে তুই ছেড়ে দিবি? আর কত….. করবি এমন ঘটনা? তোর লজ্জা থাকা উচিত। ”
শ্যামল বাবুর এমন কান্ডে বাসার সবাই ভয় পেয়ে গেল। কারন সবাই কমবেশি এতে দোষী। শ্যামল বাবু কঠোর ভাষায় বলল,
—” আমার মেয়ে বিদ্যা। এটা যদি কারো মানতে কষ্ট হয় তাহলে সে যেন এখুনি বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তাকে আমি দরজা অবদি এগিয়ে দিয়ে আসবো। ফের যদি কেউ এমন কথা বলে তাহলে তার সাথে আমি আমার সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলব।”
শ্যামল বাবু কথাগুলো বলে বিদ্যার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে কাঁদতে লাগলো। তারপর বলতে লাগলো, মাগো তুমি কোথায়? আমি এখন তোমাকে কই থেকে খোঁজবো। তোমার অবস্থান কোথায় আমি কি করে জানবো! আমি এতই হতভাগ্য পিতা, যে কিনা কয়েকটা মাসও নিজের কাছে মেয়েকে নিরাপদে রাখতে পারেনা। শ্যামল বাবু আর সময় নষ্ট না করে বিদ্যার ফোন খুঁজতে লাগলো কিন্তু কিছুই পেলোনা। তাই বার্ধ্য হয়ে সেখান থেকে নিজের রুমে চলে আসলেন। ফোনটা নিয়ে প্রথমে বিদ্যাকে কল দিল কিন্তু নাম্বার বন্ধ পেল। অভির নাম্বারও বন্ধ পেল। এখন কি করা যায় বলতেই কাবিরের কথা মনে পড়লো। সাথে সাথে কাবিরকে কল দিল।
কাবির আজ সকাল সকাল অফিস যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছিল। এমন সময় ফোনে দাদুর নাম্বার দেখে রিয়াকে ডেকে ফোন রিসিভ করতে বলল।
রিয়াও জলদি এসে কল রিসিভ করেই বলল,
—” দাদু আপনি কেমন আছেন? বাসার সবাই কেমন আছে?”
—” ভাল আছি, তুই কেমন আছিস? কাবির থাকলে ওকে একটু ফোনটা দে তো!”
দাদুর কথা শুনে রিয়া দ্রুত কাবিরকে ফোন দিয়ে বলল, দাদু কথা বলবে। কথাগুলো বলে রিয়া কাবিরের টাই বেঁধে দিতে লাগলো।
—” নমষ্কার দাদু, কেমন আছেন?”
বাবা তোমাকে একটা দরকারে কল দিয়েছি। আমার হাতে তেমন সময় নেই। অভির সাথে আমার কিছু কথা আছে কিন্তু ওর নাম্বারটা বন্ধ। তোমার কাছে কি ওর আলাদা কোন নাম্বার আছে? যদি থাকে আমাকে দাও। কথা গুলো প্রায় এক শ্বাসেই বলে ফেলল শ্যামল বাবু।
কাবির বিচলিত হয়ে বলল,
—” অভিতো আমার বিয়ের পরেরদিনই UK তে ফিরে গেছে। তাই ওর নাম্বার বন্ধ পাবেন। কিছু কি হয়েছে দাদু?”
না বাবা তেমন কিছু নয়। আমার একটা কাজের দায়িত্ব ছিল ওর উপর, সেটা ও ঠিকমত করেছে কিনা সেটাই জানতে চেয়েছিলাম। এর বেশি আর কিছু নয় বলেই ফোন কেটে দিল শ্যামল বাবু। অস্থিরতায় পুরো শরীর কাঁপছে শ্যামল বাবুর। বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দৃশ্যমান হয়েছে। অভি চলে গেছে! না না এ হতে পারেনা। অভির উপর সমস্ত দায়িত্ব দিয়েছি বিদ্যার। ও থাকতে বিদ্যার শরীরে কেউ কোনদিনও আচড় কাটতে পারবেনা। এত ভরসা করে বসে থাকলে হবেনা। যদি অভি আসার আগে ঐ পিশাচ বিদ্যার কাছে পৌছে যায় তাহলে কি হবে? আর ভাবতে পারছেনা শ্যামল বাবু।
এমন সময় রুমে রিভা এসে বলল,
—” দাদু, এই বাসার সবাই খারাপ। তারা সবাই বিদ্যা পিসিকে কেমন করে নির্যাতন করেছে। তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে পর্যন্ত রেখেছিল। দু’দিন খাবার দেয়নি। শেষে ওরা পিসিকে মেরে ফেলার জন্য এক তান্ত্রিককে সকালে ডাকতে চেয়েছিল। রাতে যখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম তখন স্বপ্নে কেউ একজন বলে গেল, পিসিকে যদি মুক্ত করে বাসা থেকে বের করতে পারি তাহলে পিসির জিবন বাঁচবে। এর পরই আমি জেগে উঠে দ্রুত চাবি নিয়ে গিয়ে পিসিকে মুক্ত করে বাসা থেকে বের করে দেই। পিসি খুব কাঁদছিল। আমি আর কিছু করতে পারিনি দাদু। আমার কষ্টে বুকটা মনে হয় ফেটে যাচ্ছিলো।”
কথাগুলো বলেই রিভা কাঁদতে লাগলো। আমি কাউকে কিছু বলতে পারিনি দাদু। ওরা খুবই নিষ্ঠুর।
শ্যামল বাবু রিভার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
—” কেঁদোনা দিদিভাই, শুধু প্রার্থনা করো আমরা যেন, বিদ্যাকে খুঁজে পাই। বিদ্যার ব্যাপারে এই কথাগুলো আর কাউকে বলোনা। তুমি এখন যাও।”
রিভা দাদুর কথা শুনে চলে গেল। কিন্তু শ্যামল বাবুর দুশঃচিন্তা যেন আরও বেড়েই গেল। কে রিভার স্বপ্নে এসেছিল? অভি না ঐ পিশাচটা। আমি এখন কিভাবে জানবো এটা। পিশাচটা হয়তো বাসায় বিদ্যার ক্ষতি করতে পারছিলনা বলে রিভাকে দ্বারা অতি কৌশলে বিদ্যাকে বাসা থেকে বের করার চেষ্টা করেছিল। আর ভাবতে পারছিনা বলেই ফোনটা হাতে নিয়েই রুম থেকে দ্রুত বের হতেই সাধনা দেবী বলল,
—” এই সকালে তুমি কই যাচ্ছো? তোমার শরীর এমনিতেই খারাপ। ডাক্তার বাবু একটু পর তোমায় চেকাপ করতে আসবেন। দয়া করে এইসময় কোথাও যেওনা।”
শ্যামল বাবু পিছন ফিরে কঠোর চোখে সাধনা দেবীর দিকে চেয়ে হাতের আঙ্গুল উঁচু করে চুপ হতে বলল। সে সাধনার কোন কথায় শুনতে চায়না। আমাকে যদি কেউ অসুস্থ বানিয়ে থাকে তাহলে সেটা তুমি বানিয়েছ। তোমার কোন মাফ নেই বলে শ্যামল বাবু দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে গেল। সাথে কোন ডাইভারও নেয়নি। একা বেরিয়েছে গাড়ী নিয়ে। গন্তব্য অভির বাসা। যদি সেখান থেকে কিছু খোঁজ পাওয়া যায়।
কিছুক্ষন পর ডাইভার এসে সাজিতকে বলল,
—” দাদা, বড় দাদা তো আমাকে না নিয়েই একা গাড়ী নিয়ে কোথায় যেন বের হয়ে গেল। দাদাবাবুর শরীর তো বেশ খারাপ দেখলাম।”
কথাগুলো শুনে ধপ করে নিচে বসে পড়লো সাধনা দেবী। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল,
—” সাজিত, আমরা খুবই ভুল করে ফেলেছি, যেই ভুলের কোন মাষুল নেই। আমি তার সামনে আর দাড়াতেই পাড়িনা। তার চোখে সব থেকে ঘৃনার পাত্র আমি। আমার কোন কথায় সে শুনতে চায়না।”
বৌদি সব ঠিক হয়ে যাবে বলেই সাজিত বাসা থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেল। বাসার সবার কোন কথা নেই। নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া কোন উপায় নেই তাদের। ঘটনা গুলো যেন তাদের মুখের কথা কেড়ে নিয়েছে।
♦
সকাল পার হয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেল। এমনকি সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ৮টা বেজে চলছে, তবুও শ্যামল বাবুর কোন খোঁজ নেই। সাধনা দেবী এক কান্নায় আছে। ছেলেরা সহ তার বউগুলো ভয়ে তার কাছে যেতে পারছেনা। বাবার নাম্বার বরাবরই বন্ধ দেখাচ্ছে। দাদুকে পাওয়া যাচ্ছেনা শুনে রিয়া আর কাবির বাসায় চলে এসেছে। এসে যা শুনলো তাতে তাদের বুক কেঁপে উঠলো। বিদ্যার সাথে এহেন পরিনিতি কাবির কিছুতেই মানতে পারলোনা। তারা নিজের পরিবার হয়ে কিভাবে নিজেদের মেয়ের সাথে এমন কাজ করতে পারলো? দাদু কি এই জন্যই অভির কথা জানতে চেয়েছিল? কিন্তু অভির সাথে বিদ্যার সম্পর্ক রয়েছে সেটা দাদু কিভাবে জানলো? অভিও তো দেশে নেই। নাহ্ বিদ্যার জন্য খুব খারাপ লাগছে কাবিরের। সে বিদ্যাকে খুব পছন্দ করতো। যদি অভির প্রেমিকা না হত তাহলে সে চেষ্টা করতো বিদ্যাকে নিজের কাছে আনার। কিছু ভালো লাগছেনা। কাবির রিয়াকে রেখে ঐ রাতেই বাসা হতে বের হল। এখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কিন্তু রিয়া থেমে থাকলোনা। বিশেষ করে তার মা আর দিদাকে কথার মাধ্যমে চেপে ধরলো। শর্মিষ্ঠা দিদা পিসিকে আগে থেকেই দেখতে পারতোনা সেটা আমরা মোটামুটি সকলে জানতাম। কাকিরাও কোনদিন পিসির আপন হবেনা সেটাও সকলের জানা। কিন্তু তোমরা দু’জনে কিভাবে পারলে এসব করতে? তোমাদের মন একবারও তোমাদের বাঁধা দিলোনা? আর মা! তুমি না বলতে, আমার বড় দিদি পিসির রুপে আবার জন্ম নিয়েছে। তাহলে তুমিও এদের সায় দিয়েছ?
রিয়ার মা যদিও এসবে দায়ী নয় তবুও চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে বলল,
—” মা, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার উচিত হয়নি এসব মানুষরুপী স্বার্থপরদের উপর ভরসা করা। যাদের কোন যোগ্যতাই নেই ভরসা পাওয়া। সবার আগে তোর বাবাকে বল। সে নিজে বলেছে বিদ্যা এই বাসার কেউ নয়। সাথে সবাই মদত দিয়েছে।”
রিয়া ওর বাবার দিকে শুধু একবার তাকালো তারপর ঘৃনায় মুখটা সরিয়ে নিয়ে কারো সাথে কোন কথা না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। এখানে থাকা সম্ভব নয়। বাহিরে এসে দেখলো, কাবির বাসার বাহিরে গাড়ী নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রিয়া গাড়ীর কাছে গিয়ে বলল,
—” তুমি এখনো যাওনি বাসায়?”
—” আমি জানতাম তুমি এখানে থাকতে পারবেনা। তাই অপেক্ষায় ছিলাম তোমার জন্য।”
কাবিরের কথা শুনে রিয়া ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
—” অভিদা কে আমরা কি জবাব দিব? উনিতো যে পাগল! কাউকে ছাড় দিবেনা।”
কাবির আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা। রিয়াকে বুকের সাথে চেঁপে ধরতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। তারপর হতাশার সাথে বলে উঠলো,
—” আমার জানা নেই, অভিকে কি বলব আমি।”
এদের কথার ভিতরই একটা কার এসে থামলো ওদের গাড়ীর কাছে। তারপর গাড়ী থেকে একটা মহিলা বের হল। মহিলাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অভিজাত ঘরের মহিলা। মহিলাটি কাবিরের কাছে এসে বলল,
—” বাবা, এটা কি বিদ্যা ত্রিবেদীর বাসা?”
এক টুকরো আসার আলো জ্বলে উঠলো কাবিরের মনে। হ্যাঁ এটা বিদ্যা ত্রিবেদীরই বাসা। আপনারা তাকে কেন চান? কাবির ভেবেছিল তাদের কাছে বিদ্যা রয়েছে।
মহিলাটি ক্ষীন হেঁসে বলল,
—” আমি বিদ্যার শাশুড়ী মা। আমরা আজই ইন্ডিয়া থেকে এসেছি। বিদ্যার ফোন বন্ধ তাই যোগাযোগ করতে পারিনি।”
অপু পিসের মা আপনি! কথাটি বলেই রিয়া বিশ্ময়ের সাথে অঞ্জনা দেবীর দিকে চাইলো।
অঞ্জনা দেবী মৃদ্যু হেসে বলল,
—” হ্যাঁ মা, ঠিকি ধরেছ। কিন্তু তোমাকে তো চিনতে পারলামনা।”
আমি পিসির ভাতিজী। চলেন আমার সাথে বলে অত্যান্ত টেনশনে রিয়া এগুতে লাগলো বাসার দিকে। কিন্তু অঞ্জনা দেবী মাঝপথে থেকে দেবকী বলে ডাকতেই একটা মহিলা গাড়ী থেকে বের হল। রিয়া থমকে পিছন ফিরে দেখলো, আরও একটা মহিলা গাড়ী থেকে বের হল। এই বয়সে এতটা সুন্দর কোন মহিলা হতে পারে সেটা রিয়ার জানা ছিলোনা। অপূর্ব দেখতে। তাকে দেখলেই যে কেউ বলবে তিনি বনেদি ঘরের মেয়ে। দেবকী দেবী এসে বলল,
—” দিদি, বিদ্যার খোঁজ পেয়েছ?”
হুম এটাই বিদ্যার বাসা বলে দেবকীর হাত ধরে ওকে নিয়ে রিয়ার পিছু পিছু বাসায় ঢুকলো। তাদের সাথে কাবিরও বাসায় ঢুকলো। বাসায় তখনো সবাই বিদ্যাকে নিয়ে আলোচনা করছিল। সাধনা দেবী অঞ্জনা দেবীকে দেখে চমকে উঠলো। ২৫ বছর পর দেখছে, তবুও তাকে চিনতে ভুল হয়না। রিয়া মনে সাহস সঞ্চয় করে বলল,
—” মা, বিদ্যা পিসির শাশুড়ী এসেছেন। ওনারা আজই ইন্ডিয়া থেকে এসেছেন।”
রিয়ার কথা শুনে সবাই হচকিয়ে ওঠে। রিয়ার মা আগে এসে তাদের সম্মানের সাথে বসতে বলল। কিন্তু অঞ্জনা দেবীর সাথে সাধনা দেবী একেবারও কথা বললোনা। বাসার সবাই অতিথী আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিন্তু সবার মনে একরাশ ভয় এসে তাদের চেঁপে ধরলো। যদি তারা বিদ্যাকে চায় তাহলে কি জবাব দিবে! তারা মনে মনে যা ভয় করছিল, সেই ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিয়ে অঞ্জনা দেবী বলল,
—” আমাদের জন্য এত কিছু করতে হবেনা। যদি একটু বিদ্যাকে ডেকে দিতেন! ওর সাথে কিছু কথা আছে। আমরা কালই ব্যাক করবো।”
অঞ্জনা দেবীর কথা শুনে সাধনা ফস করে বলে উঠলো,
—” কেন, আবার বিদ্যাকে নিতে এসেছেন নাকি! একবার ওর জিবন নষ্ট করে আপনাদের মন ভরেনি! আবার নষ্ট করার জন্য এসেছেন এখানে?”
অঞ্জনা দেবীও কম না। সাধনার কথার জবাব দিতে যাবে এমন সময় দেবকী ওর দিদির হাত চেঁপে ধরে বলল,
—” দিদি, আমরা ওকে নিতে আসিনি। ওর সাথে একটু দেখা করতে চাইছিলাম। ২৫টা বছর সে আমাদের কাছে ছিল, বোঝেন তো একটা মায়ার জিনিস সে। ওকে ডেকে দেন। আমরা শুধু ওকে দেখেই চলে যাব।”
দেবকীর কথা শেষ হলেই শ্যামল বাবু বাসায় ঢুকতেই সাধনা দেবী চিৎকার দিয়ে বললেন,
—” ঐ যে এসেছেন একজন, যিনি পরিবারের কথা না ভেবে গোলামের মত তাদের পিছে ঘুরবেন। বিদ্যার সাথে কথা বলাতো দুরে থাক, আমি দেখাও করতে দিবোনা। আপনারা এখুনি এই বাসা থেকে চলে যান। আপনার মনে আছে, আমি যখন আমার মেয়েকে আপনার কাছে নিতে গিয়েছিলাম তখন আপনি কেমন ব্যবহার করেছিলেন? আপনার ছেলের দোষ কাটাতে আমার ছোট্ট মেয়েকে আপনারা বলির পাঠা করেছিলেন। অনেক হয়েছে, আর না।”
২৫ টা বছর ধরে এই হাত দিয়ে আমি বিদ্যাকে মানুষ করেছি। মুখে খাবার তুলে দিয়েছি, চুল বেঁধে দিয়েছি, গোসল করে দিয়েছি, পড়ালেখা শিখিয়েছি, শিখিয়েছি কিভাবে বিপদে ধর্য্য ধরে চলতে হয়, এই বুক দিয়ে আগলে রেখেছি। আর আমার ছেলের কথাতো বাদই দিলাম। সে যতদিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল ততদিন পর্যন্ত বিদ্যাকে মাথায় তুলে রেখেছিল। বিদ্যা আপনাদের কাছে মাত্র ৬ বছর ছিল আর আমি দীর্ঘ ২৫টা বছর ওকে বুকে আগলে রেখেছিলাম। এখন আপনি যদি এসব কথা বলেন তাহলে আমার তাতে যায় আসেনা। আমি আমার বৌমা রুপী মেয়ের সাথে দেখাতো করবই। কথা গুলো সাধনার মুখের উপর বলল অঞ্জনা দেবী।
শ্যামল বাবু এসে অতি নম্ন স্বভাবে বলল,
—” কি আমার ভাগ্য, বৌদি আমার বাসায় এসেছে। রঘু থাকতে আর আসেননি বৌদি, আপনাদের আসতে কোন অসুবিধা হয়নিতো?”
অঞ্জনা দেবী হাত জোড় করে নমষ্কার জানিয়ে বলল,
—” ভালো আছি দাদা। বিদ্যাকে বড্ড দেখতে মন চাচ্ছে। জানেনই তো, কত দিন তাকে দেখিনি। যদি দয়া করে আমাকে ওর সাথে দেখা করতে দিতেন?”
শ্যামল বাবুর মুখ শুখিয়ে গেল কথাটা শুনে। এখন ওনাদের কি বলবে? সারাটা দিন পাগলের মত মেয়েটাকে খুঁজেছে কিন্তু কোথাও তার দেখা মেলেনি। কি জবাব দিবে তাদের। শ্যামল বাবু জোড় করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, আরে বৌদি, এত তাড়াহুড়ার কি আছে? আপনাদেরই তো মেয়ে। সে দেখা হয়ে যাবে। বসেন, নাস্তা করেন, একটু গল্পগুজব করেন। ততক্ষনে বিদ্যা চলে আসবে। আসলে বিদ্যা একটু বাহিরে চলে গেছে। এই চলেই আসবে বলে তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
আপনি ওনাদের মিথ্যা কথা বলছেন কেন? আপনি তাদের সত্যটা বলেন, বিদ্যাকে কয়েকদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছেনা। আজ বিদ্যার সাথে যা ঘটেছে তার সূচনা তারাই আগে করেছিল। তাদের মুখও দেখতে চাইনা আমি। তাদের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন বলেই দরজার দিকে হাত দিয়ে নির্দেশ করলো সাধনা দেবী।
এবার শ্যামল বাবু অত্যান্ত রেগে গেল তার স্ত্রীর উপর। শশুড়ের এমন রাগী চেহারা দেখে আকাশী তার শাশুড়ীকে কিচেনে টেনে নিয়ে যেতেই অঞ্জনা দেবী হাতে তালি বাজিয়ে বলল,
—” মেয়েকে ভালোবাসেন! এই আপনাদের নমুনা! ৩ মাস মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে পারেননি। আবার সেই মুখে বড় বড় বুলি আউড়াচ্ছেন? কই, আমার কাছেও তো এতদিন ছিল তখন তো সে হারিয়ে যায়নি। তার বিরুদ্ধে খারাপ রির্পোট কোনদিনও কেউ দিতে পারেনি। আর আপনার এখানে এসে মেয়ে আমার হারিয়ে গেল!”
দেবকী ওর দিদিকে চুপ থাকতে বলে শ্যামল বাবুকে বলল,
—” দাদা, আমাকে একবার বিদ্যার রুমে নিয়ে যাবেন? খুব দরকার ছিল।”
রিয়া চট করে এসে বলল,
—” আসুন, আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
রিয়া দেবকীকে বিদ্যার রুমের কাছে এনে বলল,
—” এটাই পিসির রুম।”
ওকে মা, তুমি এখানে থাকো বলেই দেবকী রুমের ভিতর ঢুকতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল। রিয়া ভাবলো উনি নিজে দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছেন। দেবকী রুমের ভিতর ঢুকেই বুঝতে পারলো এখানে অনেক মায়া বিদ্যার ছড়াছড়ি। দেবকীকে কোন কাজই তারা করতে দিচ্ছেনা। শেষে দেবকী রুম থেকে প্রান ভরে নিঃস্বাস নিয়ে বের হয়ে আসলো। সে দ্রুত অঞ্জনা দেবীর কাছে এসে বলল,
—” দিদি, আমাদের এখুনি যেতে হবে। এখানে আমি থাকতে পারবোনা। চল এখুনি।”
বৌদি এই প্রথম আমাদের বাসায় আসলেন আর আজই চলে যেতে চাচ্ছেন! এটা চলবেনা। আমরা সবাই মিলে বিদ্যাকে খুঁজেই চলছি। আশা করছি আমরা সফল হব। বিদ্যাকে হারিয়ে ওর মায়ের মাথা পাগল হয়ে গেছে। ওর কথা শুনে প্লিজ চলে যাবেননা। কথাগুলো শ্যামল বাবু বলতেই অঞ্জনা দেবী হাত জোড় করে বললেন,
—” দাদা, আমরা একমুহুত্ত্বও আর এখানে থাকতে পারবোনা। আপনারা আপনাদের মত চেষ্টা করেন আমরা আমাদের মত চেষ্টা করি। দেখি কি হয়।”
কারো কোন কথা না শুনে ঐ রাতেই দেবকীর হাত ধরে অঞ্জনা দেবী বের হয়ে আসলো বাসা থেকে। এখন তাদের লক্ষ্য বিদ্যা অবদি পৌছা। দেবকী বুঝে গেছে, বিদ্যার কাছে কোন অশরী থাকে। যে বিদ্যার কাছে পৌছাতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু দেবকীর তখনো জানা ছিলোনা, তার সন্তান এখন আর স্বাভাবিক মানুষ রুপে জন্ম নেয়নি।
♦
এতরাত হয়ে গেল কিন্তু অভি বাসায় ফিরেনি। বিদ্যা ঘুম থেকে ওঠার আগে অভি কোথায় যেন চলে গেছে। শুধু টেবিলে একটা চিরকুট রেখে গেছে। তাতে লেখা আছে,
বিদ্যা,
আমি একটা জরুরী কাজে বাহিরে গেলাম। ফিরতে কিছুটা দেরী হবে। প্লিজ, মাথা গরম করে আমার উপর যেন রাগ না করো। তুমি ঘুমিয়ে আছ বলে তোমায় আর জাগালামনা। নিজের খেয়াল রেখ মাই বেবি গার্ল।
~ অভি
যত রাত হচ্ছে বিদ্যার দুঃশ্চিন্তা ততই বেড়ে চলছে। বিদ্যার কাছে কোন ফোন নেই যে অভির সাথে যোগাযোগ করবে। পুরো দিনে রান্না করা হয়নি। এমনকি খাবার পর্যন্ত খায়নি। বাড়ীওয়ালা আন্টি অবশ্যই একবার এসেছিল। কিন্তু বিদ্যার কিছুই ভালো লাগছেনা। আবার অভি ওকে ছেড়ে চলে যেতে শুরু করছে। বিদ্যার মনও কু ডাকছে। অভির কিছু হলোনাতো! গড, অভিকে রক্ষা করো সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে। এভাবেই দুঃশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে পুরো রাত কেটে গেল। কিন্তু অভি এলোনা। আজ আর অভির উপর রাগ হচ্ছেনা বিদ্যার। বরং অজানা ভয়ে বারবার চোখে জল আসছে। দেরি হবে বলে এত দেরী?
বিদ্যা এভাবে অপেক্ষা করতে করতে আবার এই দিনটাও কাটিয়ে দিল। টানা দু’দিন বিদ্যা কোন খাবার খেতে পারেনি। শুধু জল খেয়ে আছে। মুখে কিছু তুলতে ইচ্ছে করছেনা। শুধু একটু পরপর কেঁদেই চলছে অভির জন্য। অপেক্ষা ছাড়া ওর করার আর কিছুই নেই।
রাত ৭টা,
দরজায় কলিংবেল বাজতেই বিদ্যা হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখলো, অভি দাড়িয়ে আছে। বিদ্যা অভিমানে সেখান থেকে এসে কিচেনে চলে গেল। অভিও কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ওর লেদার জ্যাকেটটা খুলে বিদ্যার কাছে গিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—” স্যরি, আমি কাজে আটকে ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও ফিরতে পারিনি।”
অভির কথা শুনে বিদ্যার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো। কিন্তু কোন কথা বললোনা। অভি অনেক কথা বলল কিন্তু বিদ্যা কোন কথার জবাবই দিলোনা। শেষে অভি বাধ্য হয়ে বিদ্যাকে ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে এল। আনমনে শার্টের বোতাম খুলতেই বিদ্যা দৌড়ে এসে অভিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—” দেরি হবে বলে দুই দিন দেরি করবা! আমি খু্ব কষ্ট ও ভয় পেয়েছি অভি।”
টুইংকেল আন্টিকে পাওয়া যাচ্ছেনা কিছু দিন ধরে। আমার কথায় তিনি এদেশে এসেছিলেন আর সেই তিনিই বিপদে পড়েছেন। সেই কথা অভি কিভাবে বিদ্যাকে বুঝাবে? এই দু’দিন পাগলের মত রাত-দিন এক করে খুঁজেছে আন্টিকে। তবুও কোন খোঁজ পায়নি অভি। আন্টির অনুপস্থিতি অভিকে জানান দিচ্ছে, সামনে কোন বিপদ তার জন্য ধেয়ে আসছে।
অভির কোন রেসপন্স না পেয়ে বিদ্যা অভিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
—” অভি তুমি কি ভাবছো! সারাদিন কিছু খেয়েছ?”
বিদ্যার কথাগুলো অভির ভাবনায় ছেদ পড়লো। অভি বিদ্যা কপালে একটা কিস করে বলল,
—” বিদ্যা, খাবার রেডী করো। দু’দিন ধরে কিছু খাওয়া হয়নি। একসাথে খাবো।”
বিদ্যা অভিকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো। এই সময় কে আসলো বলে বিদ্যা অভিকে ছেড়ে দিয়ে চোখের জল মুছে দরজা খুলে দিতেই চমকে উঠলো। সামনে অঞ্জনা দেবীকে দেখে বিদ্যা, মা বলে একটা চিৎকার দিয়েই শাশুড়ীর বুকে যেন ঝাপিয়ে পড়লো। তারপর পাগলের মত কাঁদতে কাঁদতে কয়েকটা চুমা খেল অঞ্জনা দেবীকে। মা আপনি কেমন আছেন বলতেই অভি নির্বাক হয়ে বিদ্যার কান্ড কারখানা দেখতে লাগলো।
এদিকে অঞ্জনা দেবীর চোখ শুধু অভিকে খুঁজছে। বিদ্যা শাশুড়ীকে রুমের ভিতর টেনে নিয়ে আসতেই অঞ্জনা অভিকে দেখেই স্থির হয়ে গেল। তার ছেলে সাক্ষাৎ অপু যেন দাড়িয়ে আছে। দেবকীর বারন আছে তাই সে অভিকে কিছু না বলে বিদ্যার দিকে চেয়ে বলল,
—” মা, আমাদের একজন অতিথী এসেছে। তার জন্য নাস্তা রেডী করতে হবে। তোদের কিচেন কোথায়?”
শাশুড়ীর কথায় বিদ্যা কিছুটা অবাক না হয়ে পারলোনা। অভিকে দেখে তিনি যে চুপ থাকার মানুষ নন সেটা ও ভাল করেই জানে। তবুও বিদ্যা কিছু না বলে অভির দিকে চাইতেই অভিও ওকে কিচেনে যেতে বললো। বিদ্যা কিচেনে চলে গেল। বিদ্যা চলে যেতেই অঞ্জনা দেবী বলল,
—” দেবকী ভিতরে আয়।”
দেবকীর নাম শুনেই অজানা বিপদে অভির চোখ দু’টো ধপ করে জ্বলে উঠলো। এই সেই দেবকী! দেবকী রুমে পা দিতেই অভির চোখ দিয়ে আলোক রশ্মি বের হওয়ার আভাস পেতেই সেই অশরী এসে দেবকীর পাশে দাড়ালো। যাকে অভি বন্দী করে রেখেছিল।
ও ছাড়া পেল কিভাবে বলতেই অশরীটা অভির উদ্দেশ্য আগুন ছুড়ে মারে। অভির চোখ দিয়েও সাথে সাথে নীল রশ্মি বের হল। দু’জনকে আটকাতে গিয়ে দেবকীও রক্ষা বান ছোড়ে অভির দিকে। কিন্তু কোন এক দরকারে বিদ্যা কিচেন থেকে বের হয়ে অভির কাছে আসছিল। যার ফলাফল, অভির মায়া, অশরীর আঘাত আর দেবকীর রক্ষাবাণ একসাথে বিদ্যার শরীর ভেদ করে নষ্ট হয়ে গেল। বিদ্যা শুধু একবার হেচকি তুললো, তারপর মুখ দিয়ে গলগল করে তাজা রক্তের ফোয়ারা ছুটতে লাগলো। বিদ্যা আর দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা, ঠাশ্ করে ফ্লোরে পড়ে গেল। চোখের পলকে এতবড় একটা অঘটনটা ঘটে গেল, যেটা কারোই প্রত্যাশা ছিলোনা। অঞ্জনা দেবী বিদ্যা বলে গলা ফাঁটিয়ে একটা চিৎকার দিল। ততক্ষনে বিদ্যার শরীর দুইবার কেঁপে উঠেই স্থির হয়ে গেল। অভি ধপ করে স্থির হয়ে বসে পড়লো। ক্লান্ত আর কষ্টময় চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু ঝড়ে পড়লো।
[চলবে……….]
বিদ্রঃ আগামী পর্ব ২৪ তারিখে আসবে।
আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি তাই গল্পটা দেরী করেই পোষ্ট হবে।
ওয়েবসাইটে পড়তে-https://nafisarkolom.com/2020/11/%e2%80%8dsidur-suddhi-40/